যা-ই হোক, অফিস ছুটি হওয়ার পর ঝাড়ুদার আসে, আমি দেখাশোনা করি। বেশিক্ষণ লাগে না ওদের। ছটার মধ্যে সেরে ফেলে। ওরা বেরিয়ে গেলে তালা লাগাই, আরেকবার চেক করে দেখি সব ঠিক আছে কিনা। তারপর বাড়ি যাই। নাইট গার্ড নেই ওই ব্যাংকের ভল্টে টাইম লক লাগানো, কাজেই গার্ডের দরকার পড়ে না। জোর করে কেউ খুলতে গেলেই পুলিশ স্টেশনে অ্যালার্ম বেজে উঠবে।
সেজন্যেই আপনাকে আটক করেছিল ডাকাতেরা, রবিন বলল। নইলে টাইম লকের জন্যে কিছু করতে পারত না ওরা। ভেতরে ঢুকলেই, ঘন্টা।
হ্যাঁ। তিনজন এসেছিল, টাইম লক সিসটেমের কথা ভাল করেই জানত। নিশ্চয় কোথাও লুকিয়ে থেকে চোখ রাখছিল। ঝাড়ুদারেরা কাজ শেষ করে বেরিয়ে গিয়ে এলিভেটরে উঠল। তারপর এল এক ডাকাত। দরজা ধাক্কা দিল। লবিতে তখন আলো খুব সামান্য। দেখলাম ওভারঅল পরা একজন দাঁড়িয়ে আছে, টুপির নিচে ধূসর চুল। টুপিটা চোখের ওপর টানা। ভাবলাম জ্যাকই বুঝি ফিরে এসেছে। কোন দরকারে। দরজা খুললাম। ও ভেতরে ঢোকার পর চিনলাম, জ্যাক নয়। হাতে পিস্তল। আর কিছু করার নেই তখন আমার।
ওর পর পরই ঢুকল আরও দুজন। মাথায় পরচুলা, নকল দাড়ি, নকল গোঁফ। ব্যের্ড রুমে ঢুকতে বাধ্য করল আমাকে। রাস্তা থেকে ঘরটা দেখা যায় না। আমাকে সরািরাত আটকে রাখল। ভল্টের ধারেকাছেও ঘেষল না। সকালে স্টাফরা আসতে লাগল। একজন করে ঢোকে, আর ধরে এনে তাকে বোর্ডরুমে আটকায়। তারপর এলেন মার্ক জনসন, ভল্টের লক কম্বিনেশন তিনি জানেন। বোঝা গেল, ডাকাতেরা তাকে চেনে টাইম লক অফ করিয়ে ভল্ট খুলতে তাকে বাধ্য করল ওরা।
মুসার পাশের চেয়ারে এসে বসল রক রেনাল্ড। নিশ্চয় তোমার ওপর চোখ রেখেছে কেউ। ব্যাংকের কাছাকাছিই থাকে সে, বা থাকত। কিংবা তোমার পরিচিত কেউ।
পরিচিত কেউ হলে চিনতাম, রোজার বলল। তিনজনের একজনকেও চিনি। দেখিইনি কখনও।
উঠে গিয়ে চলায় কেটলি বসাল রক। আমাদের পড়শীদের কেউও হতে পারে। নিশ্চয় ছদ্মবেশে গিয়েছিল। পড়শীদের ওপর চোখ রাখতে বল ছেলেগুলোকে।
রাখাটা কি জরুরি?
সামনে ঝুঁকল কিশোর। পড়শী কিংবা বন্ধু-বান্ধবকে সন্দেহ করা কঠিন। কিন্তু মিস্টার রোজার, বোঝা যাচ্ছে, ডাকাতেরা আপনাকে চেনে, ব্যাংকে আপনার কখন কি কাজ ভালমত জানে। গত কদিন ধরে কেউ নজর রেখেছে আপনার ওপর, টের পেয়েছেন? আপনার কাজকর্ম সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন কেউ?
