কিন্তু মিসেস নিকারোর সঙ্গে ডাকাতির সম্পর্ক কি? রোজার জিজ্ঞেস করল।
আছে, যোগাযোগ আছে, আমি শিওর। রকি বীচ পুলিশ স্টেশনে আমাদেরকে যেতে বলেছে মুসা। তার ধারণা, এলসি ক্লিারোকে থানায় নিয়ে আসবেন চীফ।
বস। আমার জ্যাকেট নিয়ে আসছি।
খট করে সুইচ টিপে রান্নাঘরের লাইট নেভাল কিশোর। বেরিয়ে এসে দুজনে উঠল রোজারের হোট গাড়িতে। ড্রাইভওয়ে থেকে বেরিয়ে মস্ত একটা উইলো গাছের নিচে গাড়ি রাখল রোজার। অপেক্ষা করতে লাগল ওরা।
সাইকেল নিয়ে হাজির হল মুসা। হেডলাইট জ্বালল-নিভাল রোজার, সঙ্কেত দিল কোথায় আছে ওরা। একটা ঝোপের ভেতরে সাইকেল লুকিয়ে গাড়ির কাছে এল মুসা। উঠে বসল পেছনের সিটে। জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে?
রককে সন্দেহ করে, জানাল কিশোর। চিনির পাত্রে বাগ পাওয়া গেছে, রকের ঘরে রেকর্ডারে তাদের কথাবার্তা রেকর্ড হয়েছে, এসব কথাও বলল। ভয়েসঅ্যাকটিভেটেড রেকর্ডার, কথা শুনলেই চালু হয়ে যায় রেকর্ডিং সিসটেম। শেষে জিজ্ঞেস করল, কিছু মনে পড়ে?
অন্ধ! উত্তেজিত কণ্ঠে প্রায় চেঁচিয়ে বলল মুসা। খাইছে! বাগ লাগাতে গিয়েছিল স্যালভিজ ইয়ার্ডে! রক ব্যাটাই…।
হতে পারে, বলল কিশোর।
নিচু স্বরে কথা বলতে লাগল দুজনে। নিকারোদের ওখানে যা যা ঘটেছে, মুসাকে জানাচ্ছে কিশোর।
অন্ধকার হয়ে গেছে। বিকেল থেকেই আসি আসি করছিল বৃষ্টি, পড়তে শুরু করল এখন। সেকেণ্ড স্ট্রীট আর ডলফিন কোর্টে যানবাহন প্রায় নেই বললেই চলে। ছটার কিছু পরে মোড়ে দেখা দিল রকের গাড়ি। ড্রাইভওয়ে ধরে গিয়ে থামল বাড়ির সামনে। গাড়ি থেকে নামল সে। একটু পরেই জ্বলে উঠল রান্নাঘরের আলো। তারপর সামনের ঘরে আলো জ্বলল।
আমাকে খুঁজছে, রোজার বলল। এসময় ঘর থেকে বেরোই না, কদিন ধরে।
দোতলায়ও আলো জ্বলল, রকের বেডরুমে।
আর বেশিক্ষণ লাগবে না, হাসি হাসি গলায় বলল রোজার।
সব কটা ঘরের আলো জ্বালিয়ে রেখেই সামনের দরজা দিয়ে ছুটে বেরিয়ে এল রক। দৌড়ে লন পেরিয়ে গিয়ে উঠল গাড়িতে। গর্জে উঠল ইঞ্জিন। কয়েক সেকেণ্ড পরেই ওদের পাশ দিয়ে শাঁ করে বেরিয়ে গেল গাড়িটা।
রোজারও ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে ফেলেছে। পিছু নিল। সেকেণ্ড স্ট্রীট পেরিয়ে বেরিয়ে এল ওশন অ্যাভেন্যুতে। ছুটে চলল কোস্ট হাইওয়ে ধরে।
নিকায়রোদের ওখানে যাচ্ছে, কিশোর বলল।
দূরত্ব বজায় রেখে অনুসরণ করছে রোজার। মাঝখানে ঢুকে গেল আরেকটা গাড়ি। ভালই হল, রোজারের গাড়িটাকে লক্ষ্য করবে না আর রক। অঝোর বৃষ্টির মাঝে উত্তরে ছুটে চলেছে ওরা। পারলে গাড়ির গতি পুরোটাই বাড়িয়ে দিত রক, বোঝা যাচ্ছে, পুলিশের ভয়ে বাড়াচ্ছে না। অহেতুক ঝামেলায় পড়তে চায় না এখন। ম্যালিবুতে ঢুকে গতি কমাল কিছুটা, তারপর আবার বাড়াল।
মিস্টার রোজার, কিশোর জিজ্ঞেস করল। জিনো নামে কাউকে চেনেন না?
