নিশ্চয়ই। তবে চেহারাটা দেখিনি।
তাহলে, তাড়াতাড়ি বলল কিশোর। দেরি করা যায় না আর। টিক বানাউ হয়ে থাকলে, বোঝা যাচ্ছে জার্নালটা আর তার দরকার নেই। যা জানার জেনে নিয়েছে। চলুন, চলুন।
বন থেকে বেরিয়ে এল ওরা। উদ্বিগ্ন হয়ে অপেক্ষা করছেন মিসেস ডাই। বোরিস রয়েছে তাঁর সঙ্গে। হৈ চৈ শুনে ট্রাক ফেলে দেখতে এসেছে কি হয়েছে।
পালিয়েছে শয়তানটা, ডিনো বলল। ইস, আর একটা মিনিট আগে বেরোলেই…, কথা শেষ না করে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরল সে।
আপনি ঘরে ছিলেন, মিস্টার হ্যাংবার? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
হ্যাঁ। ধোঁয়ার গন্ধ পেয়ে বেরিয়েছি।
পুলিশকে জানানো দরকার, বললেন প্রফেসর। কাজ পড়ে আছে ওদিকে। তবু, যাবার সময় থানায় ঢু মেরে যেতে পারব।
তা-ই করবেন, ডিনো বলল। ছেলেদের দিকে তাকাল। তোমাদের ধারণাই ঠিক। আমিই ভুল করেছি। গুপ্তধন হয়ত আছে। জোরে জোরে মাথা নাড়ল সে। না থাকলেও কয়েকটা শয়তান লোক অন্তত বিশ্বাস করে বসেছে যে আছে। তোমরা আর এসবে নাক গলিয়ো না। যা করার পুলিশই করবে। তোমরা করতে গিয়ে বিপদে পড়বে খামোকা।
আমিও তাই বলি, বয়েজ, ডিনোর সঙ্গে একমত হলেন প্রফেসর।
হয়ত…, শুরু করেও বাধা পেয়ে থেমে গেলেন মিসেস ডাই।
কিছুই হবে না, ম্যাডাম, কিশোর বলল। টিক ভাবছে, যা পাওয়ার পেয়ে গেছে। আমাদের কিছু করতে আসবে না সে। আর দ্বীপ থেকে আমাদের তাড়া খেয়ে পালিয়েছে নোবল। কিছু করার ইচ্ছে থাকলে তখনই করতে পারত। আমাদের এখন প্রধান কাজ তাড়াতাড়ি গুপ্তধন খুঁজে বের করা। নইলে নিয়ে চলে যাবে ওরা।
আত্মবিশ্বাস থাকা ভাল, খোকা, ডিনো পছন্দ করতে পারছে না কিশোরের কথা। তবে বেশি থাকা ভাল না। বিপদ বাড়ে তাতে।
আমার তা মনে হয় না, দৃঢ়কণ্ঠে বলল কিশোর।
আমারও, বললেন মিসেস ডাই। তাছাড়া ওরা কচি খোকা নয়। নিজেদের, ভাল-মন্দ বোঝার বয়স হয়েছে।
প্রফেসর হাসলেন। আমারও তাই বিশ্বাস। ইতিমধ্যেই যথেষ্ট বুদ্ধি আর সাহসের পরিচয় দিয়েছে ওরা।… আমি এখন যাই। নতুন কিছু জানলে আমাকে জানিও। চলি। গুড বাই।
চলে গেলেন প্রফেসর।
যাও, গিয়ে সময় নষ্ট করে আস সবাই। আমি এসবে নেই। দেখি গিয়ে, আগুনে কি ক্ষতি করল। ছাউনিতে ঢুকল ডিনো।
ট্রাক থেকে সাইকেল নামিয়ে রওনা হয়ে গেল রবিন আর মুসা।
কিশোর আর এড ট্রাকে উঠল। চলল উত্তরে, সান্তা বারবারায়।
১৪
আরও তাড়াতাড়ি, বোরিসভাই, তাগাদা দিল কিশোর।
ভেব না, তাড়াতাড়িই পৌঁছুব। আরও বেশি তাড়াতাড়ি করতে গেলে হয়ত পৌঁছুঁতেই পারব না কোনদিন, অ্যাক্সিডেন্ট করে মরব।
নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে আবার সিটে হেলান দিল কিশোর।
বাওরাড ডাইয়ের দ্বিতীয় জার্নালটা পড়তে পড়তে মুখ তুলল এড। কিশোর, বাওরাড কোথায় গিয়েছিল, লেখা নেই। কি করে জানছি? সান্তা বারবারা ছোট না।
বোরিস হাসল। হ্যাঁ, বড় শহর।
বড় হওয়াতেই তো ভাল, বলল কিশোর। পুরানো শহর, বেশি পুরানো রেকর্ড থাকবে। একটা সূত্র রেখে গেছেন বাওরাড ডাই, সেটার সাহায্যেই খুঁজে বের করব।
সূত্র? ভুরু কেঁচকাল এড।
একটা দোকান থেকে কিছু কিনেছিল, যেটা আগুনে পুড়ে গেছে। আঠারশো ছিয়ানব্বই সালে এখনকার মত ছিল না সান্তা বারবারা, অনেক ছোট ছিল। অগ্নিকাণ্ডে দোকান পুড়ে যাওয়ার মত খবর না ছাপার কথা নয়।
বিকেলের মাঝামাঝি সান্তা বারবারার উপকণ্ঠে পৌঁছল ওরা। খবর সংগ্রহের জন্যে দ্য লা গুয়েরা প্রাজায় অবস্থিত সান-প্রেস পত্রিকার অফিসটা খুঁজে বের করল বোরিস, কিশোরের নির্দেশে। দোতলায় উঠে জনৈক মিস্টার বুল-এর সঙ্গে দেখা করার অনুরোধ জানাল রিসিপশনিস্ট। সম্পাদকের নাম বুল বটে, কিন্তু গায়েগতরে ষাঁড়ের মত নন মোটেও। ছোটখাটো একজন মানুষ, হাসিখুশি। আঠারশো ছিয়ানব্বই? কিশোরের চাহিদা শুনে বললেন। না, আমরা তখন ছিলাম না। লোকাল একটা পত্রিকা ছিল অবশ্য। তুমি ঠিকই বলেছ, ইয়াং ম্যান, বড় রকমের একটা অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল ওই সময়।
রেকর্ডগুলো, স্যার, আছে আপনাদের মর্গে?
ছিল। যা পেয়েছিলাম সব এনে ফাইল করেছিলাম। কিন্তু নানারকম দুর্ঘটনায়—এই ভূমিকম্পে আর আগুনে-উনিশশোর আগের সব রেকর্ড নষ্ট হয়ে গেছে।
গুঙিয়ে উঠল কিশোর। সব রেকর্ড, স্যার?
হ্যাঁ, সরি, বলে ভাবলেন এক মুহূর্ত। তবে, আরেক জায়গায় চেষ্টা করে দেখতে পার। একজন লেখককে চিনি, ষাট বছর আগে ওই পত্রিকায় ফিচার লিখত। তার ব্যক্তিগত একটা মর্গ আছে, পুরানো খবরের কাগজ আর কাগজের অনেক কাটিং সংগ্রহে আছে। হবি। তার কাছে গিয়ে দেখতে পার।
সান্তা বারবারায় থাকেন? হাতে যেন চাঁদ পেল কিশোর।
হ্যাঁ। ছোট একটা অ্যাড্রেস ফাইল বের করলেন সম্পাদক। নাম আলফ্রেড পেরিংটন। থাকে এগারশো অ্যানাক্যাপা স্ট্রীটে। যাও, লোক ভাল। পারলে অবশ্যই সাহায্য করবেন।
লম্বা পথের মাথায় ছোট্ট একটা অ্যাড়াব হাউস, ১১০০ নম্বর, বড় একটা বাড়ির পেছনে। ট্রাকে বসে রইল বোরিস। কিশোর আর এড নেমে এগোল বাড়িটার দিকে।
হঠাৎ থমকে দাঁড়াল কিশোর। দড়াম করে দরজা লাগার আওয়াজ, তার পর পরই ছুটন্ত পদশব্দ।
কিশোর, দেখ, দেখ!
হাঁ হয়ে খুলে আছে অ্যাড়াবের দরজা। ভেতর থেকে চিৎকার শোনা গেল। এই! কে আছ? এই!
বিপদে পড়েছে, বলেই দৌড় দিল কিশোর।