হাই! বলে উঠল একটা পরিচিত কণ্ঠ।
ঘরের অন্ধকার কোণে, দরজার পাশে আরেকটা চেয়ারে বসে আছে রবিন। বেঁধে রাখা হয়েছে তাকেও।
১৯
ব্যাগটা দেখে ফেলেছিলে, তাই না? রক বলল। আমাকে ফাঁকি দিতে চেয়েছ।
আপনিও ফাঁকি দিয়ে আমাদেরকে এখানে নিয়ে এসেছেন, বলল কিশোর।
তাকে আর মুসাকেও চেয়ারে বসানো হয়েছে। বেঁধেছে বিলের রুমমেট, তার নাম এতক্ষণে জানা হয়ে গেছে ওদের, পিনটো।
রোজার কোথায়? রক জিজ্ঞেস করল। রাস্তায়?
জবাব দিল না কিশোর।
হাসল রক। বেশিক্ষণ বসিয়ে রাখব না ওকে। পিস্তলটা পকেটে রেখে স্প্যানিশে পিনটোকে কি বলল সে।
দরজায় থাবা পড়ল। পাল্লা ঠেলে ভেতরে ঢুকল বিল। মুসা আর কিশোরকে দেখে থমকে দাঁড়াল, চোখে বিস্ময়। এরা এখানে কিভাবে? এটা তো রীতিমত বিচ্ছু, কিশোরকে দেখল সে। আটকে রাখ, দেখ পালাতে না পারে। রককে বলল
সে, আমি এসেছি পিনটোকে নিতে। বোট রেডি। মাল তোল প্রায় শেষ। মাইস। চলে যাবে এখুনি।
পাশে বসা কিশোরকে ফিসফিস করে জানাল রবিন, অক্সনার্ডের একটা মুভিং কোম্পানির মালিক মাইস। বিকেলে লুকিয়ে থেকে দেখেছি, ট্রাকে মাল তুলেছে ও আর আরেকটা লোক। তোলার সময় একটা বাক্স পড়ে খুলে গিয়েছিল। ভেতরে বুলেটের বাক্স।
অ্যামুনিশন! প্রায় চেঁচিয়ে উঠল কিশোর। নিশ্চয় রাইফেলও আছে। রকের দিকে তাকাল সে। আমি ভেবেছিলাম ড্রাগস। টিনার সাহায্যে মাদকদ্রব্য চোরাচালান করে বিল আর তার দোস্তেরা।
অসম্ভব! চিৎকার করে উঠল এলসি। আমাকে না নিয়ে বোট নড়ানোরও সাহস করেনি কখনও। তুমি ভুল করছ।
বিল হাসল। এবার নেব, মিসেস নিকারো। এবার আর বোটে থাকছেন না আপনি।
অস্ত্র তুলবেন বোটে, কিশোর বলল। সেজন্যেই ডাকাতি করেছেন তিন বন্ধু মিলে, অস্ত্র কেনার টাকা চাই তো? চালান দেবেন মেসা ডিওরোতে, নিরীহ মানুষ মারার জন্যে।
গর্বের ভঙ্গিতে মাথা তুলল বিল। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের লড়াই হবে।
নিরস্ত্র মানুষকে গুলি করাকে কি লড়াই বলে নাকি?
কাদের নিরস্ত্র বলছ? রেগে উঠল বিল। মেসা ডিওরের সিভিল গার্ডদের? অন্যের জমি কেড়ে নিতে দস্যুদের সাহায্য করেছে যারা?
