একটা স্যালভিজ ইয়ার্ড আছে আমাদের, বুঝিয়ে বলল কিশোর। এক মিউজিয়মে গিয়েছিলাম পুরানো মাল কিনতে। সেখানে একটা রাক্স পেয়েছি, তাতে লিটল মারমেইড জাহাজের নাম লেখা। আমরা জেনেছি, বাক্সটা আপনাদের কোন পূর্বপুরুষের ছিল। ওটা হাতে আসার পর থেকেই রহস্যময় কতগুলো ঘটনা ঘটেছে। ফোক্সওয়াগেনের লোকটা আপনার বাড়ি থেকে কি নিয়েছে, জানলে হয়ত ঘটনাগুলোর কারণ বুঝতে পারব।
দ্বিধা করলেন মিসেস ডাই। না, সে কিছু নেয়নি। এরকমই হয়, হয়ে আসছে প্রতিটি বার। চুরি করে ঢোকে, বাওরাড ডাইয়ের জিনিসপত্র ঘাটে। কখনোই কিছু নেয়নি।
কিছুই নেয়নি? হতাশ মনে হল মুসাকে।
কিশোর জিজ্ঞেস করল, ইদানীং কবার ঢুকেছে, মিসেস ডাই?
গত ছয় মাসে পাঁচবার।
সব সময় বাওরাডের জিনিসই খালি ঘাটে। বোধহয়…,এড বলল। বাওরাড আমার দাদার দাদা।
গুপ্তধন খোঁজে! এডের কথাটা শেষ করল রবিন। : মা, দেখলে! ওরাও ভাবছে, গুপ্তধনের খোজে আসে চোর। আমার কথা তো বিশ্বাস কর না।
হাসলেন মহিলা। অনেক আগেই প্রমাণ হয়ে গেছে, গুপ্তধন নেই। শুধুই গুজব।
না-ও হতে পারে, মিসেস ডাই, কিশোর বলল। টিক বানাউ আর বাক্সটার প্রতি তার আগ্রহের কথা জানাল। বাক্সে পাওয়া আঙটিটা দেখাল মহিলাকে।
হাতে নিয়ে জিনিসটা দেখলেন মিসেস ডাই। বললেন, তোমরা পেয়েছ?
দেখি তো, বোনের হাত থেকে আঙটিটা নিল ডিনো। বাহ, খুব দামি জিনিস, মুখ বাঁকাল সে। লাল কাচ আর তামা। বুড়ো ডাই এসব ফালতু জিনিস নিয়েই বাণিজ্য করতে যেত, পুবদেশের গাধাগুলোকে গিয়ে ঠকাত। তোমরাও হদা। লোকে কি আর খোঁজা বাদ রেখেছে নাকি। বুড়োর জার্নাল ঘাঁটতে ঘাঁটতে ছিঁড়ে ফেলেছে, পাতি পাতি করে খুঁজেছে জাহাজটা। কিছু পায়নি।
ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললেন মিসেস ডাই। ডিনো ঠিকই বলেছে। গুপ্তধনের সামান্যতম ইঙ্গিত থাকলেও ওই জার্নালেই থাকত। নেই বলেই পায়নি লোকে অযথাই গুজব ছড়িয়েছে।
সবাই হয়ত ভুল জার্নালটা পড়েছে, সে-জন্যেই পায়নি। জ্যাকেটের ভেতর থেকে পাতলা জার্নালটা টেনে বের করল কিশোর।
৬
আরেকটা জার্নাল? চেঁচিয়ে উঠল এড।
এসব কি? চালাকি হচ্ছে, না? ধমক দিল ডিনো। কিশোরের হাত থেকে জার্নালটা নিলেন মিসেস ডাই। ধীরে ধীরে কয়েক পাতা ওল্টালেন। না, ডিনো, চালাকি করছে না। বাওরাড ডাইয়ের হাতের লেখা, কোন সন্দেহ নেই। সইও এক। ছেলেদের দিকে তাকালেন। কোথায় পেয়েছ?
