…ম্যালিবুর পাহাড়ে ধস নেমেছে, বলে চলেছে সংবাদ পাঠক। কাদাপানিতে একাকার হয়ে গেছে বিগ টুজুংগা ক্যানিয়ন। ময়লা সাফ করতে ব্যস্ত এখন ওখানকার অধিবাসীরা।
এক দুঃসাহসী ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে সান্তা মনিকার খ্রিফট অ্যাণ্ড সেভিংস কোম্পানিতে। ঝাড়ুদারের ছদ্মবেশে কাল সন্ধ্যায় ব্যাংকে ঢুকে বসেছিল ডাকাত। ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ডকে বোর্ড রুমে আটকে রেখে অপেক্ষা করছিল ওরা। আজ সকালে আটটা পঁয়তাল্লিশ মিনিটে টাইম লক খুলে দেয়া হয়, কর্মীদের ঢোকার জন্যে, ব্যাংকের একজিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্ক জনসনকে ভল্ট খুলতে বাধ্য করে ওরা। নগদ প্রায় আড়াই লক্ষ ডলার আর সেফ-ডিপোজিট বক্সে রাখা দামি মালামালসহ নিরাপদেই পালিয়ে গেছে ডাকাতেরা। আমাদের সাংবাদিকেরা চলে গেছে ঘটনাস্থলে। দুপুরের খবরে বিস্তারিত জানাতে পারব আশা করি।
সুইচ অফ করে দিল কিশোর।
সর্বনাশ! প্রায় চেঁচিয়ে উঠল রবিন। দি সান্তা মনিকা খ্রিফট অ্যাণ্ড সেভিংস! ওখানেই তো ছিলাম কাল সন্ধ্যায়, অন্ধ লোকটা রাস্তা পেরোচ্ছিল… থেমে গেল সে। উত্তেজিত। কিশোর, একটা ডাকাতকে বোধহয় দেখেছি!
রবিনের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করছে অন্য দুজন।
হ্যাঁ, দেখেছি। বাস স্টপ থেকে ব্যাংকের ভেতরটা দেখা যাচ্ছিল। ঝাড়ুদার দুজন বেরিয়ে গিয়ে এলিভেটরে উঠল, একজন পুরুষ, একজন মহিলা। কিছুক্ষণ পর লোকটা এসে খটখট করলে দরজা খুলে দেয় সিকিউরিটি গার্ড।
ফিরে এল? জিজ্ঞেস করল কিশোর। সেই ঝাড়ুদার লোকটাই?
মনে তো হল… সেরকমই লাগল…, সন্দেহ জাগল রবিনের চোখে। নাহ, শিওর না।…হাত থেকে মগ ফেলে দিল অন্ধ, পয়সাগুলো সব ছড়িয়ে পড়ল। আমি আর মহিলা কুড়িয়ে তুলে মগটা দিলাম লোকটার হাতে, তখন ব্যাংকের দরজায় দাঁড়াতে দেখলাম ঝাড়ুদারকে।
তারমানে অন্য লোকও হতে পারে?
কি বুদ্ধি করেছে ব্যাটারা! খাইছে! মুসা বলল। ঝাড়ুমোছা শেষ করে ওপরতলায় চলে গেল ঝাড়ুদারেরা। তখন লোকটার ছদ্মবেশে অন্য কেউ এসে দরজায় দাঁড়ালো। সিকিউরিটি ম্যান দরজা খুলে দিল। তারপর তাকেই আটকে রেখে ডাকাতেরা ব্যাংকটাকে একেবারে নিজের বাড়ি বানিয়ে ফেলল। অ্যালার্ম বাজল না। আরামসে কাটিয়ে দিল সারাটা রাত, পরদিন সকালে কর্মচারীরা আসার, অপেক্ষায় রইল।
রবিন, ঝাড়ুদার লোকটা কোত্থেকে এসেছিল দেখেছ? কিশোর জানতে চাইল। এলিভেটর থেকে বেরিয়ে লবি দিয়ে, নাকি রাস্তা থেকে?
