সব সময় কথা তৈরিই থাকে মুখে, নাক কুঁচকালেন চাচী। এমন কিছুই বলিস, যাতে মানা করা না যায়।
গাড়িতে উঠল তিন গোয়েন্দা। রোজারের কার্ডটায় সানসেট ট্রিপের ঠিকানা। দেয়া আছে। যেতে বলল হ্যানসনকে। যেতে প্রায় আধঘন্টা লেগে গেল। স্ট্রিপে পৌঁছে গতি কমিয়ে দিল হ্যানসন, যাতে অফিটা খুঁজে পাওয়া যায়।
মোড়ের কাছে ওই যে পার্কিঙের জায়গা, বলল সে। রাখব ওখানে? লোকের চোখ পড়ে যায় গাড়িটার ওপর। গোয়েন্দাগিরিতে খুব অসুবিধে। নাকি লোকে দেখুক এখন, এটাই চাও?
অদৃশ্য হয়ে যেতে চাই, রবি বলল। ডলি যদি জানতে পারে, ওর প্রিয় প্রযোজকের পেছনে লেগেছি আমরা, হুলুস্থুল বাধিয়ে ফেলবে।
তাহলে আর কি, হাসল হ্যানসন। যা বললাম কৃরি। মোড়ের কাছে গেল। আরেকটু নিরাপদ হওয়ার জন্যে পাশের একটা গলিতে ঢুকে গাড়ি রাখার জায়গা বের করে নিল।
একসঙ্গে যাব সবাই? মুসার প্রশ্ন।
এক মুহূর্ত ভাবল কিশোর। না, বেশি লোক গিয়ে কাজ নেই। আমি একা যাব।
গাড়ি থেকে বেরিয়ে রওনা হল সে।
দোতলা একটা বাড়িতে রোজারের অফিস। নিচতলায় একটা কফি শপ আছে। তেমন চোখে পড়ার মত আহামরি কোন বিল্ডিং নয়। সিঁড়ি দিয়ে বারান্দায় উঠে আবিষ্কার করল কিশোর, একটা অ্যাকাউন্টিং ফার্মের সঙ্গে শেয়ারে অফিস ভাড়া করেছে ইয়ান ফিল্মস।
দরজার নবে হাত রেখেই চিৎকার শুনল কিশোর। যত্তোসব!
একটা মহিলা কণ্ঠ বলল, একজন স্টান্ট ম্যান না পেলে হবে না। প্রোডাকশন। বন্ধ রাখতে হবে। ডেভিস সাহেব তো আর রাজি হবেন না লাফটা দেয়ার জন্যে।
তাহলে তাই করা হচ্ছে না কেন? তোক জোগাড় করে নিয়ে এলেই হয়, বলল প্রথম কণ্ঠটা। রোজার নয়। অন্য কেউ, যার কণ্ঠটা মসৃণ নয় রোজারের মত। এখানে শুটিং করলে এসব গোলমালে আর পড়তে হত না। গ্রিফিথ পার্কের। পাহাড়ের সঙ্গে মেকসিকান পাহাড়ের কি এমন তফাৎ?
নবে মোচড় দিয়ে ঠেলে পাল্লা খুলে ফেলল কিশোর।
প্রথমেই চোখে পড়ল একজন মহিলাকে। ধূসর, কোকড়া চুল। চোখে রিমলেস চশমা। ডেস্কের সামনে বসে রয়েছে। হাতে টেলিফোন রিসিভার।
টাকমাথা, নীল চোখওয়ালা, একজন পুরুষ কটমট করে তাকালেন কিশোরের দিকে। তারপর গিয়ে ভেতরের আরেকটা ঘরে ঢুকে প্রাম করে লাগিয়ে দিলেন দরজা।
কি চাই? জিজ্ঞেস করল মহিলা। রিসিভার রাখল না।
মিস্টার রোজার আছেন?
এখন অসময়। মিস্টার রোজারকে এসময়ে খুঁজতে এসেছ কেন?
ইয়ে… কাল তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছে। এক বন্ধুর বাড়িতে। কথা বলে মনে হল ছবিতে বোধহয় আমাকে ব্যবহার করতে পারবেন।
তোমাকে?
