মোটর সাইকেল স্ট্যাণ্ডে তুলে চেয়ারগুলোর পাশ দিয়ে ঘুরে গিয়ে টেবিলের কাছে দাঁড়াল পুলিশ অফিসার। হাত তুলে বলল, সরি, বাধা দিলাম। কিছু মনে করবেন না। আপনাদের লীডার কে?
আমি, বিল বলল। কি ব্যাপার, অফিসার? রিহারসালের অনুমতি নিয়েই এসেছি মিস্টার বারকেনস্টিনের কাছ থেকে।
বারকেনস্টিন? অফিসের দিকে তাকাল অফিসার। মোটেলের মালিক?
হ্যাঁ। কমুনিটি রুম ভাড়া নিয়েছি। রসিদ দেখতে চান?
না, বিশ্বাস করছি। কিন্তু ওটা তো কমুনিটি রুম নয়। তাছাড়া বারকেনস্টিন বলেনি জায়গাটা নিরাপদ নয়? মোটেল বন্ধ কেন, জানেন? এর নিচের মাটি আলগা, অতিবৃষ্টিতে এরকম হয়েছে। যে কোন সময় ধস নামতে পারে। আসলে কি করছেন এখানে, বলুন তো? এত লোক কেন?
নিস্পাপ হাসি ফুটল বিলের ঠোঁটে। একটা গানের দল গঠন করেছি আমরা, কান্ট্রি সং ফেডারেশন। রিহারসাল দিচ্ছি, কলিসিয়ামে সাতাশতম কান্ট্রি মিউজিক জাম্বােরিতে প্রতিযোগিতা করব।
জনতার ওপর চোখ বোলাল অফিসার। এত লোক? সবাই…সবাই যাবেন প্রতিযোগিতা করতে?
অ্যামেচারদেরই প্রতিযোগিতা হয় ওখানে, ধৈর্যের সঙ্গে জবাব দিল বিল। লোক কম-বেশির প্রশ্ন নেই। আপনি বলছেন ধস নামবে, মিস্টার বারকেনস্টিন তো তা বললেন না। তিনি বলেছেন ঠিকই আছে। তাছাড় এখন আর রিহারসাল ক্যান্সেল করা যাবে না। দূর থেকে এসেছে ওরা, এমন কি ল্যাগুনা থেকেও এসেছে অনেকে। ভোলা জায়গায়ই তো প্র্যাকটিস করছি। মোটেল যদি বসেও যায়, আমাদের কিছু হবে না।
সেটা আপনি বলছেন। আপনার কথায় তো আর হবে না, গলা চড়াল অফিসার। জনতার দিকে ফিরল, সরি, আপনাদের চলে যেতে হবে এখান থেকে। যত তাড়াতাড়ি পারেন। সাংঘাতিক বিপদ হতে পারে। তাড়াহুড়ো করবেন না। আস্তে আস্তে শৃঙ্খলা বজায় রেখে নেমে যান। যান, উঠুন। না না, চেয়ার গোটানোর দরকার নেই। যেমন আছে থাক।
অফিসারের কথা মানল জনতা। উচ্ছল হল না। শান্ত হয়ে সারি দিয়ে নেমে যেতে শুরু করল। ড্রাইভওয়ে দিয়ে নামার সময় মুসার কানে এল, বিল বলছে, এত তাড়াহুড়ো করছেন কেন? যাচ্ছি তো। গিটারটা তো নিতে দেবেন?
৮
কি যে করছে ওরা আল্লাই জানে, মুসা বলল। তবে বাজি রেখে বলতে পারি, ফোক সং-টং সব বাজে কথা।
পরদিন সকালে হেডকোয়ার্টারে মেঝেতে হাত-পা ছড়িয়ে বসে আছে ও।
বাজিতে হেরেও যেতে পার, বলল কিশোর। সামনে ডেস্কের ওপর রাখা লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস-এর একটা সংখ্যা। সাতাশ তারিখে কলিসিয়ামে সত্যিই মিউজিক জাম্বােরি হচ্ছে।
রবিন বসেছে টুলে। আগের দিন সান্তা মনিকায় গিয়ে অন্ধ লোকটা সম্পর্কে খোঁড়া গোয়েন্দা কিছুই জানতে পারেনি সে। কোলের ওপর বিছানো একটা ওয়ার্ল্ড ম্যাপ, পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে মুসা আর কিশোরের আলোচনা শুনছে।
এই শোন, হঠাৎ মুখ তুলল রবিন। মুসা, তুমি কাল যে পতাকা দেখে এসেছ, ওটা মেকসিকান নয়। মেকসিকান পতাকা লাল, সাদা আর সবুজ। ওটা স্প্যানিশও নয়, এমনকি সেন্ট্রাল আমেরিকার কোন দেশেরও নয়।
হয়ত দেশের পতাকা নয় ওটা, বলল কিশোর। কোন সংগঠনের ব্যানার হতে পারে।
আবার ম্যাপের পাতায় মনোনিবেশ করল রবিন। খানিক পরে চেঁচিয়ে উঠল, মেসাডিওরো!
