সেটা আদালত বিচার করবে, কঠিন কণ্ঠে বললেন চীফ। প্রায় একশো বছর পর আপনার দাবি প্রমাণ করতে পারবেন কিনা, সন্দেহ। ক্যাপ্টেনও নিশ্চয় চুরি করেছিল। নাহলে সাধারণ এক সওদাগরী জাহাজের ক্যাপ্টেন এত দামি মাল পেল কোথায়? লুট করেছিল কিনা তা-ই বা কে জানে? আমার রায় বলতে পারি, এখন ওই জিনিস মিসেস ডাইয়ের প্রাপ্য। ওগুলো তুলে নেয়ার দায়ে না হলেও, লোকের বাড়িতে চুরি করে ঢোকার দায়ে, লোককে মারার দায়ে, জেলে আপনাকে যেতেই হবে।
নিরপরাধ নোবলকে ফাঁসানোর বিচার হবে না? রবিন প্রশ্ন তুলল। নিশ্চয় হবে।
নিয়ে যাও, নিজের লোককে আদেশ দিলেন চীফ।
পুলিশের গাড়িতে তোলা হল প্রফেসরকে।
গুপ্তধন নেয়ার জন্যে থলে আনতে ঘরে গেল এড। কয়েক মিনিট পরেই ফিরে এল। দৌড়াতে দৌড়াতে তার পেছনে এলেন মিসেস ডাই। গুপ্তধন তাহলে মিলল! হাঁপাচ্ছেন তিনি। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেন না।
এগুলো আমাদের, মা! চেঁচিয়ে উঠল এড। আর গরিব থাকব না আমরা।
হাসলেন মিসেস ডাই। সেটা পরে দেখা যাবে, তিন গোয়েন্দার দিকে চেয়ে বললেন। অনেক ধন্যবাদ তোমাদেরকে। তোমরা সত্যিই গোয়েন্দা, কাজের ছেলে!
হাসি ছড়িয়ে পড়ল তিন গোয়েন্দার মুখে।
কিশোর, মুসা বলল। একটা কথা বুঝতে পারছি না। ডিনো ছাউনি পোড়াতে গেল কেন? আর আমাদেরকেই বা আটকে রাখল কেন আড়তে?
ডিনোর দিকে চেয়ে হাসল কিশোর। আরেক দিকে চোখ সরিয়ে নিল টসম্যান। আমার মনে হয় ডিনো আংকেল বিয়ে করতে চায়। তার ভয়, গুপ্তধন পেয়ে ধনী হয়ে গেলে, তাকে আর বিয়ে করবেন না মিসেস ডাই।
অবাক হয়ে ডিনোর দিকে তাকালেন মিসেস ডাই।
লাল হয়ে গেল স্কটসম্যানের চেহারা।
হাসি ফুটল মিসেস ডাইয়ের মুখে। ডিনো, কখনও কিন্তু বলনি আমাকে। বুঝিইনি কিছু।
তাদের দিকে চেয়ে হেসে উঠল সবাই, এমনকি এডও।
আরও লাল হল ডিনো।
২২
বিশাল ডেস্কে কনুই রেখে ঝুঁকে বসলেন বিখ্যাত চিত্রপরিচালক মিস্টার ডেভিস ক্রিস্টোফার। চমকপ্রদ আরেক কাহিনী নিয়ে তাঁর অফিসে আবার এসেছে তিন গোয়েন্দা।
প্রায় একশো বছর পর তাহলে পাওয়া গেল গুপ্তধন, বললেন তিনি। আরেকবার অসম্ভবকে সম্ভব করলে। ভাল একটা ছবি তৈরি করা যাবে। এখন বল তো, প্রফেসর কেইন কি সত্যি লিটল মারমেইডের ক্যাপ্টেনের বংশধর?
