সেটা আমি বলতে পারব না, জবাব এল। সোমবার সকালে যোগাযোগ করলে হয়ত অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্ট জানাতে পারবে।
অপারেটরকে ধন্যবাদ দিয়ে রিসিভার রেখে দিল কিশোর। ওখানে কাজ করে? রোজার অবাক। বুঝতে পারছি না! করার তো কথা। এই তো সেদিন ফ্রেজনোতে গেল একটা বিশেষ কাজ নিয়ে।
যথেষ্ট সন্দেহ আছে আমার। এগিয়ে গিয়ে টান দিয়ে রেফ্রিজারেটরের দরজা খুলল কিশোর। কয়েক দিন আগে যেসব খাবারের প্যাকেট রেখেছিল, সেগুলো নেই। এককোণে যেন অসহায় হয়ে পড়ে রয়েছে শুধু একটা আইসক্রীমের প্যাকেট। দরজা বন্ধ করতে করতে বলল সে, এখানেই ছিল।
কী?
না, কিছু না। আমি শিওর না। বোধহয় দেরিই করে ফেললাম। মিস্টার রোজার, রক ঘরে তালা দিয়ে রাখে বললেন না?
হ্যাঁ। একা থাকতে ভালবাসে সে।
ওর ঘরটা দেখতে চাই আমি। এক্ষুনি।
১৮
গ্যারেজ থেকে ধরাধরি করে একটা মই নিয়ে এল দুজনে। লাগাল রকের ঘরের জান্নালায়। জানালা খোলা, কাজেই ঢুকতে অসুবিধে হল না কিশোরের।
প্রথমেই চোখ পড়ল, ড্রেসারের ওপর রাখা একটা রেকর্ডিং সিসটেমের ওপর। যন্ত্রে লাগানো টেপটা রিউণ্ড করে প্লে করল সে। এইমাত্র রোজারের সঙ্গে রান্নাঘরে বসে যা যা বলেছে, সব রেকর্ড হয়ে আছে। এমনকি রেফ্রিজারেটরের দরজা খোলার শব্দও স্পষ্ট।
মুচকি হাসল কিশোর। মুছে ফেলল সমস্ত রেকর্ডিং। তারপর টেপটা আবার শুরুতে এনে রেখে, ঘর দেখায় মন দিল। সব কেমন যেন খালি খালি। ডেস্কে চিঠির খাম বা পোস্টকার্ড নেই, বেডসাইড টেবিলে বই নেই। দেয়ালে ছবি নেই, টবে গাছ নেই। দেখে মনে হয়, মানুষই থাকে না এখানে।
ক্লোজেট খুলে দেখল। কিছু জ্যাকেট, শার্ট আর স্ন্যাকস আছে, পকেটগুলো খালি। ড্রেসারের ড্রয়ারে দেখা গেল আণ্ডারওয়্যার, মোজা, গেঞ্জি।
একেবারে নিচের ড্রয়ারে ভঁজ করা সোয়েটারের মধ্যে পাওয়া গেল একটা ছুরি। চামড়ার চমৎকার একটা খাপে ভরা। তীক্ষ্ণ ধার। পেন্সিল কাটা থেকে শুরু করে থ্রোইং নাইফ হিসেবে ব্যবহার, সব কিছু চলতে পারে।
যেখানে পেয়েছে সেখানেই ছুরিটা রেখে দিল সে। জানালা দিয়ে বেরিয়ে মই বেয়ে নিচে নেমে এল আবার। কি কি দেখেছে, জানাল রোজারকে। শেষে বলল, ছুরিটাও বোধহয় তার পিস্তলের মত করেই পায়ে বাঁধে।
মাথা নাড়ল রোজার, বিশ্বাসই করতে পারছে না। নানা জায়গায় ঘোরাঘুরি করে, আত্মরক্ষার জন্যে পিস্তল রাখে সঙ্গে, আমাকে বলেছে একথা। কিন্তু ছুরি দিয়ে করে কি? ক্যাম্পিঙে যায় না, কিছু না। অবসর সময়ে ঘুমানো আর টিভি দেখা ছাড়া আর কিছু করে না।
দেখিয়ে করে না আরকি। যা করে, গোপনে। রান্নাঘরে চিনির পাত্রে বাগ লুকায়। ফ্রিজে মূল্যবান জিনিস রাখে। আপনার ফ্রিজে কিছু লুকিয়ে রেখেছিল।
ফ্রিজে আর কি রাখবে, খাবার ছাড়া?
