মিশেছি, যেভাবেই হোক, কিশোর বলল। সেটা আপনাকে বলতে যাব কেন? হ্যাঁ, ভাল কথা, দ্বিতীয় জার্নালটা পোড়েনি, যেটার ছবি তুলে নিয়েছিলেন।
দ্বিধা করল নোবল। ওই স্টোরে গিয়ে কি কি জানলে?
কি করে ভাবলেন, আপনাকে বলব? ঝাঁজাল কণ্ঠে বলল এড।
গিয়ে আপনার দোস্ত টিক বানাউকে জিজ্ঞেস করছেন না কেন? কিশোর, বলল।
টিক বানাউ? ওর সম্পর্কে আবার কি জান?
জানি, দুজনেই গুপ্তধনের পিছে লেগেছেন, বলল এড। কিন্তু নিতে পারবেন, মনে রাখবেন একথা। চালাকিতে আমাদের সঙ্গে…।
চালাকি? তারমানে এখনও জান না ওগুলো কোথায় আছে? প্রফেসরও না? টিক বানাউ জানে?
কেন, সব কথা বলেনি নাকি আপনার দোস্ত? হাসল কিশোর। বন্ধুকেও ঠকানোর চেষ্টা?।
দীর্ঘ এক মুহূর্ত স্থির দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে রইল নোবল। চারজ। দেখেছি। তোমাদের অন্য দুই বন্ধু কোথায়?
জানার খুব ইচ্ছে বুঝি?ব্যঙ্গ করল এড। বলব না, কিশোর বলল।
তারমানে জরুরি কোন কাজে গেছে। নিশ্চয় ড্যানিয়েলদের স্টোন ইয়ার্ডে, তাই না?
জবাব দিল না কিশোর।
তাহলে ঠিকই বলেছি, আবার বলল নোবল। শক করে হাসল একবার। তারপর উঠে চলে গেল।
কপালই খারাপ আমাদের, দীর্ঘশ্বাস ফেলল কিশোর। তক্তার এমন জায়গায় পা দিয়েছি, একেবারে ধপাস। সাবধান থাকলেই পড়তাম না।
কিশোর! আতঙ্ক চাপতে পারল না এড। জোয়ার! জোয়ার আসছে!
শেষ বিকেলে ফ্যান্টম লেকের ডাই লজে ফিরে এল মুসা আর রবিন। সাড়া পেয়ে, বেরিয়ে এলেন মিসেস ডাই। এড আর কিশোর ফেরেনি, জানালেন। ওরা জানাল, ড্যনিয়েলদের ইয়ার্ড থেকে কি জেনে এসেছে।
এক টন স্পেশাল পাথর? আনমনে বললেন মিসেস ডাই। ঈশ্বর, কেন? এই বাড়ি তৈরির জন্যে নিশ্চয়?
না, ম্যাডাম,মুসা বলল। তখন এই বাড়ি তৈরি হয়ে গেছে।
পাথর দিয়ে আর কিছু বানানো হয়েছে, জানেন? রবিন জিজ্ঞেস করল।
ভাবলেন মিসেস ডাই। মাথা নেড়ে বললেন, না। আর কিছু না।
কিন্তু কিছু একটা নিশ্চয় বানানো হয়েছে, মুসা বলল। এমন কিছু…
ইঞ্জিনের শব্দ শোনা গেল। ওরা ভাবল ট্রাকটা, কিন্তু না। মিসেস ডাইয়ের পুরানো ফোর্ড। কাছে এসে থামল। ডিনো নামল, হাতে ছোট একটা জেনারেটর। দূর, কেউ ঠিকমত কাজ করে না এখানে, খুব বিরক্ত সে। ক মিনিটের কাজ?। অযথা এতক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখল, ছাউনিতে আগুনে পুড়ে নষ্ট হয়েছিল যন্ত্রটা, মেরামত করিয়ে এনেছে, সেকথা জানাল ছেলেদের।
ডিনো, মিসেস ডাই বললেন। বাড়ি আর ছাউনি ছাড়া পাথর দিয়ে আর কি তৈরি হয়েছে এখানে, জান? এক টন পাথর।
পাথর? ভ্রূকুটি করল ডিনো। এক টন?
ড্যানিয়েলের কাছে কি কি জেনে এসেছে, আরেকবার বলল রবিন আর মুসা।
কি জানি, আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না। আড়তে গেলে জানা যাবে বলছ?
