নাহ, গুঙিয়ে উঠল মুসা, এখন আর সহজ লাগছে না।
ধাপে ধাপে, ধীরে ধীরে এগোতে হবে, বলল কিশোর। ফ্রেণ্ড বলেছেন বটে, কিন্তু বন্ধুর কথা হয়ত বোঝননি। সে পরে দেখা যাবে। পরের ধাঁধাটা বলছেঃ অ্যাট দ্য টেনথ বল অভ টোয়াইন, ইউ অ্যাণ্ড মি; সী আওয়ার; ও হ্যান্ডসাম মাগ অ্যাহেড। ভুরু কোঁচকাল সে। কঠিন হচ্ছে আস্তে আস্তে। ইউ অ্যাণ্ড মি-এর মানে, আ কাপ অভ টি, বা এক পেয়ালা চা। কিন্তু বল অভ টোয়াইনের মানে বুঝতে পারছি না। আর, সী আওয়ার হ্যাণ্ডসাম মাগ অ্যাহেডও রাইম নয়। এই তিনটের তো কিছু কিছু মানে করতে পেরেছি, চার নাম্বারটা একেবারে দুর্বোধ্য। ওয়ান ম্যানস ভিকটিম ইজ অ্যানাদারস ডারলিন, ফলো দ্য নোজ টু দ্য প্লেস। এটাতে রাইম আছে কিনা সেটাই বুঝতে পারছি না।
ইউ অ্যাণ্ড মি যদি এক কাপ অভ টি হয়, এলসা বলল, হ্যাণ্ডসাম মাগ বলে হয়ত বিশেষ কোন চায়ের পাত্রের কথা বুঝিয়েছে।
হ্যাঁ, তা হতে পারে, একমত হল কিশোর।
কিন্তু, রবিন প্রশ্ন তুলল, কারমল বলছেন, আওয়ার মাগ! দ্য মাগ কিংবা হিজ মাগ বলেননি। আর চতুর্থ ধাঁধায় তোমার নাক বা আমার নাক না বলে কেন দ্য নোজ বা নাকটি বললেন?
এখনও বুঝিনি, স্বীকার করল কিশোর। তবে আমি শিওর, কারণ একটা নিশ্চয় আছে, যাই হোক, পঞ্চম ধাঁধা বলছে, হোয়্যার মেন বাই দেয়ারট্রাবল অ্যাণ্ড স্ট্রাইফ, গেট আউট ইফ ইউ ক্যান। ট্রাবল অ্যান্ড স্ট্রাইফের মানে ওয়াইফ। কারমলের কথার মানে দাঁড়াচ্ছে, একজন স্ত্রী কিন। এর কোন অস্ট্রেলিয়ান মানে আছে, মিসেস কারমল? সেটেলাররা ইংল্যাণ্ড থেকে স্ত্রী কিনে নিয়ে যেত, না?
তা অনেকটা এরকমই, এলসা বলল। সেটেলারদের জন্যে জাহাজ বোঝাই করে মেয়েমানুষ পাঠানো হত। ওখান থেকে যার যার পছন্দমত স্ত্রী বাছাই করে মিত ওরা।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। হুঁ, খাপ খাবে মনে হচ্ছে। গেট আউট ইফ ইউ ক্যান বলে হয়ত বিয়ে ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে আসতে বলেছে। যদিও মাথামুণ্ড কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। এবার আসা যাক ছয় নম্বর ধাঁধায়। ইন দ্য পশ কুইনস ওল্ড নেড, বি ব্রাইট; অ্যাণ্ড নেচারাল অ্যাণ্ড দ্য প্রাইজ ইজ ইওরস। ওল্ড নেড মানে বিছানা। পশ হলোগে ফিটফাট। তারমানে পাথরগুলো পাওয়া যাবে ফিটফাট কোন রানীর বিছানায়।
আনমনে মাথা নেড়ে নিজেকেই যেন প্রশ্ন করল উকিল, কোন্ রানী? কিসের বিছানা? কোন্ মিউজিয়মে আছে?
