ঠিকই তো, রবিন বলল। টিক জানল কি করে?
আলফ্রেড পেরিংটনের নাম জানে সে, রবিন, কারণ, আমাদের এই এলাকা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ টিক। প্রফেসরের দিকে তাকাল কিশোর। ভূতুড়ে শহরে টিক গায়েব হওয়ার পর শুধু ডিনোই নয়, আপনিও হাজির হয়েছিলেন। এই এলাকার লোকাল হিস্টরিতে বিশেষজ্ঞ আপনি। আপনিই টিক বানাউ, এবং আজ সকালে গুপ্তধনগুলো তুলে নিয়ে গেছেন।
হেসে উঠলেন প্রফেসর। সত্যি, কিশোর, একেবারে চমকে দিয়েছ আমাকে। ভাল অভিনয় জান।
না, অভিনয় করছি না আমি।
তাহলে ভুল করেছ। আমার সাইজ আর টিক বানাউয়ের সাইজ এক না।
লম্বায় একই। কিছু বেশি মোটা। ওটা কিছু না। নাবিকদের ভারি জ্যাকেট, পা-জ্যাকেট পরলেই আপনাকে ওরকম মোটা দেখাবে।
আজ সকালে তাহলে চুরি করলাম কখন? বিছানা থেকে উঠেই তোমাকে ফোন করেছি।
কাল সন্ধ্যায়, কিশোর বলল। মুসা যখন রাতেই গুপ্তধন খুঁজতে যাবার কথা বলল, আপনি রাজি হননি। কারণ, আমার আগেই বুঝে ফেলেছেন, কোথায় গুপ্তধন লুকানো আছে। রাতে ফিরে এসেছেন আবার। সম্ভবত, আমার মতই টর্চের সাহায্যে জায়গা আবিষ্কার করেছেন। অন্ধকার ছিল, তার ওপর বৃষ্টি। পানিতে ছায়া দেখে, সেটা কোনখানে নির্দেশ করে বোঝা সম্ভব ছিল না। তাই টর্চ ব্যবহার করেছেন। খুঁড়ে তুলতে তুলতে সকাল হয়ে গিয়েছিল। ফেরার পথে লজে ফোন বাজতে শুনলেন। আড়ি পাতলেন গিয়ে। এড তখন আমার সঙ্গে কথা বলছে।
বুঝে ফেললেন, আমি জেনে ফেলেছি কোথায় আছে গুপ্তধন। সকালে এখানে আপনার আসার কথা, যদি না আসেন সন্দেহ করব। তাই একটা চালাকি করলেন। কোথাও গিয়ে একটা ফোন করে আবার এসে এখানে গাড়িতে বসে রইলেন। ভাব দেখালেন, আহত। গল্প তৈরি করলেন, টিক বানাউ আপনাকে মেরে গুপ্তধন নিয়ে পালিয়েছে। পুলিশ রহস্যময় টিক বানাউকে খুঁজে সময় নষ্ট করবে, ঘুণাক্ষরেও, সন্দেহ করবে না আপনাকে, এটাই ভেবেছিলেন।
কাদার ওপর ওই বুটের ছাপও আপনার সৃষ্টি।
সবার চোখ এখন প্রফেসরের দিকে।
সাইরেনের শব্দ শোনা গেল। পুলিশ আসছে।
প্রমাণ করতে পারবে এসব? হেসে জিজ্ঞেস করলেন প্রফেসর।
পারব, স্যার। কারণ মস্ত একটা ভুল করে ফেলেছেন। আপনি বলেছেন, আজ সকাল আটটায় আপনি বাড়িতে ছিলেন। আমরা আসার কয়েক মিনিট আগে, এখানে এসেছেন। জোর বৃষ্টি হচ্ছিল অনেক আগে থেকেই।
বৃষ্টি? আবার হাসলেন প্রফেসর। তাতে কি…?।
আপনার গাড়ির নিচের মাটি অনেক জায়গায় শুকনো, প্রফেসরের হাসিটা ফিরিয়ে দিল কিশোর। ইঞ্জিন ঠাণ্ডা। আটটার অনেক আগে থেকেই গাড়িটা ছিল
এখানে। বৃষ্টির আগে থেকে।
চোখের পলকে ঘুরে বড় রাস্তার দিকে দৌড় দিলেন প্রফেসর। কাছে এসে গেছে সাইরেন। গাছের ধার দিয়ে ছুটেছেন তিনি, আচমকা বনের ভেতর থেকে তাঁর ওপর লাফিয়ে পড়ল একটা মূর্তি। তাঁকে নিয়ে গড়িয়ে পড়ল মাটিতে। বুকে চেপে বসল। – পৌঁছে গেল পুলিশের গাড়ি। ব্রেক কষল। লাফিয়ে নামল দুজন পুলিশ, প্রফেসর আর তাঁর হামলাকারীকে ধরে ফেলল।
বোরিস, ডিনো আর ছেলেরা দৌড়ে এল সেখানে। ভুরু কুঁচকে প্রফেসর আর নোবলের দিকে তাকিয়ে আছেন চীফ ইয়ান ফ্লেচার।
ব্যাপার কি, কিশোর? জিজ্ঞেস করলেন তিনি। এই লোকটাই কি নোবল? চোর?
