যাব, হতাশ মনে হল কিশোরকে। আপনি ঠিকই বলেছেন, অন্ধ ভিখিরির ব্যাপারটা কাকতালীয়ও হতে পারে। আমার দুঃখ, কেসটা শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেল।
তাই? শোন, কষ্ট করে ব্যাগটা নিয়ে আসায় খুব খুশি হয়েছি।
না না, কষ্ট আর কি? তাড়াতাড়ি বলল মুসা।
লেখককে ব্যাগ থেকে নোট বের করতে দেখে হাত নাড়ল রবিন, না না, আমাদেরকে কিছু দেবেন না, প্লীজ।
তাহলে কি পুরস্কার দেয়া যায়? জিজ্ঞেস করলেন সাইমন। আমার বোটে চড়ে হাওয়া খেতে যাবে? পরের বার যখন যাব আমি?
খালি জানাবেন, আনন্দে দাঁত বেরিয়ে পড়েছে মুসার। আধ ঘন্টার মধ্যে হাজির হয়ে যাব।
বেশ, তোমাদের ফোন নাম্বার দাও।
বাড়ির ফোন নাম্বার জানাল মুসা। রবিন আর কিশোরও জানাল যার যারটা।
বারান্দায় ওদেরকে এগিয়ে দিয়ে গেলেন গোয়েন্দা-কাম-লেখক। ওরা সাইকেলে উঠে রওনা হওয়ার পরও দাঁড়িয়ে রইলেন।
দারুণ লোক, মুসা বলল।
হ্যাঁ, একমত হল কিশোর। আমাদের দেখে খুব খুশি হয়েছেন। লোকটাকে নিঃসঙ্গ মনে হল। ক্যালিফোর্নিয়ায় কেমন লাগছে কে জানে, নিউ ইয়র্ক থেকে এসেছেন
তো?
মুখ খুলতে যাচ্ছিল রবিন, একটা গাড়ি দেখে থেমে গেল। বাদামি রঙের একটা। সেডান। ওদের পাশ কাটিয়ে গিয়ে মিস্টার সাইমনের বাড়ির সামনের চত্বর থামল। গাড়ি থেকে নেমে বারান্দায় উঠল একজন বয়স্ক লোক, সাইমন তখনও ওখানে দাঁড়িয়ে আছেন।
কি কথা হল, শোনা গেল না।
দুজনে ঢুকে গেলেন ভেতরে।
কিশোর, রবিন বলল। কেসটা বোধহয় শেষ হয়নি।
কেন? মুসার প্রশ্ন।
সিকিউরিটি ম্যান। যে ব্যাংকে ডাকাতি হয়েছে ওটার সিকিউরিটি গার্ড, ওকেই দেখেছি কাল সন্ধ্যায়। এই লোক মিস্টার সাইমনের বাড়িতে কেন?
৪
বুঝতে পারছি না! কিশোর বলল। ভিকটর সাইমনের টাকার অভাব হবার কথা নয়। তাঁর সব বই বেস্টসেলার।
কিন্তু ব্যাংক ডাকাতিতে যদি জড়িতই না হবেন, প্রশ্ন তুলল রবিন।
সিকিউরিটি গার্ড এখানে কেন?
জানি না।
বিকেলের শুরু। হেডকোয়ার্টারে আলোচনায় বসেছে তিন গোয়েন্দা। ওরা সাইপ্রেস ক্যানিয়ন ড্রাইভে থাকতে থাকতেই আবার ফিরে গেছে সিকিউরিটি ম্যান। সেই কথাই আলোচনা করছে এখন।
কাল রাতে অন্ধ লোকটা খুঁড়িয়েছে, রবিন বলল। মিস্টার সাইমনও খোঁড়ান।
অন্ধ লোকটা কি অ্যাক্সিডেন্টের আগে খুঁড়িয়েছিল? কিশোর জিজ্ঞেস করল।
খেয়াল করিনি।
খোঁড়ানোর ব্যাপারটা হয়ত কাকতালীয়, বলল মুসা। মানিব্যাগ পাওয়াটাও। মিস্টার সাইমনের বাড়িতে গার্ডের যাওয়াটাকেও যদি সেরকম কিছু ধরা যায়, অনেকগুলো কাকতালীয় ব্যাপার হয়ে গেল না?
