অ্যাইই! বলল রবিন।
গর্জন জোরাল হল। আগে রাড়ল কিছুটা। তারপর দাঁড়িয়ে গেল।
আর নড়ল না রবিন। ওটা প্রহরী কুকুর, বুঝল। সে নড়লে কুকুরটা নড়বে, না নড়লে নড়বে না। আসল উদ্দেশ্য, আটকে রাখা। প্রয়োজন হলে সারাদিন একই ভাবে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে থাকবে ডোবারম্যানের বংশধর!
ধরা পড়ে গেছে রবিন!
১৬
ঘরের ভেতর খাবারের চমৎকার গন্ধ, বিশেষ করে পনির আর টোম্যাটো সস। অন্য সময় হলে অবশ্যই ভাল লাগত কিশোরের, এখন লাগছে না। লিভিং রুমে বসে মিসেস নিকারোর স্বপ্ন বিবরণ শুনছে।
একঘেয়ে কণ্ঠে বলেই চলেছে মহিলা।
ভুরু কোঁচকাল কিলোর। বাধা দিয়ে বলল, আপনার স্বপ্ন কি সব সময়ই সত্যি হয়?
না, বেশির ভাগই সাধারণ স্বপ্ন, পুরানো স্মৃতি। তবে কিছু আছে ভিন্ন। হয়ত এমন কাউকে দেখলাম, যাকে জীবনেও দেখিনি। জেগে উঠে কোথাও না কোথাও দেখা হয়ে যায় তার সঙ্গে। দুঃস্বপ্ন…।
বেশি দেখেন?
না না, হাসল মিসেস নিকারো। ভাল স্বপ্নও দেখি। একদিন দেখলাম সুন্দর লাল চুলওয়ালা একটা মেয়ে। পরে তাকেই বিয়ে করে আনল আমার ছেলে। এলসির কথা বলছি…।
পারিবারিক ইতিহাসে ঢুকে যাচ্ছে মহিলা, বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি আগের প্রসঙ্গে ফিরে এল কিশোর, বিলের কথা বললেন। আপনার আত্মীয়?
না। তবে ছেলেটা ভালই। ওই যে, রাস্তার ধারের পুরানো, কটেজটায় থাকে। ওর দুই বন্ধুও থাকে, ওরা দক্ষিণ আমেরিকার লোক। ওর বেশিরভাগ বন্ধুই ওই দেশের। আসে, বেকার থাকে যতদিন ওর সঙ্গেই থাকে, চাকরি-টাকরি পেলে চলে যায়। আমার মনে হয় বিলের বাবা ছিল সাউথ আমেরিকান। সেই সূত্র ধরেই চলে আসে দেশের লোক। আর উদ্দেশ্য ছাড়া কেউ আসে না, ভ্রূকুটি করল মহিলা। এই যেমন তুমি। মানিব্যাগ খুঁজতে আসনি তখন, তাই না? তোমার বন্ধু ও মাছধরা দেখতে আসেনি, নজর রাখতে এসেছিল। সোজা কথা, স্পাইগিরি, ঠিক না? আর বিল? কিছু একটা করতে যাচ্ছে সে, যা আমরা জানি না। কিছু একটা গোপন করছে, আমার আর এলসির কাছে।
কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে, সেটা আমিও বুঝতে পারছি, বলল কিশোর। কিন্তু কি ঘটবে, জানি না। আচ্ছা, মিসেস নিকারো, একটা অন্ধ লোককে স্বপ্ন দেখেছেন বলেছেন। তারপর কি বাস্তবেও দেখেছেন ওকে?
না।
কিন্তু রবিন দেখেছে। আমিও।
পকেট থেকে তিন গোয়েন্দার একটা কার্ড বের করে দিল কিশোর। ওকে দেখলে দয়া করে এই নাম্বারে একটা ফোন করবেন? আমি না থাকলেও যে-ই থাকুক, শুধু মেসেজটা দিয়ে দেবেন।
দেব।
আপনার ফোনটা ব্যবহার করতে পারি?
হলরুমের দিকে ইঙ্গিত করল মহিলা। উঠে গিয়ে হেডকোয়ার্টারে ফোন করল কিশোর। রিসিভার তুলেই মুসা বলল, কিশোর, রবিন ফোন করেছিল। তুমি বেরোনোর পর পরই। অক্সনার্ডে গেছে। নতুন আরেকটা নাম বলল, মাইস। রবিনের বিশ্বাস, ওই লোকটাও এই রহস্যের সঙ্গে জড়িত। বিকেলেই আবার ফোন করবে বলেছে।
সাইকেল ফেলে গেছে। আমি তো ভয় পাচ্ছিলাম, কোন বিপদে না পড়ল।
না। ভালই আছে। তুমি কোত্থেকে?
