মুসা আর রবিনকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার প্রয়োজন বোধ করল না কেউ। এই পারিবারিক ঝগড়ার মাঝে পড়ে অস্বস্তি বোধ করছে তিন গোয়েন্দা। হেডকোয়ার্টারে ফিরে যাওয়ার জন্যে অস্থির হয়ে উঠল। ডলিকে তো পাওয়াই গেছে, আর থেকে কি হবে?
ডিকসন দম্পতিকে অনুসরণ করে ওরাও বেরিয়ে এসে গাড়িতে উঠল। হঠাৎ বলে উঠলেন মিস্টার ডিকসন, ছবি না কচু! ওই ব্যাটা ছবির প্রযোজক হয়ে থাকলে আমি আমার কান কেটে ফেলব।
চলতে আরম্ভ করল গাড়ি। চেশায়ার স্কোয়্যার থেকে বেরিয়ে পাহাড়ী পথ ধরে নেমে চলল মেন রোডের দিকে।
হয়ত তোমার কথাই ঠিক, মিসেস বললেন শান্ত কণ্ঠে।
হয়ত মানে?
মিস্টার রোজারকে চমৎকার লোক মনে হলো আমার। তবে আরেকটু খোঁজখবর নেয়া দরকার তার সম্পর্কে। না নিলেও অবশ্য ক্ষতি নেই।
কি ভেবে ছেলেদের দিকে ঘুরলেন তিনি। একটা কাজ করতে পারবে? ওর কার্ড আছে আমাদের কাছে। কাজটা করতে পারবে? তোমরা চালাক ছেলে, ডলিকে যে ভাবে বের করে ফেললে, তাতেই বুঝেছি। জানতে পারবে মিস্টার রোজার সত্যিই ছবির প্রযোজক কিনা?
গুঙিয়ে উঠল মুসা।
তা বোধহয় পারা যাবে, কিশোর জবাব দিল। ফিল্ম ইণ্ডাস্ট্রিতে খোঁজ নিলেই জানা যাবে। তবে প্রযোজক হওয়ার জন্যে কোন সমিতি কিংবা সংগঠনে যোগ দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। টাকা থাকলেই হলো। আর ছবির ব্যাপারে সামান্য ধারণা। আসল কাজটা পরিচালকই করে দেয়।
ওই লোকটা একটা ধোঁকাবাজ! গোঁ গোঁ করে উঠলেন মিস্টার ডিকসন। ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেস! কি একখান আইডিয়া! গল্পের ব্যাপারে কোন ধারণাই নেই তার। আর ওর সহকারী, ওটা তো আরেক হাঁদা। ইচ্ছে করে সিঁড়ি থেকে পড়ে লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ..হাহ! ধরে পাগলা গারদে পাঠানো উচিত।
মেন রোড ধরে চলতে চলতে মোড় নিলেন তিনি। স্যালভিজ ইয়ার্ডের দিকে। চললেন। নরিয়া, এভাবে মেয়েটাকে একলা ছেড়ে দেয়া ঠিক হচ্ছে না। এক কাজ করা যেতে পারে। তুমি থাকো, চোখ রাখো। আমি বাড়ি চলে যাই।
মাথা নাড়লেন মিসেস। না, তা করব না। ডলি এখন বড় হয়েছে। তাকে তার পছন্দমত চলতে দেয়া উচিত। আমরা বেশি নাক গলাতে গেলে অকর্মণ্য বানিয়ে ফেলব শেষে।
আবার কিছুক্ষণ ঘোঁৎ ঘোঁৎ করলেন ডিকসন। নানা রকম ভাবে ভয় দেখানোর চেষ্টা করলেন স্ত্রীকে, মেয়ের ক্ষতি হতে পারে, বোঝানোর চেষ্টা করলেন। কিছুতেই যখন বুঝলেন না মিসেস, তখন হুমকি দিতে লাগলেন। তাতেও কাজ হল না। অবশেষে ইয়ার্ডটা দেখা গেল। গেটের কাছে গাড়ি থামিয়ে পকেট থেকে ইয়ান রোজারের কার্ডটা বের করে কিশোরের হাতে দিয়ে বললেন, কিছু জানতে পারলে ফ্রেনসোতে ফোন কোরো আমাদের। সত্যি কথাটা জানা দরকার। মাথা খারাপ না হলে ডলিকে কেউ কোটি কোটি টাকার একটা ছবিতে স্টার বানাবে না। ও ছবির কি বোঝে?