মাথা নাড়ল রবিন। দেখিনি। দরজায় দাঁড়ানো দেখলাম। ভেবেছি, এলিভেটর থেকে নেমেই বুঝি এসেছে। এখন মনে হচ্ছে, রাস্তা থেকেও এসে থাকতে পারে। আমার ধারণা, ঝাড়ুদারদের কেউ নয়।
চমৎকার, খুশি হল কিশোর। ভাবনার খোরাক পাওয়া গেল। ওঅর্কবেঞ্চে পড়ে থাকা মানিব্যাগটা তুলে নিল। তুমি বললে, রাস্তা ধরে এসেছিল অন্ধ লোকটা। মগটা ফেলল এমন সময়, যখন ঝাড়ুদার আসছে। ওর পয়সা কুড়াতে ব্যস্ত হলে তোমরা, অবশ্যই মাথা নুইয়ে রাখতে হয়েছে। মাটি থেকে কিছু তুলতে গেলে নোয়াতেই হবে। তোমরা পয়সা কুড়ানোয় ব্যস্ত, ডাকাতটা ঠিক সেই সময় এল। কিছু বুঝতে পারছ।
ঢোক গিলল রবিন। অন্ধও ডাকাতের দলের!
মানিব্যাগটা উল্টেপাল্টে দেখছে কিশোর। সুন্দর। উটপাখির চামড়ায় তৈরি। নেইম্যান-মারকাস কোম্পানির জিনিস। শহরের সব চেয়ে দামি স্টোরগুলোর একটা।
এটা তো খেয়াল করিনি, রবিন বলল। আমি শুধু দেখেছি, ভিখিরি লোকটার কোন টেলিফোন আছে কিনা। যাতে ফোন করে তার ব্যাগটা ফিরিয়ে দিতে পারি। নেই।
ব্যাগটার ভেতরে কি আছে বের করতে লাগল কিশোর। একটা ক্রেডিট কার্ড, নগদ বিশ ডলার, একটা টেমপোরারি ড্রাইভিং লাইসেন্স। অন্ধ এক ভিখিরি ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে কি করে?
মাথা ঝাঁকাল রবিন। ঠিক। অন্ধ নয় লোকটা। ভিখিরিও নয়।
ভিকটর সাইমন, লাইসেন্সে লেখা নামটা পড়ল কিশোর। একশো বিরাশি সাইপ্রেস ড্রাইভ ক্যানিয়ন। ম্যালিবু।
সুন্দর জায়গা, মুসা বলল। ওখানে থাকে। খুব ধনী ভিখিরি মনে হচ্ছে।
অন্ধের ঠিকানা না-ও হতে পারে এটা, বলল কিশোর। হয়ত সে পকেটমার, চুরি করেছে। কিংবা পথে-টথে পেয়েছে কোথাও। রবিন, টেলিফোন ডিরেক্টরিতে, ভিকটর সাইমনের নাম আছে?
খুঁজেছি। পাইনি।
উঠে দাঁড়াল কিলোর। ব্যাগটা নাড়তে নাড়তে বলল, এটার ব্যাপারে আগ্রহী হবে পুলিশ। হয়ত, এই ব্যাগ ফেলে যাওয়াটা তেমন কিছু নয়। অন্ধের তাড়াহুড়ো করে পালিয়ে যাওয়াটাও কিছু মিন করে না। আর সাইপ্রেস ক্যানিয়নও এখান থেকে দূরে নয়। পুলিশকে জানানোর আগে ওখানে গিয়ে একবার খোঁজ করা দরকার, কি বল?
নিশ্চয়ই, রবিন একমত।
সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ল তিন গোয়েন্দা। প্যাসিফিক কোস্ট হাইওয়ে ধরে চলল উত্তরে, ম্যালিবুর দিকে। বিখ্যাত বীচ কমিউনিটির প্রধান বাজার এলাকা পেরোল আধ ঘন্টার মধ্যেই।
সরু একটা পথ সাইপ্রেস ক্যানিয়ন ড্রাইভ, কোস্ট হাইওয়ে থেকে বেরিয়ে এঁকেবেঁকে সরে গেছে দুশো মিটার। তারপর হাইওয়ের সঙ্গে প্রায় সামান্তরালে এগিয়েছে। ওটা ধরে সাইকেল চালাতে চালাতে হাইওয়ের যানবাহনের শব্দ কানে আসছে ছেলেদের। বায়ে গাছের ফাঁকে ফাঁকে চোখে পড়ছে সমুদ্র। ডানে পাহাড়ের ঢাল নেমে গিয়ে পথ পেরিয়ে আবার উঠেছে ওপাশে। পর্বতের চূড়ার ওপরে ঝকঝকে আকাশ ঘন নীল।