আঙটির জন্যে হাত বাড়াল টিক। আসলই হোক আর নকলই হোক, ওট আমার জিনিস, থোকা। বাক্সটা যেহেতু আমার, ভেতরের সব কিছুই আমার। দাম বল। আমার বাক্স আমি নিয়ে যাই।
দেখি আগে, কি কি আছে, মেরিচাচী বললেন। তারপর বলছি…
বাধা দিল কিশোর, চাচী, বাক্সটা কার, কিভাবে জানছি আমরা। নাম -তে আর লেখা নেই। ওরকম গপ্পো যে-কেউ এসে শোনাতে পারে।
আমাকে মিথ্যুক বলছ, ছেলে? খেপা ষাঁড়ের মত গোঁ গোঁ করে উঠল টিক।
বেশ, প্রমাণ করুন যে আপনি সত্যি বলছেন। কাগজ-টাগজ দেখান। কা; কাছ থেকে কিনেছেন, লিখিত আছে? নইলে এমন কাউকে গিয়ে নিয়ে আসুন, যে সাক্ষী দেবে এটা আপনার। বলবে, জাহাজে আপনার কাছে ছিল।
সবাই বলবে। আমার সঙ্গে যেসব নাবিক আছে, সব্বাই। এখন আমার জিনিস…।
ঠিক আছে, কিশোর বলল। বাক্সটা আমরা রেখে দেব। কারও কাছে বেচব। আপনি গিয়ে লোক নিয়ে আসুন। এক হপ্তা রেখে দেব আমরা। বাক্স ছাড়া ওই কটা দিন নিশ্চয় আপনার অসুবিধে হবে না?
হ্যাঁ, ভাল কথা বলেছ, মিস্টার ব্যানার বললেন। টিক বানাউয়ের চোখ জ্বলছে। যথেষ্ট হয়েছে। এত ভাল কথা লাগবে না। আমার। যা দরকার, সেটা নিয়ে তবেই যাব এখান থেকে, কেউ ঠেকাতে পারবে ন। কিশোরের দিকে এগোল। দাও দিখি আঙটিটা।
দরজার দিকে পিছাতে শুরু করল কিশোর।
এই, শুনুন, বাধা দিতে চাইলেন মেরিচাচী।
চুপ! বলে তাকে থামিয়ে দিল নাবিক।
বিশাল ছায়া পড়ল দরজায়। ঘরে ঢুকল ব্যাভারিয়ান। এই, কাকে ধমক দিলে? শান্তকণ্ঠে বলল সে। ম্যাডামকে? যাও, পায়ে ধরে মাপ চাও।
জোর করে বাক্সটা নিয়ে যেতে চাইছে! চেঁচিয়ে জানাল রবিন।
তাই নাকি?
ধরুন ওকে, বোরিস ভাই, কিশোর বলল।
ধরছি।
বোরিসকে দেখেই থমকে গিয়েছিল টিক। এগোতে দেখে মিস্টার ব্যানারের আড়ালে চলে গেল। শেষে বিপদ বুঝে এক ধাক্কায় মিউজিয়ম-মালিককে বোরিসের গায়ের ওপর ফেলে দরজার দিকে দিল দৌড়।
ধরুন, ধরুন! চেঁচিয়ে উঠল মুসা।
চিত হয়ে পড়ে গেছে বোরিস। তার গায়ের ওপর পড়েছেন বেচারা ব্যানার। জট ছাড়িয়ে দুজনে যখন উঠে দাঁড়াল, বেরিয়ে গেছে টিক। মিউজিয়মের পেছনে গাড়ির ইঞ্জিনের শব্দ হল। ছুটে বাইরে বেরোল ছেলেরা। দেখল, ধুলো উড়িয়ে চলে যাচ্ছে একটা গাড়ি। কোস্ট হাইওয়ে ধরে ছুটে হারিয়ে গেল পাহাড়ের মোড়ে।
ঝামেলা গেল, হাত ঝাড়লেন মেরিচাচী। কাজ সেরে ফেলা দরকার। দাঁড়িয়ে থেক না। মালগুলো তুলে ফেল। …
বুঝতে পারছি না, রবিন বলল। বাক্সটার কী প্রয়োজন তার? এত আগ্রহ কেন?
