আর কি লিখেছে? এড জিজ্ঞেস করল।
ডিসেম্বরের পাঁচ তারিখে লিখেছেনঃ নোরিয়ার চমকে শেষ ছোঁয়া দিতে সান্তা বারবারায় গেলাম। ভাল জিনিস পেয়েছি, সস্তায়, কারণ প্রতিষ্ঠানে আগুন লেগেছিল। ওয়ান ম্যানস ট্র্যাজেডি ইজ অফেন অ্যানাদারম্যানস ফরচুন! জার্নাল বন্ধ করল কিশোর। কাল রাতে ড্যানিয়েল ব্রাদার্স-এর ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছিলাম। রকি বীচে ইট সিমেন্টের কারবার করে। নিশ্চয় অনেক ইট কিংবা পাথর কিনেছিলেন বাওরাড। ড্যানিয়েল বিল্ডিং সাপ্লাই কোম্পানি এখনও আছে, নাতিপুতিরা কোম্পানি চালাচ্ছে। গেলে পুরানো রেকর্ড পাওয়াও যেতে পারে।
তাহলে যাচ্ছি না কেন? প্রায় চেঁচিয়ে উঠল এড।
যাব। সান্তা বারবারায়ও যেতে হবে। নোবল জার্নালের ফটো তুলে নিয়ে গেছে, সে-ও যেতে পারে ওসব জায়গায়। জলদি করতে হবে আমাদের। রবিন আর মুসা ড্যানিয়েল কোম্পানিতে চলে যাক। আমি আর তুমি যাব সান্তা বারবারায়, বোরিস ট্রাকে করে নিয়ে যাবে আমাদের। আপনার কোন আপত্তি
আছে, মিসেস ডাই?
না, আমার আপত্তি কি? তবে একটা কাজ করে দিয়ে যাও। এই টবটা বেজায় ভারি, হিবিসকাসের টব দেখালেন মিসেস ডাই। এটা বাইরে বের করে, দিয়ে যাও। নইলে আবার ডিনোকে ডাকতে হবে, আমি একা পারব না।
সিঁড়ির একপাশে নিয়ে গিয়ে টবটা সবে বসিয়েছে ওরা, এই সময় শোনা গেল ইঞ্জিনের শব্দ। দ্রুত আসছে। প্রফেসর কেইনের স্টেশন ওয়াগন।
গাড়ি থেকে নেমে প্রায় ছুটে এলেন প্রফেসর। তোমাদের সাবধান করতে এসেছি, বয়েজ! পুলিশকে জানিয়েছিলাম। খোঁজ নিয়েছেন ইয়ান ফ্লেচার। শাস্তির মেয়াদ শেষ হয়নি নোবলের, প্যারোলে মুক্তি দেয়া হয়েছে। ডেঞ্জারাস লোক। কোন ঝুঁকি নিতে দ্বিধা করবে না সে। বুঝেছ আমার কথা?
কত দিন আগে ছাড়া পেয়েছ? কিশোর জিজ্ঞেস করল।
ছয় মাস।
ছয় মাস আগে থেকেই ডাই লজে চোর ঢুকতে আরম্ভ করেছে, না? মুসা বলে উঠল।
হ্যাঁ, মুসা, নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল কিশোর। ভাবছি…। হঠাৎ বড় বড় হয়ে গেল চোখ। নাক কুঁচকে বাতাস শুকছে। এই, গন্ধ পাচ্ছ?
তাই তো! মুসা বলল। ধোঁয়া। পুড়ছে কিছু।
বাড়ির পেছন থেকে! চেঁচিয়ে উঠল এড।
দৌড় দিল সবাই।
দেখল, ছাউনি থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে।
সঙ্গে সঙ্গে পকেটে খুঁজতে শুরু করল কিশোর। পেল না। প্রায় আতঙ্কিত হয়ে চিৎকার করে উঠল, হায়, হায়! জার্নালটা! টব তোলার সময় হাত থেকে রেখেছিলাম, আর আনতে মনে নেই!