না। রকের মিডলনেমের আদ্যাক্ষর অবশ্য জি, কিন্তু তাতে কি জিনো বোঝায়? কি জানি, মানায় না। স্প্যানিশ আর ইটালিয়ানরা ওরকম নাম রাখে।
গন্তব্যস্থল দেখা যাচ্ছে। গতি কমাল রোজার। যানবাহন খুব কম রাস্তায়। ডকে দাঁড়ানো সাদা একটা ট্রাক আবছামত দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ ব্রেক কষল রক। ডানে মোড় নিয়ে মোটেলের ড্রাইভওয়ে ধরে উঠে যেতে শুরু করল।
মোটেল! চেঁচিয়ে উঠল মুসা। গাড়ি থামিয়ে দিয়েছে রোজার। কিশোর, ওখানেই আছে এলসি নিকারো আর তার শাশুড়ি।
তাই তো! আমারও বোঝা উচিত ছিল। মিস্টার রোজার, আপনি এখানেই থাকুন। পনেরো মিনিটের মধ্যে আমরা না ফিরলে পুলিশকে ফোন করবেন।
আচ্ছা। সাবধানে থাকবে।
গাড়ি থেকে নামল দুই গোয়েন্দা। ওপর দিকে তাকাল। পাহাড়ের চূড়ায় অন্ধকার একটা ছায়ামাত্র এখন মোটেলটা। নিঃশব্দে ড্রাইভ বেয়ে উঠতে শুরু করল ওরা। তুমুল বৃষ্টি বাঁচাতে পিঠ বাঁকা করে রেখেছে। মোটেলের চওড়া চত্বরে পৌঁছে কিশোরের হাত খামচে ধরল মুসা। ওই যে, রকের গাড়ি, ফিসফিসিয়ে বলল সে।
কিন্তু ব্যাটা গেল কই?
মোটেলের ভেতরে হয়ত।
পুলের পাশ কাটাল ওরা! সাগর এখন মোটেলের অন্যপাশে। সাগরের মাঝামাঝি রয়েছে মোটেলটা। ফলে ঝড়ো হাওয়া আর তেমন আঘাত হানতে পারছে না ওদের গায়ে। বৃষ্টির ফোঁটা চকচক করছে ম্লান আলোয়।
হাত তুলে দেখাল কিশোর। একধারে একটা জানালায় আলো, খুবই সামান্যভারি পর্দার ওপাশে নিশ্চয় ল্যাম্প জ্বলছে।
পা টিপে টিপে জানালার কাছে এসে কান পাতল ওরা, ভেতরে কথা হয় কিনা শোনার জন্যে।
হঠাৎ পেছনে শোনা গেল আরেকটা শব্দ বাতাস আর বৃষ্টির আওয়াজ ছাড়াও।
পেছনে ফিরে চাইল কিশোর।
চুপ! ধমক দিল রক রেনাল্ড। হাতে পিস্তল। একদম নড়বে না।
চিৎকার করে ডাকল মোটেলের দিকে চেয়ে।
মোটেলের দরজা খুলে গেল। বাইরে এসে পড়ল ভেতরের আলো। বেরিয়ে এল বিলের আরেক রুমমেট, যাকে সারা বিকেল দেখা যায়নি। তার হাতেও পিস্তল। –
হাঁট! দুই গোয়েন্দাকে আদেশ দিল বুক।
ঘরে ঢুকল কিশোর আর মুসা। বাতাসে কড়া তামাকের ঝাঁঝাল গন্ধ। পিঠখাড়া একটা চেয়ারে বসা এলসি নিকারো, হাতলের সঙ্গে হাত বাঁধা। রাগে মুখ লাল। বিছানার কাছে একটা আর্মচেয়ারে বসিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে তার শাশুড়িকে।
রক ঢুকল ভেতরে। দরদর করে পানি ঝরছে গা থেকে। দরজাটা বন্ধ করে দিল বিলের রুমমেট।