তার সঙ্গে একমত হয়ে মাথা ঝাঁকাল রবিন, মুসা, এড।
কি জানি, কিশোর। মিসেস ডাই মানতে পারছেন না, কিন্তু, নোরিয়া যেটা – পারেননি, সেটা আর কে পারবে? তার জন্যেই তো লেখা হয়েছিল চিঠি।
আমরা চেষ্টা করে দেখতে পারি, ম্যাডাম, রবিন বলল।
অনেক জটিল ধাধার সমাধান আমরা করেছি, বলল মুসা।
রহস্যের সমাধান করাই আমাদের নেশা, ভারিক্কি চালে বলল, কিশোর। পকেট থেকে তিন গোয়েন্দার কার্ড বের করে দিল।
মায়ের কাঁধের ওপর ঝুঁকে কার্ডটা পড়ল এড, বড় বড় হয়ে গেল চোখ।
এগিয়ে এসে ডিনোও দেখল। সন্দেহ ফুটল চোখে।
কিশোর খুশি, তাদের যোগ্যতা সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা হল না দেখে। নতুন। ছেপেছে কার্ড। তাতে কোন চিহ্ন দেয়া হয়নি। দিলেই লোকের মনে প্রশ্ন জাগে, সন্দেহ প্রকাশ করে। প্রথমে কিছুদিন প্রশ্নবোধক দিয়ে চালিয়েছিল, তারপর দিয়েছে আশ্চর্যবোধক। তারপর আবার প্রশ্নবোধক। সেগুলোও শেষ হওয়ার পর নতুন কার্ড ছেপেছে। গম্ভীর হয়ে বড়দের মত করে বলল, আমরা আপনাদের সাহায্য করতে চাই।
নিশ্চয় চাই, মুসা যোগ করল।
মাকে অনুরোধ করল এড, চেষ্টা করতে দোষ কি, মা? করুক না। আমিও ওদের সাহায্য করব, যতটা পারি।
বেশ, হাসলেন মিসেস ডাই। কোন দোষ দেখি না। গুপ্তধন পেলে তো খুবই ভাল। বড় টানাটানিতে দিন কাটছে আমাদের।
হুররে! হুল্লোড় করে উঠল রবিন, মুসা আর এড।
মিসেস ডাইয়ের হাসি বিস্তৃত হল। লাঞ্চটা তাহলে এবার সেরে ফেলা যায়, কি বল? গুপ্তধন খুঁজতে হলে শরীরে বল চাই তো।
খাইছে! প্রায় চেঁচিয়ে উঠল মুসা। ভুলেই গিয়েছিলাম! নিশ্চয় বলা দরকার।
ডিনোর মুখে হাসি নেই, গম্ভীর হয়ে আছে। কার্ডটা ছুঁড়ে ফেলে বলল, সব চালাকি। ডোরিনা, ছেলেগুলো মহা চালবাজ, বিশ্বাস করা উচিত হবে না।
আমার তা মনে হয় না, দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা করলেন যেন মিসেস ডাই।
বেশ, যা ইচ্ছে কর! আমি এসবে নেই…! বলে রাগে দুপদাপ পা ফেলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল ডিনো।
সেদিকে তাকিয়ে ভ্রূকুটি করল কিশোর। চিন্তিত।
৭
লাঞ্চের পর পরই বেরিয়ে গেল ডিনো। বলে গেল, পথের ধারে পাইন গাছের কিছু ডাল ছাঁটতে যাচ্ছে। ছেলেরা আর মিসেস ডাই ফিরে এলেন লিভিংরুমে। দ্বিতীয় জার্নাল থেকে সূত্র বের করায় মনোযোগ দিল।
একটা কথা মনে রাখতে হবে, বক্তৃতার ঢঙে শুরু করল কিশোর। জার্নাল ঠিক ডায়েরী নয়, কিছুটা আলাদা। নিজের চিন্তা-ভাবনা পরিকল্পনার কথা এতে লেখেননি বাওরাড, কোন ঘটনারও বিশ্লেষণ করেননি। প্রতিটি ঘটনাই খুব সংক্ষিপ্ত, এক কি দুই লাইনে শেষ। এই যেমন, আজ চত্বরে কাজ করেছি, কিংবা, একটা ঈগল দেখেছি, এরকম। জাহাজের লগবুকের মত অনেকটা।
অন্য জার্নালটাও একই রকম, রবিন বলল।
তারমানে, ঘটনার উল্লেখ খুব একটা কাজে লাগছে না আমাদের। তবে চিঠিতে বলেছেন বাওরাড, তাঁর নির্দেশ মেনে চলতে, আর শেষ দিনগুলো কিভাবে তৈরি করেছেন, সেটা মেনে চলতে। কি কি করেছেন তিনি, সেটার ওপর গুরুত্ব দিতে বলেননি নোরিয়াকে। বলেছেন, কোথায় গেছেন আর কি বানিয়েছেন, সেটা লক্ষ্য করতে।
জার্নালের দিকে তাকাল এড। হ্যাঁ, প্রথমেই রয়েছে কোথায় গিয়ে কি করেছিল। লিখেছেঃ নোরয়াকে চমকে দেয়ার পালা আজ থেকেই, কাজ শুরু করেছি। প্রথমে পাউডার গালচে গেছি লোক আর টিম্বার সুস জোগাড় করার জন্যে।
নিশ্চয় কিছু বানাতে! মুসা বলল।
মনে হয়, বলল কিশোর। তারপর কি লিখেছে, এড?
