ভেঙে ফেলেছে। বলে উঠলেন মিসেস ডাই।
গুপ্তধন খুঁজেছে! উত্তেজনায় কাঁপছে এড।
নিশ্চয় নোবলের কাজ, কিশোর বলল। টিক বানাউও হয়ত ছিল সঙ্গে। সান্তা বারবারা থেকে ফিরে এসে এই কাজ করেছে। কিন্তু স্মোকহাউসের কথা কি করে জানল…?
বড় একটা হাতুড়ি কুড়িয়ে নিল বোরিস। হাতলটা এখনও গরম।
কান পেতে রইল ওরা। কোন শব্দ শোনা গেল না। লণ্ঠনের আলোয় স্মোকহাউসের পাথরগুলো দেখছে কিশোর।
নিরেট পাথর, আনমনে বিড়বিড় করল সে। ফাপা-টাপা নেই যে ভেতরে কিছু থাকবে। সবখানে মাকড়সা :কিছু টেনে নেয়ার চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না।
আলগা পাথর পা দিয়ে সরিয়ে দেখছে এড। কিশোর, লেখা!
লণ্ঠনটা কাছে নিয়ে এল বোরিস। পাথরের ওপর থেকে বালি মুছতেই স্পষ্ট হল লেখাটাঃ হুঁ, ডাই। ১৯০৫।
আমার দাদা-শ্বশুর, মিসেস ডাই বললেন। তাঁর নাম ছিল এডওয়ার্ড ডাই।
তারমানে বাওরাড বানাননি এই স্মোকহাউস, হাসল কিশোর। আপনার দাদা-শ্বশুর বানিয়েছিলেন। এখানে গুপ্তধন থাকার কথা না। চলেন, যাই।
লজে ফিরে ইয়ার্ডের ট্রাকের পাশে প্রফেসরের স্টেশন ওয়াগনটা দেখা গেল। গায়ে হালকা সুট, সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে শীতে কাঁপছেন। ইস, সাংঘাতিক শীত পড়েছে ক্যালিফোরনিয়ায়। হাসলেন। খবর কি জানতে এলাম।
গরম লিভিংরুমে আগুন আর ক্রিস্টমাস ট্রী-র সামনে বসে, সান্তা বারবারায় কি কি করে এসেছে প্রফেসরকে জানাল কিশোর।
পিতলের প্লেট? টিক আর নোবেল দুজনেই গিয়েছিল? হুমম, মাথা দোলালেন প্রফেসর। তা, পিতলের প্লেটটা পাওয়া গেছে?
না, স্যার, এড বলল। আসলে খুঁজিইনি এখনও।
মুসা আর রবিনের আসার অপেক্ষায় আছি, বলল কিশোর। কোথায়, কি জন্যে গেছে ওরা, সেকথাও জানাল প্রফেসরকে। ঘড়ির দিকে চেয়ে অস্বস্তি বাড়ল তার। ডিনো নিয়ে গেছে, না?…ওই যে, এল বোধহয়।
ফোর্ডটাই এসেছে, ইঞ্জিনের শব্দেই বোঝা গেল। হাত ডলতে ডলতে ঘরে ঢুকল ডিনো। একা।
ওরা কোথায়? জিজ্ঞেস করলেন মিসেস ডাই।
ফেরেনি এখনও? তাহলে নিশ্চয় আড়তে, যেখানে নামিয়ে দিয়েছি। এডের দিকে তাকাল ডিনো। সান্তা বারবারা থেকে কি রত্ন জোগাড় করে আনলে?
সংক্ষেপে বলল এড। শেষে বলল, প্লেটটা এখনও খুঁজতে পারিনি। নানা রকম ঝামেলা…রবিন আর মুসা আসছে না। ওদিকে মোকহাউসটা ভেঙে গুঁড়িয়ে ফেলেছে কে জানি।
স্মোকহাউস? ও, হ্যাঁ…, ঘড়ি দেখল ডিনো। ছেলেগুলো এল না কেন এখনও? এতক্ষণ তো লাগার কথা না।
পাথরের শোকহাউস? প্রফেসর বললেন। কি করে জানল…?