পুলিশের কাছে যাচ্ছি না কেন আমরা? রবিন বলল। মিস্টার সাইমনও তাই বললেন। ডাকাতিতে জড়িত থাকলে বলতেন কি?
অনেক অপরাধী বলে ওরকম, বলল মুসা। নিজেকে নির্দোষ বোঝানোর জন্যে।
পুলিশ আমাদের কথা বিশ্বাস করবে না, কিশোর বলল। অন্তত মিস্টার সাইমনের ব্যাপারে। আমি নিজেই বিশ্বাস করতে পারছি না। তার যে সুনাম, এই জিনিস নষ্ট করতে চাইবে না কোন সুস্থ মস্তিষ্কের লোক। তবে মনে হচ্ছে এই ডাকাতির সঙ্গে কিছু একটা যোগাযোগ রয়েছে তাঁর। মিস্টার রোজার হয়ত আমাদের সাহায্য করতে পারবেন।
মিস্টার রোজার? চিনতে পারল না রবিন।
ডেস্কে রাখা একটা খবরের কাগজ টেনে নিল কিশোর। সান্তা মনিকা ইভনিং আউটলুকের একটা সংখ্যা। সেদিনই বেরিয়েছে। বাড়ি ফেরার পথে নাস্তা খেতে থেমেছিল তিন গোয়েন্দা, তখন পত্রিকাটা কিনেছে সে।
ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ডের নাম ড্যানি রোজার, জানাল কিশোর। এই পত্রিকায় লিখেছে। টেলিফোন ডিরেক্টরির জন্যে হাত বাড়াল সে। অল্পক্ষণেই পেয়ে গেল যা খুঁজছে।
ম। একজন ড্যানি রোজারের নাম আছে। তিনশ বারো ডলফিন কোর্টে থাকে। সৈকতের ধারে।
কিশোওর! বাইরে থেকে ডাক শোনা গেল। আরে এই কিশোর, কোথায়
তুই?
দীর্ঘশ্বাস ফেলল কিশোর। চাচী। সেই সকালের পর থেকে আর আমাকে দেখেনি তো। অস্থির। কত খাবার আর কাজ জমিয়ে রেখেছে কে জানে!
আমার মা-ও নিশ্চয় রেগে ভোম, বলল মুসা। বহুত কাজ ছিল। ফেলে রেখে পালিয়েছি। গেলেই এখন ঘর মোছাবে কিংবা বাগানের ঘাস কাটাবে।
হ্যাঁ, যা বলছিলাম, কিশোর বলল। আমরা মিস্টার রোজারের সঙ্গে দেখা করব। সম্ভব হলে আজ বিকেলেই। তোমরা আসতে পারবে? রকি বীচ মার্কেটে, সন্ধ্যা সাতটায়। ওখান থেকে যাব তার বাড়িতে।
পারব মনে হয়, জবাব দিল মুসা।
আমিও পারব, হেসে বলল রবিন। কাল তো আর ইস্কুল নেই যে পড়া লাগবে। সন্ধ্যায় দেখা হবে।
ট্রেলার থেকে বেরিয়ে এল ওরা।
বিকেলটা স্যালভিজ ইয়ার্ডে কাজ করতে হল কিশোরকে। সকাল সকাল রাতের খাওয়া সেরে সাইকেল নিয়ে বেরোল।
সাতটার পাঁচ মিনিট আগে এল মুসা আর রবিন। সান্তা মনিকায় চলল তিনজনে।
পথের শেষ মাথায় ছোট ছোট কয়েকটা বাড়ির একধারে খুঁজে পাওয়া গেল তিনশ বারো নাম্বার। রাস্তার নাম ডলফিন কোর্ট। ড্রাইভওয়েতে দাঁড়িয়ে আছে বাদামি সেডান, সকালে যেটা দেখেছিল ছেলেরা। বাড়ির সামনের দিকে অন্ধকার, পেছনের একটা জানালায় আলো দেখা যাচ্ছে। সাইকেল রেখে গিয়ে জানালা দিয়ে উঁকি দিল ওরা। ওটা রান্নাঘর।
লোকটা আছে। একা। জানালার ধারে বসে আছে। সামনে একগাদা খবরের কাগজ। হাতের কাছে টেলিফোন। শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে টেবিলক্লথের দিকে। সকালের চেয়ে বয়স্ক লাগছে এখন তাকে। চুল পাতলা। চোখের নিচে কালি।