নাম, সরো রাস্তা থেকে! চেঁচিয়ে উঠেই নিজের সাইকেলের হ্যাণ্ডেল ঘুরিয়ে দিল মুসা। নেমে পড়ল পাশের খাদে। শাঁ করে ছুটে গেল একটা লাল স্পোর্টস কার, সময়মত সরতে না পেরে লেগে গেল রবিনের সাইকেলের সঙ্গে, ফেলে দিল ওটাকে। সাইকেল পড়ার আগেই লাফ দিয়ে খাদে পড়ল রবিন। গাড়িতে বসা হাসি হাসি মুখটার দিকে মুঠো চাল মুসা। চিৎকার করে বলল, শুঁটকি, রাখ, ধরতে পারলে মজা দেখার! বন্ধুদের দিকে ফিরে বলল, কাল সন্ধ্যায় ওকে বোকা বানানোর প্রতিশোধ নিল ব্যাটা।
ওটার শিক্ষা আর হবে না কোনদিন, আফসোসের ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল কিশোর। রবিনকে টেনে তোলার জন্যে হাত বাড়াল। সব গড়বড় করে দিতে পারে। নজর রাখতে হবে ওর ওপর। বিপদেও ফেলে দিতে পারে।
আর অল্প কিছুদূর উঠেই ডেপুটির অফিস চোখে পড়ল ওদের। কেউ নেই। বোটানিক্যাল গার্ডেনে ঢুকে এদিক ওদিক তাকাল।
হাত তুলে দেখাল রবিন, ওই দেখ, কতগুলো গাছ। আর ওই যে পুকুর।
ঝড় বয়ে গেছে যেন পুকুর পাড়ের বাগানে। হাঁসের পুকুরের চারপাশে যত আপেল আর নাশপাতি গাছ আছে সবগুলোর সর্বনাশ করে ফেলা হয়েছে। ডালপালা একটারও নেই, সব ভাঙা। অসংখ্য হাঁস থাকার কথা পানিতে, অথচ আজ একটাও নেই।
শুধু গাছই নষ্ট করেনি, পুকুর পাড়ের মাটি খুঁড়ে ফেলা হয়েছে। ছোট-বড় অনেক গর্ত। ওখানে এসে দাঁড়াল তিন গোয়েন্দা।
কে জানি আসছে, বলতে বলতে একটা ডাল তুলে নিল মুসা। গুপ্তধন খুঁজতেই আসছে বোধহয়…
এই, চুপ করে দাঁড়িয়ে থাক! ধমক দিয়ে বলল একটা কণ্ঠ।
পাই করে ঘুরল ওরা। হোটখাট একজন মানুষ জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। পরনে শেরিফের পোশাক। আবার বলল, অ্যারেস্ট করা হল তোমাদের।
৬
শান্ত রইল কিশোর। আপনি কি ডেপুটি গ্যারেট?
হ্যাঁ, বলেই গর্জে উঠল শেরিফ, অনেক জ্বালাতন হয়েছে! মরা মানুষের ধাঁধা, যত্তসব! তোমাদেরকে অ্যারেস্ট করলাম।
কিন্তু, প্রতিবাদ জানাল রবিন, আমরা…
শান্তকণ্ঠে কিশোর বলল, ভাল করে খেয়াল করে দেখুন, ডেপুটি, পাতাগুলো কেমন শুকিয়ে আছে। আমরা আসার অনেক আগে ভাঙা হয়েছে এসব ডাল, সম্ভবত গতকাল। আমরা এইমাত্র এসেছি।
তোমরা, ডেপুটির কণ্ঠে সন্দেহ। কারমলের গুপ্তধনের জন্যে না এলে কিসের জন্যে এসেছ?
আমরা খুঁজতেই এসেছি…।
বলেছিলাম না! চেঁচিয়ে উঠল ডেপুটি। ঠিকই আন্দাজ করেছি আমি।
কিন্তু, দৃঢ়কণ্ঠে বলল কিশোর। এই পুকুর আর গাছপালার সঙ্গে গুপ্তধনের সম্পর্ক নেই। ভুল করে এগুলো নষ্ট করে দিয়ে গেছে লোকেরা। আমরা ওদের দলের কেউ নই। মিসেস কারমল আমাদের ভাড়া করেছেন তাঁদের জিনিস খুঁজে দিতে।
ভাড়া? সন্দেহ যায়নি শেরিফের।
আমরা গোয়েন্দা, জানাল মুসা।
চীফ ইয়ান ফ্লেচারের দেয়া সার্টিফিকেট বের করে দেখাল কিশোর। ইচ্ছে করলে ফোন করে তাঁর কাছ থেকে আমাদের কথা জেনে নিতে পারেন। মিসেস কারমলকেও ফোন করতে পারেন।
শাগ করল ডেপুটি। চীফের সই বলেই মনে হচ্ছে। তাহলে তোমরা তিন গোয়েন্দা? মাথা চুলাকাল সে। তোমাদের বিশ্বাস কারমল সত্যিই কিছু
লুকিয়েছে? ফালতু রসিকতা নয়?
