কিশোর, মুসা বলে উঠল, ভয় দেখাচ্ছে ব্যাটা। রাজি হয়ো না। কচুটাও করতে পারবে না।
জ্বলে উঠল ডেংগুর চোখ। এই নিগ্রোর বাচ্চা, চুপ! আরেকটা কথা বললে জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলব। তোকে কথা বলতে কে বলেছে? চুপ করে বোস ওখানে। জলদি! এই, তোমরাও বস।
শুনো না, কিশোর, ওর কথা শুনো না, চেঁচিয়ে উঠল মুসা। দেখি হারামজাদা কি করে…
গর্জে উঠল রিভলভার। দুবার গুলি করল ডেংগু। একটা বুলেট মুসার প্রায় কান ছুঁয়ে গেল। আরেকটা গেল কিশোরের মাথার ওপর দিয়ে। পাথরে লেগে পিছলে গেল বুলেট, শিস কেটে চলে গেল পানির ওপর দিয়ে। প্রতিধ্বনি তুলল ল্যাগুনের অন্যপাশে প্রবালের দেয়ালে। চিৎকার করে নারকেলের কাণ্ড থেকে উড়ে গেল একটা নিঃসঙ্গ গাংচিল।
মিথ্যে হুমকি দিচ্ছে না লোকটা, বুঝতে পারল কিশোর। যেখানে বসতে বলা হয়েছে, বসে পড়ল। হাত ধরে টেনে বসাল মুসাকে। রবিনকে কিছু বলতে হল না, আপনাআপনি বসে পড়ল।
নিরস্ত্র কয়েকজন মানুষকে রিভলভারের ভয় দেখাচ্ছেন, রবিন বলল। লজ্জা করে না আপনার?
মানুষ কোথায়? কয়েকটা পুঁচকে বাঁচাল ছোঁড়া, হাহ হা। আর তোমাদের কাবু করতে অস্ত্র লাগে নাকি? খালি হাতেই টেনে টেনে ছিড়তে পারি ইচ্ছে করলে। কিন্তু কে কষ্ট করতে যায়? আর রিভলভার তোমাদের ভয়ে বের করিনি, করেছি ওই দানবটার জন্যে। এই দানব, কানাকার বাচ্চা কানাকা, এদিকে আয়। বোস। রিভলভার নেড়ে কুমালোকে ডাকল ডেংগু।
কুমালোকে দলে টানার কথা ভাবছেন নাকি? কিশোর বলল। অযথা মুখ খরচ করবেন। লাভ হবে না।
টেনে টেনে হাসল ডেংগু। এমন কোন কানাকা দেখিনি আমি, টাকা দিয়ে যাকে গোলাম বানানো যায় না। কুমালো, আমার চাকরি করবি তুই। ডুবুরি। অনেক টাকা দেব তোকে। জীবনে, এত টাকা চোখেও দেখিসনি। যা, কাজ শুরু করে দে। পানিতে নাম।
ধীরে ধীরে হাসি ফুটল কুমালোর সুন্দর মুখে। ভুল করছেন, মিস্টার ডেংগু, মোলায়েম স্বরে বলল সে। নাম শুনেই বুঝতে পারছি অস্ট্রেলিয়া, কিংবা নিউ গিনির কোন জঙ্গলে আপনার বাড়ি। টাকা দিয়ে স্বদেশী কোন জংলী ভাইকে গিয়ে কিনুন। রায়াটিয়ার মানুষ গোলাম হয় না।
যা বলছি কর! বেঁকিয়ে উঠল ডেংগু। নইলে মগজ বের করে দেব!
কিশোরের দিকে তাকাল কুমালো। আবার ফিরল ডেংগুর দিকে। বেশ। কত দেবেন?
