আবার পালাল! তিক্তকণ্ঠে বললেন প্রফেসর। শয়তান কোথাকার! নোবলের ব্যাপারে মাথাব্যথা নেই কিশোরের। রবিন আর মুসা কোথায়? ওদের কি করল সে?
ঢোক গিলল এড। নীরব হয়ে রইল অন্যেরা। অন্ধকারে দেখার চেষ্টা করছে কিশোর। গলা চড়িয়ে ডাকল, রবিইন! মুসাআ!
পাহাড়ের পাথুরে দেয়ালে প্রতিধ্বনি তুলল তার ডাক। কেঁপে কেঁপে সেই শব্দের রেশ মিলানোর আগেই এল জবাব, কিশোওর! আমরা এখানে-এ-এ!
ক্ষণিকের জন্যে স্থির হয়ে গেল সবাই।
আবার শোনা গেল একই কথা, কিশোর। আমরা এখানে এ-এ!
আরে দেখ, প্রফেসর বললেন। ছাউনিতে আলো।
হঠাৎ জ্বলেছে আলোটা। দরজা আর একটা জানালার আবছা কাঠামো চোখে পড়ছে। দৌড় দিল কিশোর। পেছনে অন্যেরা। দরজার কাছে এসে তালা ধরে ঝাঁকি দিল। ভেতর থেকে মুসা বলল, ডানপাশে চলে যাও। একটা জানালায় তালা নেই দেখবে।
জানালার কাছে ছুটে গেল ডিনো। বার খুলে, বোর্ড সরাল। খড়খড়ি তুলে উঁকি দিল দুই গোয়েন্দা।
খাইছে! হাসিমুখে বলল মুসা। ভেবেছিলাম আজ রাতে বেরোতে পারব।
লোকের সাড়া পেয়ে আলো নিভিয়ে দিয়েছিলাম, রবিন বলল। ভেবেছি, শত্রু। শত্রুই। দরজার তালা ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করেছে, পারেনি। শেষে এই জানালাটা খুঁজে বের করেছে। বার খোলার আগেই বোধহয় তোমরা এসে গেলে।
নোবল শয়তানটা এসেছিল, তপ্তকণ্ঠে বললেন প্রফেসর।
ও নিশ্চয় আটকায়নি তোমাদের, ডিনো বলল। কতদূর কি হয়েছে দেখতে এসেছিল বোধহয়, আমাদের দেখে পালিয়েছে।
যাকগে। বেরিয়ে এস, বোরিস বলল।
মাথা নাড়ল রবিন। আপনারা ভেতরে আসুন। একটা সূত্র পাওয়া গেছে।
উত্তেজিত হয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ল এড। তারপর কিশোর। একে একে অন্যেরাও ঢুকল। বিশাল শরীর নিয়ে ছোট জানালা দিয়ে ঢুকতে বেশ অসুবিধে হল বোরিসের।
ডেস্কের ওপর রাখা ফাইলটা দেখাল রবিন।
স্পেশাল অর্ডার নম্বর একশো তেতাল্লিশ, জোরে জোরে পড়ল কিশোর। বি. ডাইয়ের জন্যে লাগবে : দশটা স্কয়ার-কাট মনুমেন্ট স্টোনস। এ্যানিটের। দেখতে একই রকম হওয়া চাই সবগুলো। মুখ তুলল গোয়েন্দাপ্রধান। মনুমেন্ট স্টোনস?
এত বড় পাথর দিয়ে কি করেছিল বাওরাড ডাই? মুসা বলল। স্মৃতিসৌধ বানিয়েছে?
