বেশি কাকতালীয়, বলল কিশোর। তুমি যার ছবি দেখেছ তার গালেও কাটা দাগ। মিসেস নিকারো স্বপ্নে দেখা লোকটার চেহারার বর্ণনা দিতে চমকে উঠেছে। বিল, তারমানে ওই লোক তার পরিচিত। আর পরিচিত লোকটা ছবির লোক ছাড়া
আর কে? কিন্তু মেসা ডিওরোর সঙ্গে ওদের কি সম্পর্ক? ব্যাংক ডাকাতি কি ওরাই করেছে?
হতে পারে বিল বিদেশী এজেন্ট, আর অন্ধ লোকটা তার কনট্যাক্ট, মুসা বলল। স্পাই হলে পুলিশের কাছে অবশ্যই নিজের পরিচয় গোপন রাখার চেষ্টা করবে। গায়ক সেজে বসাটা বিচিত্র কিছু নয়।
টেলিভিশন খুব বেশি দেখ তুমি, বলল রবিন।
গল্পের চেয়েও আশ্চর্য ঘটনা ঘটে বাস্তবে, কিশোর বলল। বিলের ব্যাপারে প্রায় কিছুই জানি না আমরা এখনও। কাজেই কি যে ঘটছে অনুমান করা মুশকিল। তবে, মেসা ডিওরো সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে হবে আমাদের।
ঘড়ি দেখল রবিন। দশটায় লাইব্রেরিতে যেতে হবে। বইপত্র ঘেঁটে দেখব তখন।
কিশোওর! মেরিচাচীর ডাক শোনা গেল। এইই কিশোওর।
হাসল মুসা। যাও, আজও কাজ চাপাবে ঘাড়ে।
দুই সুড়ঙ্গ দিয়ে বেরিয়ে এল ওরা।
ওঅর্কশপের বাইরেই অপেক্ষা করছেন মেরিচাচী। দেখেই বলে উঠলেন, এই কিশোর, ডাকলে জবাব দিস না কেনরে? বলেই তাড়াতাড়ি স্বর নরম করে ফেললেন, ওই যে, বোরিস ডাকছে তোকে। মাল তুলবে। মুসা, বাবা, তুমিও একটু যাও, সাহায্য কর ওদের। ওই দেখ না, কি সব জিনিস নিয়ে এসেছে তোমার আংকেল। কতগুলো ভাঙা চেয়ার-টেবিল। কখন যে কোত্থেকে কি নিয়ে আসে …।
আনুক না, অসুবিধে কি? কিশোর বলল। বিক্রি তো হয়ে যায়।
তা যায়। তোর চাচার চেয়েও বোকা লোক আছে দুনিয়ায়। এই তো, কাল এক মহিলা ওগুলোর অর্ডার দিয়ে গেল। আজ আবার পৌঁছে দিতে হবে। সান্তা মনিকার ডেলটন অ্যাভেন্যুতে নাকি একটা বাচ্চাদের স্কুল খুলবে। খুলুক, আরও বেশি করে খুলুক, আমাদের ভালইআরে, রবিন, তুমি কোথায় যাও?
চাকরি, তাড়াতাড়ি জবাব দিল রবিন। আর দশ মিনিট সময় আছে।
তাহলে দেরি করছ কেন? কখনও কাজে ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করবে না। অফিসে লেট করে যাওয়া কোনমতেই উচিত নয়। যাও, যাও।
মাল তুলতে বেশিক্ষণ লাগল না। ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে কিশোর, সে আর সুজাও যাবে সান্তা মনিকায়।
চাচীকে রাজি করাতে কষ্ট হল না। কিছুক্ষণের মধ্যেই দক্ষিণে রওনা হল ট্রাক।
সাগরের ধারে একটা সাইড স্ট্রীটের পাশে নার্সারি স্কুলটা। ট্রাক রাখল বোরিস। ওখান থেকেই দেখা যায় ওশেন ফ্রন্ট সিনিয়র সিটিজেন সেন্টারটা। একতলা একটা বাড়ি, চারপাশে লন, বসার জন্যে বেঞ্চ আছে। চারজন বৃদ্ধ এক জায়গায় বসে তাস খেলছে। কাছেই আরেকজন লাঠিতে ভর দিয়ে খেলা দেখছে। চোখে-মুখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট। দেখে দুঃখ হল কিশোরের। লোকটা আর কেউ নয়, ড্যানি রোজার।
সারারাত ঘুমায়নি মনে হয়, মুসা বলল।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর।
ওই চারজন তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে না?
