ইন্টারেস্টিং নিউজ আছে, রবিন বলল। বিল এসেছিল সিনথিয়ার সঙ্গে দেখা করতে। চেহারা দেখে চিনেছি, তোমার বর্ণনার সাথে মিলে যায়। পুলের পাড়ে দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ চেঁচাল দুজনে, তর্কাতর্কি করল। স্প্যানিশ ভাষায়।
ঠিক? ভুরু কোঁচকাল মুসা।
মাথা ঝাঁকাল রবিন। বেশি চেঁচাল মেয়েটাই। কিছু একটা বোঝনোর চেষ্টা করেছে বিল, শুনতে চায়নি সিনথিয়া। শেষে লোকটাও গেল রেগে। চেঁচামেচি শুনে পাশের বাড়ির এক মহিলা বেরোল, গলিতে দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনল খানিকক্ষণ। তারপর পুলিশ ডাকার হুমকি দিল।
আর থাকতে সাহস করল না লোকটা। সে চলে যেতেই ঘরে ঢুকে হ্যাণ্ডব্যাগ নিয়ে এল সিনথিয়া। কয়েক মিনিট পরে দেখলাম একটা গাড়ি চালিয়ে চলে যাচ্ছে। আরও আধ ঘন্টা দাঁড়িয়ে রইলাম। আসছে না দেখে চলে এসেছি।
হুঁম! মাথা দোলাল কিশোর। কি নিয়ে ঝগড়া করল কে জানে। যাকগে। এখন দেখি, আমরা কতটা এগিয়েছি? টেবিলে কনুই রেখে সামনে ঝুঁকল সে। অন্ধ ফকির ডাকাতিতে জড়িত, এটা বলা যায় এখন। বিল জড়িত, তার দুই বন্ধু জড়িত। বিল আর মিস্টার রোজারের সঙ্গে যোগাযোগ আছে সিনথিয়ার। যেহেতু সে মেকাপ আর্টিস্ট, সন্দেহ করতে বাধা কোথায় সে-ই মেকাপ করে কাউকে অ্যাট্রানটো বানিয়েছে? সে নিজেও পুরুষ সেজে ডাকাতিতে গিয়ে থাকতে পারে। রোজার বলেছে, তিনজন ডাকাতের মাত্র একজন কথা বলেছে, অন্য দুজন। কিছুই বলেনি।
মেয়েলি গলা চিনে যাবে, এই ভয়ে? মুসার প্রশ্ন।
হতে পারে। কিংবা ওরা ইংরেজি জানে না। স্প্যানিশ বললে ধরা পড়ার ভয় আছে। হয়ত মেসা ডিওরোর নাগরিক ওরা।
বিলের দুই বন্ধুও হতে পারে, বলল মুসা। কোত্থেকে এসেছে ওরা, বলতে পারব না। স্প্যানিশ বলেছিল। হয়ত ইংরেজি জানেই না।
বিল জানে। দুটো ভাষাই জানে চমৎকার। ওদের সম্পর্কে ভালমত খোঁজখবর করা দরকার। রবিন, নিকারোদের ওখানে এখন একমাত্র তোমাকেই কেউ চেনে না। জেটির কাছে গিয়ে চোখ রাখবে। পারবে তো?
পারব।
আমি যাব সিনথিয়াদের ওখানে। মুসা, তুমি হেডকোয়ার্টারেই থাক। কানাটা আবার আসতে পারে। নাম তো জানি না ব্যাটার, কানা না হলেও কানা বলতে হচ্ছে।
গালকাটাও বলা যায়, মুসা বলল। যদিও সত্যি কাটা কিনা বলা মুশকিল। এলে কি করব? পুলিশকে ফোন করব?
পারলে অবশ্যই করবে। খুব সাবধানে থাকবে। আমাদের ঠিকানা জেনে গেছে সে। হয়ত জানে, কিংবা আন্দাজ করেছে আমরা কি করছি। একবার পালিয়েছে বটে, আবার না-ও পালাতে পারে। বাগের বদলে বোমা ফেলে গেলে সর্বনাশ!