ওর কথা শুনছ কেন, বিল? রক বলল। যা খুশি বলুক না। আমাদের কাজ আমরা করব।
আপনিই কানা ফকির সেজেছিলেন,রককে বলল কিশোর। ছদ্মবেশে চোখ রেখেছেন ব্যাংকের ওপর। রোজার যাতে চিনতে না পারে। টাইম লকের কথা জানতেন আপনি। রোজারের ডিউটি জানতেন। তবে বেশি লোভী আপনি। ডাকাতির আগের দিন মিস্টার সাইমনের মানিব্যাগটা পড়ে থাকতে দেখে লোভ সামলাতে পারেননি। তুলে পকেটে ভরে ফেলেছিলেন, আর সেটাই ভেস্তে দিল আপনাদের পরিকল্পনা। তাড়াহুড়োয় পালাতে গিয়ে কোনভাবে ফেলে দিয়েছিলেন। পকেট থেকে।
আ-আমি, তাড়াতাড়ি বলল রক। আসলে…যার ব্যাগ তাকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্যেই তুলেছিলাম।
বিলের দিকে তাকাল পেক, তারপর রকের দিকে। স্প্যানিশ ভাষায় কি বলল। তাকে চুপ থাকতে ইশারা করল বিল। রকের দিকে ফিরে কড়া গলায় বলল, ছেলেটা যা বলছে সত্যি? সামান্য একটা ব্যাগের জন্যে…
বাধা দিয়ে বলল রক, ওর কথা বিশ্বাস কোরো না। তুলে পকেটে রেখেছিলাম। ভেবেছি, ডাকবাক্সে ফেলে দেব। পরে ভুলে গেছি, আর ফেলতে মনে ছিল না। ওসব নিয়ে তর্ক করে এখন লাভ নেই।
আমাকে বললে না কেন তুমি? চেঁচিয়ে উঠল বিল। মিস্টার সাইমনকে দিয়ে দিতাম। ওই ব্যাগ নিয়েই তো যত গোলমাল। ছেলেগুলো এসে হাজির হয়েছে!
বলছি তো, মনে ছিল না! তাছাড়া এটা কোন ব্যাপার নাকি? এদেশ থেকে চলেই তো যাচ্ছ তুমি। আর ছেলেগুলোর ব্যবস্থা আমি করব।
মিস্টার রোজারের বাড়ি ছাড়ছেন না আপনি, তাই না? বলল কিশোর। কেন, আন্দাজ করতে পারছি। এদেশেই থাকবেন, ডাকাতির টাকা ভোগ করতে হবে তো। রিপাবলিকানদের সব টাকা দেবেন না আপনি।
আবার রকের দিকে তাকাল বিল। ফ্যাকাসে হয়ে গেল রকের মুখ।
কি বলছে ছেলেটা? রকের দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচাল বিল।
সব টাকা অস্ত্র কিনতেই খরচ হয়ে গেছে, বিলের চোখের দিকে তাকাতে পারছে না রক। জান তুমি, বিলানো।
আমি শুধু জানি দুলাখ ডলার খরচ হয়েছে। অর্ধেকটা আজ বিকেলে মাইসকে দিয়েছ তুমি, বাকিটা আমি দিয়েছি। আর টাকা কই? বলেছ, রডরিগেজকে পাঠিয়েছ। তোমার চেহারা দেখে তো তা মনে হচ্ছে না। মিথ্যে কথা বলেছ তুমি। বিশ্বাস করে তোমার কাছে রেখেছিলাম। টাকা কি করেছ?
আমি কি করব? যা যা করতে বলেছ, করেছি…।
আজ রাতে তুমিও যাচ্ছ আমাদের সঙ্গে, কঠিন গলায় বলল বিল। মেকসিকো সিটিতে গিয়ে রডরিগেজের অ্যাসিসটেন্টকে আমাদের সামনে বলবে যে তুমি তার হাতে টাকা দিয়েছ। দরকার হলে মেসা ডিওরোতে নিয়ে যাব, তোমাকে…
কি যা-তা বলছ! আজ রাতে যে যেতে পারব না, ভাল করেই জান। এখানে জরুরি কাজ রয়েছে আমার। মিশন এখনও শেষ হয়নি।
মিস্টার রোজারের বাড়িতে এখনও পঞ্চাশ হাজার ডলার রয়েছে, শান্তকণ্ঠে বলল কিশোর।
এই ছেলে, চুপ কর! মিথ্যুক কোথাকার! কিশোরকে ধমক দিয়ে মিসেস নিকারোর দিকে ফিরল রক। এই বুড়ি, তুমিই এসব কথা বলেছ ছেলেটাকে। নিশ্চয় বলেছ স্বপ্নে দেখেছ তুমি, আর ছেলেটাও…।
মিসেস নিকারো কিছু বলেনি আমাকে, প্রতিবাদ করল কিশোর। টাকাটা কোথায় আছে, তা-ও বলে দিতে পারি। মিস্টার রোজারের ফ্রিজে একটা আইসক্রীমের প্যাকেটে…।