কোথায়, কিভাবে পেয়েছে, জানাল কিশোর। তারপর বলল, বাক্সটা যে-ই মেরামত করে থাকুক, ফাঁকের ভেতর জার্নালটা তার চোখে পড়েনি, বোঝা যায়। গোপন খোপটাও না। কারণ, ওটা খুললেই ছুরিটা বেরিয়ে যেত।
মাথা ঝাঁকালেন মিসেস ডাই। হ্যাঁ, মনে পড়েছে। বছর দুই আগে বিক্রি করে দিয়েছিলাম, আমার স্বামীর মৃত্যুর পর। অভাবে পড়ে ডাইদের আরও অনেক জিনিসই ছেড়ে দিতে হয়েছে আমাকে। এই বাড়িটা রাখাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন। ডিনোর সাহায্য না পেলে আরও আগেই ছেড়ে দিতে হত।
ছাড়তে হবে না, ডোরিনা, ডিনো বলল। আর রূপকথা শোনারও দরকার নেই।
জার্নালে রূপকথা থাকে না, মিস্টার হ্যাঙবার, কিশোর বলল।
আমাকে শুধু ডিনো বলে ডাকলেই চলবে।… ডোরিনা যখন বলছে, জার্নালটা আসল, ধরে নিলাম আসলই। কিন্তু তাতে প্রমাণ হয় না যে গুপ্তধন আছে।
কিন্তু চিঠিটা! বলে উঠল এড।
চিঠি? সতর্ক হল কিশোর।
প্রশ্ন এড়িয়ে গেল ডিনো। সরু হয়ে এল চোখ। পড়ে দেখা দরকার। দেখি, জার্নালটা।
মায়ের হাত থেকে নিয়ে জার্নালটা দিল এড। ফায়ারপ্লেসের ধিকিধিকি আগুনের সামনে লম্বা একটা বেঞ্চে বসে পড়তে শুরু করল ডিনো। এডও বসল তার পাশে।
চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা দোলালেন মিসেস ডাই। হুঁ, দ্বিতীয় জার্নালটাও বাক্সেই থাকার কথা। আমার স্বামী বলেছে, তার দাদা নাকি প্রথম জার্নালটাও বাক্সেই পেয়েছেন। বরাবরই দাদার বিশ্বাস ছিল, গুপ্তধন আছে, আর জার্নালেই রয়েছে তার সূত্র। কিন্তু আমার শ্বশুর তা মনে করতেন না। তার ধারণা, ওটা শুধুই গুজব।
আপনার দাদা-শ্বশুর এত শিওর ছিলেন কেন? রবিন জিজ্ঞেস করল।
একটা চিঠি। আমার দাদা-শ্বশুর…, থেমে গিয়ে হাসলেন মহিলা। গোড়া থেকেই বলি। বাওরাড ডাই সম্পর্কে কতখানি জান তোমরা?
কি কি জানে, জানাল রবিন।
ও, অনেক কিছুই তো জান তাহলে। সোসাইটিকে প্রায় সবই বলেছি আমি, স্বামীর মুখে যা যা শুনেছি। অনেক ঘুরে, দেখেশুনে এই উপত্যকা পছন্দ করেছিলেন বাওরাড ডাই। তাঁর বাড়ি স্কটল্যাণ্ডের হাইল্যাণ্ডে। এখানকার সঙ্গে ওই জায়গার মিল আছে, বিশেষ করে পুকুর আর ওটার মাঝের দ্বীপটা। স্কটল্যাণ্ডে ডাইদের বাড়ি ছিল সাগরের একটা খাড়ির ধারে। খাড়িটার নাম ফ্যান্টম লক। লকের মাঝে ছিল ছোট দ্বীপ। দ্বীপ থেকে বড় বড় পাথর চলে এসেছিল তীর পর্যন্ত। এখানে পুকুরটাতে যে-রকম আছে ঠিক সে-রকম। ওগুলো দিয়ে দ্বীপে যাওয়া যেত, নাম রাখা হয়েছিল ফ্যান্টমস স্টেপস।
লক মানে কি? মুসা বলল। হ্রদ, না?
হ্যাঁ, জবাব দিল কিশোর। ফ্যান্টম লক, বা ভূতের হ্রদ, আর ফ্যান্টমস স্টেপস হল গিয়ে ভূতের সিঁড়ি। ডোরিনার দিকে তাকাল সে। তাহলে এই ব্যাপার! মিস্টার বাওরাড ডাই এখানে বাড়ি বানিয়েছেন স্কটল্যাণ্ডের বাড়ির মত করে। সেজন্যেই ক্যালিফোর্নিয়ায় বেমানান।