কি করে? ডিকসনের কণ্ঠে সন্দেহ। যতদূর মনে পড়ে, ধুলো হয়ে গিয়েছিল। ড্রাকুলা।
তাতে কি? আমাদের মত জ্যান্ত মানুষের নিয়ম মানে না ভ্যাম্পায়াররা। ওদের জগতে অন্য রীতি। এমন ভাবভঙ্গি করছে রোজার, যেন গিয়ে বেড়িয়ে এসেছে জীবন্ত ভূতদের ওই জগৎ থেকে। আমাদের ছবিতে ধুলো থেকে ভ্যাম্পায়ারকে ফিরিয়ে আনার কৌশল জেনে যাবে মিনা। তারপর দুজনে মিলে একটা নতুন গল্প তৈরি করবে।
গলা টিপে ধরা হয়েছে যেন, এরকম শব্দ করলেন ডিকসন। ওই মুহূর্তে সিঁড়ি থেকে পড়ে গেল কে যেন।
ও, পরিচয় করিয়ে দিই, মসৃণ কণ্ঠে বলল রোজার। আমার সহকারী হ্যারিসন রিভস। নাটক না করে আসরে আসতে পারে না ও। ঢোকার সময় কিছু একটা করা চাই-ই। তার যুক্তি, এতে লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সুবিধে। হ্যারি, এস। ওঁরা বেটসির আব্বা-আম্মা।
গোলগাল চেহারা রিভসের। রোজারেরই বয়েসী। তবে বেশভূষায় একেবারে বিপরীত। রোজার যেমন, মসৃণ, সে তেমনি খসখসে। তার কালো, কোকড়া চুলগুলো খাটো, কান বেরিয়ে আছে। গোল গোল চোখ। নাকটা মুখের তুলনায়। ছোট। সিঁড়ির গোড়া থেকে ওঠার সময় একটা হাসি দিল। বোকা বোকা লাগল। হাসিটা।
ও তাই নাকি, তাই নাকি…, বলতে বলতে এগিয়ে এল রিভস। জুতোর গোড়ালিটা বেধে গিয়েছিল…
এই কিছুদিন আগেও টোয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্সের সঙ্গে যুক্ত ছিল রিভস, রোজার জানাল। কয়েক হপ্তা আগে অনেক জোরজার করে রাজি করিয়েছি ওকে ইয়ান ফিল্মসে কাজ করার জন্যে। হরর ছবি তৈরিতে তার জুড়ি কমই আছে। লোককে ভয় দেখাতে, চমকে দিতে ওস্তাদ। মানুষের মনের সমস্ত অলিগলি তার চেনা। পারেও সে জন্যেই। আমাদের ছবির দর্শকরা টের পাবে আতঙ্ক কাকে বলে। ছবি দেখে বেরিয়েই যে ভুলে যাবে, তা পারবে না। ভয়টা অনেক দিন চেপে থাকবে মনের ওপর।
সাংঘাতিক! শুকনো গলায় বললেন ডিকসন।
ডলি, মিসেস ডিকসন বললেন। আয়, একটু বসা যাক। কথা বলি।
আবার কি কথা? মনে হলো আবার রেগে যাবে ডলি। যা বলার তো বলাই হল। আর কি??