১৩
মজার কাজ করছেন, রবিন বলল।
জেটির কিনারে দাঁড়িয়ে আছে সে। শুক্রবারের সকাল। জোয়ার নেমে গেছে। বিল রয়েছে টিনার ডেকে, হুইলহাউসের দেয়াল রঙ করছে। জবাব দিল না লোকটা। এমনকি মুখ তুলেও তাকাল না।
গত বছর আমাদের বাড়ি রঙ করা হয়েছিল, আবার বলল রবিন। মিস্ত্রিদের সাহায্য করেছিলাম। জানালার চৌকাঠগুলো রঙ করেছিলাম আমি।
ফিরে তাকাল বিল। হাতের ব্রাশের দিকে তাকাল একবার। হুইল হাউসের কাছ থেকে সরে এসে ওটা বাড়িয়ে দিল রবিনের দিকে।
লাফ দিয়ে ডেকে উঠল রবিন। হেসে ব্রাশটা নিয়ে রঙ.শুরু করল। তার কাজ দেখছে বিল।
কয়েক মিনিট নীরবে ব্রাশ ঘষল রবিন। তারপর বলল, বাহ, বোটে রঙ করা তো আরও মজার।
ঘোঁৎ করল শুধু বিল।
একবার বোটে করে বেড়াতে গিয়েছিলাম, রবিন বলল। বন্ধুর চাচার সঙ্গে। কি যে দারুণ লাগছিল না। হঠাৎ ঝড় এসে সব মজা নষ্ট করল। বানিয়ে বানিয়ে সমুদ্র যাত্রার রোমাঞ্চকর এক গল্প বলতে লাগল সে। বিল না হাসা পর্যন্ত বলেই গেল।
হ্যাঁ, একে বলে সী-সিকনেস, বলল বিল। বমি আর পেসাব-পায়খানা করে সব নষ্ট করে ফেলে। আমার অবশ্য কখনও ওরকম হয়নি।
বিলও একটা ভয়াবহ ঝড়ের গল্প শোনাল। শুনে অবাক হওয়ার ভান করল রবিন। যেন সমুদ্র সম্পর্কে কোন জ্ঞানই নেই এমন ভাব করে নানারকম প্রশ্ন করল। কিন্তু দরকারি কিছু জানার আগেই জেটিতে এসে দাঁড়াল দুজন লোক। স্প্যানিশ ভাষায় ডাকল। ফিরে তাকাল বিল। রবিনের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে একজন ইশারা করল বিলকে, নেমে গেল সে। হাঁটতে হাঁটতে দূরে চলে গেল।
কথা বলছে তিনজনে। এতদূর থেকে শোনা যায় না। কিন্তু ওদের ভাবভঙ্গি লক্ষ্য করল রবিন। হাত তুলে তীরের দিকে দেখাল একজন। আরেকজন দেখাল উত্তরে, যেন বোঝাচ্ছে ওদিক থেকে উপকূল ধরে কিছু আসছে। শ্রাগ করল বিল। হাত তুলে ঝাঁকাল একজন। অন্যজন ঘড়ি দেখিয়ে জরুরি কিছু বলল বিলকে।
অবশেষে ঘুরে দাঁড়াল বিল। অন্য দুজন হাঁটতে লাগল পুরানো একটা ছোট কেবিনের দিকে। রবিন অনুমান করল, ওরাই বিলের রুমমেট।
রবিনের কাজের প্রশংসা করল বিল।
দারুণ স্প্যানিশ বলেন তো আপনি, রবিন বলল। আপনার বন্ধুরাও।
আমার সেকেণ্ড ল্যাংগুয়েজ। আমার বন্ধুরা এসেছে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে, ভাল ইংরেজি বলতে পারে না। তাই ওদের সঙ্গে স্প্যানিশই বলতে হয়।
পার্কিং লটের কাছে বাড়িটা থেকে মিসেস নিকারোকে বেরোতে দেখল রবিন। হাতের ট্রেতে একটা থার্মোস জগ আর কয়েকটা কাপ। বাড়ি আর ছোট অফিসটার মাঝামাঝি পৌঁছে এদিকে ফিরে তাকাল মহিলা। রবিনের হাতে ব্রাশ দেখেই বুঝে থমকে দাঁড়াল এক মুহূর্ত। প্রায় তিরিশ মিটার দূর থেকেও মহিলার চেহারার উত্তেজনা নজর এড়াল না রবিনের।