হ্যাঁ, আমিই নোবল, ভেজা এলোমেলো চুল ঝাঁকাল তরুণ। কিন্তু আমি চোর নই। চোর হল গিয়ে আপনাদের এই সম্মানিত প্রফেসর।
নোবল ঠিকই বলেছে, চীফ, কিশোর বলল। প্রফেসর হারম্যান কেইনই চোর। সংক্ষেপে কয়েক কথায় সব বুঝিয়ে দিল ফ্লেচারকে। শেষে বলল, আমার মনে হয়, নোেবল চোর ছিল না কখনই। গুপ্তধনের পেছনে লেগেছেন প্রফেসর, এটা জেনে গিয়েছিল হয়ত, আর প্রফেসরও বুঝেছিলেন সেকথা। তাই কায়দা করে তাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন। পুলিশও বোকার মত নিয়ে গিয়ে বেচারাকে জেলে ভরেছে।
তুমি ঠিকই বলেছ, নোবল বলল। তখনই কসম খেয়েছি আমি, প্রতিশোধ নেব। প্রফেসরকে ধরিয়ে দেবই।
মস্ত ঝুঁকি নিয়েছ, চীফ বললেন। ওকে ধরতে না পারলে ভয়ানক বিপদে পড়তে। এমনিতেই প্যারোলে বেরিয়েছ। আবার চুরি করে লোকের বাড়িতে ঢুকেছ জানলে বড় রকমের শাস্তি হয়ে যেত। প্রফেসরের দিকে তাকিয়ে জ্বলে উঠল চোখ। প্রফেসর, জিনিসগুলো দিয়ে দিন ভালয় ভালয়। শাস্তি তাহলে কিছুটা রেয়াত হবে।
হাত নাড়লেন প্রফেসর, কাঁধ ঝাঁকালেন নিরাশ ভঙ্গিতে। মলিন হাসি হাসলেন। কি আর করা? কিশোর পাশা আমাকে এক মস্ত মার দিল। গাড়ির পেছনের সিটের নিচে লুকিয়ে রেখেছি।
গাড়িতে উঠল দুজন পুলিশ। সিট সরাতে বেরোল একটা পা-জ্যাকেট, একটা নাবিকের টুপি, কাদামাখা বুট, ভারি ট্রাউজার, আর একটা রবারের মুখোশ, তাতে টিক বানাউয়ের কালো দাড়ি আর কাটা দাগ।
ওগুলোর দিকে নজর নেই কারও। তাকিয়ে আছে সিটের নিচে রাখা চকচকে জিনিসগুলোর দিকে। আঙটি, হার, ব্রেসলেট, মূল্যবান পাথর বসানো সোনার বাটওয়ালা ছোরা, পাথর খচিত সোনার কৌটা, আর কয়েকশো সোনার মোহর। জলদস্যুদের লুটের মাল।
খাইছে! নিঃশ্বাস ভারি হয়ে গেছে মুসার। কয়েক লাখ ডলারের মাল।
ফ্যানটাসটিক! বললেন চীফ।
বিশ্বাসই হচ্ছে না! বিড়বিড় করল ডিনো।
হাসি চলে গেছে প্রফেসরের। চিৎকার করে বললেন, ওগুলো আমার, শুনছ? সব আমার। আমি চোর নই। বাওরাড ডাইই ছিল চোর। আমাদের কাছ থেকে চুরি করেছিল। আমি…আমি লিটল মারমেইডের ক্যাপ্টেনের বংশধর।