আমার অভিজ্ঞতা আছে। টেলিভিশনে অভিনয় করেছি। আপনাদের ড্রাকুলা ছবিতে কোন হাসির পার্ট থাকলে…
মিস্টার রোজার! চিৎকার করে ডাকল মহিলা।
মিস্টার. রোজার, এই ছেলেটার সঙ্গে নাকি কাল আপনার দেখা হয়েছিল? ড্রাকুলা ছবির কথা বলছে। ব্যাপারটা কি?
এঘরে এসে দাঁড়ালেন মিস্টার রোজার। ড্রাকুলা? এনসিনাডার শুটিং নিয়েই তো মহা ঝামেলায় আছি, আবার কি? ড্রাকুলা নিয়ে ছবি তৈরি হবে কে বলল?
দুটো সেকেণ্ড লোকটার দিকে স্থির তাকিয়ে রইল কিশোর। পকেট থেকে কার্ডটা বের করল। নীরবে সেটা তুলে দিল লোকটার হাতে।
কার্ডের দিকে তাকিয়ে নাক দিয়ে খোঁতখোঁত করলেন ভদ্রলোক।
যে লোক এই কার্ড দিয়েছেন, তিনি বলেছেন আজ এখানে এলে দেখা হবে, কিশোর বলল। তিনি তাঁর নাম বলেছেন ইয়ান রোজার। এখন মনে হচ্ছে সত্যি কথা বলেননি তিনি।
তা তো বলেইনি। ছবিতে তোমাকে কোন কাজ দিয়েছে নাকি?
আসলে, আমাকে নয়। একটা মেয়েকে দিয়েছে। সংক্ষেপে জানাল কিশোর, ডলিকে কাজ দেয়ার কথাটা।
আমার কার্ড দিয়েছে, টাকমাথায় হাত বোলালেন রোজার। ড্রাকুলা নিয়ে ছবি বানাচ্ছি না আমি। ওসব আমি বানাইও না। আমি তৈরি করি ডকুমেন্টারি আর বিজ্ঞাপন। তোমার মত কাউকে আপাতত দরকার নেই আমার। আর মেয়েটাকে গিয়ে বলবে ড্রাকুলা ছবিতে অভিনয় করতে তাকে যে-ই বলে থাকুক, ঠিক বলেনি। মিথ্যে বলেছে। কাজটাজ কিচ্ছু দেবে না, নিশ্চয় ধোকাবজি। কোন রেস্টুরেন্টে গিয়ে কাজ করতে বলগে। টাকার কি খুব দরকার?
বলতে পারেন।
তোমার বন্ধু?
ঠিক তা নয়। চিনি আরকি। সবে পরিচয় হয়েছে।
তাকে একটা কথা বলবে, প্রযোজকের ব্যাপারে যেন হুশিয়ার থাকে। অনেকেই ওরকম মিথ্যে পরিচয় দিয়ে থাকে এখানে। লোক ঠকানোর জন্যে। আর যে লোক অন্যের কার্ড নিজের নামে চালিয়ে দিতে পারে, তার ব্যাপারে তো খুবই সাবধান থাকা দরকার।
বলব। লোকটা কে কিছু আন্দাজ করতে পারেন? আপনার কার্ড নিয়ে এরকম ব্যাপার কি আরও ঘটেছে?
শ্রাগ করলেন মিস্টার রোজার। না। তবে একগাদা কার্ড তোমাকে দিয়ে দিতে পারি আমি। দেয়ার জন্যেই বানানো হয়েছে ওগুলো। যে কেউ এসে নিয়ে যেতে পারে। লোকটা দেখতে কেমন?
এই তিরিশ মত বয়েস। হালকা বাদামি চুল। সব কিছুই মসৃণ। চলন-বলন, পোশাক-আশাক, সব। বলল পাহাড়ের ওপরের একটা বাড়িতে থাকে। বাড়ির মালিকের নাম ক্রগার মনটাগো।
আরামেই আছে দেখা যায়। নিরাপদে। মনটাগো মারা গেছেন। চিন্তিত দেখাল রোজারকে। মেয়েটাকে গিয়ে বলবে, এক্ষুণি যাতে কেটে পড়ে। ওই লোকের ধারেকাছেও আর না যায়। শয়তানগুলো মানুষ ঠকানোর তালে থাকে। নাম্বার ওয়ান ঠগবাজ একেকটা। মাঝে মাঝে ভয়ানক বিপজ্জনক হয়ে ওঠে ওরা।