হাইওয়ের একশো মিটার ভাটিতে একটা খুদে শপিং প্রাজা। একটা ছোট মার্কেট, একটা পোবাখানা আর একটা রীয়্যাল-এস্টেট অফিসও দেখতে পেল রবিন। মার্কেটের সামনে টেলিফোন বুদ। গিয়ে তিন গোয়েন্দার হেডকোয়ার্টারে ফোন করল সে।
সঙ্গে সঙ্গে ধরল মুসা। রবিনের গলা শুনে বলল, ভল আছ?
ভালই। মিসেস নিকারোর সঙ্গে কথা হয়েছে আমার, সব খুলে বলল রবিন।
দীর্ঘ এক মুহূর্ত নীরবতা। তারপর মুসা বলল, রবিন, ব্যাপার সুবিধের মনে হচ্ছে না। তুমি চলে এস। একা আসতে পারবে? না আমি আব?
দরকার নেই। স্বপ্ন স্বপ্নই, মুসাকে নয়, নিজেকে বোঝাল রবিন।
আসবে না? খুব সাবধানে থাকবে তাহলে, বুঝেছ?
থাকব। এখন আসা ঠিক হবে না। কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে এখানে। বিলের দুই দোস্তের কথা মনে আছে না? ওরা ঘোরাঘুরি করছে ডকের কাছে। কোন কারণে উত্তেজিত।
হাইওয়ে দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে এল একটা পিকআপ ট্রাক। নিকারোদের ড্রাইভওয়ে ধরে গিয়ে থামল পার্কিং লটে খাকি পোশাক পরা লম্বা এক লোক নেমে এগিয়ে গেল জেটির দিকে।
ফোনের কাছে থাক, বলে লাইন কেটে দিল রবিন।
হাইওয়ের ধারে গাড়ি জমছে-ক্যাম্পারদের ভ্যান, কার এ-সবই বেশি। ওগুলোকে এক পাশে, জেটিকে অন্য পাশে রেখে মাঝখান দিয়ে এগোল রবিন।
টিনার কাছে দাঁড়িয়ে আছে বিলের দুই বন্ধু। ওদের কাছে এগিয়ে গেল লম্বা লোকটা। ওদের কথা শোনার জন্যে থামল রবিন। রেগে গেছে বিল, তার হাত নাড়া দেখেই বোঝা যায়।
একটা ভ্যানের পাশ ঘুরে বালিতে নামল রবিন, সৈকত ধরে এগোল জেটির দিকে। চলে এল একটা খিলানের নিচে, খেয়াল করল না লোকগুলো। খিলানের সঙ্গে বাঁধা রয়েছে তার সাইকেল। সেদিকে একবার তাকিয়েই হাঁটা দিল পানির দিকে।
পানির কিনারে পৌঁছে থামল। কান পাতল কথা শোনার জন্যে। চারজনের গলাই শুনতে পাচ্ছে, বুঝতে পারল না.কিছু। এখনও অনেক দূরে। ওদের কথার চেয়ে ঢেউ ভাঙার শব্দ এখানে জোরাল।
ভ্রূকুটি করল রবিন। কাছে গিয়ে কি কোন লাভ হবে? ওরা স্প্যানিশ বললে কিছু বুঝতে পারবে না সে।
জেটিতে পায়ের শব্দ শোনা গেল। এগিয়ে আসছে লোকগুলো। হাঁটছে, কথা বলার জন্যে থামছে। বলা শেষ করে আবার হাঁটছে। কাছে, আরও কাছে, একেবারে রবিনের মাথার ওপরে চলে এল ওরা। জেটির নিচ দিয়ে ওদেরকে অনুসরণ করে চলল সে। বালিতে হাঁটছে, ফলে পায়ের শব্দ হচ্ছে না তার।
ওকে, মাইস, বিলের গলা। দাঁড়িয়ে পড়েছে। বুঝলাম। টাকা না দেখে কিছু করবে না তুমি। আমরাও মাল দেখতে চাই। ভাল হতে হবে।
