- বইয়ের নামঃ তিন পিশাচ
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রোমাঞ্চকর গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী
তিন পিশাচ
০১.
রবিনের চোখে পড়ল প্ল্যাস্টিকের ব্যাগটা। সৈকতের বালিতে দেবে রয়েছে। তুলে নিয়ে দেখে হাসল। স্বচ্ছ প্ল্যাস্টিকের ব্যাগের গায়ে লাল রঙে আঁকা রয়েছে কয়েকটা বেড়ালছানা। গলায় নীল রুমাল বাঁধা। ভেতরে অনেক জিনিসের মধ্যে রয়েছে একটা খেলনা ভালুক, কালো কুৎকুতে চোখ মেলে যেন তারই দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
বাচ্চা মেয়ের জিনিস, বলল সে। ভুলে ফেলে গেছে।
সৈকতের এদিক ওদিক তাকাল মুসা। কোন বাচ্চা মেয়েকে চোখে পড়ল না। বেলা পড়ে এসেছে। নির্জন হয়ে গেছে সৈকত। কেবল একজন নিঃসঙ্গ সারফারকে দেখা গেল তার বোর্ড নিয়ে চলেছে রাস্তার দিকে। ওয়াচটাওয়ার থেকে নেমে চলে যাচ্ছে লাইফগার্ড।
যেখানে আছে ফেলে রাখো, বলল মুসা। মেয়েটার মনে পড়লে ফিরে এসে তুলে নেবে।
বয়েস বেশি কম হলে আসতে পারবে না, বলল দলের তৃতীয় সদস্য কিশোর পাশা। তাছাড়া অন্য কেউও তুলে নিয়ে যেতে পারে।
বালিতে বসে পড়ে ব্যাগটার জন্যে হাত বাড়াল সে। দেখি, কিছু মেলে কিনা। তাহলে পৌঁছে দিতে পারব।
ব্যাগটা নিয়ে উপুড় করে সমস্ত জিনিস কোলের ওপর ঢেলে দিল কিশোর। হুম! বলে ভুরু কোঁচকাল। মানিব্যাগ নেই। আইডেনটিটি নেই। রোমশ খেলনা ভালুকটা বাদেও রয়েছে একটা বই, নাম সাকসেস থ্রু ইমেজিং আর পিপল ম্যাগাজিনের একটা কপি। নানা রকম কসমেটিকসের বাক্স আর টিউব আছে। গুনল কিশোর। চার ধরনের লিপস্টিক, আই শ্যাডোর দুটো প্ল্যাস্টিক বক্স, একটা আইলাইনার পেনসিল এবং মেকাপ করার আরও কিছু টুকিটাকি জিনিস। একজোড়া লাল পাথর বসানো কানের টবও পাওয়া গেল।
বাচ্চা মেয়ের নয় ব্যাগটা, বলল সে। বয়স্ক মহিলার। প্রচুর মেকাপ নেয়।
এবং ছোটদের মত খেলনা পছন্দ করে, যোগ করল মুসা।
বইয়ের মলাট উল্টে দেখল কিশোর। লাইব্রেরির বই। পেছনের মলাটের ভেতর দিকে আঠা দিয়ে সাঁটা একটা ম্যানিলা খাম, ফ্রেনসো পাবলিক লাইব্রেরির ছাপ মারা।
সূত্র একটা মিলল, খুশি হয়ে বলল গোয়েন্দাপ্রধান। বই বন্ধ করে বন্ধুদের দিকে তাকাল। কে বইটা নিয়েছে নিশ্চয় খাতায় লেখা আছে। ঠিকানা নিয়ে ব্যাগটা ফিরিয়ে দিতে আর অসুবিধে হবে না।
ফ্রেনসো, না? ঠোঁট ওল্টাল রবিন। ফোন করতে অনেক পয়সা লাগবে।
লাগুক, মুসা হাসল। জিনিস ফেরত পেলে খুশি হয়ে কলের দামটা দিয়ে দেবে মহিলা।
হয়ত আমাদেরকে দাওয়াতও করে বসতে পারে, আশা করল কিশোর। ফ্রেনসোর আঙুরের খেত দেখার জন্যে। চলো, তাড়াতাড়ি করতে হবে। নইলে লাইব্রেরি বন্ধ হয়ে যাবে।