প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই জবাব দিল এড, রবিন আর মুসার সঙ্গে কথা বলেছে হয়ত।
কিংবা ড্যানিয়েলদের সঙ্গে নোবেলও দেখা করেছে, বলল কিশোর। নাহ, বেশি দেরি করছে। আড়তটার কথা নোবলও জেনে গেল না তো? সহজেঁই একজন পিছু নিতে পারে ওদের।
তা-ই করেছে। লাফ দিয়ে উঠে দরজার দিকে রওনা হয়ে গেলেন প্রফেসর। নিশ্চয় বিপদে পড়েছে ওরা। জলদি এল।
১৭
আড়তে কোথাও বাতি দেখা গেল না। শুধু তারার আলোয় আবছা মত চকচক করছে পাথরগুলো। গর্তের নিচে কালো অন্ধকার।
সাইকেল দুটো ডিনো আগে দেখল। এখানেই রেখে গিয়েছিলাম ওদের। ওরা এখানেই কোথাও আছে। নইলে সাইকেল থাকত না।
টর্চের আলোয় পাহাড়ের কাটা ধাপগুলোকে মনে হল যেন কোন দানবের সিঁড়ি। গর্তের পানিতে প্রতিফলিত হল আলো। কালো ময়লা পানির দিকে তাকিয়ে প্রফেসর বললেন, পিছলে পড়েনি তো? কণ্ঠ কেঁপে উঠল তার। তাহলে…।
থাক থাক, আর বলবেন না, ভয় পেয়েছে এড।
সিঁড়িগুলো ভালমত দেখছে কিশোর, চকের চিহ্ন খুঁজছে। কার্ডে চিহ্ন না থাকলেও তিন গোয়েন্দার নতুন চিহ্ন নির্ধারিত হয়েছে তারকা। পাওয়া গেল না।
টর্চ আর লণ্ঠন নিয়ে আশেপাশে অনেক জায়গায় খোঁজা হল। কোন চিহ্ন নেই, যেন বাতাসে মিলিয়ে গেছে দুই গোয়েন্দা। শুধু পাথরের সিঁড়ি, গর্তের পুরানো দেয়ালের ফাঁকে ফাঁকে জন্মে থাকা প্রায় বিকলাঙ্গ উদ্ভিদ, আর অসংখ্য পাথর—ছোট-বড়-মাঝারি, নানা রকমের, নানা আকারের।
অন্ধকারে হুটোপুটি করছে ছোট ছোট জীব। দুটো সাপ দেখল ওরা, এক পাথরের আড়াল থেকে বেরিয়ে আরেক পাথরের তলায় গিয়ে লুকাল। কয়োট ডাকল দূরে। নিশাচর বড় পাখি ডানায় ভারি শব্দ তুলে উড়ে যাচ্ছে গাছ থেকে গাছে। খাবারের সন্ধানে ছায়ার মত নিঃশব্দে মাথার ওপর চক্কর মারছে দুর্দান্ত শিকারী হুতোয় পেঁচা।
রবিন আর মুসার কোন সাড়াশব্দ নেই।
আড়তের প্রায় পুরো সীমানাটাই ঘুরে এসেছে ওরা, এই সময় শোনা গেল আওয়াজ।
শুনছ! ফিসফিসিয়ে বলল বোরিস।
কাছেই হচ্ছে শব্দটা, ধাতব।
দেখা যায় কিছু? এড জিজ্ঞেস করল।
না, বললেন প্রফেসর।
আবার হল শব্দ, কাঠের সঙ্গে কাঠের ঘষা, তারপর কাঠের সঙ্গে ধাতব কিছুর।
ওই যে! নিচু কণ্ঠে বলল কিশোর। একটা ছাউনি না? মনে হয় ওখান থেকেই আসছে।
ছাউনিতে শব্দ হচ্ছে। খটখট ঝনঝন করে উঠল কি যেন, ছুট দিল কেউ। টর্চ জ্বালল ডিনো। পাতলা একটা মূর্তিকে ছুটে যেতে দেখা গেল ছাউনির কাছে পার্ক করা ছোট একটা গাড়ির দিকে।
নোবল! চেঁচিয়ে উঠলেন প্রফেসর। ধর, ধর ব্যাটাকে!
আরে, পালিয়ে যাচ্ছে তো, ধর না, গর্জে উঠল ডিনো।
এই নোবল, দাঁড়াও। থাম! প্রফেসর বললেন।
থামল না সে। পৌঁছে গেছে সবুজ ফোক্সওয়াগেনের কাছে। গাড়িতে উঠে ইঞ্জিন স্টার্ট দিল। ওটার কাছে কেউ যাওয়ার আগেই শাঁ করে বেরিয়ে গেল কাঁচা রাস্তা ধরে।