শুঁটকির কাজ! জ্বলে উঠল রবিন।
আমার মনে হয় না, কিশোর বলল। মারা যেতে পারতাম আমরা। তারমানে খুন। শুঁটকি এতটা এগোবে বিশ্বাস হয় না।
চল না তাহলে গিয়ে দেখি কে! বলেই গ্যাংওয়ে ধরে উঠতে শুরু করল নরি।
থাম! হাঁক দিয়ে বললেন ক্যাপ্টেন। সরি, বয়েজ, জাহাজে এখন আর উঠতে দিতে পারি না তোমাদেরকে। সাঙ্ঘাতিক, বিপজ্জনক। কাজটা এখন পুলিশের এক্তিয়ারে চলে গেল।
হ্যাঁ, স্যার, শান্তকণ্ঠে বলল কিশোর, আপনি ঠিকই বলেছেন। পুলিশ চীফ ইয়ান ফ্লেচারকে ফোন করুন। রবিন, তাঁকে বুঝিয়ে বলবে কি হয়েছে। মুসা, তুমি এখানেই থাক নরিকে নিয়ে, পুলিশ না আসা পর্যন্ত।
গোয়েন্দাপ্রধানের মতলব বুঝতে না পেরে তার দিকে তাকিয়ে রইল রবিন আর মুসা।
তুমি কি করবে, কিশোর? রবিন-জিজ্ঞেস করল। আমি ওল্ড নেডকে খুঁজে বের করতে যাচ্ছি। আশা করি পারব। এক ঘন্টার মধ্যে যদি না ফিরি চীফকে বলবে জাহাজে খোঁজা শুরু করতে।
কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দৌড় দিল কিশোর জুটে বেরিয়ে গেল গেটের বাইরে, সাইকেলে চেপে চলে গেল।
১৯
এক ঘন্টা পরে। ঘাটে ফ্লাডলাইটের উজ্জ্বল আলোর নিচে দাঁড়িয়ে আছে রবিন, মুসা, নরি, সঙ্গে চীফ ইয়ান ফ্লেচার আর ক্যাপ্টেন। পাশে অন্ধকারে মাথা ভুলে রেখেছে বিশাল জাহাজটা। ঘড়ি দেখলেন ক্যাপ্টেন। আটটা প্রায় বাজে, চীফ, বললেন তিনি। এক ঘন্টা হয়ে গেল। আমার মনে হয় আর অপেক্ষা করা ঠিক না।
জাহাজে ইতিমধ্যে কি ক্ষতি হয়ে গেছে কে জানে।
সঠিক বিছানাটা যদি পেয়ে যেত, চীফ বললেন, তাহলে ঝামেলা আর সময় দুটোই বাঁচত।কিশোরের ওপর ভরসা রাখা যায়। দেখি, আরও পনেরো মিনিট অপেক্ষা করে।
সে আসবেই, রবিন আর মুসা একসঙ্গে বলল।
হাসলেন চীফ। আমিও জানি, সে আসবে।
ওই যে! চেঁচিয়ে উঠল নরি। বোধহয় এল!
পায়ের শব্দ ছুটে আসছে। কিশোরের সঙ্গে দেখা করার জন্যে দৌড় দিল রবিন আর মুসা। কয়েক কদম এগিয়েই থেমে গেল। কিশোর নয়, রস উড, গেট পেরিয়ে এগিয়ে এল দলটার কাছে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
আছ এখানেই, নরির দিকে তাকিয়ে বলল উকিল। তোমার মা বলল, টাউন হলে গেছ। ওখানে গিয়ে তোমাদের না দেখে তো ঘাবড়েই গিয়েছিলাম। পুলিশকে। ফোন করলাম। থানা থেকে জানাল, চীফ ফ্লেচার এখানে আছেন।
শেষ প্রশ্নটার জবাব খুঁজছি আমরা এখন, মিস্টার উড, রবিন বলল। কিন্তু
কে জানি জাহাজে উঠে বসে আছে। পাথরগুলো পেয়েই গেল কিনা!
