বোটের বাঁধন খুলে দিল মুসা। ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে ফেললেন ততক্ষণে প্রফেসর। খোলা সাগরের দিকে ছুটুল বোট। মোটরবোর্টটা কয়েক শো গৃজ সামনে।
ফুল স্পীড, মুসা! ধর ব্যাটাকে! প্রফেসর তাগাদা দিলেন। মোটরবোটের দিকে চেয়ে মুঠো ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বললেন, ব্যাটা চোর! আসছি, দাঁড়া!
ও কে, স্যার? কিশোর জিজ্ঞেস করল।
আমার অ্যাসিসটেন্ট ছিল, খুব রেগেছেন প্রফেসর। রুক্সটন ইউনিভারসিটির গ্র্যাজুয়েট। অভাবে পড়ে এসে কাজ চাইল আমার কাছে, কাজ দিলাম। আমার ওখানেই চুরি শুরু করল। মিউজিয়মের দামি দামি জিনিস চুরি করে বিক্রি করে দিতে লাগল। অনেক বোঝালাম, শুনল না। শেষে চোরাই মালসহ ধরা পড়ে গেল জেলে।
অনেক এগিয়ে গেছে মোটরবোট, প্রায় আধ মাইল।
ধরা যাবে না, স্যার, মুসা বলল। ওটার স্পীড অনেক বেশি।
জুলন্ত চোখে ক্রমশ-দূরে-সরে-যাওয়া বোটটার দিকে তাকিয়ে রইলেন। প্রফেসর। কিশোর, টিক বানাউ কিভাবে এত কথা জানল, এবার বোঝা যাচ্ছে। এখন মনে পড়ছে আমার, লিটল মারমেইড আর বাওরাড ডাইয়ের ব্যাপারে খুব আগ্রহী ছিল নোবল। নিশ্চয় বানাউয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। জেলে গেলে কি হবে, চোর আর শোধরায় না!
নোবলই মনে হয় কাল রাতে জার্নালের ফটো তুলে এনেছে, রবিন বলল।
হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকাল কিশোর। ওটা পড়েই দ্বীপের কথা জেনেছে। তবে পায়নি কিছু। পেলে, ওভাবে পাহাড়ের ওপরে দাঁড়িয়ে আমাদের দিকে চেয়ে থাকত না। নিয়ে চলে যেত।
আমাদের মতই ব্যর্থ।
নীরব হয়ে গেল সবাই। বাকি পথে গুপ্তধন নিয়ে আর একটা কথাও হল না। বন্দরে ভিড়ল, বোট। নোবলের মোটরবোট কিংবা সবুজ ফোক্সওয়াগেনের ছায়াও দেখা গেল না কোথাও।
পুলিশকে রিপোর্ট করব, রাগ যায়নি এখনও প্রফেসরের। কাল রাতে তোমাদের অফিসে ঢুকেছিল, একথাও জানাব।
ওকে তো তখন দেখিনি, স্যার, বলল কিশোর।
কিন্তু ওকে সন্দেহ তো করছ। পুলিশকে অন্তত জানিয়ে রাখা দরকার।
কি একখান দিন গেল! কপাল ডলল মুসা। না পেলাম গুপ্তধন, না পারলাম চোর ধরতে।
আস্তে মাথা নাড়লেন প্রফেসর। হবে না, বুঝেছ, আশা করতে পারছি না আর। অনেক দেরি হয়ে গেছে…প্রায় একশো বছর, অনেক সময়।
একেবারেই এগোইনি বলা যাবে না,হাল ছাড়তে রাজি নয় কিশোর ধীর হয়ে যাচ্ছে আর কি।
ঠিক, তাড়াতাড়ি বলল এড। ভয়, পাছে না আবার গুপ্তধন খোঁজার উৎসাহ হারিয়ে ফেলে সবাই। দ্বিতীয় জার্নালটা তো রয়েছেই। আরও ভালমত পড়ে দেখতে হবে।
আমি আর যেতে পারছি না তোমাদের সঙ্গে। চেহারাই বলে দিল মন খারাপ হয়ে গেছে প্রফেসরের। কাজের অনেক ক্ষতি করেছি এমনিতেই। যা করার তোমরাই কর। খবর শোনার জন্যে অধীর হয়ে থাকব আমি।
স্টেশন ওয়াগন চালিয়ে চলে গেলেন প্রফেসর।
তিন গোয়েন্দার দিকে তাকাল এড। সে কিছু বলার আগেই মুসা বলল, কিশোর, তদন্ত চালিয়েই যাব আমরা, না?
