অ। তা আরও বন্ধু নিশ্চয় আছে আপনার। তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন? ব্যাংকের কাজকর্ম সম্পর্কে?
করি। তবে কেউ এ নিয়ে ইন্টারেস্টেড হয়েছে বলে মনে করতে পারছি না।
রক রেনাল্ড?
ও নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত, এসব ফালতু আলোচনার সময় কই? বাইরে বাইরেই থাকে বেশি। এখানে যখন থাকে, তখনও কথা বিশেষ হয় না। খাওয়ার সময় খায়, বাকি সময় ঘরে দরজা আটকে বসে থাকে। মিথ্যে কথা বলছি না। ওর দরজার তালা দেখবে?
দরকার নেই, উঠে দাঁড়াল কিশোর। হতাশ হবেন না, মিস্টার রোজার। পুলিশ ঘন ঘন আসে, বার বার একই কথা জিজ্ঞেস করে, তার কারণ, ওদের ধারণা আপনি কোন জরুরি তথ্য জানাতে ভুলে যাচ্ছেন। কয়েক বার বললে হয়ত মনে পড়বে, এই আরকি।
জবাব দিল না রোজার।
সাড়ে চারটা নাগাদ ইয়ার্ডে ফিরে এল কিশোর। গেট দিয়ে না ঢুকে চলে এল বেড়ার পেছনে, যেখানে ছবিতে আঁকা একটা মাছ মাথা তুলে একটা জাহাজকে দেখছে। মাছের চোখ টিপল সে। ওপরে উঠে গেল দুটো বোর্ড। বেরিয়ে পড়ল প্রবেশ পথ, তিন গোয়েন্দার কয়েকটা গোপন পথের একটা। এটার নাম সবুজ ফটক এক।
ওখান দিয়ে ঢুকে আউটডোর ওঅর্কশপে এসে ঢুকল কিশোর। মুসার সাইকেলটা আছে। মুচকি হেসে নামিয়ে দিল আবার বোর্ড দুটো।
এই সময় কানে এল শব্দটা। কাপড়ের মৃদু খসখস আর নিঃশ্বাস ফেলার আওয়াজ।
ঝট করে ফিরে তাকাল সে।
দাঁড়িয়ে রয়েছে অন্ধ ভিক্ষুক! মাথা সামান্য কাত করে রেখেছে, গালের কাটা, দাগটা কিশোরের দিকে। খোঁচা খোঁচা দাড়ি এখন নেই। লাঠিও নেই হাতে। কাটা দাগের কারণে ভয়ঙ্কর লাগছে মুখটা।
একটা হার্টবিট মিস হয়ে গেল কিশোরের। তারই মত লোকটাও স্থির হয়ে আছে। শ্বাস টানল কিশোর, নড়ে উঠল লোকটা। আরেকটু কাত করল মাথা, চমুকে গেছে বোঝা যায়। হাতে কি যেন আছে, তার ওপর আঙুলগুলো শক্ত হল।
হঠাৎ মাইকেলের হ্যাণ্ডেল ছেড়ে দিয়ে ঝাঁপ দিল কিশোর। চেপে ধরল লোকটার হাত।
চেঁচিয়ে উঠে ঝাড়া মেরে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করল লোকটা।
ছাড়ল না কিশোর, প্রাণপণে আঁকড়ে ধরেছে। কজিতে মোচড় দিতে লাগল দুহাতে। লোকটার আঙুল খুলে গেল, মাটিতে পড়ে গেল হাতের জিনিস।
গায়ের জোরে ঝাড়া দিয়ে হাত ছাড়াল লোকটা। তারপর হামলা চালাল। প্রচণ্ড ঘুসি এসে লাগল কিশোরের চোয়ালে। চোখে সর্ষে ফুল দেখল সে। বো করে চক্কর দিয়ে উঠল মাথা। অবশ হয়ে গেল দেহ।
খুব সামান্য সময়ের জন্যে জ্ঞান হারাল কিশোর। চোখ মেলে দেখল, তাকে ডিঙিয়ে যাচ্ছে লোকটা। পৌঁছে গেল সবুজ ফটক এক-এর কাছে। ওপরে উঠল বোর্ড দুটো, আবার নামল। বেরিয়ে গেছে অন্ধ ভিক্ষুক।
১২
মাটিতে বসে আছে কিশোর। অল্প অল্প মাথা ঘুরছে এখনও। দৃষ্টি পরিষ্কার হতেই লোকটার ফেলে যাওয়া জিনিসটার ওপর চোখ পড়ল। ওঅর্কবেঞ্চের নিচে। প্লাস্টিকের বাক্স, একপাশে কিছু ছিদ্র।
ইনটারেসটিং, বলল সে। যেন তার কথার জবাবেই দুই সুড়ঙ্গের ঢাকনা সরিয়ে উঁকি দিল মুসা। জিজ্ঞেস করল, কি ব্যাপার? কি বলছ?
