এস, কিশোর বলল, পিছু নিতে হবে। শব্দ করবে না, খবরদার।
বি-ডেকের প্যাসেজের একটা মোড়ে এসে থেমে মুখ বের করে উঁকি দিল ওরা। স্নান আলোয় দেখল দ্রুত চলে যাচ্ছে লোকটা। মুহূর্তে ঢুকে গেল পাশের আরেকটা সরু প্যাসেজে। প্রায় দৌড়ে এসে ওই প্যাসেজের মাথায় দাঁড়িয়ে ছেলেরা দেখল, একটা কেবিনে ঢুকে যাচ্ছে সে।
কেবিনের বাথরুমে ঢুকতে দেখা গেল লোকটাকে। যখন আবার বেরিয়ে এল, তার হাতে বটুয়াটা নেই। রবিন আর মুসার কাঁধে টোকা দিয়ে ওদের দৃষ্টি তার দিকে ফেরাল কিশোর। চোখের ইশারায় পাশের আরেকটা কেবিন দেখাল।
কেবিনটাতে ঢুকে পড়ল ওরা। সময়মত ঢুকেছে। লোকটা বেরিয়ে প্যাসেজ ধরে হেঁটে গিয়ে মূল প্যাসেজে উঠল। পিছু নিতে চাইল আবার মুসা, তাকে থামাল কিশোর। না, চলে যাক। ব্যাগটা খুঁজে বের করব, চলো।
প্রথম কেবিনটায় ঢুকে বাথরুম খুলল কিশোর। পকেট থেকে পেন্সিল টর্চ বের করে আলো ফেলল ভেতরে। দেয়ালের ওপর দিকে হাওয়া বেরোনোর পথ আছে, ভেন্টিলেটর, তাতে দেখা গেল বটুয়ার একটা কোণ বেরিয়ে আছে। চোখ চকচক করে উঠল কিশোরের, কিন্তু বটুয়াটা নিল না, বাথরুমের দরজা বন্ধ করে দিল আবার।
নিশ্চয় পাথরগুলো আছে, মুসা বলল। নেবে না?
চোরটার পিছু নেবে না? বলল রবিন। চোরই তো বলা যায় তাকে, নাকি?
নিঃসন্দেহে, জবাব দিল কিশোর। তবে বেশিদূর যায়নি। আর ওটা ছোঁয়া আমাদের উচিত হবে না। চোরটা যে ওটা ধরেছিল প্রমাণ নষ্ট হয়ে যাবে তাহলে।
ফাঁদ পেতেছিলে তুমি, তাই না, কিশোর? বুঝে ফেলল রবিন। তুমি জানতে, ম্যাকবেথ রুম থেকে পাথরগুলো চুরি করবে কেউ। কিভাবে জানলে?
কারণ আমি বুঝতে পেরেছি, নকল পাথরগুলোর সঙ্গে যে উইলটা পাওয়া গেছে ওটাও মেকি। কারমল কখনই ওটা ওখানে রাখেনি। তারমানে এজটারদের আগেই কেউ পাথরগুলো পেয়েছিল, আবার রেখে দিয়েছে ওখানে।
রেখে দিয়েছে? অবাক হল মুসা। কেন?
যাতে আমরা সন্দেহ না করি। চোরটাকে আসল পাথরের সন্ধান করে দিই। তখনই আমি বুঝতে পেরেছি, সব সময় আমাদের ওপর যে চোখ রেখেছে, বিগ আর হিউগের কাছে যে টাকা ধারে, ওই লোকেরই কাজ এটা। আমাদের ওপর তখনও চোখ রেখেছে। কাজেই ফাঁদ পাতলাম।
সাত নাম্বার ধাঁধার কথা জোরে জোরে বললাম, যাতে সে শুনতে পায়। তারপর মানে না বোঝার ভান করলাম। ম্যাকবেথ রুমের কথা চোরটার অজানা থাকার কথা নয়। তাছাড়া নকশাতেও রয়েছে ওটা। একটা নকশা নিয়ে চোখ বুলিয়ে নিলেই হল। বুঝেছি, আমরা জাহাজ থেকে নেমে গেছি বুঝলেই গিয়ে রহগুলো খুঁজে বের করবে সে।
এবং তা-ই করেছে!