কয়েকটা পাতা ওল্টাল লাল-চুল ছেলেটা। দুহপ্তা আর তেমন কিছু নেই। শুধু ছোট ছোট নোট। তারপর একটা দ্বীপে গেছে।
মিসেস ডাই? কিশোর জিজ্ঞেস করল। নোরিয়াকে চমকে দেয়ার ব্যাপারটা কি, বলতে পারেন?
নাহ।
থাক, এ-নিয়ে পরে ভাবব। লোক এবং টিম্বার স্কুস জোগাড়। কেন? এসব এলাকায় শুনেছি, একসময় খনি ছিল। খনির লোকেরা টিম্বার সুস দিয়ে আকরিক ছাকত। এড, ফ্যান্টম লেকের কাছে কোন খনি চেন?
না। সোনার খনির কথা বলছ?
হতে পারে, মুসা আন্দাজ করল। গোপনে কোন খনিতে কাজ চালিয়েছে বাওরাড! ;
তা পারে, বলল কিশোর। তবে আমার মনে হয় না, সেরকম কিছু বলতে চেয়েছেন তিনি। নির্দেশ অনুসরণ করতে বলেছেন। তারমানে, এমন কোথাও গিয়েছেন, যেখানে রয়েছে সূত্র। পাউডার গালচে যেতে হবে আমাদের, বুঝেছ।
পাউডার গালচ কি কাছাকাছিই নাকি? মুসা জিজ্ঞেস করল।
এড জানাল, হাইওয়ে ধরে গেলে বড়জোর এক মাইল।
আশ্চর্য, মুসা, তুমি জান না? ভুরু কোঁচকাল কিশোর। বিখ্যাত জায়গা। লোকাল হিস্টরিতে জায়গাটার নাম রয়েছে। পড়েছি…
গোস্ট টাউন! উত্তেজনায় মোর চেড়ে উঠে পড়ল রবিন। পুরানো ভূতুড়ে শহর! তাই তো বলি, নামটা চেনা চেনা লাগে কেন?
ভূ-ভূতের শহর..! ভয় দেখা দিল মুসার চোখের তারায়। আ-আমরা যাচ্ছি নাকি?
যেতে হবে, উঠে দাঁড়াল কিশোর। এখুনি।
জীর্ণ, মলিন রোড-সাইনঃ পাউডার গালচ। তীর চিহ্ন নির্দেশ করছে সরু একটা কাঁচা সড়ক। সাইকেল চালিয়ে চলল চার কিশোর। মিনিট দশেক পরেই নিচে দেখা গেল গোস্ট টাউন।
ওপর থেকে দেখার জন্যে থামল ওরা। শুকনো খাড়ির পাড়ে ছড়িয়ে রয়েছে কতগুলো পুরানো, ভাঙা ছাউনি। পথের কিনার ঘেঁষে তৈরি হয়েছিল কিছু বাড়ি, বেশির ভাগই পাথরধসে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। কোনমতে দাঁড়িয়ে থাকা বড় একটা বাড়ির কপালে সাইনবোের্ড রয়েছে, স্যালুন। আরেকটাতে জেনারেল স্টোর। কাত হয়ে যাওয়া একটা বাড়িতে লেখা, জেল। একটা কামারশালা আর একটা আস্তাবল আছে। পথের শেষ মাথায় পর্বতের গায়ে মস্ত এক কালো ফোকর, খনির প্রবেশ মুখ। ওই খনির জন্যেই গড়ে উঠেছিল শহরটা।