একটা লোক জানাল, তিনি নেই এখন। এলে কিছু বলব? না। আবার ফোন করব আমি।
লাইন কেটে দিল রবিন। হেডকোয়ার্টারে করতে যাবে, এই সময় দেখল মার্কেট থেকে বেরিয়ে আসছে একটা লোক। গাড়ির দিকে এগোচ্ছে। বুদ থেকে বেরিয়ে তাড়াহুড়ো করে ওর দিকে এগোেল রবিন।
আরে, রবিন, এখানে কি?
লোকটা রবিনদের প্রতিবেশী, ওদের বাড়ির উল্টোদিকে থাকে, রাস্তার অন্যপাড়ে, মিস্টার ওয়াগনার। এই এমনি এলাম, জবাব দিল রবিন। মাছধরা দেখতে। আগামী হপ্তায় ভাবছি আমিও আসব ধরতে, বাবার সঙ্গে।
অ, চারপাশে তাকাল ওয়াগনার। সাইকেল এনেছ?।
মাথা নাড়ল রবিন। না। এক বন্ধু লিফট দিয়েছে। প্রয়োজনের সময় কিশোরের মত মিথ্যে বলতে পারে না সে, তবু চেষ্টা করে মাঝে মাঝে। গোয়েন্দাগিরিতে মিথ্যে বলতেই হয়, উপায় নেই। আপনি উত্তরে যাবেন, না?
হ্যাঁ। কি করে বুঝলে? এমনি, আন্দাজ করলাম।
ক্যারপিনটেরিয়ায় যাচ্ছি, বোনকে দেখতে।
আমিও ভাবছিলাম ওখানেই যাবেন। অক্সনার্ডে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল অসুবিধে হবে নিতে?
না না, অসুবিধে কিসের? একাই যাচ্ছি। কিন্তু আজ তো আমি ফিরব না। একা বাড়ি যাবে কিভাবে?
বাসে চলে যাব। এখন নিতে আপনার অসুবিধে না হলেই হয়।
ওয়াগনারের ছোট সেডানে প্যাসেঞ্জার সিটে উঠে বসল রবিন।
১৫
রাস্তার মোড়ে বসে আছে কিশোর। অ্যাপার্টমেন্ট হাউসটার দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে ক্লান্ত, বিরক্ত হয়ে পড়েছে সে। সিনথিয়াকে গ্রাহক বানানোর চেষ্টা করেছে। আরেকবার। সকাল নটায়। আগের বার তো অন্তত কথা বলেছিল, এবার তা-ও বলল না।
ফিরে এসে পথের মোড়ে বসেছে কিশোর। দেখেছে, ময়লা কতগুলো কাপড় নিয়ে বাড়ির পেছনের একটা ঘরে গিয়ে ঢুকেছে সিনথিয়া, কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে এসেছে ধোঁয়া, ইস্তিরি করা কয়েকটা কাপড় নিয়ে। এখন পুলের কিনারে বসে বসে নখের পরিচর্যা করছে। আবার মেয়েটার সঙ্গে কথা বলতে খুব ইচ্ছে করছে কিশোরের। ছুতো দরকার। বলবে নাকি গিয়ে অর্ডার বুক হারিয়ে ফেলেছে, খুঁজতে এসেছে? উঠে পড়ল সে। রাস্তা পেরোল। কিন্তু বাড়ির গেটে পৌঁছেই থমকে গেল। লম্বা কর্ড লাগানো একটা টেলিফোন বের করে এনে সিনথিয়া কথা বলছে, লোরিনা নামে একটা মেয়ের সঙ্গে।
দূর, অভিনয় একদম ভাল না, সিনথিয়া বলছে। তবে শুনলাম ইফেক্ট নাকি সাংঘাতিক। স্পেসশিপটা ফাটার সময় নাকি দর্শকের কাপ তুলে দেয়। ফোন করেছি, ওরা বলল দুটোয় শো। যাওয়ার আগে একআধটা স্যাণ্ডউইচ খেয়ে নিলে। কেমন হয়?
