লেমোনেড চলবে? ছেলেদের জিজ্ঞেস করলেন সাইমন। মাথা ঝাঁকাল তিনজনে।
রান্নাঘরে চলে গেল কিম। বাড়ির একেবারে দূরতম কোণে রান্নাঘরটা, কফি শপ ছাড়িয়ে ওপাশে।
বিজ্ঞাপনগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে দেখে ও, হেসে বললেন লেখক। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত আলোচনাগুলো শোনে। ইস্, খাবার যা এনে হাজির করে না, ভয়ঙ্কর।
পুরানো রেস্টুরেন্টের কথা তুললেন এরপর সাইমন। কি করে এখানে এলেন, এটাকে মেরামত করে কি করবেন, এসব। বসবাসের যোগ্য সুন্দর একটা বাড়ি বানানোর ইচ্ছে আছে তাঁর। বললেন, কফি শপটাকে করব ডাইনিং রুম। লবির একধারে একটা স্টোর আছে, ওটাকে কিমের বেডরুম বানানো হবে। আর ওর বাথরুমটা করব ওই যে ওই ওদিকে, সিঁড়ির নিচে।
লবির দেয়াল ঘেঁষে উঠে যাওয়া সিঁড়িটা দেখল ছেলেরা। সিঁড়ির মাথায় একটা গ্যালারি, অনেক বড়। ওখান থেকে এ ঘর দেখা যায়, যেখানে ওরা বসেছে। ঘরটার ছাত অনেক ওপরে, প্রায় দোতলার সমান উচুতে। এই ঘরটাই বাড়ির প্রায় অর্ধেক। বাকি অর্ধেকের নিচের তলায় রয়েছে লবি, স্টোররুম, কফি শপ, রান্নাঘর। আর ওগুলোর ওপরে রয়েছে দোতলার অন্যান্য ঘর, সবগুলোর দরজা দিয়েই গ্যালারিতে আসা যায়।
অনেক কিছুই ভেঙেচুরে গেছে, সাইমন বললেন। তবে কাঠামোটা অত্যন্ত মজবুত, আর্কিটেক্ট আর একজন বিল্ডিং কন্ট্রাকটরকে দেখিয়ে তবেই কিনেছি। সাগরের ধারে এরকম জায়গায় এত বড় বাড়ি কিনতে খরচ কত পড়েছে কল্পনা করতে পার?
নিশ্চয় অনেক, কিশোর বলল।
মাথা ঝাঁকালেন লেখক। আরও অনেক খরচ আছে। তবে মেরামত হয়ে গেলে দেখার মত বাড়ি হবে। এত বড়, উঁচু একটা ঘর পেয়েছি। সাগর দেখা যায়। ছাতে একটা ফুটোও নেই। থাকলে এরকম জায়গায়ই থাকা উচিত। অথচ তেইশটা বছর কি এক খুপরিতে যে কাটিয়েছি, ব্রুকলিনের এক অ্যাপার্টমেন্ট হাউসে। বৃষ্টি হলেই ছাত দিয়ে পানি পড়ত। সব সময় হাতের কাছে কয়েকটা বালতি রাখতে হত, বৃষ্টি নামলেই ফুটোর তলায় বসানোর জন্যে।
হাসলেন সাইমন। কেউ কেউ যে বলে ধনী হওয়ার চেয়ে গরিব থাকা ভাল, ওগুলো গাধা। আরে ব্যাটা পয়সাই যদি না থাকল আরামে থাকবি কি করে?
লেমোনেড নিয়ে হাজির হল কিম। মানিব্যাগটা বের করে কাচের সুন্দর টেবিলটায় রাখল কিশোর।
তুলে নিলেন সাইমন। অন্ধ ভিখিরি ফেলে গেছে, না? টাকার ঠেকা নেই ওর, মনে হচ্ছে। একটা পয়সাও খরচ করেনি।
কিন্তু সে ভিক্ষে করছিল, রবিন বলল। হাতে টিনের মগ। তাতে পয়সা।
চিন্তিত দেখাল তাঁকে। পেল কি করে ব্যাগটা? যদি অন্ধই হবে…।
ঠিক বলেছেন, স্যার, কিশোর বলল। চোখে দেখে না, রাস্তায় পড়া থাকলে দেখল কি করে? তবে, ব্যাগটার ওপর লাঠি লাগলে বোঝার কথা…এটা কোথায় রেখেছিলেন?