নীরবে মাথা নাড়ল শুধু কিশোর, কি বোঝাতে চাইল বোঝা গেল না।
ফ্যান্টম লেকে কোন স্মৃতিসৌধ নেই, ডিনো বলল।
কাছাকাছি অন্য কোথাও আছে? জিজ্ঞেস করলেন প্রফেসর।
কোন শহরে গিয়ে বানায়নি তো? এড বলল।
না, ধীরে ধীরে বলল কিশোর। আমি শিওর, নোরিয়ার চমক ফ্যান্টম লেকেই অপেক্ষা করছে। জার্নালের লেখার আর কোন মানে হতে পারে না।
নোরিয়ার চমক বানানোর জন্যে প্রতিবারেই বাড়ি ফিরে এসেছেন বাওরাড।
কিন্তু সেটা লুকাল কিভাবে? প্রফেসর বললেন। এমনই বুদ্ধি করে লুকিয়েছে, এত বছরেও কারও চোখে পড়ল না।
তাকালেই হয়ত দেখি, রবিন বলল। সেজন্যেই চোখে পড়ে না। চোখের সামনে যে জিনিস থাকে, সেটাই সহজে চোখে পড়ে না।
চোখে পড়ার দরকার নেই, হঠাৎ বলে উঠল মুসা। জাহান্নামে যাক গুপ্তধন। আগে খাওয়া দরকার। আমি আর সহ্য করতে পারছি না।
হেসে উঠল সবাই। ছিন্ন হল টান টান উত্তেজনা, হালকা হয়ে গেল পরিবেশ।
চল, আমাদের ওখানেই খাবে, আমন্ত্রণ জানাল এড। ফোন করে বাড়িতে জানিয়ে দিয়ো।
উত্তম প্রস্তাব, হেসে বললেন প্রফেসর। আমার মত বুড়োকে খাওয়াতেও নিশ্চয় মুখ কালো করবেন না মিসেস ডাই।
১৮
খাওয়ার পর কথা বলার জন্যে সবাই এসে বসল লিভিংরুমে।
টিক আর নোবল একসঙ্গে কাজ করছে, প্রফেসর বললেন। এখন ব্যাপারটা পরিষ্কার।
প্রমাণ করতে পারব না, স্যার চিন্তিত ভঙ্গিতে নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল কিশোর। যাক, সেটা পরে দেখা যাবে। আগে, ধাধা রহস্যের সমাধান হয় কিনা দেখি। বোঝাই যাচ্ছে, নোরিয়ার জন্যে একটা ধাঁধা তৈরি করেছিলেন বাওরাড, চেয়েছিলেন, স্ত্রী সেটার সমাধান করুক।
একশো বছর আগে চেষ্টা করলে হয়ত করা যেত, ডিনো বলল। কিন্তু এখন সেটা অসম্ভব।
গরম হয়ে এড বলল, গুপ্তধন বেরোক, এটা তুমি চাও না নাকি, চাচা?
গাল ফুলিয়ে বলল ডিনো, বেশ, কর বের। আমি আর কোন কথা বলব না।
বাওরাড ডাইয়ের চিঠিটা কোলের ওপর বিছিয়ে পাতলা জার্নালটা খুলল কিশোর। কাছে সরে এল রবিন, মুসা আর এড।
পাউডার গালচ থেকেই শুরু করা যাক, কিশোর বলল। নূস টিম্বার আর শ্রমিকের জন্যে পাউডার গালচে গিয়েছিলেন বাওরাড। খাবার কিনেছিলেন অনেক। তাতে মনে হয়, বেশ বড়সড় কাজের পরিকল্পনা করেছিলেন।
তারপর গিয়েছিলেন ক্যাবরিলো আইল্যাণ্ডে। কোন একটা প্রস্তাব দেন দ্বীপের মালিককে, তাতে রাজি হয় সে। তারপর নৌকায় মাল বোঝাই করে ফিরে আসেন। দ্বীপ থেকে কোন জিনিস আনেন এখানে।
তার পর, ড্যানিয়েল ব্রাদার্সদের কাছ থেকে কেনেন দশটা বর্গাকৃতি মনুমেন্ট স্টোনস।
আর সব শেষে, সান্তা বারবারার ডাইক কোম্পানির কাছ থেকে এনেছিলেন কোন জিনিস। এমন কিছু, যা জাহাজে দরকার হত। কারণ, একমাত্র জাহাজের মালই সরবরাহ করে ডাইক কোম্পানি। জিনিসটা, বা জিনিসগুলোর ওপর পিতলের প্লেট লাগানো, তাতে কোম্পানির নাম খোদাই করা।
হেসে উঠল ডিনো। কথা বলবে না বলেছে বটে, কিন্তু কিশোর থামতেই প্রতিজ্ঞা ভুলে বলে উঠল, গবেষণা তো ভালই করেছ। এসব দিয়ে এখন কি ভূত ধরবে?
তার কথার জবাব দিল না কেউ। কড়া চোখে একবার ডিনোর দিকে তাকিয়ে কিশোরের দিকে ফিরলেন মিসেস ডাই। তোমরা যাওয়ার পর সারা বাড়ি খুঁজেছি আমি। পিতলের কোন প্লেটে ডাইক কোম্পানির নাম দেখলাম না। জিনিসটা কি?