বোঝে, বোঝে, মিসেস বললেন। বুঝবে না কেন? বড় হয়নি?
.
পরদিন খুব সকালে হেডকোয়ার্টারে মিলিত হলো তিন গোয়েন্দা।
আমাদের কাজ এখন, কিশোর বলল। ইয়ান রোজার সত্যিই প্রযোজক কিনা এটা জানার চেষ্টা করা।
গোলমালের দিকেই যত ঝোঁক মেয়েটার, রবিন মন্তব্য করল। কিশোর, লেসিং হাউসে যে চোর ঢুকেছিল, তার সঙ্গে এই ছবিটবি বানানোর কোন যোগাযোগ নেই তো?
নাহ্, মাথা নাড়ল মুসা। তা বোধহয় নেই। চোর যখন-তখন যার-তার বাড়িতে ঢুকতে পারে। এর মধ্যে কোন রহস্য নেই।
তা ঠিক, মুসার সঙ্গে একমত হল কিশোর। এ সময়ে মিস্টার ক্রিস্টোফার হলিউডে থাকলে কাজ হত। তাকে একটা ফোন করলেই রোজারের খবর জেনে যেতে পারতাম।
নেই তো কি আর করা, হাত ওল্টাল মুসা। অন্য ভাবেই কাজ করতে হবে। আমাদের।
মিস্টার সাইমনের সাহায্য নেয়া যায় না? পরামর্শ দিল রবিন।
বোধহয় যায়। হুম! নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল কিশোর। বিড়বিড় করল আনমনেই। ভিকটর সাইমন! তিনিও যেহেতু গোয়েন্দা…দাঁড়াও, ফোন করি।
আরও একটা কথা ভুলে গেছ, মনে করিয়ে দিল রবিন। সিনেমার সঙ্গে তারও যোগাযোগ আছে। চিত্রনাট্য লেখেন। ইয়ান রোজারের কথা তিনিও শুনে থাকতে পারেন।
ভাল কথা মনে করেছ তো! ডায়াল করতে শুরু করল কিশোর।
ফোন ধরল ভিকটর সাইমনের ভিয়েতনামী কাজের লোক, নিসান জাং কিম। জানাল, তিনি নেই। ইডাহোতে একটা ছবির শুটিঙে দলের সাথে গেছেন। কয়েক দিন লাগতে পারে ফিরতে। কয়েক হপ্তাও হতে পারে। ঠিক করে বলে যাননি। ফিরলে তোমাদের কথা বলব।
কিমকে ধন্যবাদ জানিয়ে লাইন কেটে দিল কিশোর। বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে বলল, নেই। ওভাবে সাহায্য পাওয়া যাবে না। রোজারের কার্ডটা আছে। চলো, তার অফিসে চলে যাই।
ওর সেক্রেটারির সঙ্গে কথা বলতে? রবিন বলল। কিন্তু ওদেরকে বেতনই দেয়া হয় বাইরের লোক ঠেকানোর জন্যে। কথা গোপন রাখার জন্যে।
না বললে না বলবে। অফিসে গেলেই অনেক প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাব।
রেন্ট-আ-রাইড অটো রেন্টাল কোম্পানিতে ফোন করল কিশোর। হ্যানসনকে চাইল। আছে। আর রোলস রয়েসটাও আছে। গাড়িটা পাঠাতে অনুরোধ করল সে।
চকচকে রোলস রয়েস নিয়ে হাজির হয়ে গেল হ্যানসন। মেরিচাচীর চোখে, পড়ল প্রথমে। গুঙিয়ে উঠলেন তিনি। তারমানে সারাদিনের জন্যে লাপাত্তা হবি। কিশোর, তোকে যে কাজটার কথা বলেছিলাম তার কি হবে?
কাল করে দেব, চাচী। মিস্টার ডিকসনের একটা জরুরী কাজ করতে যাচ্ছি আমরা।