অবাক মনে হলো রোজারকে। ডলি? আমি তো ভেবেছিলাম তোমার নাম বেটসিই। কিন্তু ভাবি-অভিনেত্রীর চোখে আগুনের ঝিলিক দেখেই তাড়াতাড়ি সামলে নিল, ও, বুঝেছি বুঝেছি। আমি একটা গাধা। ভুলেই গিয়েছিলাম। আসা নামে অনেকেই পরিচিত হতে চায় না সিনেমায়। বেটসি তোমার স্টেজ নেম। তোমার আব্বা-আম্মার সঙ্গে একলা থাকতে চাও তো? থাক। এতদিন পরে দেখা, ইচ্ছে তো করবেই। আমি দুএক দিনের মধ্যেই যোগাযোগ করব। ডিকসনের দিকে তাকাল রোজার। আমাকে আপনাদের দরকার হলে, কিংবা কোন প্রশ্ন করার থাকলে দয়া করে এই নাম্বারে একটা রিঙ করবেন।
মানিব্যাগ থেকে একটা কার্ড বের করে দিল সে।
আপাতত মেষপালকের জীবন যাপন করতে হচ্ছে আমাকে আর রিভসকে, যেন দুঃখে মসৃণ কণ্ঠটা আরও মসৃণ হয়ে গেল রোজারের। পাহাড়ের ওপরে একটা বাড়িতে থাকি আমরা। বাড়িটা ক্রুগার মনটাগোর। বিশ্বাস করবেন, সকালে বাড়ির পেছনের পাহাড়ে ভেড়ার ডাকে ঘুম ভাঙে আমাদের? নাহ, আর পারা যায় না। বাড়িতে একটা ফোন পর্যন্ত নেই। তবে আপনাদের অসুবিধে হবে না। আমার সেক্রেটারি আপনাদের ফোন ধরবে, খবরটা ঠিকই পৌঁছে দেবে আমাকে।
কার্ডটার দিকে না তাকিয়েই পকেটে রেখে দিলেন ডিকসন। কঠিন কণ্ঠে বললেন, আমার মেয়ের যেন কোন ক্ষতি না হয়, এই বলে দিলাম। তাহলে জেল খাঁটিয়ে ছেড়ে দেব।
আব্বা! চিৎকার করে উঠল ডলি।
আপনার অবস্থাটা আমি বুঝতে পারছি, ডিক্সনের কথা গায়েই মাখল না। রোজার। বাপ তার মেয়ের জন্যে অস্থির হবেই। মসৃণ ভঙ্গিতে বাউ করে সহকারীর হাত ধরে টেনে নিয়ে দরজার দিকে এগোল সে।
সামান্যতম নরম হলেন না ডিকসন। মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, অনেক হয়েছে। কয়েকটা কথা খোলাসা করে নেয়া দরকার!
.
০৮.
ডলি, মা আমার, মিসেস ডিকসন বললেন। তুই জানিস তোকে আমরা ভালবাসি। বিশ্বাস করি।
কই করি? স্ত্রীকে প্রশ্ন করলেন ডিকসন।
এড়িয়ে গেলেন মিসেস। মস্ত একটা সুযোগ তুই পেয়েছিস। তোকে আমরা সাহায্যই করব, কিন্তু…।
নরিয়া, কি বলছ তুমি? চিৎকার করে উঠলেন ডিকসন।
স্বামীর দিকে তাকালেন মিসেস ডিকসন। ও আমাদের মেয়ে বটে। কিন্তু আজ হোক কাল হোক বাড়ি তো ছাড়তেই হবে। চিরকাল তো আর বাপের ঘরে থাকবে না। তাছাড়া:তাছাড়া এখন ও বড় হয়েছে। বেশ, তোমার আপত্তি থাকলে আমিই নাহয় এখানে থেকে যাই ওর সঙ্গে।
কোন দরকার নেই! কচি খুকি নই আমি! চেঁচিয়ে উঠল ডলি। তাছাড়া থাকবে কি করে? এটা তোমার বাড়ি না। আমারও না। মিসেস লেসিঙের। আমাকেই থাকতে দেয়া হয়েছে দয়া করে। আরেকটা কথা তোমাদের জানা থাকা দরকার, একটা বিউটি পারলারে চাকরি করি আমি।
ওসব কিছুই করার দরকার নেই, গম্ভীর হয়ে বললেন বাবা। আমরা যা করতে বলব, তাই করতে হবে। বাড়িতে থাকতে হবে তোমাকে।
আহ, থাম না পিটার। আমাকে কথা বলতে দাও। তোমার সঙ্গে ও কখনোই সহজ হতে পারে না।
না পারলে না, পারুক। পারার দরকারও নেই। আমি তার বাবা, ব্যস, যথেষ্ট।
ঘোঁৎ ঘোঁৎ করলেন। কয়েকবার হুমকি দিলেন। তবে আস্তে আস্তে গলার জোর কমে আসতে লাগল তার। সুযোগ বুঝে দরজার দিকে তাকে টেনে নিয়ে চললেন মিসেস ডিকসন। বেরোনোর আগে ঘুরে দাঁড়ালেন তিনি। মানিব্যাগ বের করলেন। এগিয়ে এসে কয়েকটা নোট মেয়ের হাতে গুঁজে দিয়ে বললেন, সাবধানে থেক। বেরিয়ে গেলেন গাড়িতে ওঠার জন্যে।