১৩
পাথরের ছাউনি, পুড়বে না, শুধু কাঠগুলো ছাড়া। ভেতরে ঘন ধোঁয়া।
ফায়ার এক্সটিংগুইশারের জন্যে দৌড় দিল এড। জ্যাকেট খুলে তৈরি রইল রবিন আর মুসা। এড ফিরতেই তার সঙ্গে সাবধানে ঢুকল ভেতরে।
আলগা কাঠ রাখা ছিল, বলল এড। ওগুলোতে লেগেছে।
বাইরে দাঁড়িয়ে কিশোর, প্রফেসর আর মিসেস ডাই শুনছেন এক্সটিংগুইশারের শব্দ। জ্যাকেট দিয়ে জোরে জোরে বাড়ি মারা হচ্ছে আগুনের ওপর। কিছুক্ষণ পর ধোঁয়া পাতলা হয়ে এল। বেরিয়ে এল মুসা, মুখে বিজয়ীর হাসি। হাতে জার্নাল। জানাল, আর সামান্য দেরি হলেই যেত পুড়ে।
হাতে নিয়ে তাড়াতাড়ি পাতাগুলো উল্টে দেখল কিশোর, ঠিক আছে কিনা।
কাকে যেন দৌড়ে আসতে শেৰ্মিা গেল। ডিনো। চেঁচাচ্ছে, আর হাত তুলে দেখাচ্ছে ছাউনির পেছনটা। ওদিকে, ওদিকে…ব্যাটাকে দেখেছি আমি। এদিকেই তাকিয়ে ছিল…এই এক মিনিট আগে।
যাবে, ধরা যাবে! চেঁচিয়ে উঠলেন প্রফেসর।
চোরের পেছনে ছুটল ওরা। দৌড় দিল গাছপালার ভেতর দিয়ে। ডিনো আগে আগে। নিশ্চয় বড় রাস্তার দিকে গেছে।
বনের ভেতর একেকজন একেক দিকে ছড়িয়ে পড়ল ওরা। প্রফেসর গেলেন ডানে, ডিনো গেল সামনের দিকে। রবিন আর কিশোর সবার পেছনে। থেমে ঝোপঝাড়ে চোখ বোলাচ্ছে। ধূসর-সবুজ ঘন ওকের আড়ালে কেউ লুকিয়ে আছে কিনা দেখছে।
হঠাৎ নীরব হয়ে গেছে সব, যেন সবাই দাঁড়িয়ে কান পেতে শব্দ শোনার চেষ্টায় রত। সামনে বিড়বিড় করে গাল দিল একজন। আবার এগোল রবিন আর কিশোর, সতর্ক। গাছের আড়ালে আড়ালে চলে এল পঞ্চাশ গজ মত। মট করে কি যেন ভাঙল।
ঝট করে ঘুরল কিশোর। চিৎকার শোনা গেল ডানে। কে যেন এসে লাফিয়ে পড়ল তার ওপর। জাপটে ধরে তাকে নিয়ে পড়ল মাটিতে। – ধরেছি! ধরেছি! ব্যাটাকে ধরেছি! চেঁচাতে লাগল মুসা।
আরে এই মুসা, তাড়াতাড়ি এগিয়ে এল রবিন। এই। কিশোরকে ধরেছ তো।
কী? ভাল করে তাকাল মুসা। খাইছে। আমি…. ভেবেছিলাম…শুনলাম…
সর, সর, মুসাকে ঠেলে সরিয়ে উঠল কিশোর। কাপড়ের ময়লা ঝাড়তে ঝাড়তে বলল, কানা নাকি? দেখে লাফ দাওনি?
শব্দ শুনলাম। আর দেখে কে?
অমনি চোরের ঘাড়ে লাফিয়ে পড়লে, হাসতে শুরু করল রবিন।
প্রফেসর, ডিনো আর এড ফিরে এসে দেখল তিনজনেই হাসছে। রিমলেস গ্লাসের ওপাশে রাগে জ্বলছে প্রফেসরের চোখ। গোল লাল মুখ আরও লাল হয়ে উঠেছে।
পালাল হারামজাদা, দাঁতে দাঁত চাপল ডিনো। টিক বানাউ ছাড়া কেউ না।
দেখলে নোবলকে দেখেছেন, প্রফেসর বললেন।
কি করে এত শিওর হচ্ছেন? নোেবলকে নয়, বানাউকেই দেখেছি আমি। দাড়ি দেখলাম মনে হল…।
দাড়ি না। বোধহয় গোঁফ দেখেছেন। কালো গোঁফকে অনেক সময়…
বলে কি? গোঁফকে দাড়ি? আপনার…
মাথা খারাপ, না? রেগে উঠতে গিয়েও উঠলেন না প্রফেসর। ছেলেদেরকে অবাক করে দিয়ে নতি স্বীকার করে নিলেন। বেশ, দেখিনি যখন, জোর করে কিছু বলল না। আপনি সত্যিই লোকটাকে দেখেছেন তো?