ফিরল কিশোর। সিনেমায় যাবে সিনথিয়া। পিছু নিয়ে গিয়ে লাভ নেই, অযথা বসে থাকতে হবে হলের বাইরে। সে তো কিছুই করতে পারল না, রবিন কি করছে? কিছু করতে পারছে? রোজারকে আদৌ কোন সাহায্য করতে পারবে তো ওরা? বিল আর দুই বন্ধু-ই কি ডাকাত? কিভাবে প্রমাণ করা যাবে? এসব কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ টেলিভিশনে দেখানো একটা সিনেমার কথা মনে পড়ে গেল কিশোরের। তাড়াতাড়ি সাইকেলে উঠে ফিরে চলল ইয়ার্ডে।
হেডকোয়ার্টারেই রয়েছে মুসা। ম্যাগাজিনের পাতা ওল্টাচ্ছে অলস ভঙ্গিতে। বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে গেছে। কিশোরকে দেখে বলল, যাক, এলে। আর ভাল্লাগছিল না একা একা। হ্যাঁ, রবিন ফোন করেছিল।
তাই? কি বলল? তার মনে হয়েছে, কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে নিকারোদের ওখানে। বিলের দুই বন্ধু ডক এলাকায় ঘুরঘুর করছে। উত্তেজিত। আর মিসেস নিকারো নাকি স্বপ্নে দেখেছে রবিনকে। স্বপ্ন-বৃত্তান্ত জানাল মুসা।
উত্তেজিত হয়ে উঠল কিশোর। কতক্ষণ আগে করেছে?
এই আধ ঘন্টা। কিছু বেশিও হতে পারে। আমি বললাম চলে আসতে। ও রাজি হল না।
মাথা দোলাল কিশোর। শোন, আমিও যাচ্ছি ওখানে। ওই তিনজনের ছবি
তোলার চেষ্টা করব। রোজারকে দেখালে হয়ত চিনতে পারবে।
ডার্করুম থেকে একটা ক্যামেরা বের করে আনল কিশোর, টেলিফটো লেন্স লাগানো। ফোনের কাছে থাকবে।
আধ ঘন্টা পর নিকারোদের ওখানে পৌঁছল সে। টিনা নেই। কাচেঘেরা ছোট অফিসটা শূন্য। এলসি বা মিসেস নিকারো, কাউকে দেখা যাচ্ছে না।
খিলানে বাঁধা রবিনের সাইকেলটা দেখতে পেল সে। তারটাও নিয়ে বাঁধল ওখানে। সৈকতে মানুষ আছে। কেউ হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে ঢেউয়ের মধ্যে মাছ ধরছে। কুকুর নিয়ে খেলছে একটা বাচ্চা। কিন্তু রবিন নেই। পার্কিং লটে চলে এল সে। সেখানেও কেউ নেই। একটা স্টেশন ওয়াগন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল নিকারোদের বাড়ির কাছে।
দরজার সামনে এসে দাঁড়াল কিশোর। বেল বাজানোর আগেই খুলে গেল পাল্লা। দাঁড়িয়ে আছে মিসেস নিকারো। অন্তর্ভেদী দৃষ্টিতে তাকাল তার দিকে।
মিসেস নিকারো, আমার বন্ধুকে দেখেছেন? কিশোর জিজ্ঞেস করল।
তোমার বন্ধু?
সকালে আপনি তার সঙ্গে কথা বলেছেন। তাকে নাকি স্বপ্নে দেখেছেন।
অ, ওই ছেলেটা। সে তোমার বন্ধু। বোঝা উচিত ছিল আমার। এমন ভাবে তাকাল মহিলা, যেন রাগ করেছে, কিন্তু কিশোর বুঝতে পারল আসলে রাগেনি।
খিলানের নিচে ওর সাইকেলটা বাঁধা দেখলাম, ওকে দেখছি না। গেল কোথায়? আপনার বউমার সঙ্গে বোটে করে যায়নি তো কোথাও?
মাথা নাড়ল মিসেস নিকারো। না। এলসি গেছে বিলের সঙ্গে, টিনাকে নিয়ে। আর কাউকে দেখিনি বোটে।
তাহলে গেল কোথায়!
জানি না, বলতে বলতে পিছিয়ে গিয়ে পাল্লা পুরো খুলে দিল মহিলা। খারাপ কিছু একটা ঘটবে, বুঝতে পারছি। আমার স্বপ্ন মিথ্যে হয় না। এস, ভেতরে এস।