ভ্রূকুটি করল কিশোর। কিন্তু এসব তো ঘটেছে একশো বছরেরও বেশি আগে। আমাদের মক্কেলের সঙ্গে মেসা ডিওরোর রাজনীতির কি সম্পর্ক? নাকি এখনও সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে জমিদারেরা? আগের প্রেসিডেন্টের ছেলের তো। এতদিনে মরে ভূত হয়ে যাওয়ার কথা।
তাই তো গেছে। এখন সংগ্রাম চালাচ্ছে অ্যানাসত্যাসিওর নাতি, ফেলিপ রডরিগেজ। মেকসিকো সিটিতেই বাস করে। সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে ফেলিপ, কবে দেশে ফিরে গিয়ে সিংহাসনে বসবে, যে দেশকে সে চোখেই দেখেনি কখনও। অনেক গুপ্তচর আছে তার, দেশের খবরাখবর এনে দেয়।
আশ্চর্য তো! মুসা বলল। তিন পুরুষ পরে এখনও প্রসিডেন্ট হওয়ার শখ?
শখ হলে আর কি করা। তবে কথাটা সত্যি। ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্স বলছে সোলজার্স, অভ দ্য রিপাবলিক দলটা বেআইনী নয় মেসা ডিওরোতে। দলের সদস্যরা রিপাবলিকান বলে পরিচয় দেয় নিজেদের। রোববারে জমায়েত হয়ে বিবৃতি-টিবৃতি দেয়।
বিরোধীরা কেয়ারও করে না। রিপাবলিকানদের কেউ কেউ চায় বর্তমান প্রেসিডেন্টকে উৎখাত করতে। ওরা আবার আরেকটা বিশেষ নাম নিয়েছে, ফ্রিডম ব্রিগেড। ওদেরকে স্বীকৃতি দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না, রাষ্ট্র, ওদেরকে আউট ল ঘোষণা করেছে। দাঙ্গা-হাঙ্গামা করে ওরা, কিডন্যাপ করে, বোমাবাজি করে। বেশি বাড়াবাড়ি শুরু করলে পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশের তাড়া খেয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয় অনেকে, পালিয়ে আসে মেকসিকো কিংবা আমেরিকায়।
তারমানে, ঢোক গিলল মুসা। কাল রাতে টেরোরিস্টদের সভায় যোগ দিয়েছিলাম? সন্ত্রাসবাদী? সব্বোনাশ!
হতে পারে, না-ও হতে পারে। মেসা ডিওরোর লোক অনেক আছে আমেরিকায়। সোলজার্স অভ দ্য রিপাবলিকের একদল সন্ত্রাস পছন্দ করে, আরেক দল করে না। তবে দুই দলই চায় ফেলিপ প্রেসিডেন্ট হোক। টাকা সংগ্রহ করে, দলের জন্যে।
চমৎকার!
সে যা হোক, এই তো গেল মেসা ডিওরোর রক্তক্ষয়ী ইতিহাসের কাহিনী। এখন আসা যাক অন্ধের কথায় পুলিশের নাম শুনেই সে-রাতে ভয়ে পালাল অন্ধ। মিসেস নিকারোর স্বপ্নের কথা শুনে চমকে উঠল বিল। তুমি কাল রাতে দেখে এলে তার ছবি। বোঝাই যায়, ছবির ওই লোককে নেতা বানিয়েই মীটিং করছিল ওরা।
ম্যাগাজিনের পাতা ওল্টালো রবিন। এই দেখ, তুলে দেখাল সে, বেশ বড় একটা ছবি। কালো চশমা, গালে কাটা দাগ। মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে, বক্তৃতার ভঙ্গিতে হাত তোলা। মুখ দেখেই বোঝা যায়, ছবিটা তোলার সময় চেঁচিয়ে কথা বলছিল। মুসা, এই ছবিটাই দেখেছিলে?
