দুই সুড়ঙ্গ দিয়ে ঢুকবে না, মোটা পাইপটার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল মুসা।
হুঁ, মাথা দোলাল রবিন। সব আমাদের মাপের। বড় কিছু হলেই আর ঢোকানো যায় না।
সমস্যাটা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে দুজনে, এই সময় দুই সুড়ঙ্গের মুখ দিয়ে বেরোল কিশোর।
হুমম! পাইপের মুখের দিকে একবার, আরেকবার বাক্সটার দিকে তাকাচ্ছে গোয়েন্দাপ্রধান। সহজ তিন দিয়ে ঢুকতে পারে, কি বল?
ট্রেলারে, অর্থাৎ হেডকোয়ার্টারে ঢোকার সব চেয়ে সহজ পথ হল সহজ তিন। ফ্রেম সহ একটা ওক কাঠের দরজা রয়েছে জঞ্জালের ভেতর। মরচে ধরা চাবি লুকানো থাকে একটা খোলে। সেটা দিয়ে দরজার পুরানো তালা খুললেই বেরিয়ে পড়ে সরু গলিপথ। পথটা চলে গেছে ট্রেলারের মূল দরজা অবধি।
চেষ্টা করার আগে, রবিন প্রস্তাব দিল। ট্রেলারের দরজার মাপ নেয়া দরকার।
হ্যাঁ, কিশোর বলল। ও, একটা কথা, সমস্তটাই টিক বানাউয়ের বানানো। গপ্পো, বুঝে ফেলেছি আমি।
বুঝে ফেলেছ! মুসা অবাক। কি করে বুঝলে?
মরিস ডিলম্যানের দোকানে ফোন করেছিলাম। কোন নাবিকের কাছ থেকে বাক্সটা কেনেনি সে। কিনেছে সান্তা বারবারার আরেক সেকেণ্ডহ্যাণ্ড দোকান
থেকে। সেই দোকানদার কিনেছে ছয় মাস আগে এক মহিলার কাছ থেকে।
খাইছে! টিক ব্যাটা তো তাহলে নাবিকও নয়, নাকি?
হলে অবাক হব না। নাবিকের ওরকম পুরানো পোশাক জোগাড় করা মোটেই কঠিন নয়। হয়ত ওসব পরে এসে আমাদের ধোকা দিতে চেয়েছে। কাঁচা কাজ। এত ভারি পোশাক পরার মত শীত নয় এখন।
টিক কল্পনাও করেনি, আমাদের সঙ্গে তার টক্কর লাগবে, রবিন বলল।
না, তা করেনি, স্বীকার করল কিশোর। যাই হোক, একটা কথা ঠিক বলেছে টিক। গতকাল ডিলম্যানের দোকানে গিয়েছিল সে। আরেকটা গল্প শুনিয়েছে। বলেছে, তার বোন বাক্সটা বিক্রি করে দিয়েছে। সে তখন বাড়ি ছিল না। ফিরে এসে জেনেছে। এখন বাক্সটা ফেরত চায়।
গল্প বদলাল কেন? মুসার প্রশ্ন।
হয়ত ভেবেছে, তার নাবিকের গল্প শুনে গলে যাব আমরা, বাক্সটা দিয়ে দেব তাড়াতাড়ি। বাক্সটা কেন চায়, সেকথা গোপন রাখতে চেয়েছে সবার কাছেই। তবে, ডিলম্যানের কাছে বলা তার গল্প একটা জিনিস বোধহয় প্রমাণ করে, যে মহিলা ছয় মাস আগে বাক্সটা বিক্রি করেছে, তাকে চেনে টিক। হয়ত বাক্স বিক্রির কথা জেনেছে ইদানীং, বেশিদিন হয়নি। আগে জানলে আগেই খোঁজ করত ওটার।
তাই তো! আচ্ছা, একটা কথা বল, এত চাইছে কেন বাক্সটা? খালি বাক্স, তেমন কিছু তো নেই।
শুধু আঙটিটা ছাড়া, মুসা বলল। তা-ও, এটাও মনে হয় তেমন দামি নয়।
আর আঙটিটার কথা টিক বানাউ জানত কিনা, সন্দেহ আছে, রবিন যোগ করল।
বাক্সে মূল্যবান কিছু আছে ভেবেছে হয়ত।
কিংবা হতে পারে, কিশোর বলল। লিটল মারমেইড থেকে এসেছে বলেই বাক্সটা দামি। হোক না ভাঙা জাহাজের বাক্স।
তোমার কি মনে হয়? জাহাজটার ব্যাপারে সে আগ্রহী? রবিন বলল। ওটাতেই কিছু আছে?