গুড, নিশ্চয় মাইস, কারণ কথায় কোনরকম টান নেই। কিন্তু তোমরা কি পারবে? দেখে তো মনে হচ্ছে না। তোমাদের সঙ্গে কথাই বা বলছি কেন? আমি জিনোর সঙ্গে দেখা করতে চাই। লেনদেনটা তার সঙ্গে হওয়াই বোধহয় ভাল।
আমি জিনোর প্রতিনিধি, বিল বলল। বেশ, কিছু অগ্রিমের ব্যবস্থা নাহয় করি।
কর। কত দেবে।
চার ভাগের এক ভাগ। মাল বুঝে পেয়ে তারপর বাকিটা দেব।
অর্ধেক অগ্রিম, ভোতা গলায় বলল মাইস। বদলে গেছে কণ্ঠস্বর। বাকিটা নেব মাল ডেলিভারি দিয়ে। নো অগ্রিম, নো মাল। তোমাদের কাছে বেচার এত ঠেকা নেই আমার, ভাল করেই জান। কেনার অনেক মক্কেল আছে।
কিছুক্ষণ চুপচাপ। অবশেষে বিল বলল, বেশ, অর্ধেকই দেব। কিন্তু বাকি টাকা পাবে মাল আমাদের হাতে আসার পর। প্যাসিফিক স্টেটসে চলে যাও, ওখানেই থাকবে। টাকা জোগাড় করেই খবর দেব।
এখানে থাকলে ক্ষতি কি? এসব ছোটাছুটি ভাল্লাগছে না আমার।
অসুবিধে আছে। টাকা জোগাড় করতে সময় লাগবে। মিসেস নিকারোও পছন্দ করবে না তোমার সঙ্গে আমাকে দেখলে। তার ধারণা, আমি খালি কাজে ফাঁকি দেয়ার তালে থাকি। যা বলছি তা-ই কর।
আবার চুপচাপ। রবিন অনুমান করল, অফিসের দিকে তাকিয়ে আছে মাইস। আর কোন সন্দেহ নেই, অফিস থেকে তার ওপর নজর রাখছে এলসি নিকারো।
ঠিক আছে, রাজি হল মাইস। এখানে আসাটাই বোধহয় উচিত হয়নি আমার। আমি তোমার অপেক্ষায় থাকব। বেশি দেরি করবে না, তাহলে পস্তাবে। আমার চেয়ে তোমাদের ঠেকা বেশি, মনে রাখবে কথাটা।
চলে গেল মাইস। কথা শুরু করল বিল আর তার দুই বন্ধু। এবার ইংরেজি নয়, স্প্যানিশ। বোধহয় মাইসের সঙ্গে কি কথা হয়েছে, সেটাই বলছে বিল। শুনে রেগে গেল দুই বন্ধু, তাদের কণ্ঠস্বরেই বোঝা গেল।
হালকা পদশব্দ শোনা গেল। কে ওই লোকটা? কড়া গলায় জিজ্ঞেস করল এলসি।
ওই একটা ফিশিং ক্লাবের মালিক, জবাব দিল বিল। রাস্তা থেকে নাকি বোটটা দেখেছে, টিনাকে। জানতে চাইল ভাড়া পাওয়া যাবে কিনা।
এরপর কেউ বোট ভাড়া চাইতে এলে সোজা আমার কাছে পাঠাবে।
আচ্ছা।
যাও, লাঞ্চ সেরে এস। একটার মধ্যে আসবে। তারপর পেট্রল আনতে যাব। আর তোমার দুই দোস্তকে ঘরে থাকতে বলবে, বুঝেছ? সারাক্ষণ এখানে ঘুরঘুর করে কেন? যত্তোসব!
আচ্ছা, বলব।
ওরা চলে যাওয়ার পরও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল রবিন। ভাবছে, প্যাসিফিক স্টেটসটা কোথায়? শহর? নামও শোনেনি কোনদিন। আবার এসে টেলিফোন বুদে ঢুকল সে। ডিরেক্টরিতে ওরকম কোন শহরের নাম খুঁজে পেল না। তবে পি-এর সারিতে পাওয়া গেল একটা কোম্পানির নাম, প্যাসিফিক স্টেটস মুভিং অ্যাণ্ড স্টোরেজ কোম্পানি, অক্সনার্ডের ওয়েস্ট অ্যালবার্ট রোড-এ। ওই নাম্বারে ফোন করে মিস্টার মাইসকে চাইল।