কারও সাথে দেখা করতে গেছে, অনুমান করল কিশোর।
টিক বানাউ?
চল, দেখি।
রাস্তা পেরিয়ে, সাবধানে বার্জের দিকে এগোল ওরা। কাছে এসে দাঁড়িয়ে গেল। কান পাতল, ওপাশে কি কথা হয় শোনার জন্যে। কিন্তু কিছুই শোনা গেল না।
বেশি দূরে, এড বলল। চল ঘুরে গিয়ে দেখি।
না। দেখে ফেলবে। তারচে উপরে উঠি।
বার্জের এক পাশে একটা মই লাগানো। কাত হয়ে আছে ঝর্জটা, ফলে মই বেয়ে উঠতে অসুবিধে হয়। অনেক কায়দা কসরত করে শেষ পর্যন্ত উঠল ওরা। পা টিপে টিপে এগোল ডেকের ওপর দিয়ে। অন্য ধারে যাওয়া আর হল না, তার আগেই মড়মড় করে ভাঙল প্লচা তক্তা।
হুঁক! করে উঠল কিশোর। ভেজা, নরম কিছুর ওপর পড়েছে।
পুরানো বস্তা। বস্তার ওপর পড়েছি।
মাথার ওপরে গোল ফোকর-হ্যাচের ঢাকনা ভেঙে পড়েছে ওরা, আবছা আলো আসছে সেখান দিয়ে। বার্জের খোলে পড়েছে। ভেজা, ভ্যাপসা দুর্গন্ধ। খোলের পাশেও এক জায়গায় তক্তায় ফাটল, হালকা আলো আসছে ওপথেও। মাথার ওপরের ফোকরটা বারো ফুট ওপরে।
কোন কিছুর ওপর দাঁড়াতে পারলে ধরা যেত, কিশোর বলল।
পিচ্ছিল খোলে হেঁটে বেড়াল ওরা। উঠে দাঁড়ানোর মত কিছুই চোখে পড়ল। বস্তা ছাড়া আর কিছু নেই। বাক্স, তক্তা, দড়ি, মই, কিছু না। অন্ধকার কোণে খচমচ করে নড়ছে কি যেন।
ইঁদুর, এড বলল। কিশোর, এখান থেকে বেরোনোর কোন রাস্তা নেই।
দেখি আরেকবার খুঁজে। এমাথা থেকে ওমাথা, কোথাও বাদ দেব না
পেছনের শেষ প্রান্তে এসে ছপ করে পানিতে পা দিয়ে ফেলল কিশোর। অল্প পানি জমে রয়েছে। ঢোক গিলল সে। এড, গলা কাপছে। জোয়ারের সময় পানিতে ডুবে যায় এটা।
দ্রুত আবার ফোকরটার নিচে ফিরে এল ওরা।
চেঁচাই?.এড বলল।
এই সময় ফোকর দিয়ে উঁকি দিল একটা মুখ। তরুণ। কালো গোঁফ। চেঁচিয়ে লাভ হবে না, হেসে বলল সে। শীতকালে এদিকে বড় একটা আসে না কেউ। তাছাড়া রাস্তা এখান থেকে অনেক দূরে, গাড়িঘোড়ার গোলমাল। গলা ফাটিয়ে চেঁচালেও কেউ শুনবে না। আবার-হাসল লোকটা। তার চেয়ে এক কাজ করা যাক, এস, কথা বলি।
১৫
কিশোররা যখন সান্তা বারবারায় পৌঁছেছে, প্রায় একই সময় মুসা আর রবিনও পৌঁছুল ড্যানিয়েল ব্রাদার্সদের অফিসের সামনে। একটা ট্রাকে ইট তুলছে বাদামী চামড়ার এক লোক। ছেলেরা জানাল, কি জন্যে এসেছে। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপালের ঘাম মুছল সে। হাসল। বিখ্যাত ড্যানিয়েল ব্রাদার্স? একজন ছিল আমার দাদার বাবা, আরেকজন চাচা। আমি ডিলিয়ানো ড্যানিয়েল। পাথরের কাজই বেশি করি আমরা। দামি জিনিস, লাভও বেশি।
আপনার বাপ-দাদাদের কথা তো তাহলে ভালই বলতে পারবেন, হেসে বলল রবিন।
নিশ্চয়। কি জানতে চাও?
