ঠিক, রবিন বলল। এটাই ব্যাখ্যা।
হতে পারে, ধীরে ধীরে বলল কিশোর।
ডিনারের আধ ঘন্টা আগে স্যালভিজ ইয়ার্ডে ছেলেদের নামিয়ে দিয়ে গেলেন প্রফেসর।
দুই সুড়ঙ্গ দিয়ে হেডকোয়ার্টারে ঢুকল ওরা।
কিশোর, ভাবছি,মুসা বলল। ফ্যান্টম লেকেই কোন খনি রেখে যায়নি তো বাওরাড ডাই? গোপন খনি?
থাকতেও পারে। হাতে কোন প্রমাণ নেই, শিওর হই কি করে? আর স্কটল্যাণ্ডের ভূতের গুজবের সঙ্গে খনির যোগাযোেগ কোথায়? কিংবা আয়নার?
রবিন মনে করিয়ে দিল, মিসেস ডাই বললেন, ভাইকিংরা আসে কিনা সেদিকে নাকি চোখ রাখে ভূত। ওই কথাটাই বোঝাতে চেয়েছে হয়ত বাওরাড। হ্রদের দিকে চেয়ে থাকা ভূত। মানে কি? পুকুরের নিচে লুকিয়ে রাখেনি তো গুপ্তধন?
রাখতে পারে, কিশোর বলল। তবে তার জন্যেও প্রমাণ চাই। নির্ভরযোগ্য সূত্র। কোথায় রেখেছে, জানতে হলে। সারা পুকুরের তলায় তো আর খোঁজা যাবে না। থামল এক মুহূর্ত। ডিনোর কথা মিসেস ডাই কি বললেন মনে আছে?
আছে, বলল মুসা। খুব খাটতে পারে, আর খুব মায়া। কাজের বিনিময়ে একটা পয়সা নেয় না।
তবে কিছুটা বদমেজাজী, যোগ করল রবিন। চমক্কার সব লক্ষণ।
এবং, কিশোর বলল। ফ্যান্টম লেক থেকে তিনদিনের জন্যে বাইরে চলে গিয়েছিল, ফিরেছে কাল রাতে। তারমানে, গতকাল তার রকি বীচে থাকা সম্ভব, যখন টিক আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছিল।
টিকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে গুপ্তধন খুঁজছে ভাবছ? রবিন বলল। বাওরাডের চিঠির কথা, ফ্যান্টম লেক, মিসেস ডাই কি কি জিনিস বিক্রি করেছেন, সব জানা আছে ডিনোর।
হ্যাঁ, আছে। মুসা, আজ রাতের মধ্যে সাইপ্রেস আইল্যাণ্ডটা কোন দ্বীপ, জানার চেষ্টা করবে। কাল সকালে প্রফেসর কেইনের বোটে মিলিত হব আমরা।
ডিনারের পর চাচা-চাচীকে ঘরের কাজে সাহায্য করল কিশোর। দশটায় বাজল টেলিফোন।
মুসা করেছে। বলল, কিশোর, ওটা আসলে ক্যাবরিলো আইল্যাণ্ড। আঠারশো ছিয়ানব্বই সালে দ্বীপটা ক্যাবরিলো পরিবারের দখলে ছিল। সাইপ্রেস গাছের ছড়াছড়ি। তীর থেকে মাত্র মাইলখানেক দূরে। বন্দর থেকে মাইল দুই উত্তরে।
চমৎকার কাজ দেখিয়েছ, সেকেণ্ড! দুর্লভ প্রশংসা পেল মুসা, কিশোর পাশা সহজে কারও প্রশংসা করে না।
রিসিভার রেখে দোতলায় নিজের ঘরে চলে এল কিশোর। আলো জ্বালার আগে একবার সামনের জানালার কাছে এসে দাঁড়াল। রকি বীচে ক্রিস্টমাস লাইট দেখার জন্যে। অনেক বাড়িতেই জ্বলছে রঙিন আলো।
সরে আসতে যাবে, এই সময় আলোর একটা ঝিলিক চোখে পড়ল তার। তাকাল সেদিকে। আবার দেখা গেল আলো। অবাক হল সে। ওখানে তো কোন বাড়িঘর নেই? হঠাৎ বুঝল, তাদের স্যালভিজ ইয়ার্ডের ভেতরেই। যেখানটায় ওদের হেডকোয়ার্টার লুকানো রয়েছে জঞ্জালের তলায়।
আলোটা আসছে ট্রেলারের স্কাইলাইটের ফোকর দিয়ে!
