ওগুলোর নিচে একটা খাম রয়েছে। সেটা থেকে বেরোেল একটা চিঠি। তাতে লেখাঃ
সমস্ত আগ্রহী গুপ্তধন শিকারিদের বলছি, তোমাদের বোঝা উচিত ছিল, একজন সুস্থ মানুষ তার টাকা খুব ভেবেচিন্তে খরচ করে। আমিও করেছি। একদল বোকা গাধা আমার গুপ্তধনের পেছনে কিভাবে পাগলের মত ছুটছে কল্পনা করে হাসি ঠেকিয়ে রাখতে পারছি না আমি। বোকাদের জন্যেই রেখে গেলাম এই কাচের টুকরোগুলো, বোকামির পুরস্কার।–ডেন।
স্তব্ধ হয়ে গেছে সবাই। মানে…এ-সবই…, কথা আটকে যাচ্ছে নরির, ফাঁকিবাজি!
মিনমিন করে বলল কিশোর, অথচ আমি শিওর ছিলাম… কেউ তাকে বোকা গাধা বললে খুব খারাপ লাগে তার।
আক্কেল হয়েছে, মুসা বলল, কয়রা আরও লোভ।
নিশ্চয় আরও আছে! জেনির দিক ঘুরল উড। সিলিঙে আর কি পেয়েছ।
আর? রাগ করে বলল মাইক, অনেকগুলো মণিমুক্তো। বস্তা বস্তা পড়ে আছে, নিয়ে এসোগে।
নিশ্চয় কিছু আছে আরও, উকিল বলল। গিয়ে দেখা দরকার।
দল বেঁধে আবার নিচের ডেকে চলল সবাই। জেনি আর মাইকও চলল পুলিশ প্রহরায়। কেবিনে ঢুকতেই চোখে পড়ল ছাতের কালো ফোকর। পাশে ইলেকট্রিকের হেঁড়া তার ঝুলছে। সেগুলো সাবধানে এড়িয়ে খোপের ভেতরে হাত দিল মুসা। হাত ঘুরিয়ে চারপাশে দেখল, মাথা নাড়তে গিয়েও থেমে গেল। দুআঙুলে ধরে বের করে আনল একটা খাম।
তার হাত থেকে ছোঁ মেরে খামটা নিয়ে খুলল উড। চেঁচিয়ে বলল, এটাই আসল উইল! যেটাতে নরি আর এলসাকে সব সম্পত্তি দিয়ে গেছে কারমল। হেসে উঠল সে।
অসম্ভব! কিশোর বলল।
কেন? তীক্ষ্ণ হল উডের কণ্ঠ।
আপনার অফিস থেকে যেটা চুরি গেছে, সেটা যদি এটা হয়, তাহলে এখানে লুকাল এনে কে?
হয়ত কারমলই। ও চেয়েছিল এটা যাতে কেউ নষ্ট করতে না পারে, উকিল বলল। কারমল জানত, উইলটা নষ্ট করে তার সম্পত্তি হাত করার চেষ্টা করবে এজটাররা! পরাজিত ভাইবোনের দিকে খুশি খুশি দৃষ্টিতে তাকাল সে।
কিন্তু, যুক্তি দেখাল কিশোর, উইলটা না পেলেও তো নরিই পাবে সব সম্পত্তি। এজটাররা নয়।
পাগল ছিল তো, ভাবনার ঠিকঠিকানা ছিল না। যা মনে হয়েছে করেছে, ত্যাগ করল উড। যাই হোক, এটা পাওয়ায় ভাল হয়েছে। সম্পত্তি পেতে আর। কোন ঝামেলা হবে না এলসা আর নরির।
হ্যাঁ, চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল কিশোর। কিন্তু এভাবে ফাঁকি দিল…
আমি বিশ্বাস করি না! চেঁচিয়ে উঠল নরি। চিঠিটা নকল, দাদা লেখেনি! আমি বিশ্বাস করি না!
২০
শয়তান! বিড়বিড় করল জেনি। আস্ত শয়তান! শয়তানের আবার রসিকতা!
তার দিকে ফিরে কঠোর গলায় চীফ বললেন, আপনি আর আপনার ভাইয়ের জন্যে এটা শয়তানী হতে পারে, ম্যাডাম, তবে অনেকের জন্যে সত্যি রসিকতা। ক্যাপ্টেন, শো-এর সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও এদের জাহাজে থাকার পারমিশন আছে? কিংবা জাহাজের ক্ষতি করার অধিকার?