থাকতে পারে। তবে শেষ ধাঁধা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় হয়নি। আগেরগুলোর সমাধান করতে না পারলে এটা বোঝা যাবে না।
এখন তাহলে প্রথম কাজ, রবিন বলল, বটল অ্যান্ড স্টপার খুঁজে বের করা, যে জানে জলাশয়টা কোথায়।
হতে পারে, ওই জায়গাটা পছন্দ ছিল কারমলের, অনুমান করল মুসা। সাঁতার কাটতে যেতেন, কিংবা পানি আনতে, কিংবা মাছ ধরতে…
মাছ ধরতে! চেঁচিয়ে উঠল নরি। মা, আমাদের বাড়ির পাশের কাউন্টি পার্কে মাছ ধরতে যেত দাদা! ডেপুটি গ্যারেটকে নিয়ে যেত!
ডেপুটি শেরিফ! কথাটা ধরল রবিন। তারমানে পুলিশম্যান! কাউন্টি পুলিশম্যান!
তাই তো, উকিল বলল। পার্কের পুলিশ অফিসার। হঠাৎ ফিসফিসিয়ে মুসা বলল, কিশোর, রাস্তায়!
সবাই দেখল, গাছের নিচে পার্ক করা একটা নীল গাড়ির গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে বিশালদেহী একজন লোক।
আরেকজন গুপ্তধন শিকারি হবে হয়ত,আন্দাজ করল উকিল।
হয়ত, কিশোরের কণ্ঠে অস্বস্তি। ইয়ার্ড থেকে বেরিয়েও লোকটাকে দেখেছে, সেকথা জানাল।
দরজার দিকে রওনা দিল উড। জিজ্ঞেস করা দরকার।
ছেলেরা দেখল, উকিল, রাস্তায় নামতেই গাড়িতে উঠে বসল লোকটা। চলে গেল। ফিরে এল উড।
ওই মজা দেখতেই.এসেছে, বলল সে। অনেক আসছে ওরকম।
উঠে দরজার দিকে চলল তিন গোয়েন্দা। পেছনে এল নরি। আমিও তোমাদের সঙ্গে কাজ করছি, মনে আছে?
তোমার কাজের দরকার নেই, নরম্যান, পেছন থেকে কড়া গলায় বলল তার মা।
হ্যাঁ, তোমার মা ঠিকই বলেছেন, মুসা বলল। তুমি এখনও নেহায়েতই শিশু।
শিশু! চিৎকার করে বলল নরি। ফিরিয়ে নাও বলছি! ফিরিয়ে নাও কথাটা!
আসলে, বোঝানোর চেষ্টা করল কিশোর, তুমি আমাদের সঙ্গে এলে কাজের চেয়ে বাধাই সৃষ্টি করবে বেশি, নিশ্চয় বুঝতে পারছ।
রাগে গাল ফুলিয়ে ফেলল নরি। আমি, আমি তোমাদের সবাইকে দেখিয়ে দেব দাঁড়াও…! বলতে বলতে ছুটে বেরিয়ে গেল সে।
বাইরে বেরিয়ে সাইকেলে চাপল গোয়েন্দারা। পকেটে চাপড় দিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিল কিশোর যে, ওয়াকিটকি আছে! বলল, চল।
রাস্তায় পড়ে, বাঁয়ে মোড় নিল ওরা, মুখ ঘোড়াল কাউন্টি পার্কের দিকে। জায়গাটা শহরের বাইরে। পথের ডানে গাছপালায় ছাওয়া প্রায় বুনো এলাকা। খানিক দূরে একটা বড় শপিং সেন্টার। বাঁয়ে গড়ে উঠেছে বোটানিক্যাল গার্ডেন, সুন্দর, দুর্লভ অনেক গাছও রয়েছে ওখানে। বাগানের পেছনে পাহাড়। কারমলের বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাগানের ভেতর দিয়ে একেবেঁকে চলে গেছে একটা পথ, উঠে গেছে পাহাড়ী আবাসিক এলাকায়।
পার্কে ঢুকে পড়ল তিন গোয়েন্দা। জোরে জোরে প্যাডাল ঘুরিয়ে উঠে চলল পাহাড়ী পথ বেয়ে। পেছনে একটা গাড়ি মোড় নেয়ার শব্দ হল, তারপর এগিয়ে। আসতে লাগল। পেছনে তাকিয়ে অস্ফুট শব্দ করে উঠল মুসা। গাড়িটা সোজা এগিয়ে আসছে, থামার বা পাশ কাটানোর কোন লক্ষণ নেই।