হ্যাঁ, এটাই। অবিকল এক চেহারা।
আমিও এই চেহারাই দেখেছি, তবে একেই কিনা জানি না। এর নাম লুই প্যাসক্যাল ডোমিনিগেজ ডি অ্যাট্রানটো। একসময় ফেলিপ রডরিগেজের সহযোগী ছিল। এ-ব্যাটা টেরোরিস্ট। মেসা ডিওরোতে বোমা মেরে চোদ্দটা বাচ্চাকে খুন করেছে একবার, স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী। দোষ চাপিয়েছে সরকারের ঘাড়ে। তার যুক্তি, শয়তান সরকার চেয়ার দখল করে আছে বলেই তাকে টেরোরিস্ট হতে হয়েছে, আর সে টেরোরিস্ট হয়েছে বলেই বাচ্চাগুলো মরেছে।
আস্ত ফ্যানাটিক, অনেকক্ষণ পর কথা বলল কিশোর। কিন্তু তুমি যাকে দেখেছ, সে আর এই ছবির লোক এক ময় বলে সন্দেহ করছ কেন?
কারণ অ্যাট্রানটো মৃত। মারা গেছে কয়েক বছর হল। কিছুক্ষণ নীরবতার পর জোরে নিঃশ্বাস ফেলল মুসা। যদি সে মৃতই হয়।
তাকে কথা শেষ করতে দিল না কিশোর। কিন্তু চেহারা তো অবিকল এক। রবিন, অ্যাট্রানটো কি অন্ধ ছিল?
হ্যাঁ। এক ওয়্যারহাউসে আগুন লাগাতে গিয়ে হয়েছিল। নিজের আগুনে নিজেই। এতেই হিরো হয়ে যায় সে।
তাহলে অন্ধ ভিক্ষুক আর অ্যাট্রানটোর চেহারা এক, চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল কিশোর। শুধু মেকাপ আর একটা কালো চশমা দরকার, কাউকে অ্যাট্রানটো বানানোর জন্যে। আমি ভাবছি, এসবের পেছনে সিনথিয়ার হাত নেই তো? কিন্তু কেন কেউ ওই ছদ্মবেশ নেবে? কি লাভ তার? কেউ…।
ফোন বাজল। বাধা পেয়ে বিরক্ত চোখে তাকাল কিশোর। তারপর তুলে নিল রিসিভার। হ্যালো…ও, মিস্টার রোজার!
এক মিনিট চুপচাপ শুনল সে। তারপর বলল, হুঁ, কিছু বোঝা যাচ্ছে না। তবে এড়িয়ে যাওয়ার মত নয়। যদি বলেন, আসতে পারি। এমনিতেও আপনার সঙ্গে কথা আছে।
আরেক মিনিট শুনল। বলল, হ্যাঁ। আসতে আধ ঘন্টা লাগবে।
রিসিভার রেখে দিল কিশোর। আবার রোজারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। খুব মুষড়ে পড়েছে। দেখি, যাই, কি বলে? সিনথিয়ার কথাও জিজ্ঞেস করতে হবে। দুই সহকারীর দিকে তাকাল সে। মেয়েটার ওপর নজরও রাখতে হবে আমাদের। বিলের দলের সঙ্গে যোগাযোগ আছে কিনা জানা দরকার।
আমার দিকে চেয়ে লাভ নেই, মাথা নাড়ল মুসা। মা-র কড়া আদেশ, বিকেলের মধ্যে লনের ঘাস কেটে সাফ করতে হবে। আর আমাদের বাগানে যা ঘাসরে, ভাই, জানই তো। এক হপ্তায় ছইঞ্চি হয়ে যায়, আরও পেয়েছে বৃষ্টি। থামল এক মুহূর্ত। তাছাড়া, মেয়েটা আমাকে চিনে ফেলার ভয় আছে।
রবিন? সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকাল কিশোর।
আমি পারব। বিকেলে কাজ নেই।
হুঁশিয়ার, সাবধান করে দিল মুসা। বোমা মেরে যারা শিশু খুন করতে পারে, তাদেরকে বিশ্বাস নেই। জানোয়ারেরও অধম।
১১
আধ ঘন্টা পর রোজারের দরজায় টোকা দিল কিশোর। খুলে দিল রক রেনাল্ড। গলাবন্ধ কালো শার্ট গায়ে, চোখে সানগ্লাস।