- বইয়ের নামঃ দি বিগ ফোর
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর,গোয়েন্দা কাহিনী, উপন্যাস
দি বিগ ফোর
১. আমার স্বদেশ
০১.
আমার স্বদেশ ইংল্যান্ডের দিকে তাকিয়ে আমার দু-চোখ জলে ভরে উঠল। জীবিকার তাগিদে আমাকে আর্জেন্টিনায় থাকতে হয়। স্ত্রীকে সেখানে রেখে, মাস কয়েকের জন্যে দেশে ফিরছি। ভেবেছি, পুরোন বন্ধু এরকুল পোয়ারোর ফ্ল্যাটে হঠাৎ হাজির হয়ে ওকে চমকে দেব।
পোয়ারো একজন বিখ্যাত গোয়েন্দা। তবে সে এখন আর রহস্যভেদের নেশায় ইংল্যান্ডের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটোছুটি করে না। গোয়েন্দা না বলে তাকে এখন কনসালটিং ডিটেকটিভ বলাই ভালো।
লন্ডনে পৌঁছে, একটা হোটেলে মালপত্র রেখে পোয়ারোর ফ্ল্যাটে গিয়ে হাজির হয়ে তাকে চমকে দিলাম।
–আরে হেস্টিংস, বলে সে চেঁচিয়ে উঠে জড়িয়ে ধরল আমাকে।
আমি তার কাছে থাকার অভিপ্রায় জানালে সে আমাকে দুঃখপ্রকাশ করে জানালো যে, দেড় বছর বাদে আমি আর্জেন্টিনা থেকে ইংল্যান্ডে ফিরলাম, আর এক ঘন্টার মধ্যে তাকে ইংল্যান্ড থেকে আর্জেন্টিনায় যেতে হচ্ছে। জাহাজ (তখনও বিমানযাত্রা এত স্বাভাবিক হয়নি) কারণ মার্কিন কোটিপতি আবে রাইল্যান্ডের সেক্রেটারী তার সঙ্গে দেখা করে জানিয়েছিল, তাদের রিয়ো-ডি-জেনিরোর একটা মস্তবড় কোম্পানিতে নাকি মস্ত একটা গণ্ডগোল দেখা দিয়েছে। সে যেন সে সম্পর্কে রিয়োতে গিয়ে তদন্ত করে। ব্যাপারটা নাকি খুবই গোেপনীয়। তাই ঘটনাস্থলে পোয়ারোকে পৌঁছে সবকিছু জানাতে হবে। ফী হিসাবে রাইল্যান্ড নাকি বিরাট অঙ্কের টাকা দিতে রাজি হয়েছে; পোয়ারো ঠিক করেছে এই কেসটার পর আর্জেন্টিনাতে একটা সম্পত্তি কিনে বাকি জীবনটা শান্তিতে কাটিয়ে দেবে।
পোয়ারো বলল, মোটা অঙ্কের টাকাটা না পেলে আমি যেতে রাজি হতাম না। কারণ, নিজেরই উদ্যোগে আর একটা ব্যাপারে আমি এখানে তদন্ত শুরু করেছিলুম। চতুরঙ্গ বলে একটা মস্ত অপরাধী সঙ্রে ব্যাপারে। ওরা সারা পৃথিবীতে জাল পেতেছে আর চারজন লোক তাদের চালাচ্ছে।
আমি পোয়ারাকে বললাম, তাহলে তোমার এখানেই থাকা উচিত, রাইল্যান্ডের কাজটাকে নাকচ করে দাও।
শুনে পোয়ারো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, আমার কথার কখনও নড়চড় হয় না, তা তো তুমি জানো। একমাত্র যদি কারো প্রাণসঙ্কট হয়, তবেই আমি থাকতে পারি।
হঠাৎ আমি উৎকর্ণ হয়ে শুনলাম, ভিতরের ঘর থেকে যেন একটা আওয়াজ এলো।
-কে, কে ওখানে?