না, একেবারে মুষড়ে পড়েছে রোজার।
কেটলিতে কফি ফুটছে। একটা কাপে ইনসট্যান্ট কফি রেখে তাতে গরম পানি ঢালল রক। টেবিলের কাছে বসে চুমুক দিল কাপে। কিশোরের দিক থেকে রোজারের দিকে ফিরল, আবার তাকাল কিশোরের দিকে।
আপনাকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হলে আসল অপরাধীকে খুঁজে বের করতে হবে আগে, কিশোর বলল। সেজন্যে সূত্র দরকার।
সূত্র? সূত্র কোথায় পাবে?
জানি না। তবে আশা করছি, পাওয়া যাবে। এখন এ-ব্যাপারে আলোচনা করছি না আপনার সঙ্গে। তদন্ত চালিয়ে যাব আমরা। দুএক দিনের মধ্যেই খবর জানাব আপনাকে। ইতিমধ্যে, অস্বাভাবিক কোন কিছু আপনার চোখে পড়লে জানাবেন। আমাদের কার্ডের পেছনে টেলিফোন নাম্বার আছে।
জানাব।
বেরিয়ে এল ছেলেরা। পেছনে দরজা বন্ধ হয়ে গেলে রবিন বলল, সূত্র? ওই মানিব্যাগের কথা ভাবছ?
খুবই সামান্য, তবু সূত্র তো বটে, জবাব দিল কিশোর। আপাতত ওটা ধরেই তদন্ত চালাতে হবে আমাদের। আর একটা ব্যাপারে শিওর হয়ে গেলাম, রোজার কিংবা মিস্টার সাইমন অপরাধী নন। তবে, অন্ধ লোকটা ডাকাতদের কেউ হলে, মানিব্যাগ ধরে তদন্ত করে লাভ হবে না আমাদের।
হোক বা না হোক, হাত নাড়ল মুসা। কথায় কথায় পিস্তল বের করে, এমন – লোকের সামনে না পড়লেই আমি খুশি।
৬
পরদিন সকাল নটায় রকি বীচ ছাড়ল রবিন মিলফোর্ড। কোস্ট হাইওয়ে ধরে সাইকেল চালাল দক্ষিণে, সান্তা মনিকায় যাবে। থিফট অ্যাণ্ড সেভিংস কোম্পানির আশেপাশের স্টোরগুলোতে খোঁজখবর নেবে অন্ধ লোকটার, আর এসেছে কিনা জিজ্ঞেস করবে। তারপর আবার রকি বীচে ফিরে যাবে লাইব্রেরিতে, যেখানে পার্টটাইম চাকরি করে।
রবিনকে চলে যেতে দেখল কিশোর আর মুসা। তারপর ওরা রওনা হল উত্তরে। সাড়ে নটা নাগাদ ম্যালিবু ছাড়ল। শহরের পর থেকে উঠে গেছে পাহাড়ী পথ, পাহাড়ের পিঠের ওপাশ থেকে আবার ঢালু হয়ে নেমেছে। নিকারো অ্যাণ্ড কোম্পানিটা ওখানেই।
জেটির কাছে এসে থামল ওরা। হাইওয়ে ধরে যাবার সময় হাজারবার দেখেছে এই জায়গা ওরা। এর আগে কখনোই নজর দেয়নি তেমন। কিছু ক্যাম্প দেখা যাচ্ছে একধারে। পথের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে কয়েকটা ভ্যান। জেটির দক্ষিণে সৈকতের এক প্রান্তে মাছ ধরছে কিছু লোক, তাদের মাঝে মহিলাও আছে কয়েকজন। এই ঠান্ডার মাঝেও ওয়েটসুট পরে ঢেউয়ের ওপরে সার্ফিং করছে কিছু লোক।
চমৎকার ঢেউ আজ, মুসা বলল। সে নিজে খুব ভাল সাফার, লোকগুলোকে দেখে সার্ফবোর্ড নিয়ে তারও সাগরে নামতে ইচ্ছে করছে।
কিন্তু ওসবে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই কিশোরের। সে তাকিয়ে আছে জেটিতে বাঁধা একটা ফিশিং বোটের দিকে। ছোট্ট নাম বোটটার, টিনা। পনেরো মিটার লম্বা। পাইলটের জন্যে হুইল-হাউস আছে, যারা মাছ ধরবে তাদের জন্যে খোলা ডেক। ডেকের হ্যাচ খোলা। নীল উইণ্ডব্রেকার পরা এক তরুণ ঝুঁকে ইঞ্জিনে কি যেন করছে।