আপাতত লাঞ্চটা সেরে নেয়া দরকার, মুখ গোমড়া করে রেখেছে কিশোর। আরও ভাবতে হবে। ফ্যান্টম লেকে গিয়ে ঠিক করব এরপর কি করা যায়।
১২
যার যার বাড়িতে লাঞ্চ সারল ওরা। তারপর স্যালভিজ ইয়ার্ডে মিলিত হল তিন গোয়েন্দা। ট্রাক বের করে অপেক্ষা করছিল কিশোর আর বোরিস, মুসা আর রবিন এলে রওনা হল।
ডাই লজ-এর সিঁড়িতে ওদের অপেক্ষায়ই দাঁড়িয়েছিল এড, ট্রাকটা দেখে দৌড়ে এল। তার মা কোথায় জিজ্ঞেস করল কিশোর।
বাড়ির পেছনে কাঠ আর পাথরে তৈরি একটা ছাউনিতে ওদেরকে নিয়ে এল এড। লাল রঙ করা কাঠের টবে তখন একটা হিবিসকাসের বড় চারা লাগাচ্ছেন মিসেস ডাই।
ম্যাডাম, কোনরকম ভূমিকা করল না কিশোর। আমরা ভেবেছি, নৌকা বোঝাই করে মাল নিয়ে গেছেন বাওরাড। বাড়িতে গিয়ে জার্নালটা আবার পড়লাম। এখন আমার বিশ্বাস, নেননি, আসলে দ্বীপ থেকে কিছু এনেছেন। ওখান থেকে আনা হয়েছে, এমন কোন জিনিসের কথা জানেন আপনি?
হাসলেন মহিলা। আমি কি করে জানব, কিশোর?
এই জবাবই আশা করেছিল কিশোর। ভাল করে ভেবে দেখুন। ইতিমধ্যে বাওরাডের মেসেজগুলো নিয়ে আরেকবার আলোচনা করে দেখি। পাতলা জার্নালটা খুলল সে। এই যে, একুশে নভেম্বর লেখা রয়েছে…ও হ্যাঁ, একটা ভুল করে ফেলেছিলাম আমরা। বাওরাড বলেছেন তাঁর দিনগুলো কিভাবে তৈরি করেছেন, পড়ার জন্যে, একটা বা কয়েকটা দিন নয়, সমস্ত দিন পড়ে তারপর মেসেজের মানে উদ্ধার করতে বলেছেন। তাহলে দেখা যাক, আর কোথায় কি রয়েছে। জরুরি পৃষ্ঠাগুলো শুধু পড়ব। একুশে নভেম্বরঃ ড্যানিয়েল ব্রাদার্সরা খবর পাঠিয়েছে, আমার অর্ডার তৈরি। বড় ওয়াগনটা দরকার আমার।…তার পরদিন লিখেছেনঃ অর্ডার নিয়ে রকি বীচ থেকে ফিরে এলাম। চমৎকার কাজ দেখিয়েছে ওরা। প্রতিটি পিস একেবারে মাপমত। এই দেশে এরকম জিনিস বানাতে পারবে কেউ আশা করিনি। মুখ তুলল কিশোর। বাইশে নভেম্বর তেমন কিছু নেই। তেইশে নভেম্বরঃ এলাকায় দুজন নতুন মুখকে ঘোরাঘুরি করতে দেখলাম। নাবিক … একেবারে আটাশে নভেম্বর গিয়ে আবার জরুরি কথা আছেঃ ওরা চলে গেছে। ক্যাপ্টেনের কাছে রিপোর্ট করতেই গেল বোধহয়।
চোখ রাখা হয়েছে যে তখনই নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন, বলল রবিন।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। তখনকার তাঁর মনের অবস্থা আন্দাজ করতে পার? ছেলে নেই, বউ নেই, বিদেশ-বিভুঁইয়ে একা একজন মানুষ, শত্রু ঘোরাফেরা করছে…নিশ্চয় তখনই তাড়াহুড়ো করে কাজ শেষ করার কথা ভাবেন।