খাইছে! চেঁচিয়ে উঠল মুসা। সত্যিই তো। এর মানে তো জানি না।
মিটিমিটি হাসল কিশোর। এটার মানে সব বইতেই পেয়েছি। সহজ। দণ্ড পাওয়া সব অপরাধীই জানে…।
অপরাধী? চোখ বড় বড় হয়ে গেল রবিনের। বুঝেছি! স্টপার দিয়ে হবে কপার! কপ, অর্থাৎ পুলিশ!
ঠিক, বলল কিশোর। বুড়ো কারমলের বাড়ির কাছে গিয়ে একজন পুলিশ খুঁজব।। চল, চল, দেরি করছি কেন তাহলে? তর সইছে না আর মুসার।
সমস্ত নোট গুছিয়ে নিতে লাগল কিশোর। ওয়াকিটকি নিতে বলল সহকারীদের। বলা যায় না, দরকার হয়েও যেতে পারে।
সবে গিয়ে বেরোনোর জন্যে ট্র্যাপোর তুলেছে মুসা, এই সময় বাজল টেলিফোন। কিশোর ধরল। তিন গোয়েন্দা বলছি। সরি, এখন কথা বলার সময় নেই, বাইরে বেরোচ্ছি।
স্পীকারে ভেসে এল ভোতা একটা কণ্ঠ। না বেরোলেই ভাল করবে। সাবধান। অন্যের ব্যাপারে নাক না গলানোর পরামর্শ দিচ্ছি।
খুট করে কেটে গেল লাইন। তারপর নীরবতা। ঢোক গিলল রবিন। মহিলার গলা, কিশোর, তাই না? ঠিক বুঝলাম না। তবে মহিলাই হবে, কথায় ব্রিটিশ টান। জেনি এজটার?
তা কি করে হবে? মুসা বলল। ওই বেটির সঙ্গে কথাই হয়নি আমাদের। আমাদের ফোন নাম্বার পেল কিভাবে? কারমলরা নিশ্চয় বলেনি।
জেনি নাহলে আর কে?: চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল কিশোর। আমাদের অচেনা কেউ? অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছে?
এলসা কারমল হয়ত বলতে পারবে, আশা করল রবিন।
অস্বস্তিভরে মাথা ঝাঁকাল অন্য দুজন।
বাইরে বেরিয়ে সাইকেলে চাপল ওরা। গেট দিয়ে বেরোনোর সময় একটা লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল রাস্তার ওপাশের একটা বড় ঝোপের ধারে। বিশালদেহী। গলায় লাল টাই, হাসছে মনে হল। তারপর হঠাৎ উধাও হয়ে গেল। যেন ভোলবাজি, এই ছিল এই নেই। পরস্পরের দিকে তাকাল ছেলেরা।
স-সত্যিই ছিল? ভূতের ভয়ে চোখ বড় বড় হয়ে গেছে মুসার। আমাদের ওপর নজর রাখছিল? রবিনের প্রশ্ন।
হয়ত, বলল কিশোর। না-ও হতে পারে। সাধারণ কেউ, হয়ত বেড়াতে বেরিয়েছে।
তাহলে গেল কোথায়? মুসা বলল।
গেছে ওদিকেই কোথাও। রোদ বেশি, ছায়াও বেশি। ছায়ায় হারিয়ে গেছে। বোধহয়। রাস্তার সামনে পেছনে দুদিকেই তাকাল। কেউ নেই। এস। ধাঁধার সমাধান করে রতগুলো বের করতে হবে আমাদের।
তা তো নিশ্চয়, মাথা দুলিয়ে বলল মুসা। তবে ডজনখানেক বটল অ্যাণ্ড স্টপার আমাদেরকে ঘিরে রাখলে এমন নিরাপদ বোধ করতাম আরকি।
হেসে উঠল রবিন আর কিশোর। কিন্তু অস্বস্তি তাড়াতে পারল না।
৫
আগের দিনের চেয়ে বিচিত্র দৃশ্য কারমলের বাড়িতে। পুলিশের লোক দাঁড়িয়ে আছে হাত গুটিয়ে, কিছুই করার নেই ওদের। জিনিসপত্র ছড়াচ্ছে, লাথি মেরে বোতল ভাঙছে রত্নশিকারিরা। রেগে গেছে। যেন বুঝতে পারছে ঠকানো হয়েছে ওদেরকে।
কটেজের লিভিংরুমে ঢুকল তিন গোয়েন্দা। ওদের জন্যে নরিকে ফলের রস আনতে বলল এলসা। ওদের দিকে চেয়ে হাসল রস উড।
বোকা বনে তো, উকিল বলল। সবাই বনেছে। যা রাগা রেগেছে না ওরা। – এমন ভাব দেখাচ্ছে যেন আমরা ওদের পাওনা জিনিস কেড়ে নিয়েছি।
মুসা বলে ফেলল, কিশোর বোকা বনেনি।
বলেছিলাম না। চেঁচিয়ে উঠল নরি, ফিরে এসেছে। বলেছিলাম, বুঝে ফেলবে।
পাথরগুলো কোথায়, জেনেছ? উড জিজ্ঞেস করল।
না, জবাব দিল কিশোর। তবে ধাঁধার সমাধানের চাবিকাঠি বোধহয় পেয়েছি। খানিকটার সমাধান করেও ফেলেছি। মিসেস কামল, বিশেষ কোন পুলিশম্যানকে কি চিনতেন আপনার শ্বশুর?