মিসেস নিকারোর ঘর থেকে। কিছুক্ষণ পরে আসব। লাইন কেটে দিল কিশোর। পাশে এসে দাঁড়িয়েছে মহিলা। বলল, তোমার বন্ধু তাহলে ভালই আছে?
কিশোর হাসল। হ্যাঁ। অক্সনার্ড থেকে ফোন করেছিল। একটা কাজে গেছে ওখানে।
ভাল। যাক, শুনে স্বস্তি পেলাম। নিশ্চিন্তে এখন মেহমানদারি করতে যেতে পারি। তোমারও নিশ্চয় কাজ আছে। সাবধানে থাকবে।
থাকবে, কথা দিয়ে বেরিয়ে এল কিশোর। চলল বিলের কটেজের দিকে।
বসে অপেক্ষা করার উপযাগী ভাল একটা জায়গা পছন্দ করল সে। আরাম করে বসল, হাতে ক্যামেরা। এক ঘন্টা পেরিয়ে যাওয়ার পর এল পুরানেট্রাকটা। রাস্তার পাশে নামিয়ে দিল বিলের এক বন্ধুকে।
ক্যামেরা তুলল কিশোর। ক্লিক করে উঠল শাটার। লোকটা কটেজে ঢুকতে ঢুকতে তার মোট ছয়টা ছবি তুলে ফেলল সে।। আবার অপেক্ষার পালা। সাগরের দিকে চেয়ে টিনাকে আসতে দেখে হাসি ফুটল মুখে। ডকে পৌঁছল বোট। বাঁধা হল ওটাকে। দুজন নামল। বিল আর এলসি। বিলের জন্যে ভাবনা নেই, এক সময় না একসময় সামনে দিয়ে যেতেই হবে তাকে, কটেজে ঢুকতে হলে। তার দ্বিতীয় বন্ধুর ছবি তোলাটা এখন জরুরি।
কাটছে অপেক্ষার দীর্ঘ মুহূর্তগুলো। সৈকত আর সাগরের ওপর উড়ছে সীগাল, মাঝেমাঝে ডাইভ দিয়ে পড়ছে পানিতে, ঠোঁটে মাছ চেপে ধরে উড়াল দিচ্ছে, উড়তে উড়তেই গিলে নিচ্ছে মাছটা। বাঁ দিকে নিকারোদের ড্রাইভওয়ে, একআধটা গাড়ি এসে ঢুকছে, কিছুক্ষণ থাকছে, আবার চলে যাচ্ছে। বাড়িটার জন্যে অফিস চোখে পড়ছে না কিশোরের, তবে এলসি ভেতরেই রয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। বিলও নিশ্চয় অফিসেই।
ডানে সৈকতের দিকে চোখ ফেরাল কিশোর। পানির কিনারে ছিপ হাতে ব্যস্ত সৌখিন মাছশিকারিরা। হাতে একটা মেটাল ডিটেক্টর নিয়ে সৈকত ধরে হাঁটছে একজন লোক। সাফাররা বসে আছে ভাল ঢেউয়ের আশায়। দিগন্তে দানা বাঁধছে মেঘ, ইতিমধ্যেই ঠাণ্ডা হয়ে পড়েছে বাতাস। সকালটা ছিল সুন্দর, দিনটাও ভালই গেছে, শেষ হবে ঝড়বাদলের মধ্যে দিয়ে বোঝা যায়।
কটেজ থেকে বেরিয়ে, রাস্তা পেরিয়ে জেটির দিকে এগোল বিলের বন্ধু।
ঘড়ি দেখল কিশোর। প্রায় তিনটে। সকালেই রবিন দেখেছে তৃতীয় লোকটাকে। গেল কোথায়?
নিকারোদের বাড়ির দিকে তাকাল কিশোর। হঠাৎ মনে পড়ল, একটা স্টেশন ওয়াগন দেখেছিল ওখানে। এখন নেই। গেল কখন? পাখি, মেঘ, ঢেউ আর বাতাস যেন সম্মােহিত করে রেখেছিল তাকে, গাড়িটাকে যেতেও দেখেনি, ইঞ্জিনের শব্দও শোনেনি।