হয়ত, রবিন বলল। কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে। এখন সাইকেল নিয়ে যেতে যেতে অন্ধকার হয়ে যাবে।
চল, আমি নিয়ে যাচ্ছি। ওদিকে এমনিতেও যেতাম, কাজ আছে। পথে তোমাদের নামিয়ে দিয়ে যাব। ফেরার সময় সাইকেল নিয়ে ফিরবে।
ফোর্ডের বুটে সাইকেল তুলল রবিন। মুসা ঠেলেঠুলে পেছনে, সিটের ওপর রাখল। সামনে, ডিনোর পাশে উঠে বসল দুজনে।
পুরানো আড়তের কাছে যখন পৌঁছল ওরা, তখন আলো রয়েছে। দুই গোয়েন্দাকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল ডিনো।
আড়ত মানে বিশাল এক গর্ত, কিংবা ছোটখাটো এক পুকুর বলা চলে—এক পাড় থেকে আরেক পাড়ের দৈর্ঘ্য দুশ ফুট। তলায় পানি জমে আছে। সর্বত্র মাথা তুলে রেখেছে পাথর, পড়ন্ত সূর্যের আলোয় লাল। প্রায় পুরো পাহাড়ের গা থেকেই ওখানে পাথর কেটে নেয়া হয়েছে, কোথাও সিঁড়ির মত ধাপ ধাপ হয়ে আছে, কোথাও ছড়ানো চত্বর। ওরকম একটা চত্বরের ওপর দেখা গেল একটা জীর্ণ মলিন ছাউনি, পাহাড়ের কাঁধের ওপর। ছাউনির বাইরে একটা ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে, ভেতরে আলো জ্বলছে।
কেয়ারটেকার আছে,মুসা বলল।
ছাউনির দিকে রওনা হল ওরা। খানিকটা যেতেই ভেতরের আলো নিভে গেল। বেরিয়ে এসে ট্রাকে উঠল একজন লোক।
চিৎকার করে ডাকল। ওরা, এই যে, স্যার…এই যে…।
বেশ দূরে ট্রাকটা, ইঞ্জিনও চালু করে দেয়া হয়েছে, ফলে ওদের ডাক লোকটার কানে পৌঁছল বলে মনে হল না। দৌড় দিল ওরা। কিন্তু ততক্ষণে চলতে শুরু করেছে ট্রাক।
পাহাড়ী পথ ধরে ট্রাকটা চলে যাওয়ার পর ছাউনির সামনে এসে দাঁড়াল দুজনে। দরজায় তালা দেয়া।
দূর, আরেকটু আগে এলেই হত, নিরাশ ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকাল মুসা।
ছাউনিটা ঘুরে দেখল রবিন। চারটে জানালা, খড়খড়ি লাগানো। বাইরে থেকে ভারি বোর্ড খাঁজে বসিয়ে, তার ওপর বার লাগিয়ে তালা দেয়ার ব্যবস্থা। ভেতরে ঢুকতে পারলে রেকর্ডগুলো দেখা যেত, বলল সে।
রবিন, মুসা ডাকল। এটা ভোলা। ঢোকা যাবে।
হুঁ। যাক, কপাল ভালই আমাদের।
জানালা দিয়ে ভেতরে ঢুকল ওরা। পুরানো কাঠের ফাইল, আসবাবপত্র। একটা কেবিনেটে লেবেল লাগানো দেখল মুসাঃ ১৮৭০-১৯০০। ওটা খুলে ভেতর থেকে ১৮৯ঙুলেখা ফাইলটা বের করল। এনে রাখল ডেস্কে।
পড়ার জন্যে ঝুঁকল রবিন।
বাইরে হালকা পায়ের শব্দ হল।
পাঁই করে ঘুরল রবিন। কে?
বন্ধ হয়ে গেল খড়খড়ি। খুঁজে বসিয়ে দেয়া হল বোর্ডটা। বার লাগানোর শব্দ শোনা গেল পরিষ্কার। তারপর দ্রুত সরে গেল পায়ের আওয়াজ।
বন্দি হল দুই গোয়েন্দা।
১৬
ফোকর দিয়ে তেরছা হয়ে রোদ এসে পড়েছে খোলে। বেশ কয়েকবার জোরে জোরে চিৎকার করে ক্ষান্ত দিয়েছে কিশোর আর এড, লাভ হয়নি। ভেজা দেয়ালে হেলান দিয়ে বসেছে এখন গলুইয়ের দিকটায়। মাঝে মাঝে শঙ্কিত চোখে তাকাচ্ছে বাড়ন্ত জোয়ারেরঞ্জলের দিকে। একটু একটু করে উঠে আসছে ওদের কাছে।