কী? মুসা অবাক। কি বললে?
মেসা ডিওরো। দক্ষিণ আমেরিকার একটা ছোট্ট রাজ্য। এই যে, দেখ ম্যাপটা। পাশে আরও দুটো ম্যাপ। একটা সবুজ, মাঝখানে স্টেট-এর সীল, আরেকটা নীল, মাঝে একগুচ্ছ সোনালি ওকপাতা। সবুজ রঙেরটা দেশের অফিশিয়াল ফ্ল্যাগ, আর নীলটার নিচে লেখা রয়েছে ওল্ড রিপাবলিক। নোট লেখা রয়েছে, দেশের কিছু কিছু অঞ্চলে নীল পতাকাটাকে বিশেষ ছুটির দিনে এখনও ব্যবহার করে রক্ষণশীল গোষ্ঠী। দুই বন্ধুর দিকে তাকাল একবার রবিন, আবার মুখ নামাল ম্যাপের দিকে। প্রশান্ত মহাসাগরের তীরেই অবস্থিত মেসা ডিওরো। বন্দর আছে। কফি আর পশম রপ্তানি করে। রাজধানীটাও একটা বন্দর, নাম ক্যাবো ডি র্যাযোন। এর দক্ষিণের উঁচু অঞ্চলে বার্লির চাষ হয়। লোক সংখ্যা পঁয়ত্রিশ লাখ।
তাই? মুসা বলল। আর কিছু?
ম্যাপ বইতে বেশি তথ্য থাকে না। যা দিয়েছে এইই বেশি, তা-ও ভাল ম্যাপ বলে।
মম, মাথা দোলাল কিশোর। মুসা, কাল যেটা দেখে এসেছ সেটাও বোধহয় কোন ধরনের সাংগঠনিক দল। দেশের কোন কাজের জন্যে টাকা সংগ্রহ করছে। কিন্তু নেতা সুবিধের নয়। পুলিশকে মিথ্যে কথা বলেছে। বোঝাই যায়। নইলে পুলিশ আসায় সতর্ক হয়ে যেত না। তাছাড়া, মিসেস নিকারো অন্ধ লোকটাকে স্বপ্নে দেখার কথা বলায় চমকে উঠেছে বিল। মুসার দিকে চেয়ে ভুরু নাচাল সে। কাল রাতে আসলে কি করছিল ওরা? ওদের সঙ্গে কি ব্যাংক ডাকাতির কোন সম্পর্ক আছে, না সভা করাটা ভিন্ন আরেক রহস্য? একটা ব্যাপার পরিষ্কার, সভা করার আসল কারণ পুলিশকে জানতে দিতে চায়নি ওরা।
চায়নি বলেই যে অপরাধ করেছে, সেটা না-ও হতে পারে, বলল রবিন। তবে ব্যাপারটা অদ্ভুত। পুলিশ জানলে অসুবিধে হবে মনে করে, অথচ কোনরকম গোপনীয়তার আশ্রয় নেয়নি। সোজা গিয়ে বসে পড়েছে মুসা, কেউ বাধা দেয়নি।
ভ্রূকুটি করল কিশোর। নিচের ঠোঁট ধরে জোরে টান দিয়ে ছেড়ে দিল। এর অর্থ, প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টায় পুরোদমে চালু করে দিয়েছে মগজ।
এমনও হতে পারে, আমি যার ছবি দেখেছি, মুসা বলল। রবিন সেই লোককে দেখেনি। দুজনই অন্ধ, তবে আলাদা লোক।