ধর ব্যাটাকে! মুসা বলল। ধর!
ফিরে তাকাল ভূত। তারপর কাঠের সিঁড়ি বেয়ে নামতে শুরু করল, চোরটাকে ধরার জন্যে। পিস্তলে রোদ লেগে ঝিক করে উঠল। ধরা পড়ার জন্য দাঁড়িয়ে থাকল না টিক। বাড়িটার ধার দিয়ে আবার দৌড় দিল। বেড়ার কাছে পৌঁছে দেরি করল না এক মুহূর্ত। ওপরে চড়ে লাফ দিয়ে নামল ওপাশে। খাড়ির পাড়ে ওখানে ঘন ঝোপঝাড়, হারিয়ে যেতে অসুবিধে হবে না তার।
ভূতের কাছে ছুটে এল ছেলেরা। কালো ওয়েস্টার্ন পোশাক পরা একজন মানুষ। জার্নালটা তুলে নিল কিশোর।
এখানে কি করছ তোমরা? কৈফিয়ত তলব করল ভূতটা। জলদি সব খুলে বল। আর ওটা দাও, জার্নালটার কথা বলল সে। নিশ্চয় এখানকার জিনিস।
না, স্যার, মোলায়েম গলায় বলল কিশোর। জানতাম না এখানে কেউ আছে। তাহলে অনুমতি নিয়েই ঢুকতাম, পাউডার গালচে বাওরাড ডাইয়ের গতিবিধির খবর নিতে এসেছে, জানাল সে। দারুণ হয়েছে আপনার ভূত ভূত খেলা! রীতিমত ভয় পাইয়ে দিয়েছেন।
ভূত হাসল। প্র্যাকটিস করছিলাম। দেখতে চাইছিলাম, কি প্রতিক্রিয়া হয় তোমাদের। আমি এখানকার কেয়ারটেকার। চোয়াল ডলল সে। বাওরাড ডাই, না? বোধহয় সাহায্য করতে পারব। পুরানো রেকর্ড আছে আমার অফিসে। বাওরাড ডাই এখানে তেমন কিছু করে থাকলে নিশ্চয় পাওয়া যাবে।
স্যালুনের ভেতর দিয়ে এসে ছোট একটা অফিসে ঢুকল ওরা। একটা ফাইলিং ক্যাবিনেট খুলল কেয়ারটেকার এখানে আছে রেকর্ড। দেখা যাক, বুড়ো বাওরাড কি করেছে।
একটা ফাইল খুলে, পড়ে, মাথা নাড়ল কেয়ারটেকার। না, তেমন কিছু নেই। শুধু দুটো রেফারেন্স। জেনারেল স্টোরে জিনিস কিনেছে, হিসেবের খাতায় তোমরা যা দেখেছ। আর দৈনিক গালচ-এ দুই লাইনের একটা নোসিশ, আঠারশো ছিয়ানব্বই সালে, কয়েকদিনের জন্যে কিছু শ্রমিক চেয়েছে। ব্যস।
এইই? নিরাশ হল মুসা। দূর! এত কষ্ট করে কোন লাভ হল না…
বাইরে ডাক শোনা গেল, এই, কোথায় গেলে তোমরা?…এড? এডবার… আই, ছেলেরা…?
