শয়তানি হাসি ফুটল উডের ঠোঁটে। কিন্তু জানতে তো পারছে না। রত্নগুলোর কথা জানো শুধু তোমরা তিনজন, তোমরা তো গিয়ে বলতে পারছ না।
আমরা হয়ত পারব না, কিশোর বলল। কিন্তু তিনি জেনে যাবেনই। তাই, নরি? জলদি গিয়ে চীফকে জানাও যা যা শুনেছ।
কিশোরের দিকে তাকিয়ে থেকেই হো হো করে হেসে উঠল উড। মাথা নাড়ল। পুরানো কৌশল, কিশোর ওতে পা দিচ্ছি না আমি।
নরি, জলদি কর! মুসা তাগাদা দিল। ভ্রূকুটি করল উড। চুপ! ঘুরছি না আমি।
আহ, দাঁড়িয়ে আছ কেন? আতঙ্ক জাগল কিশোরের কণ্ঠে। জলদি কর, ছেলে, দৌড়ও!
কিশোরের কণ্ঠস্বর উডকে অবাক করল। সরু হয়ে এল চোখের পাতা। তারপর কানে এল পেছনের শব্দ। ঘুরল অবশেষে। তবে দেরি করে ফেলেছে। প্যাসেজে ছুটতে শুরু করেছে ততক্ষণে নরি।
যাক, পেরেছে! খুশি হয়ে বলল মুসা।
প্যাসেজের দিকে তাকিয়ে গাল দিয়ে উঠল উড। তারপর ধীরে ধীরে ফিরল আবার তিন গোয়েন্দার দিকে।
লোভ আপনার সর্বনাশ করে দিয়েছে, মিস্টার উড, কিশোর বলল। সবই, খোয়ালেন। আমাদের মুখ বন্ধ করে দিলেও এখন আর লাভ হচ্ছে না আপনার।
মাথা ঝাঁকাল উকিল। হ্যাঁ, খুব চালাকির সঙ্গে করেছ কাজটা। বোকা বানাতে চেয়েছিলে আমাকে, বানিয়েছ। এমন কাঁচা ভাবে কথা বলার চেষ্টা করেছ, আমি বুঝতেই পারিনি সত্যি সত্যি নরির সঙ্গে বলেছ। যাকগে, যা হবার হয়েছে, কি আর করা।
তারমানে এখন আর আমরা আপনার জন্যে বিপদের কারণ নই।
না। তবে এখন আমাকে সাহায্য করতে যাচ্ছ তোমরা। এ-ধরনের পরিস্থিতি ঘটলে কি করব, আগেই ভেবে রেখেছি আমি। মুসা, বাথরুম থেকে রত্নগুলো বের করে আন! মুসার পেট বরাবর পিস্তল ধরল উড। কোন চালাকির চেষ্টা নয়। এখন আমি বেপরোয়া।
ঢোক গিলল মুসা। যা করতে বলা হল করল। বাথরুম থেকে বটুয়াটা বের করে এনে উডের হাতে তুলে দিল।
ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল উড। পালিয়েই যেতে হচ্ছে শেষ পর্যন্ত। আর কিছু করার নেই। যাকগে, অসুবিধে নেই। মেকসিকো অনেক নিরাপদ জায়গা। আর এসব দামি জিনিস কেনার লোক অনেক আছে ওখানে। পিস্তল নাড়ল সে। হাঁটো। আমার সামনে থাকবে।
উডের নির্দেশ মত ম্লান আলোকিত প্যাসেজ ধরে এগিয়ে চলল ছেলেরা। চীফ আর তার লোকজনের গলা কানে আসছে, খানিক আগে যে কেবিনটায় ছিল ওরা সেদিক থেকে। কান পেতে শুনল উড। তারপর একটা সিঁড়ি দিয়ে ছেলেদেরকে নামিয়ে নিয়ে এল জাহাজের একেবারে পেটের ভেতর। জরুরী হাঁকডাক শোনা যাচ্ছে ওপরে। ছেলেদের না পেয়ে নানারকম নির্দেশ দিতে আরম্ভ করেছেন ফ্লেচার।
একটা প্যাসেজকে আড়াআড়ি কেটে সি-ডেকে চলে গেছে আরেকটা প্যাসেজ। রবিন আর কিশোরকে ইশারা করল উড, তোমরা দুজন ওদিকে। যাও?