সুন্দর দেখেছে তো, মেরিচাচী বললেন। ফাঁকি দিয়ে নিতে চেয়েছিল আরকি। যাও যাও, কাজ সেরে ফেল। একবারে শেষ হবে না মাল, আবার আসতে হবে।
ঘন্টাখানেক পর মালের ছোটখাটো একটা পাহাড় তৈরি হল ট্রাকের পেছনে। সামনে উঠে বসলেন মেরিচাচী আর বোরিস। পেছনে ছেলেদেরকে উঠতে সাহায্য করলেন ব্যানার।
মিস্টার ব্যানার, ভুরু কুঁচকে রেখেছে কিশোর। আপনি বললেন স্যান ফ্রান্সিসকোর মরিস ডিলম্যান বাক্সটা পাঠিয়েছে আপনার কাছে?
হ্যাঁ। স্থানীয় লোকের আগ্রহ রয়েছে জাহাজটার ওপর। একশো বছর আগে রকি বীচের কাছেই ডুবেছিল লিটল মারমেইড। মাঝে মাঝেই ওটার জিনিসপত্র বেরিয়ে আসে লোকের হাতে, আমার সামনে পড়লে কিনি…মানে, কিনতাম। এখন আর কিনব না।
নিশ্চয়। এখন আর কি দরকার, কিশোর বলল। হ্যাঁ, একশো নয়, কিছু কম। আঠারশো চুরানব্বই সালে ডুবেছিল জাহাজটা।
ছুটে চলেছে ট্রাক। ভাবনায় ডুবে আছে কিশোর। রবিন আর কিশোর কথা বলছে, দুপাশের দৃশ্য দেখছে।
ইয়ার্ডে পৌঁছল ট্রাক।
মুসা বলল, কিশোর, ফলো করা হয়েছে আমাদের। সবুজ একটা ফোক্সওয়াগেন। সারা পথ পিছে পিছে এসেছে।
লাফিয়ে ট্রাক থেকে নামল তিন গোয়েন্দা। ছুটে গেল গেটের কাছে। পথের পাশে দাঁড়িয়ে আছে সবুজ ফোক্সওয়াগেন। কিন্তু ভেতরে কে আছে, ছেলেরা সেটা দেখার আগেই স্টার্ট নিয়ে টায়ারের তীক্ষ্ণ আর্তনাদ তুলে পথে উঠল গাড়ি, মুখ ঘুরিয়ে চলে গেল।
খাইছে! টিক বানাউ?
হতে পারে, কিশোর বলল। কিন্তু মিউজিয়ম থেকে তো উল্টোদিকে গিয়েছিল সে, এদিকে নয়। আমাদের পিছু নিল কিভাবে?
বাক্সটার ব্যাপারে আরও আগ্রহী লোক আছে হয়ত, রবিন বলল।
কিংবা হয়ত লিটল মারমেইডের ধ্বংসাবশেষের ব্যাপারে আগ্রহী। রহস্যের গন্ধ পেয়েছে কিশোর পাশা, উত্তেজনায় ফেটে পড়বে যেন। তিন গোয়েন্দার জন্যে আরেকটা কেস। আমরা এখন…
তোরা এখনও এখানে? পেছন থেকে ওদেরকে চমকে দিলেন মেরিচাচী। ট্রাকের মাল নামাবি কখন? জলদি কর, জলদি কর।
ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে গিয়ে মাল নামানোয় হাত লাগাল ছেলেরা। পুরানো বাক্সের রহস্য সমাধান আপাতত বাদ।
৩
মাল নামাতে নামাতে দুপুর। তদারকি রেখে যেতে পারছিলেন না মেরিচাচী, নামানো শেষ হলে রান্নাঘরে চললেন খাবার তৈরি করতে। এই সুযোগে ছেলেরা ফিরে এল পুরানো বাক্সের কাছে।
হেডকোয়ার্টারে নিয়ে পরীক্ষা করতে হবে, কিশোর বলল। তোমরা দুজনে আন। আমি যাই, কাজ আছে। কাউকে প্রতিবাদ করার সুযোগ না দিয়ে ছুটে চলে গেল সে।
ভারি বাক্সটার কাছে দাঁড়িয়ে আনমনে মাথা নাড়ল মুসা। তারপর ফুসফুসে চেপে রাখা বাতাস ছেড়ে কুঁকল বাক্সটা তোলার জন্যে।
কোনমতে বাক্সটা বয়ে এনে তিন গোয়েন্দার ব্যক্তিগত ওয়ার্কশপের কোণে ধপ করে নামিয়ে রাখল দুজনে।