ডিনো, এড বলল।
দ্রুত বেরিয়ে এল ছেলেরা। রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে ডিনো, সঙ্গে আরেক লোক। হিসটোরিক্যাল সোসাইটির সেই প্রফেসর, হারম্যান কেইন।
ছেলেদের দেখে এগিয়ে এলেন তিনি। গেটের বাইরে দেখা হল ডিনাম্যান হ্যাংবারের সঙ্গে। বললেন, তোমরা এখানে এসেছ। এসে তোমাদের সাইকেল পড়ে থাকতে দেখলাম। ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, তোমাদের কিছু হয়েছে ভেবে…।
বিনা অনুমতিতে ঢুকেছ? ডিনো বলে উঠল। জানতাম, গোলমাল বাধাবে। সেজন্যেই তাড়াতাড়ি ছুটে এসেছি।
না, কিছু হয়নি ওদের, কেয়ারটেকার বলল। তবে বেশ উত্তেজনার মধ্যে ছিল, আমাদের কাজ দেখে। তাই না, ছেলেরা? প্রফেসরকে জানাও সেকথা। খুশি হবেন। আমাদের হিসটোরিক্যাল অ্যাডভাইজার তিনি। নতুন করে আবার সব সাজাতে সাহায্য করেছেন সোসাইটি।
শুনব, শুনব সব, পরে, হাত তুললেন প্রফেসর। রিমলেস চশমার ওপাশে উজ্জ্বল হল তার চোখ। কেয়ারটেকারের উদ্দেশে হাত নেড়ে বিদায় জানিয়ে ছেলেদের নিয়ে রওনা হলেন ওয়েস্টার্ন শহরের পথ ধরে। বাওরাড ডাইয়ের আরেকটা জার্নাল নাকি পেয়েছ তোমরা? গুপ্তধন সত্যি আছে ভাবছ নাকি? পাওয়া গেলে কি সাংঘাতিক ব্যাপার হবে। বল, জলদি খুলে বল সব।
কিভাবে জার্নালটা পাওয়া গেছে, জানাল কিশোর। টিক বানাউয়ের কথাও বলল।
লাল হয়ে গেল প্রফেসরের লাল মুখ। ওই শয়তানটা? টিক বানাউ। ডাইয়ের গুপ্তধন চুরির মতলব করেছে? নিয়ে গিয়ে নিশ্চয় গলিয়ে ফেলবে সমস্ত সোনার অলঙ্কার। নষ্ট করে ফেলবে! মানুষ নাকি ও? এত মূল্যবান ঐতিহাসিক জিনিসপত্র নষ্ট করে! আরিব্বাপরে, ভাবতেই রোম খাড়া হয়ে যায়—ঈস্ট ইনডিয়ান জলদস্যুদের লুটের মাল! বিখ্যাত হয়ে যাবে আমাদের সোসাইটির মিউজিয়ম। তা কোন সূত্রে পেলে?
না, বেশি কিছু না, দ্বিধা করছে কিশোর। শুধু জেনেছি, স্ত্রীর জন্যে বড় কিছু
একটা বানিয়ে গেছে বাওরাড ডাই।
হুঁ। এখানে নয় নিশ্চয়? ফ্যান্টম লেকে না তো? এই এলাকার অনেক জায়গাই চিনি আমি। তোমাদের চোখে না পড়লেও হয়ত আমার চোখে পড়বে।
একটা স্টেশন ওয়াগন দেখিয়ে বললেন প্রফেসর, যাও, সাইকেলগুলো আমার গাড়িতে তোল। ফ্যান্টম লেকে যাব আমরা। কিছুতেই টিক বানাউকে নিতে দেব না গুপ্তধন।
আরেক দিকে মুখ ফেরাল ডিনো। বিড়বিড় করল, আরেকটা বেকুব।
কী? কি বললেন? কথাটা শুনে ফেলেছেন প্রফেসর। বেকুব আমি, না আপনি? এসবের কি কচুটা জানেন আপনি? আপনি কোথাকার বুদ্ধিমান? এই, যাও তোমরা, সাইকেল তোল।
ডিনোর চেহারা দেখে ফিক করে হেসে ফেলল মুসা। ছুটল সাইকেল আনার জন্যে।
৯
শেষ বিকেল। আগে আগে চলেছেন প্রফেসর, পেছনে ছেলেরা। উপত্যকার প্রতিটি ফুট পরীক্ষা করে দেখে এসেছে ওরা, ছোট পাহাড়টারও অর্ধেকটা। সম্ভাব্য সমস্ত দিক থেকে খুঁটিয়ে দেখা হয়েছে পুকুরটাকে, ফ্যান্টম লেক। উত্তেজিত প্রফেসরের সঙ্গে প্রায় দৌড়ে দৌড়ে তিনবার চক্কর দিয়েছে ওরা পুরো বাড়িটা। পরিশ্রম অনেক করেছে, কিন্তু পায়নি কিছুই।
বিশাল বাড়িটার চত্বরে এখন পড়ন্ত রোদ। সেখানে এসে জমায়েত হল সবাই। হেসে ওদের সান্ত্বনা দিলেন মিসেস ডাই। বাঁকা হাসল ডিনো, দাঁতের ফাঁকে পাইপ, ফকফক ধোঁয়া ছাড়ছে।
কিছুই পেলাম না, ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললেন প্রফেসর। বাড়িটা ছাড়া বড় কিছু বানায়নি বাওরাড ডাই। আর এখানে খোঁজা হয়েছে প্রায় একশো বছর ধরে। মাথা নাড়লেন তিনি। স্কুস টিম্বারের চিহ্নও দেখলাম না।