নিশ্চয় না! কড়া গলায় বললেন ক্যাপ্টেন। তার ছিঁড়েছে, আরও ক্ষতি করেছে।
তারমানে ওরা অপরাধী। জোরাল প্রতিবাদ জানাল মাইক, আপনি আমাদেরকে হয়রানি…
অপরাধ তো আরও আছে আপনাদের, মিস্টার এজটার, বাধা দিয়ে বলল কিশোর। লাইফবোটটা খুলে দিয়ে আরেকটু হলেই প্রায় মেরে ফেলেছিলেন।
গম্ভীর হয়ে বললেন চীফ, খুব খারাপ করেছে। মস্ত অপরাধ।
ইডিয়ট! মাইকের দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলল জেনি, মানা করেছিলাম তখনই, শোননি। এখন দেখ কি বিপদে পড়েছি!
চুপ! ধমক লাগাল মাইক। বোকা ছেলেটা বলল, আর ওমনি…
অকে কথা শেষ করতে দিল না জেনি, চীফের দিকে চেয়ে বলল, সব ওর বুদ্ধিতে হয়েছে, বুঝেছেন। লাইফবোট, চুরি, যত যা ঘটেছে সব। সব ওর পাগলামী বুদ্ধিতে।
হেসে ফেলল কিশোর। ভাইয়ের বিরুদ্ধেই শেষে? হাহ হাহ। আর কি শয়তানি করেছেন? সকালে নরিকেও ভ্যানে আটকেছিলেন আপনারাই।
কীই! পেঁচার তীক্ষ্ণ চিক্কার রেরোল জেনির কণ্ঠে। আমরা কক্ষনও…
নিয়ে যাও, বিরক্ত হয়ে সহকারীদের আদেশ দিলেন চীফ।
দুজন পুলিশ ধরল ভাইবোনকে। ঝাড়া দিয়ে হাত দুটিয়ে নিয়ে বোনকে ঘুসি মারার চেষ্টা করল মাইক। কিন্তু ধরে রাখা হল তাকে।
কাছে এসেই দেখ না খালি, কোলাব্যাঙ! পেঁচার মতই বড় বড় নখ দেখাল। জেনি। নাগালে পেলেই খামচি মারবে।
চুপ, পেঁচি কোথাকার! ঘুসি মেরে একেবারে নাক ভোঁতা করে দেব!
ভাইবোনের ঝগড়া দেখে হাসতে শুরু করল মুসা। ওদের সরিয়ে নিয়ে গেল পুলিশেরা। আরও কিছুক্ষণ প্যাসেজে শোনা গেল ওদের উত্তেজিত চিৎকার, ঝগড়া। মাথা নাড়তে নাড়তে মুচকি হাসলেন চীফ। বললেন, চলো, যাই।
ক্যাপ্টেন আর চীফ আগে আগে বেরোলেন। পেছনে নরি আর উড। উইলটা উডের হাতে। মুসা আর রবিনও যাবার জন্যে, পা বাড়াল, ইশারায় নিষেধ করল কিশোর।
অবাক হল দুই সহকারী। মুসা বলল, কি ব্যাপার?
জবাব না দিয়ে ডেকের প্লেনটা আবার দেখতে লাগল কিশোর। সন্তুষ্ট হয়ে বিচিত্র একটা শব্দ করল মুখ দিয়ে, তারপর বলল, আমার মনে হয় না এটা রসিকতা। এটা ওর শেষ চাতুরি।
কিন্তু আর কোন ধাঁধা নেই, মুসা বলল। শেষটারও সমাধান করে ফেলেছি আমরা।
না। আরেকটা ধাঁধা রয়েছে। খুব চালাকি করে লুকিয়ে রাখা হয়েছে ওটা। নকলটা বের করল কিশোর। এমনভাবে লিখেছে, যেন এটা ধাঁধার অংশ নয়, একটা কথার কথাঃ হুড হ্যাভ থট দ্য ওল্ড ম্যান হ্যাড সো মাচ মানি ইন হিম? রোল দ্য ডাইস অ্যাণ্ড দ্য সোয়াগ ইজ ইওরস!