তাই তো মনে হচ্ছে। কারও ওপর সন্দেহ ঝুলে থাকাটা এজন্যেই খুব খারাপ। এসপার-ওসপার হয়ে যাওয়া ভাল।
লোকটাকে চেন নাকি? জিজ্ঞেস করল বোরিস।
আমাদের মক্কেল। তাহলে আর ওর ভাবনা নেই, হাত ঝাড়ল বোরিস। সব ঠিক হয়ে যাবে।
ট্রাক থেকে নেমে স্কুলের দরজায় গিয়ে দাঁড়াল বোরিস। বেল টিপল। মুসা তাকিয়ে আছে সেন্টারের দিকে, হঠাৎ আরি! বলে উঠল।
কি হল? কিশোর জানতে চাইল।
ওই মেয়েটা, বলতে বলতে মাথা নুইয়ে ফেলল মুসা। যাতে তাকে দেখতে
পায়।
ফুটপাত ধরে সুন্দরী এক মেয়েকে হাঁটতে দেখল কিশোর। অল্প বয়েস। মাথায় লম্বা সোনালি চুল, হাঁটার তালে তালে নাচছে। পরনে স্ন্যাকস আর গায়ে বেঢপ এক সোয়েটার। পাশে পাশে প্রায় দৌড়ে চলেছে একটা সেইন্ট বার্নার্ড কুকুর, হাঁ করা মুখ, জিভ বেরিয়ে পড়েছে।
কে? চেন নাকি?
কাল মীটিঙে ছিল, মুসা বলল। বক্তৃতা দিয়েছে। জন তার সমর্থন পেয়েছে খুব।
হুঁম! সোজা হয়ে বসল কিশোর। তীক্ষ্ণ হল দৃষ্টি। খুঁটিয়ে দেখছে মেয়েটাকে। বাহ্, খুব ভাল তো…মিস্টার রোজারের কাছে যাচ্ছে…আরে, হাতও মেলাচ্ছে দেখি।
কীই? মাথা তুলল মুসা।
কুকুরের শেকল ছেড়ে দিয়ে রোজারের দুই কাঁধে হাত রাখল মেয়েটা। উষ্ণ হেসে চুমু খেল লোকটার গালে।
খুশি মনে হল রোজারকে।, খাইছে! রোজার, ব্যাংক ডাকাতি, প্যাসিফিকে মোটেলের সভা, মিস্টার সাইমনের মানিব্যাগ, অন্ধ লোক, সবই দেখি একই সুতোয় গাঁথা!
সুতো কি ওই মেয়েটা?
নিশ্চয়ই, মুসা বলল। খুব সহজ ব্যাপার। ওই গায়ক গোষ্ঠীর সদস্য মেয়েটা। রোজারকেও চেনে বোঝা যাচ্ছে। তার কাছ থেকে ব্যাংকের খবরাখবর ওই মেয়েই নিয়েছে। অন্ধটা হল ডাকাত দলের সর্দার। ব্যাংকে যে তিনজন ঢুকেছিল, তাদের মধ্যে মেয়েটাও থাকতে পারে। ছদ্মবেশ নিয়েছিল। তাই চিনতে পারেনি রোজার। কিংবা হয়ত শুধু ইনফর্মারের কাজই করেছে মেয়েটা।
হতেও পারে, আনমনা হয়ে গেছে কিশোর। কিন্তু সভার অন্য লোকগুলো কারা? সবাই ডাকাত হতে পারে না।
ওরা…ওরা। জবাব দিতে পারল না মুসা। ওরা হয়ত নির্দোষ। ডাকাতগুলো ওদের ব্যবহার করছে…
কি কাজে ব্যবহার করছে বলতে না পেরে চুপ হয়ে গেল সে।
আড়াই লাখ ডলারে হল না, আরও টাকা দরকার? একেবারে চাঁদা তুলতে শুরু করল? নিজেকেই প্রশ্ন করল কিশোর।
হ্যাঁ, কেমন জানি ব্যাপারটা!