হ্যাঁ, হাসল কিশোর। এখন গিয়ে চীফকে পাথরগুলোর কথা জানানো দরকার। ব্যাগ, আর ব্যাগের ওপরের ছাপ…
সেই সুযোগ আর পাবে না তোমরা!
চরকির মত পাক খেয়ে ঘুরল তিনজনে। খোলা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে উকিল রস উড। হাতে উদ্যত পিস্তল।
২১
ফিরে এসে কাজটা খুব খারাপ করে ফেলেছি, তাই না? গম্ভীর হয়ে বলল উড।
গোড়া থেকেই ওগুলো চুরির মতলব ছিল আপনার! গরম হয়ে বলল রবিন।
এগিয়ে এল উড। রাগত হাসল। টাকা আমার ভীষণ দরকার, অথচ ওই বুড়ো ডাকাতটা তার খেপাটে উইল বানিয়ে আমাকে আটকে দিল। আমি.এলসাকে বিয়ে করি, এটা তার মোটেও পছন্দ ছিল না। তার ভয় ছিল, এলসাকে বিয়ে করে আমি সব টাকা মেরে দেব।
আমাদেরকে ব্যবহার করেছেন আপনি, ধীরে ধীরে বলল কিশোর। সে জন্যেই বয়স্ক কোন গোয়েন্দা সংস্থাকে ভাড়া করার চেয়ে আমাদেরকে করা ভাল মনে করেছেন। ভেবেছেন, কম বয়েসীদের ফাঁকি দেয়া সহজ।
ভুলই ভেবেছি, স্বীকার করল উড। অনেক বয়স্ক লোকের চেয়ে অনেক বেশি চালাক তোমরা।
পিস্তল নাচাল সে। ভয় পেলেও সেটা উডকে বুঝতে দিল না ছেলেরা। দাঁড়িয়ে রইল যেখানে ছিল।
কেউ চুরি করার আগেই কেন ওগুলো হাতিয়ে নিলেন, বুঝতে পারছি, রবিন বলল। কিন্তু আপনি চুরি করতে গেলেন কেন? মিস কারমলকে বিয়ে করলে এমনিতেই তো মালিক হয়ে যেতেন।
একেবারে নিশ্চিত হয়ে নিলেন, না? যোগ করল কিশোর। দলিলের একটা নকল কপিও রেখে দিয়েছেন কাঁচের টুকরোগুলোর সঙ্গে।
চালাক ছেলে! উড বলল। পাথরগুলোর মালিক হয়ত হতে পারতাম এলসাকে বিয়ে করে, তবে আংশিক। আর আংশিক জিনিসে আমার চলবে না। তাছাড়া বিক্রি করতে গেলে তার নানারকম প্রশ্নের জবাব দিতে হত। কে যায় অত ঝামেলা করতে।
জিনিসগুলো কেন আপনার দরকার জানি আমরা, মুসা বলল।
কারণ জুয়া খেলে হেরেছেন, টাকা পায় আপনার কাছে হিউগ আর বিগ, তিক্তকণ্ঠে বলল রবিন। টাকার জন্যে চাপ দিচ্ছে এখন।
আর এলসা যদি শোনেন আপনি জুয়াড়ী, অনেক টাকা ধার রয়েছে আপনার, কিশোর বলল, আপনার ওপরে খারাপ ধারণা হয়ে যাবে তার।
ও, অনেক কিছু জানো তোমরা। বেশি জানো, কপাল খারাপ আরকি তোমাদের, উড বলল। তবে বলেছ ঠিকই, ধারণা খারাপ হয়ে যাবে, বিশ্বাসও রাখতে পারবে না আর। বড় কথা হল, সবগুলোই যখন মেরে দিতে পারি, কোনরকম ঝামেলা ছাড়া, কেন ভাগাভাগি করতে যাব নরি আর এলসার সঙ্গে? কেউ কিছু জানবে না এখন। পাথরও হজম করব, এলসাকে বিয়ে করে আরামে ভোগ করব কারমলের সয়সম্পত্তি।
ছেলেদের দিকে পিস্তল উদ্যত রেখেই জোরে জোরে হাসল উড। তার কাঁধের ওপর দিয়ে কেবিনের দরজার দিকে তাকাল কিশোর। বলল, না, তা পারছেন না। মিস করমল যখনই জানবেন, তাঁকে ঠকাতে চেয়েছেন আপনি, কখনই আর বিয়ে করবেন না আপনাকে।