মেহমান এসেছিল, বলে হামাগুড়ি দিয়ে চলে এল জিনিসটা তোলার জন্যে। হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে বলল, কোন ধরনের শ্রবণ যন্ত্র। একধরনের খুদে মইক্রোফোন, স্পাইরা বলে বাগ। পত্রিকায় ছবি দেখেছি। অন্ধ লোকটা এসেছিল, বুঝলে, মোটেই অন্ধের মত আচরণ করেনি। মনে হয় ওঅর্কশপে মাইক্রোফোন লাগানোর জন্যে এসেছিল।
কানা ফকিরটা? কিশোরের হাত থেকে যন্ত্রটা নিয়ে দেখতে লাগল মুসা। কেন লাগাবে? আমাদের খোঁজই বা পেল কিভাবে? চারপাশে তাকাল সে, যেন এখনও এখানেই কোথাও লুকিয়ে রয়েছে লোকটা। আশ্চর্য!
ওঅর্কবেঞ্চের কাছে চেয়ারে বসল কিশোর। মুসার হাত থেকে যন্ত্রটা নিয়ে পেনোইফ দিয়ে খুলল। যা বলেছি। মিনিয়েচার ব্রডকাস্টিং ইউনিট। রেঞ্জ বড় জোর কোয়ার্টার মাইল।
এখন চালু নেই তো? আমরা যা বলছি, সব শুনে ফেলছে না তো ব্যাটা?
ছুরির মাথা দিয়ে খুঁচিয়ে ছোট ছোট কয়েকটা পার্টস খুলে ফেলল কিশোর। বাক্সটা বন্ধ করতে করতে বলল, এবার পারলে শুনুক। পুরো এক মিনিট নীরবে ভাবল সে, তারপর মুসার দিকে তাকাল। স্যালভিজ ইয়ার্ডে কতক্ষণ আগে ঢুকেছ?
মিনিট বিশেক।
সবুজ ফটক এক দিয়ে?
হ্যাঁ।
গম্ভীর হয়ে গেল কিশোর। তোমার পিছে পিছেই এসেছে ব্যাটা। মনে হল।
কি করে?
কাল রাতে মীটিঙেই হয়ত তোমার ওপর নজর পড়েছে। অনুসরণ করে এসেছে এখানে। কিংবা আমাদের দুজনকেই দেখেছে নিকারোদের ওখানে। কিংবা তিনজনকে, মিস্টার রোজারের বাড়িতে। যেভাবেই হোক, গত তিন দিনে কোন এক সময় তার চোখে পড়েছি আমরা, বা আমাদের কেউ। ভাবছি, আর একআধটা বাগ লুকিয়ে রেখে যায়নি তো?
আবার চারপাশে তাকাল মুসা, যেন তাকালেই যন্ত্রটা চোখে পড়বে। তারপর খুঁজতে শুরু করল দুজনে। পাওয়া গেল না। জিনিস নড়াচড়া করা হয়েছে, এমন কোন চিহ্নও নেই। আগের মতই আছে ওঅর্কশপকে ঘিরে রাখা জঞ্জাল।
অস্বস্তিতে পড়ে গেছে মুসা। বাড়ি থেকে এসেছি আমি। আমাকে অনুসরণ করলে…আচ্ছা, আমাদের বাড়ির ওপর চোখ রাখেনি তো?
মনে হয় না। ইয়ার্ডের ওপর চোখ রাখলেই যথেষ্ট।
হাতুড়ি আর পেরেক বের করে সবুজ ফটক, এক-এর বোর্ড দুটো সাময়িকভাবে আটকে দিতে চলল কিলোর। এই সময় এল রবিন। তিনজনে মিলে আটকে দিল ফটকটা। তারপর হেডকোয়ার্টারে ঢুকল।