পোয়ারো হেসে বলল, কোনো আগন্তুক হয়তো।
-কিন্তু ভেতরকার ঘরের তো একটাই দরজা। সেই দরজা দিয়ে ঢুকতে গেলে আমাদের সামনে দিয়ে ছাড়া যাবার উপায় নেই।
-বুদ্ধি খাটাও।
–ও, হা জানলা আছে বটে।
বলতে না বলতে ভিতরকার ঘরের দরজাটা হঠাৎ খুলে গেল। দেখলাম, সর্বাঙ্গে ধূলা-কাদা মাখা একটা পাংশু, শীর্ণ মানুষ আমাদের দিকে তাকিয়ে তারপর মূৰ্ছিত হয়ে পড়ল। ওর মুখে খানিকটা ব্র্যান্ডি ঢেলে দিলাম। জ্ঞান ফিরতে জিজ্ঞেস করলাম, কাকে চান? কী চান আপনি?
–মঁসিয়ে এরকুল পোয়ারো, ১৪ নম্বর ফারাওয়ে স্ট্রীট।
পোয়ারো আমাকে ডাক্তার রিজওয়েকে ফোনে ডাকতে নির্দেশ দিলো। তিনি এলেন। রোগীকে দু-একটা প্রশ্ন করতে কোনো জবাব পাওয়া গেল না। কাগজ পেন্সিল এগিয়ে দিতে সে দুর্বল হাতে গোটা গোটা অক্ষরে শুধু লিখলো : ৪, ৪, ৪, ৪ ডাক্তার বললেন, খুব সম্ভব ও লিখতে চায় ১৪; ১৪ ফারাওয়ে স্ট্রীট। যাই হোক, বিকেলে আমি ওকে হাসপাতালে পাঠাবার ব্যবস্থা করবো। পোয়ারোর বিদেশযাত্রার কথা শুনে তিনি বললেন, ঠিক আছে, এখানে ও একাই থাকুক, ল্যান্ডলেডী যেন মাঝেমধ্যে ওকে একটু দেখে যান। তিনি চলে গেলেন।
পোয়ারো বলল, ব্যাপারটা রহস্যময়। ঠিক তখনই আমাদের অপরিচিত অতিথি হঠাৎ উঠে বসে তন্দ্রাচ্ছন্ন গলায় বলল : লি চ্যাং ইয়েন।…চতুরঙ্গের বড়কর্তা। আমি তাই নাম দিয়েছি পয়লা নম্বর। দোসরার নাম কেউ কখনও উল্লেখ করে না। তার প্রতীক হচ্ছে পেটকাটা এস–অর্থাৎ ডলার। মনে হয়, সে আমেরিকার মস্ত ধনী লোক। তিননম্বর একটি ফরাসী মহিলা। আর চার নম্বর
ব্যগ্র গলায় পোয়ারো বলল, কে সে?
-সে হচ্ছে জল্লাদ–বলতে বলতে লোকটি আবার মূৰ্ছিত হয়ে পড়ল। আমরা ওকে শুইয়ে রেখে সাদামটনের ট্রেন ধরতে স্টেশনে পৌঁছলাম। কিন্তু সাদামটনের কয়েক মাইল আগে লাইন ক্লিয়ার না পেয়ে ট্রেনটা হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল। পোয়ারো চিৎকার করে বলল, লাফিয়ে পড়ো হেস্টিংস, বলে পোয়ারো লাইনের উপর লাফ দিলো।
-সুটকেসগুলো ফেলে দাও, নেমে এসো।
নামলাম, ট্রেনও তখুনি স্টার্ট দিলো।
ব্যাপার কি? জিজ্ঞেস করতে পোয়ারো বলল, ব্যাপারটা এতক্ষণে স্পষ্ট বুঝলাম। চলো এখুনি, আমাদের লন্ডনে ফিরতে হবে।
.
০২.
আমরা একটা গাড়ি ভাড়া করে ফিরে চললাম। পোয়রো বলল, জান হেস্টিংস, চতুরঙ্গ আমাকে তাদের পথের কাটা মনে ভাবে, তাই আমাকে সরিয়ে দিতে যাচ্ছিল।
-তার মানে?
–মানে, অতি সহজ। সেই অচেনা অতিথির কোনো বিপদ ঘটবেই।
ফ্ল্যাটে ফিরলাম। ল্যান্ডলেডী দরজা খুলে দিলো। তার মুখে শুনলাম কেউ আমাদের ফ্ল্যাটে ঢোকেনি। তাড়াতাড়ি আমরা ঘরে গেলাম।
পোয়ারো আমাকে জানালো, হেস্টিংস, সে..সেই মানুষটি…মারা গেছে। মোটামুটি ঘণ্টা দুয়েক আগে সে মারা গেছে।