খাবার নয়, টাকা রেখেছিল। ব্যাংক থেকে ডাকাতি করে আনা টাকা, খাবারের প্যাকেটে মুড়ে।
অসম্ভব। খাবারই রাখে সে। একেকবারে অনেক খাবার এনে জমিয়ে রাখে। খাবার হাতের কাছে থাকলে নাকি ভরসা পায় সে। ওই ফ্রিজটা আমি ব্যবহারই করি না, সে-ই করে। খাবার রাখে বটে, কিন্তু ঘরে খায় না। অদ্ভুত স্বভাব।
হুম। নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল কিশোর। ঘরে যদি না-ই খায়, ফ্রিজের খাবারগুলো যায় কোথায়? বের করে নিতে দেখেছেন?
কি জানি, অত খেয়াল করে কে…তবে টাকার প্যাকেট এনে রাখে না ফ্রিজে। অনেকদিন ধরেই প্যাকেট রাখছে। তারমানে কি বলতে চাইছ এতদিন ধরেই ডাকাতি করছে সে! আমার বিশ্বাস হয় না। রক ওরকম লোক নয়।
টাকা না রাখলে মাদক রাখে। বিলের সঙ্গে তো সম্পর্ক আছেই। নিকারোদের বোট ব্যবহার করে মাদক চোরাচালানের কাজে, টিনাকে। গভীর সাগরে গিয়ে জাহাজ থেকে আনে মালের প্যাকেট, কিংবা চলে যায় বাজা ক্যালিফোর্নিয়ায়। কিংবা হয়ত মানুষ চোরাচালানের ব্যবসা করে ওরা। বেআইনীভাবে মানুষ পাচার করে…। থেমে গেল। না, তাহলে ফ্রিজে কি রাখে? এখনও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না কিছু।
পুলিশকে জানাবে?
এখন জানিয়ে লাভ নেই। কিছু প্রমাণ করতে পারব না।
এই প্রথম রাগ দেখা দিল রোজারের চেহারায়। তাহলে, কি করবে? আমি কোন সাহায্য করতে পারব?
পারবেন। আগে একটা টেলিফোন করা দরকার। আপনার ঘরে যেটা আছে সেটা ব্যবহার করব না। প্রতিবেশীদের কারও ঘর থেকে করা যাবে?
যাবে।
তাহলে চলুন। যেতে যেতে বলছি আমার প্ল্যান।
পাশের বাড়ির দরজায় এসে বেল টিপল রোজার। বেরোল, এক মহিলা। তাকে বলল সে, নিজের টেলিফোন খারাপ, একটা ফোন করতে চায়।
হেডকোয়ার্টারে ফোন করল কিশোর। ডলফিন কোর্ট আর সেকেণ্ড স্ট্রীটটা যেখানে মিশেছে, সেখানে আসতে বলল মুসাকে।
বিশ মিনিট, মুসা বলল।
এসে আমাদেরকে না পেলে আবার হেডকোয়ার্টারে ফিরে যাবে। আমার ফোনের অপেক্ষায় থাকবে।
রোজারের রান্নাঘরে আবার ফিরে এল দুজনে। চিনির পাত্রে আগের মত বাগটা ঢুকিয়ে রাখল কিশোর। মিস্টার রোজার, জোরে জোরে বলল সে, চোখ টিপল রোজারের দিকে তাকিয়ে। নিশ্চয় অধৈর্য হয়ে উঠেছেন। তবে শীঘ্রি নতুন। খবর জানাতে পারব আশা করি। এলসি নিকারোর কাছ থেকে অবশেষে কথা আদায় করা যাবে, বুঝতে পারছি। এই একটু আগে থানায় গিয়েছিল মুসা, চীফ ইয়ান ফ্লেচারের সঙ্গে দেখা করতে। মুসা থানায় থাকতে থাকতেই ফোন করেছিল এলসি। দেখা করতে গেছেন চীফ।