কিন্তু… প্রতিবাদ করতে গিয়ে বাধা পেল রবিন। ধমকে উঠল উড, যা বলছি কর! মুসা যাচ্ছে আমার সাথে। বন্ধুকে জীবিত দেখতে চাইলে সোজা করিডর ধরে চলে যাও। পেছনে তাকাবে না।
নির্দেশ মানতে বাধ্য হল রবিন আর কিশোর। প্যাসেজের শেষ মাথায় পৌঁছার আগে ফিরে তাকানোর সাহস করল না।
মুসাকে নিয়ে চলে গেছে উড।
চেঁচাতে শুরু করল দুই কিশোর। প্যাসেজ ধরে ছুট চীফ আর তার দলের কাছে। অবশেষে তাদের ডাক শুনতে পেলেন চীফ। বি-ডেকের একটা খোলা জায়গায় মিলিত হল ওরা।
উড় কোথায়? জানতে চাইলেন চীফ।
কি হয়েছে, দ্রুত তাকে জানাল কিশোর আর রবিন।
একবার মেকসিকোতে চলে গেলে আর তাকে ধরা যাবে না, চীফ বললেন। তবে জাহাজ থেকেই বেরোতে দিচ্ছি না। গ্যাংপ্ল্যাঙ্কে পাহারা দিচ্ছে পুলিশ।
ভুরু কোঁচকাল কিশোর। জাহাজ থেকে নামার কি ওই একটাই পথ?
আমি তো তা-ই জানি।
চীফ! হঠাৎ সতর্ক হয়ে গেলেন ক্যাপ্টেন। আরেকটা পথ আছে! পেছনে, মাল খালাস হত যেদিক দিয়ে।
খোলা নাকি?
থাকার তো কথা নয়। কিন্তু…
জলদি করুন, স্যার, চেঁচিয়ে উঠল কিশোর। ওদিকেই যাবে!
দলটাকে নিয়ে সেদিকে ছুটলেন ক্যাপ্টেন। দেখা গেল, তালা ভেঙে দরজা খোলা হয়েছে। ওটা পেরোতেই চোখে পড়ল, মাল তোলা আর নামানোর সরু গ্যাংপ্যাক ধরে নেমে যাচ্ছে উড। মাথায় পিস্তল ধরে আগে আগে চলতে বাধ্য করছে মুসাকে।
শব্দ শুনে ফিরে তাকাল উকিল। ধমক দিয়ে বলল, খবরদার, কেউ এগোবে না!
উড চীফ বললেন। পালাতে পারবে না! অযথা…
ছেলেটাকে মারতে না চাইলে সরুন…।
শেষ হল না কথা। মুহূর্তের জন্যে অমনোযোগী হয়েছিল উড, সুযোগটার সদ্ব্যবহার করল মুসা। ঝপ করে বসে পড়ে উডের হাঁটুর পেছনে জড়িয়ে ধরে মারল হ্যাঁচকা টান। চিত করে ফেলল তাকে গ্যাং্যাঙ্কে। হাত থেকে খসে পড়ল বটুয়া আর পিস্তল। ঢাল পথে স্থির থাকতে পারল না উড, হাত পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে গড়িয়ে পড়তে লাগল গ্যাংপ্যাঙ্ক ধরে।।
তাকে ধরে থামাতে গিয়ে মুসাও গড়াতে শুরু করল। তবে উকিলের পা ছাড়ল। উডের আরেকটা পা রেলিঙের ফাঁকে ঢুকে আটকে গেল, মট করে শব্দ হল হাড় ভাঙার। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠল উড, বাবারে গেছি! মরে গেছিরে বাবা! আমার পা…।
হুড়মুড় করে নেমে এল কয়েকজন পুলিশ। দুজনকে ধরে তুলল। মুসা হাঁপাচ্ছে জোরে জোরে। উকিল সোজা থাকতে পারছে না একপায়ে ভর দিয়ে,
আরেকটা পা সোজাই করতে পারছে না। সত্যিই ভেঙেছে।
যাক, ছেড়ে দিলেও এখন বেশ কিছুদিন আর চুরি করতে পারবে না, চীফ বললেন। উচিত শিক্ষা হয়েছে। কিশোরের দিকে ফিরে বললেন, ওভাবে ওকে ধরার চেষ্টা করা মোটেই উচিত হয়নি তোমার। ভাগ্যিস নরি গিয়েছিল, নইলে তো মরেছিলে। তোমার সন্দেহের কথা আমাকে বললেই পারতে।