দেরি করছি কেন তাহলে? উডের তর সইছে না।
কিশোরের জন্যে অপেক্ষা করছি, মুসা বলল। সঠিক ঘরটা খুঁজে বের করার বুদ্ধি করেছে। দেরি করছে কেন বুঝতে পারছি না।
যদি ভাগ হয়ে খুঁজতে থাকি আমরা, উড বলল, আমি শিওর, তাহলে…
তাতে অনেক সময় দরকার, বলে উঠল একটা কণ্ঠ। আর ভাগ্য খুব ভাল হওয়া চাই।
কিশোর! চেঁচিয়ে উঠল নরি।
গেট পেরিয়ে এল কিশোর। তাকাল উকিলের দিকে। আপনি এখানে কিভাবে এলেন, স্যার?
তোমাদের খুঁজতে খুঁজতে। যাকগে, এখন ওসব কথা বলে সময় নষ্ট করে – লাভ নেই। কোন ঘরটা, বুঝেছ?
খুশিমনে মাথা ঝাঁকাল কিশোর। কারমল কুইনে করে পাড়ি জমিয়েছিল কিনা বোঝার খুব সহজ একটা উপায় আছে। কোন কেবিনে করে গিয়েছিল, সেটাও জানা যাবে তার সঙ্গে যে গিয়েছিল তাকে জিজ্ঞেস করলে। মাত্র দুজনের যে-কোন একজন হতে পারে, ড্যাম সান, আর ডোরা কেমপার।
জানে? রবিনের প্রশ্ন।
মিসেস কেমপার জানে। কারমলের সঙ্গে একই জাহাজে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছিল তিরিশ বছর আগে। তাকে সাক্ষী বানিয়েছেই কারমল, গুপ্তধন শিকারিদের কাছে তাকে পরিচিত করার জন্যে, যাতে মহিলার সাহায্য নেয়া যায়। যাই হোক, হাসল সে, জবাবটা আমি পেয়েছি।
চলো তাহলে জাহাজে,ক্যাপ্টেন বললেন।
পথ দেখিয়ে মেইন ডেক, অর্থাৎ এ-ডেকে সবাইকে নিয়ে এলেন ক্যাপ্টেন। বিশাল জাহাজটায় মাত্র অল্প কয়েকটা আলো জ্বলছে। আবছা হতে হতে দূরে মিলিয়ে গেছে স্নান আলোকিত প্যাসেজগুলো। এ-ডেকের ওপরের টপডেকগুলো অন্ধকারে দেখা যায় না। গ্যাংওয়ে আর অন্যান্য প্রধান প্রবেশপথগুলোতে পুলিশ পাহারা রেখেছেন চীফ। প্রথম শ্রেণীর যাত্রী-সমাবেশের জায়গাটা মস্ত, বিলাসবহুল। একটা টেবিলে রাখা টুরিস্ট ব্রশিউয়ারের স্তূপ থেকে একটা পুস্তিকা তুলে নিল। কিশোর। ওটাতে ছাপা ডেকের নকশা মন দিয়ে দেখতে লাগল।
কোন ঘরটা, কিশোর? চীফ জিজ্ঞেস করলেন।
এই যে, বাইশ নাম্বার কেবিন, ডি ডেকে। মিসেস কেমপার উঠেছিল পাশের কেবিনটায়, একুশ নাম্বার। শিওর কিনা আমি সন্দেহ প্রকাশ করায় হেসে উঠল। বলল, ওগুলোর কথা জীবনে তুলবে না, কারণ ওগুলো জাহাজের সব চেয়ে জঘন্যতম কেবিন। হতচ্ছাড়া গলুইয়ের ঠিক নিচে, বলেছে মহিলা। তার ধারণা, নিচের দিকে বাংকে ঘুমাত কামল। তবে আমার মনে হয় না ওই বিছানায় পাথরগুলো আছে। নকশাটা পকেটে ভরে ধাঁধার নকলটা বের করল সে। শেষ ধাঁধাটা বলছে, ইন দ্য পশ কুইনস ওল্ড নেড, বি ব্রাইট; অ্যাণ্ড নেচারাল অ্যাণ্ড প্রাইজ ইজ ইওরস। বিছানা প্রসঙ্গে যখন নেচারাল বলছে, আমার দৃঢ় বিশ্বাস বিছানায় শোবার কথা বলা হয়েছে। আর ব্রাইট বলে একটা শব্দ দিয়েই দুটো মানে বুঝিয়েছে। তারমানে মাথা খাটাও এবং উজ্জ্বল কিছু খোঁজ কর।
কিশোরভাই, চেঁচিয়ে উঠল নরি, কি সেটা?