বালির ওপর দিয়ে মেইন রোডের দিকে প্রায় দৌড়ে চলল তিন গোয়েন্দা। সাইকেল তিনটে শুইয়ে রেখে গেছে রাস্তার পাশে। তুলে নিয়ে ছুটল স্যালভিজ ইয়ার্ডে।
ইয়ার্ডে যখন পৌঁছল সূর্য তখন ডুবতে বসেছে। বাড়ির জানালাগুলোয় রোদ পড়ে কাচগুলোকে মনে হচ্ছে চারকোণা সোনার চাদর। সেদিকে নজর দেয়ার সময় নেই ওদের। তাড়াহুড়া করে দুই সুড়ঙ্গ দিয়ে এসে ঢুকল হেডকোয়ার্টারে। ফ্রেনসোর ডিরেকটরি এনকয়ারিতে ফোন করল কিশোর। পাবলিক লাইব্রেরির নম্বর নিয়ে ডায়াল করল লাইব্রেরিতে।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মুসা বলল, সময় বেশি নেই।
বেশি সময় লাগলও না। ওপাশ থেকে রিসিভার তুলতেই টেলিফোন লাইনে লাগানো স্পীকারের সুইচ অন করে দিল কিশোর, সবার শোনার জন্যে। ভারিক্কি চালে বলল, হ্যালো, কিশোর পাশা বলছি। তারপর জানাল কেন ফোন করেছে।
কমপিউটারে রেকর্ড করা আছে সব, ওপাশ থেকে জবাব দিল মহিলা কণ্ঠ। দেখি, কি করতে পারি।
কিছুক্ষণ নীরবতার পর আবার শোনা গেল কথা। উত্তেজিত হয়ে উঠেছে মহিলা। তোমাদের নম্বরটা দেয়া যাবে? আবার ফোন করতে হতে পারে–
যাবে।
প্লীজ!
নম্বর দিল কিশোর।
ফোনের কাছ থেকে নোড়ো না, মহিলা বলল। কেটে গেল লাইন।
আস্তে করে রিসিভার নামিয়ে রেখে দুই বন্ধুর দিকে তাকাল কিশোর। ব্যাপারটা কি বলো তো? মহিলাকে বেশ অস্থির মনে হল।
কিছু একটা হয়েছে, মুসা বলল।
কয়েক মিনিট পরেই ফোন বাজল। ওপাশের কণ্ঠটা এবারেও একজন মহিলার, তবে আগের জনের নয়। উত্তেজনায় কাঁপছে, উন্মাদ হয়ে গেছে যেন। ওকে দেখেছ? জিজ্ঞেস করল মহিলা। আমি আসছি। আমার মেয়েটা …মেয়েটা হারিয়ে গেছে!
ফুঁপিয়ে উঠল লাউডস্পীকার। আরেকটা পুরুষ কণ্ঠ শোনা গেল। শান্ত হও নরিয়া, প্লীজ, ওরকম কোরো না! রিসিভারটা মহিলার হাত থেকে নিয়ে নিয়েছেন তিনি। কিশোর পাশা?
বলছি।
বইটা সৈকতে পেয়েছ?
হ্যাঁ।
ফ্রেনসো পাবলিক লাইব্রেরি থেকে বইটা ধার নিয়েছিল আমার মেয়ে। তার পর পরই হারিয়ে গেছে।
বলুন।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল, হলিউডে গিয়ে সিনেমায় অভিনয় করবে বলে।
পেছন থেকে মহিলা বললেন, ওকে বলো, আমরা আসছি।
বলছি, নরিয়া, বলছি।
লম্বা দম নিলেন ভদ্রলোক, টেলিফোনেই বোঝা গেল। বললেন, আমার নাম পিটার ডিকসন। তোমাদের ফোন পেয়ে আশা হচ্ছে, মনে হচ্ছে ডলি ভালই আছে। তোমাদের সঙ্গে দেখা করা দরকার। কথা বললে কিছু বেরিয়ে পড়তে পারে। ব্যাগে কোন ঠিকানা পেয়েছ?
না।
পুলিশ কিছু করতে পারছে না। তোমাদের ঠিকানাটা দাও। কাল সকাল নাগাদ পৌঁছে যাব।