পেশাদারি গন্ধ পাচ্ছি তোমার কথায়? এখুনি নোটবুক আর পেন্সিল বের করবে না তো? ও, কেসের কথা বললে না তখন? কি কেস? গোয়েন্দাগিরির তালিম নিচ্ছ নাকি?
তালিম নয়, গোয়েন্দাই আমরা, বলতে বলতে পকেট থেকে কার্ড বের করে দিল কিশোর।
কার্ডটা দেখে আনমনে মাথা দোলালেন সাইমন। ইউ। ভাল।
সামনে ঝুঁকল রবিন। আমরা সন্দেহ করছি, ব্যাংক ডাকাতির সঙ্গে অন্ধ ভিখিরির সম্পর্ক আছে। কাল কি সান্তা মনিকায় গিয়েছিলেন আপনি? ওখানেই কোথাও মানিব্যাগটা ফেলেছেন? নাকি আপনার পকেট মেরে দিয়েছে?
না, চেয়ারে হেলান দিলেন লেখক। কাল সকালেও এটা আমার পকেটে ছিল। মনে আছে। বাড়ি থেকে বেরোচ্ছিলাম, তখন দেখেছি। তারপর আর এটার খোঁজ করিনি। তোমরা মনে করালে। মনে হয় নিকারোদের ওখানেই কোথাও ফেলেছি। কাল ওখানে ছাড়া আর কোথাও যাইনি। কি করে পড়ল জানি না। ভিড়ের মধ্যে যাইনি, কারও সঙ্গে ধাক্কাও লাগেনি, পকেটমারা গেল কখন? কোন অন্ধকেও দেখিনি, তাহলে মনে থাকত।
নিকারো? মুসা বলল। উপকূলের ওদিকে না? শখের মাছশিকারিদের নৌকা ভাড়া দেয় যারা? নিকারোজ অ্যাণ্ড কোং?
মাথা ঝোঁকালেন সাইমন। আমার স্পীডবোট ওখানেই রাখি। এখান থেকে সর চেয়ে কাছের ম্যারিনা ওটাই। বোট নিয়ে বেরোনোর দরকার হলে ওদের ওখানে চলে যাই। মিসেস নিকারোর ওখানে চাকরি করে দুটো ছেলে। নৌকায় করে আমাকে বয়ার কাছে নিয়ে যায়, ওখানেই আমার বোট বাঁধা থাকে। কাল বোটে করে কিছুক্ষণ হাওয়া খেয়ে এসেছি। পকেট থেকে ব্যাগটা কোনভাবে পড়ে গিয়ে থাকতে পারে। পার্কিং লটে, কিংবা ডকের কাছে।
এবং অন্ধ সেটা কুড়িয়ে নিয়েছে, মুসা বলল।
ওটা নিয়ে তারপর চলে গেছে সান্তা মনিকায়, রবিন বলল। ঠিক সময়ে গিয়ে হাজির হয়েছে বাস স্টপে, ঝাড়ুদারের ছদ্মবেশে যখন ডাকাত ঢুকেছে ব্যাংকে। মগ ফেলাটা তার একটা ছুতোই, যাতে আমরা পয়সা কুড়ানোয় ব্যস্ত থাকি, ব্যাংকের দিকে চোখ না দিতে পারি।
না-ও হতে পারে, বললেন সাইমন। ভিজে পিচ্ছিল হয়ে গিয়েছিল মগটা, হাত থেকে সত্যি হয়ত ছুটে গিয়েছিল, অভিনয় নয়। মপ ফেলার মধ্যে তেমন কোন গুরুত্ব দেখি না।
চলে যাওয়ার সময় ব্যাগটা পড়ে গিয়েছিল, কিশোর বলল। রবিন সেটা পেয়ে তাকে ফিরিয়ে দিতে যাচ্ছিল, এই সময় একটা গাড়ি এসে ধাক্কা মেরে ফেলে দিল লোকটাকে।
অস্বাভাবিক নয়। অন্যের জিনিস তার কাছে ছিল, সেটা পড়ল আরেকজনের কাছে। যদি তাকে চোর মনে করে বসে? যদি পুলিশ এসে ধরে, জিজ্ঞেস করে কি করে পেল সে? ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। তাড়াহুড়ো করে ছুটে চলে যাচ্ছিল হয়ত সে-কারণেই। মগ পড়া, মানিব্যাগ পড়া, পালিয়ে যাওয়া, কোনটাই প্রমাণ করে না সে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু এসব কথা পুলিশকে গিয়ে জানাচ্ছ না কেন? ইচ্ছে করলে আমার নামও বলতে পার ওদের। পুলিশকে সাহায্য করতে পারলে খুশিই হব।