পুলিশ, মাথা খারাপ। পুলিশকে দুচোখে দেখতে পারত না।
পুলিশ? উড বলল, কেন, বোতল, বিলাবং আর নাশপাতি গাছের সঙ্গে পুলিশ খাপ খাচ্ছে নাকি?
ফলের রস খেতে খেতে রাইমিং ম্যাঙের ব্যাপারটা জানাল কিশোর।
এরকম আশ্চর্য কথা কখনও শুনিনি, উকিল বলল। এলসা, তুমি শুনেছ?
। আমি অস্ট্রেলিয়ানও নই, ইংলিশও নই, এলসা বলল। তবে জেনি আর মাইক জানতে পারে, কারণ ওরা ইংরেজ।
সন্দেহ আছে, বলল কিশোর। ককনিদের সঙ্গে ওদের সম্পর্ক থাকার কথা নয়।
আগ্রহের সঙ্গে বলল নরি, মিস্টার সান আর দাদা মাঝে মাঝেই অদ্ভুত ভাষায় কথা বলত। কিশোর, সমাধান করে ফেলছি আমরা, তাই না?
তাই তো মনে হয়, বলে নকলটা বের করে মেলল কিশোর। দেখি আলোচনা করে। প্রথমে, হোয়্যার দ্য ওয়াইল্ড ডগস লিভস, দ্য বটল অ্যান্ড স্টপার; শোজ দ্য ওয়ে টু দ্য বিলাবং হোয়্যার দ্য ওয়াইল্ড ডগস লিভস রাইমিং স্ল্যাং নয়। এটা বোঝায় কারমলের বাড়ি। বই বলছে, বটল অ্যান্ড স্টপার মানে কপার, অর্থাৎ পুলিশ। বিলাবঙের মানে পুকুর কিংবা ডোবা কিংবা ঝর্না। তারমানে বলা হয়েছে, এখানে এসে একজন পুলিশম্যানকে খুঁজে বের করতে যে একটা বিশেষ জলাশয় চেনে।
চেঁচিয়ে বলল উকিল, সেই পুলিশম্যানকে নিশ্চয় চেনার কথা তোমার!
কিন্তু চিনি না। তুমিও জানো পুলিশ দেখতে পারত না কারমল।
আছে নিশ্চয় একজন, কিশোর বলল। থাক, সেটা পরে দেখা যাবে। পরের ধাঁধাটা দেখা যাক এবার। অ্যাবাভ দ্য অ্যাপলস অ্যাণ্ড পেয়ারস অল অ্যালোন; দ্য লেডি ফ্রম ব্রিস্টল রাইডস ফ্রম আ ফ্রেণ্ড। অ্যাপল অ্যাণ্ড পেয়ারস হল গিয়ে সিঁড়ি। তবে লেডি ফ্রম ব্রিস্টলের মানে কি জানি না আমরা এখনও। আর রাইডস ফ্রম আ ফ্রেণ্ডও রাইম মনে হচ্ছে না। এটা অন্য কোন ধরনের কোড।
তারমানে দাঁড়াল, রবিন বলল, বিশেষ জলাশয়টার কাছে কোন সিঁড়ি পাব আমরা। এবং তার ওপরে ব্রিস্টলের মহিলা কোন একটা সূত্র দেবে একজন বন্ধুকে।