হ্যাঁ, স্যার, কিশোর জবাব দিল। ইতিহাসের প্রফেসর তিনি সত্যিই। জোয়ান বয়েসে ভাল নাবিক ছিলেন। ইতিহাস আর সাগরের নেশাই তাকে নিজের পরিবারের অতীত জানতে প্রেরণা জুগিয়েছে। জেনেছেন গুপ্তধনের কথা। সোসাইটিতে চাকরিই নিয়েছিলেন ওগুলো খুঁজতে সাহায্য হবে বলে। প্রথম জার্নালটা পড়ে বুঝেছিলেন, দ্বিতীয় আরেকটা আছে কোথাও।
ওটা খোঁজার জন্যেই বার বার চুরি করে ঢুকেছেন ডাই লজে। পাননি। শেষে খোঁজ নিতে আরম্ভ করেন, কি কি জিনিস বিক্রি করেছেন মিসেস ডাই। জেনেছেন বাক্সটার কথা। খোঁজ করতে করতে চলে আসেন মিস্টার ব্যানারের মিউজিয়মে। মিস্টার ব্যানার তাঁকে চেনেন, কাজেই ছদ্মবেশ নিতে হয়েছে। আরও একটা কারণে নিয়েছিলেন ছদ্মবেশ, যাতে কেউ বুঝতে না পারে, প্রফেসর কেইন গুপ্তধনের ব্যাপারে আগ্রহী। যাতে তাকে কেউ সন্দেহ না করে।
আমরা গুপ্তধন খোঁজা শুরু করলে সুবিধে হল তাঁর। যোগ দিলেন আমাদের দলে। টিক বানাউ নামে সত্যি সত্যি কেউ আছে, এটা বোঝানোর জন্যে মিথ্যে গল্প বানিয়ে বললেন যে সোসাইটিতে চোর ঢুকেছিল। ভুল করেছেন। আমি ঠিক বিশ্বাস করতে পারিনি। কারণ, সোসাইটিতে ঢোকার কোন কারণই নেই টিক বানাউয়ের।
বেশি চালাকি করতে গিয়েই ভুল করে বসে অপরাধীরা, মন্তব্য করলেন পরিচালক। ধরা পড়ে অনেক সময়।
প্রফেসরকে ঠিক অপরাধী বলা যায় না, স্যার, রবিন বলল। আই মীন, ক্রিমিন্যাল মাইণ্ডেড যাকে বলে আরকি। লোভে পড়েই করেছেন কাজটা। ভুল বুঝতে পেরে পরে অনুশোচনাও করেছেন অনেক। অর্ধেক মাল তাকে দিয়ে দিয়েছেন মিসেস ডাই। প্রফেসর সেগুলো দান করে দিয়েছেন সোসাইটিকে। সোসাইটি সেগুলো ব্যক্তিগত যাদুঘরে সাজিয়ে রেখেছে, লোকের দেখার জন্যে।
হুঁ। লোকের মন যে কখন কি হয়, বোঝা মুশকিল, বললেন পরিচালক। কিন্তু জেলে যাওয়া থেকে বাঁচতে পারবে না প্রফেসর।
না, তা পারবে না, কিশোর বলল। মিসেস ডাই তাঁর বিরুদ্ধে নালিশ করেননি, আমরাও না। ডাই লজে যে তিনি চুরি করে ঢুকেছেন, কোন প্রমাণ নেই। শুধু নোবলকে ফাঁসানোর অপরাধেই জেল হবে তার।
মাথা দোলালেন পরিচালক। নোবল তাহলে শুধু প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে নয়, নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্যেও প্রফেসরের পিছে লেগেছিল?
হ্যাঁ, স্যার, মুসা বলল। বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল। জার্নালের কভার নিয়ে স্যালভিজ ইয়ার্ড থেকে পালাতে দেখেছে টিক বানাউ-রূপী প্রফেসরকে। তারপর দেখেছে, শূন্য কভারটা ছুঁড়ে ফেলে দিতে। এতেই বুঝেছে, আরেকটা জানাল আছে। তখনও জানত না, ওটা আমাদের কাছে। তাই লজে গিয়েছিল খোঁজার জন্যে। ডিনো তাকে দেখে তাড়া করে।
তারপর, পরিচালক বললেন। কোনভাবে তোমাদের হাতে জার্নাল দেখে নোবল। চুরি করে হেডকোয়ার্টারে ঢুকে ছবি তুলে আনে ওটার, যাতে জানতে পারে কোথায় কি হচ্ছে। আসলে তোমাদের সাহায্য করতে চেয়েছে। কিন্তু প্রফেসরের বিরুদ্ধে বললে যদি তখন বিশ্বাস না কর এই ভয়ে বলেনি। ঠিক বলেছি না?