কি জানি। শোন, আঙটি আর ছুরিটা ছাড়া তো আর কিছু নেই বাক্সটায়। তার পরেও কেন ওটা চাইছে, জানতে হলে, আমার মনে হয় লিটল মারমেইডের ইতিহাস জানা দরকার।
হিসটোরিক্যাল সোসাইটির কিছু জানা থাকতে পারে, রবিন বলল।
মুসার মন খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু আমি যেতে পারব না। মার সঙ্গে বাজারে যেতে হবে। ওখান থেকে ফিরে বাড়িতে কাজ করতে হবে, বাবা বলে দিয়েছে।
আর, আমাকে আবার যেতে হবে মিউজিয়মে, বলল কিশোর। রবিন, তোমাকে একাই যেতে হচ্ছে।
যেতে হলে যাব। আমার অসুবিধে নেই, রবিন জানাল। লাইব্রেরিতে ঢুকে বই পড়া আর গবেষণামূলক কাজে আনন্দই পায় সে।
খানিক পরেই মেরিচাচীর ডাক শোনা গেল। খাবারের জন্যে ডাকছেন।
সাইকেলে করে রকি বীচ হিসটোরিক্যাল সোসাইটিতে পৌঁছুঁতে তিনটের ওপরে বেজে গেল। ভেতরে ঢুকতে ধূসর-চুল এক মহিলা মুখ তুলে তাকিয়ে হাসলেন রবিনের দিকে চেয়ে।
কি জানতে চায়, জানাল রবিন।
লিটল মারমেইড? মহিলা বললেন। নিশ্চয় শুনেছি। এক সময় বেশ আলোড়ন তুলেছিল জাহাজটা। গুজব রয়েছে, গুপ্তধন নাকি আছে ওটাতে।
গুপ্তধন?
সোনার মোহর, অলঙ্কার, এসব, হাসলেন মহিলা। লিটল মারমেইডে পাওয়া কিছু জিনিস আছে আমাদের কাছে। দেখবে?
অবশ্যই দেখবে, জানাল রবিন। উত্তেজিত হয়ে উঠল সে। কজা লাগানো একটা ফাইল বক্স বের করলেন মহিলা।
বাক্সটা নিয়ে প্রায় দৌড়ে এসে পড়ার ঘরে ঢুকল রবিন। সে একা, আর কেউ নেই ওখানে। লম্বা টেবিলের সামনে বসে বাক্সটা খুলল।
ভেতরের জিনিস দেখে অবাক হল সে। কাগজ, পুস্তিকা, ছোট বই, খবরের কাগজের কাটিং, ম্যাগাজিনের আর্টিক্যাল গাদাগাদি করে রাখা। অগোছাল, একটা কাগজ তুলতে যাবে, এই সময় ঘাড়ের ওপরে কথা শোনা গেল, পড়তে সারাদিন লেগে যাবে।
চমকে ফিরে তাকিয়ে রবিন দেখল, ছোটখাটো একজন মানুষ। পরনে পুরানো ফ্যাশনের কালো সুট, ওয়েস্টকোট, আর সোনার চেনওয়ালা ঘড়ি। গোলগাল লাল চেহারা, চোখে রিমলেস চশমা।
আমি হিস্টোরিক্যাল সোসাইটির প্রফেসর হারম্যান কেইন, জানালেন তিনি। মিসেস ডেভিড তোমার আগ্রহের কথা বলল। লোকের, বিশেষ করে তোমার মত কমবয়েসীদের কৌতূহল মেটাতে ভালবাসি আমরা। আমাকে প্রশ্ন করতে পার।
হয়ত পড়ার ঝামেলা থেকে বাচবে।
লিটল মারমেইডের কথা কিছু জানেন, স্যার? জিজ্ঞেস করল রবিন।
নিশ্চয় জানি। আমি এখানে এসেছি, বেশিদিন হয়নি। তবে আমার এক সহকর্মী ওই জাহাজটার ওপর একটা পুস্তিকা লিখেছে। সেটা পড়েই জেনেছি। কি কি জানতে চাও তুমি, বল তো?