তাড়াতাড়ি নিচে নামল কিশোর। বাইরে বেরিয়ে নিঃশব্দে এগোল। মেইন গেট বন্ধ। তালা দেয়া। মোড় নিয়ে ওয়ার্কশপের দিকে চলল সে। এখানে আরেকটা গোপন প্রবেশ পথ রয়েছে তিন গোয়েন্দার, সবুজ রঙ করা বেড়ার গায়ে দুটো আলগা বোর্ড।
সাবধানে সবুজ ফটক একের ভেতর দিয়ে ওয়ার্কশপে ঢুকল কিশোর। আলো আর চোখে পড়ছে না এখন। দুই সুড়ঙ্গের কাছেও কেউ নেই। সহজ তিন-এর সামনে থেকে খুব সতর্ক ভাবে কিছু জঞ্জাল সরাল।
পুরানো কাঠের দরজার পাল্লা ভেঙে খোলা হয়েছে। তার ওপাশে হাঁ হয়ে খুলে আছে ট্রেলারের দরজা।
হেডকোয়ার্টারে ঢুকল কিশোর। বাওরাড ডাইয়ের জার্নালটা ডেস্কের ওপরই আছে, তবে বন্ধ নয়, খোলা। তীব্র আলোর ঝিলিকের মানে বুঝে ফেলল। দরজা ভেঙে ঢুকে জার্নালটার ছবি তুলে নিয়ে গেছে কেউ। ফ্লাশগানের আলো দেখেছে সে।
সহজ তিন-এর দরজা আবার ঠিকঠাক করে লাগিয়ে ঘরে ফিরে এল কিশোর। চিন্তিত। এখন আরও একজনের জানা হয়ে গেল, কি লেখা রয়েছে বাওরাডের দ্বিতীয় জার্নালে।
১০
রকি বীচ বন্দরের ওপর কুয়াশা যেন ঝুলে রয়েছে। সাইকেল চালিয়ে এসে দেখল তিন গোয়েন্দা, হাজির রয়েছে এড, ওদেরই অপেক্ষা করছে। সাইকেল তুলে নিয়েছে প্রফেসরের বোটে। আঠাল ঠাণ্ডা গায়ে কাঁপুনি তুলে দিয়েছে তার।
তিন গোয়েন্দাকে দেখে হাসল এড। সারারাত ধরে ভেবেছি, বুঝেছ। আমি শিওর, নৌকা বোঝাই করে গুপ্তধনই নিয়ে গিয়েছিল বাওরাড ডাই। আমার ধারণা, আজ দ্বীপে গেলেই পেয়ে যাব।
আমি তা মনে করতে পারছি না, এড, কিশোর বলল। এত…
ইঞ্জিনের শব্দ শোনা গেল। তীরের কাছে এসে ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষল স্টেশন ওয়াগন। লাফিয়ে নেমে প্রায় ছুটে এলেন প্রফেসর। সরি, বয়েজ, দেরি হয়ে গেল। আজ সকালে একটা গণ্ডগোল হয়েছে হিসটোরিক্যাল সোসাইটিতে। লিটল মারমেইডের ফাইল চুরির চেষ্টা হয়েছিল। কালো দাড়িওয়ালা এক লোক।
টিক ব্রাউন! একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠল বরিন আর মুসা।
মাথা ঝাঁকালেন প্রফেসর। আমারও তাই মনে হয়।
কিন্তু কেন? এডের জিজ্ঞাসা। লিটল মারমেইডের ইতিহাস তো সবাই জানে।
হয়ত সবার চোখেই কিছু এড়িয়ে গেছে, অনুমান করল কিশোর। স্যালভিজ ইয়ার্ডেও যে চোর এসেছিল, জানাল সবাইকে।
চমকে উঠলেন প্রফেসর, জার্নালও তাহলে পেয়ে গেছে টিক! চোরটা হয়ত ইতিমধ্যেই রওনা হয়ে গেছে, আমাদের আগেই গিয়ে হাজির হবে দ্বীপে। সাগরের ওপরের কুয়াশার দিকে তাকলেন তিনি। কিন্তু এই আবহাওয়ায় কি আমরা যেতে পারব?