এই তো পথে আসছিস। গোলাম আবার হবি না। তোদের চিনি না আমি? যা তুলবি তার পাঁচ ভাগের একভাগ।
চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা দোলাল কুমালো। আমার দস্তানা। আপনার পেছনের ওই পাথরের কাছে…
পেছন ফিরল ডেংগু।
বসা থেকে উঠে পড়ল মুসা।
ঝট করে আবার এদিকে ফিরল ডেংগু। কুমালোর দিকে রিভলভার নেড়ে বলল, যা, তুই নিয়ে আয়।
পাশ দিয়ে চলে গেল কুমালো। সামান্য পাশে ঘুরে একসঙ্গে তিন কিশোর আর তার ওপর নজর রাখল ডেংগু।
নড়ে উঠল কিশোর। মুহূর্তের জন্যে শুধু নজর ফেরাল ডেংগু, এটুকুই যথেষ্ট। বাঘের মত লাফিয়ে এসে তার ওপর পড়ল কুমালো। বাহু দিয়ে পেঁচিয়ে ধরল গলা। আরেক হাতে কজি চেপে ধরে রিভলভারটা হাত থেকে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করল।
এগিয়ে এল তিন গোয়েন্দা।
ডেংগুর গায়ে মোষের জোর। হাত থেকে রিভলভার ছাড়ল না। কিশোরকে নিশানা করল।
সর, সরে যাও! চিৎকার করে বলল কুমালো। কিছুতেই পিস্তলের নল যোরাতে পারছে না।
গর্জে উঠল রিভলভার। আগেরবার গুলি করেছিল মারধান করার জন্যে। এবার করেছে মারার জন্যে। শেষ মুহূর্তে কুমালোর হ্যাঁচকা টানে লক্ষ্যভ্রষ্ট হল গুলি।
সামনে চলে এল মুসা। ঘুসি মারল ডেংগুর মুখে।
ভীষণ শক্তিশালী বার ভেতর থেকে রিভলভারটা বের করার প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে কুমালো। পারছে না। নলের মুখ আস্তে আস্তে ঘুরে যাচ্ছে মুসার পেটের দিকে। এখন একটাই কাজ করার আছে কুমালোর, মুসাকে বাঁচাতে হলে। সামনে চলে আসা। নিজের শরীর দিয়ে মুসাকে আড়াল করা। ঠিক তা-ই করল সে। ডেংগুও ট্রিগারে চাপ দিল, সে-ও চলে এল নলের সামনে। গুলি খেয়ে পড়ে গেল মাটিতে।
হাঁটু গেড়ে বন্ধুর পাশে বসে পড়ল মুসা। মনে পড়ল বিকিনির সেই রাতের কথা। সৈকতে বসে কথা দিয়েছিল ওরা, একে অন্যের জন্যে জীবন দিয়ে দেবে। নাম বদল করেছিল। কুমালো বন্ধুত্বের মান রেখেছে।
ডেংগুর সোলার প্রেক্সাসে ঘুসি মারছিল কিশোর। কিছুই হয়নি দানবটার। বরং কিশোরই হাতে ব্যথা পেয়েছে। তার মনে হয়েছে, ঘুসি মেরেছে একতাল রবারের ওপর। ঘুসাঘুসি বাদ দিয়ে বসল কুমালোর পাশে।
এই সুযোগে ছুটে চলে গেল ডেংগু।
পিছু নিতে যাচ্ছিল মুসা, হাত ধরে তাকে থামাল কিশোর। পরে। ওর কথা। পরে ভাবা যাবে। আগে কুমালোর ব্যবস্থা করা দরকার।
কি করব?নাড়ি দেখছে রবিন। চলছে এখনও। কুমালোর ডান হাঁটুর ইঞ্চি দশেক ওপর থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।
চোখ বুজে পড়ে আছে কুমালো।
ক্ষতটা পরীক্ষা করল কিশোর। দুটো গর্ত। বুলেট ঢোকার একটা, অন্যটা বেরোনোর। যেটা দিয়ে ঢুকেছে, ওটার মুখের চারপাশে পুড়ে গেছে চামড়া। খুব কাছে থেকে গুলি করলে হয় এরকম, বারুদের আগুনে পুড়ে যায়।
বুলেটটা বোধহয় হাড়ে লাগেনি, মাংস ফুঁড়ে বেরিয়ে গেছে। ভাগ্য ভাল, শিরা হেঁড়েনি। রক্ত বেরোচ্ছে, তবে কম।
শার্টের কাপড় ছিঁড়ে ল্যাণ্ডন থেকে ভিজিয়ে আনল রবিন। মুছে দিতে লাগল ক্ষত।
পেনিসিলিন দরকার, কিশোর বলল। কিংবা সালফা পাউডার।