না। আর আমরা আপনার সাহায্য চাই।
আমার সাহায্য? বলে কি! আমি কি সাহায্য করব?
বিলাবংটা কোথায় আমাদের বলবেন,মুসা বলল।
হাঁ হয়ে গেল ডেপুটি। বিলাবং! সেটা আবার কি জিনিস?
ডোবা, কিংবা ঝর্না, বলল কিশোর। কোন ধরনের জলাশয়। যেটাতে আপনি আর কারমল মাছ ধরতেন। পার্কে আছে ওরকম জায়গা?
আছে। পুরানো একটা দীঘি। আগে পর্বতের ওদিক থেকে পানি আনতে হত আমাদের। পরে ওয়াইনেজ ক্রিকে বাঁধ দিয়ে পানির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এখন আর পানির জন্যে ওখানেও যাওয়ার দরকার পড়ে না। মাঝে মাঝে মাছ ধরতে যায় লোকে, বিশেষ পাওয়া যায় না। বসন্তে ছাড়া অন্য সময় পানি খুব কম থাকে। পুরানো সব ফিডার ক্রিকগুলোকে সিমেন্টে বাঁধ দিয়ে মুখ আটকে দেয়া হয়েছে, বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্যে ওই মেইন ক্রিকটা বাদে। ওখানে একটা পুরানো হাউসবোট আছে, তাতে উঠেই ছিপ ফেলতাম আমরা।
কোনদিক যেতে হবে, বলবেন স্যার? অনুরোধ করল রবিন।
সহজ। ওই যে পথটা, ওটার পাশেই পড়বে। পার্কের মেইন বাস স্টপের কাছে গিয়ে নিচে তাকালেই দেখতে পাবে।
ডেপুটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে সাইকেলের দিকে দৌড় দিল তিন গোয়েন্দা। দ্রুত পেডাল ঘুরিয়ে চলল। খানিক পরেই দেখতে পেল বাধটা, ওদের ওপরে, ডান দিকে। বিশ ফুট চওড়া পানির ধারা বয়ে চলেছে সগর্জনে। উঠেই চলল ছেলেরা, বাঁধের পাশাপাশি এসে থামল। এখান থেকে একটা কাঁচা রাস্তা চলে গেছে ওয়াইনেজ ক্রিকে। মূল সড়কটা দীঘির পাশ দিয়ে গিয়ে পাক খেয়ে উঠে গেছে পর্বতের ওপরে।
কাঁচা রাস্তা ধরে কিছুদূর এগোতেই নজরে এল হাউসবোট। ধাড়ির পাড়ে বঁধা। ওখানে বাঁধের জলধারা তিরিশ ফুট চওড়া। তীব্র গতিতে ছুটছে বোটের পাশ দিয়ে।
যাক, সাইকেল কাত করে রাখতে রাখতে বলল রবিন, বটল অ্যাণ্ড স্টপার অবশেষে বিলাবং দেখাল আমাদের।
এখন অ্যাবাভ দ্য অ্যাপলস অ্যাণ্ড পেয়ারস অল অ্যালন খোঁজা দরকার, বলল মুসা। সিঁড়ি। আমার মনে হয় ওটাই।
খাড়া একটা কাঠের সিঁড়ি, বরং মই বলা ভাল, বোটের মেইন ডেক থেকে উঠে গেছে কেবিনের চ্যাপ্টা ছাতে। ছুটল মুসা। একটা তক্তা ফেলে বোটে ওঠার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওটা বেয়ে গিয়ে বোটে উঠল সে। তারপর সিঁড়িতে। রেলিঙে, ঘেরা ছাত। পুরানো কাঠের বাক্স, মাছের খাবারের টিন, আর আরও নানারকম জঞ্জাল পড়ে রয়েছে।