আঠারশো ছিয়ানব্বই সালের বাইশে নভেম্বর, এক ওয়াগন বোঝাই মাল কিনেছিলেন স্কটল্যাণ্ডের বাওরাড ডাই। কি কিনে ছিলেন জানতে চাই।
আঠারশা ছিয়ানব্বই? চোখ কপালে তুলল ডিলিয়ানো। মানে একশো বছর আগে?
চার বছর কম,মুসা বলল।
আপনি কোন সাহায্য করতে পারবেন না, না? বলল রবিন।
একশো বছর! আবার বলল ডিলিয়ানো। নেচে উঠল কালো চোখের তারা। হাসল। পারব না কেন? পারব। এ শহরে আমাদের চেয়ে ভাল রেকর্ড কে রাখে? এস।
ছেলেদেরকে অফিসে নিয়ে এল ডিলিয়ানো। কাঠের ক্যাবিনিট খুলে পুরানো একটা ফোল্ডার বের করল, হলদে হয়ে গেছে পাতাগুলো। ধুলো ঝেড়ে ফাইল বের করে পাতা ওল্টাল কয়েকটা। হেসে মুখ তুলে তাকাল ছেলেদের দিকে। পেয়েছি। বাইশে নভেম্বর বললে না? বাওরাড ডাই। এই যে। বাওরাড ডাই, ফ্যান্টম লেক। স্পেশাল অর্ডার দিয়েছেঃ এক টন পাথর। নগদ টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে গেছে।
এক টন? মুসা জানতে চাইল, কি পাথর?
কি পাথর, লেখা নেই। শুধু এক টন লিখেছে, আর লিখেছে, স্পেশাল অর্ডার। তবে দাম দেখে বোঝা যায় সাধারণ পাথর নয়।
স্পেশাল অর্ডার বলতে তখন কি বোঝাত? রবিন জিজ্ঞেস করল।
সাধারণ পাথর নয়, এটুক বলতে পারি, চোয়াল ডলল ডিলিয়ানো। হতে পারে স্পেশাল অর্ডারে কেটে, সাইজ করে সাপ্লাই দেয়া হত। ঘষে-মেজে পালিশ করেও পাথর সাপ্লাই দিই আমরা। আচ্ছা, নিয়ে গিয়ে সাইডওয়াক বানায়নি তো?
সাইডওয়াক?
তখনকার দিনে বড় চ্যাপ্টা পাথর দিয়েই সাইডওয়াক বানানো হত।
কি জানি, রবিন বলল। ওরকম কিছু বানিয়েছে কিনা জানি না।
পাথর দিয়ে বাড়িও বানানো হত অনেক। দেয়াল, ভিত, ফ্ল্যাগস্টোনস…কোন জায়গায় বড় পাথর, কোন জায়গায় ছোট পাথর–সাইজ জানতে চাও?
হ্যাঁ, জানলে খুব ভাল হয়।
পাহাড়ে আমাদের পুরানো আড়ত থেকে আনা হত তখন পাথর। এখন আর ওখানে তেমন নেই, ফলে লোকজনও রাখা হয় না বেশি, শুধু একজন কেয়ারটেকার আছে। একটা অফিস আছে ওখানে। পুরানো রেকর্ড থাকার কথা।
যাওয়া যাবে? আগ্রহ উত্তেজনায় কাঁপতে শুরু করল রবিন।
যাবে। ফ্যান্টম লেক থেকে বড়জোর দুমাইল। কিভাবে কোথায় যেতে হবে বলে দিল ডিলিয়ানো।
আমরা আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই না, সাফ মানা করে দিল এড। আপনি কে খুব ভাল করেই জানি।
সতর্ক হয়ে উঠল লোকটা। কি জান?
জানি, আপনি একটা চোর। সোসাইটিতে চুরি করে জেলে গেছেন, কড়া গলায় বলল কিশোর। তারপর জেল থেকে বেরিয়ে আবার শুরু করেছেন শয়তানি।
পুলিশকে জানানো হয়েছে আপনার কথা, যোগ করল এড।
ঝট করে মাথা তুলে চারপাশে তাকাল নোবল, বোধহয় পুলিশ আছে কিনা দেখল। তাকাল আবার ছেলেদের দিকে। প্রফেসরের বাচ্চা তাহলে বলে দিয়েছে তোমাদেরকে। ওটার সঙ্গে মিশলে কিভাবে?