কী? জিজ্ঞেস করল মুসা।
আমাদের কথা জানল কি করে হিউগ আর বিগ? চোখ রাখল কেন দিনের পর দিন? তখন থামানোর চেষ্টা করল না কেন? একবার এমনকি আমাদের সাহায্যও করেছে, এজটারদের গাড়ি খাদে ঠেলে ফেলে। ভাবটা এমন, আমাদের দিয়ে পাথরগুলো বের করিয়ে নিতে চাইছিল। তারপর সময় বুঝে ধরেছে। ঠিক সময়টা কি করে বুঝল? কে বলেছে ওদেরকে? কে চায় ওই পাথর?
এজটাররা? মুসা বলল।
ওরা তো চায়ই। কিন্তু ওরা এসেছে দিন কয়েক আগে, জুয়ায় হেরে হিউগের কাছে অনেক দিন ধরে ঋণী থাকার কথা নয় ওদের।
এমন কেউ, যাকে চিনি না আমরা, রবিন বলল। হতে পারে, আবার ভাবনায় ডুবে গেল কিশোর।
রোদ আসা বন্ধ হয়ে গেল। কমে আসছে বদ্ধ ঘরের আলো। সারা বিকেলটাই আটকে রয়েছে ওরা। অন্য ঘরে নাক ডাকাতে শুরু করেছে বিগ। এইবার বুঝি সত্যিই পরাজিত হল ওরা। এত কষ্ট করে ধাঁধার সমাধান করে দিল, এখন গুপ্তধনগুলো বের করে নেবে অন্য লোক। ওদেরকে ঠকিয়েছে কেউ!
বদ্ধ ঘরের নীরবতায় শুয়ে শুয়ে ওদেরও তন্দ্রা নামল চোখে। কি করারই বা আছে আর?
হঠাৎ ধড়মড়িয়ে উঠে বসল মুসা। কিসের শব্দ!
কান পাতল তিনজনেই। বাড়ি কাঁপিয়ে নাক ডাকাচ্ছে বিগ। কিন্তু সে-শব্দ নয়। টোকার আওয়াজ!
জানালায়! ফিসফিস করে বলল রবিন।
আবার হল টোকার শব্দ। তারপর ফিসফিসিয়ে কথা, তোমরা ওখানে? কিশোর? মুসা?
হ্যাঁ, জানালায় মুখ লাগিয়ে জবাব দিল মুসা।
মৃদু মচমচ করে উঠল জানালা। পাল্লার বাইরে দণ্ড খোলার চেষ্টা করছে কেউ, জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে, বোধহয় উত্তেজনা আর পরিশ্রমে। অবশেষে খুলে গেল পাল্লা। হাঁ হয়ে গেল তিন গোয়েন্দা।
নরি! প্রায় একসঙ্গে বলে উঠল ওরা। তবে কণ্ঠস্বর নামিয়েই বলল।
শশশ! হাসল ছেলেটা। আস্তে। ভালুকটা দরজা জুড়ে চেয়ার ফেলে ঘুমোচ্ছে। যে-কোন সময় জেগে যেতে পারে। তাড়াতাড়ি কর।
সেকথা আর দ্বিতীয়বার বলতে হল না ওদেরকে। জানালা গলে বেরিয়ে পড়ল। সন্ধ্যার ছায়া নামছে তখন। নিঃশব্দে বাড়ির পাশ ঘুরে এসে দ্রুতপায়ে রাস্তার দিকে এগোল ওরা।
কি করে খুঁজে পেলে আমাদের, নরি? কিশোর জানতে চাইল।
রাস্তায় পৌঁছে গেছে ওরা। নরি জানাল, তোমাদেরকে ধরে নিয়ে গেলে দৌড়ে গিয়ে আমি মিস্টার উডকে ফোন করলাম। কিন্তু বাড়িতে কিংবা অফিসে কোথাও পাওয়া গেল না তাকে। আমার মাকে কিংবা তোমাদের বাড়ির লোককে ঘাবড়ে দিতে চাইনি। তবু অনেক ভেবেচিন্তে শেষে তোমার চাচাকে ফোন করতে যাচ্ছিলাম, এই সময় বুদ্ধিটা এল মাথায়।
কি বুদ্ধি? হাঁপাচ্ছে কিশোর, প্রায় দৌড়ে চলছে এখন ওরা।
ভূত-থেকে-ভূতে।
ক্ষণিকের জন্যে দাঁড়িয়ে গেল মুসা। আবার চলতে চলতে বলল, তুমি…তুমি আমাদের ভূত
তোমাদের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার আগেই এর কথা শুনেছি আমি। সুযোগ পেয়েই আর দেরি না করে কাজে লাগলাম। সাময়িক হেডকোয়ার্টার হিসেবে বেছে নিলাম একটা ফোন বুদ। অবশেষে কয়েকটা ছেলে খুঁজে পেল গাড়িটা। –
আশ্চর্য! গাড়িটার নাম্বারও তো জানো না তুমি!
জানি, গর্বের হাসি হাসল নরি। আমাদের বাড়ির সামনে কয়েকবার দেখেছি ওদের। এত বেশি, শেষে সন্দেহ হয়ে গেছে আমার। আজ সকালেই লিখে নিয়েছি ওদের নাম্বারটা। আসলে গোয়েন্দারা…।
কথা শেষ হল না। পেছনে শোনা গেল জোর গর্জন, প্রচণ্ড ধুড়ুম ধুড়ুম।
দৈত্যটা বেরিয়ে পড়েছে! চেঁচিয়ে বলল নরি। দরজার সামনে ময়লা ফেলার টিন বসিয়ে রেখে এসেছিলাম। দৌড় দাও জলদি!
ছুটতে ছুটতে বুক পেরোল ওরা, আরেকটা রাস্তা পেরিয়ে মোড় ঘুরে ছুটে চলল প্রাণপণে।
আরও জোরে! মুখ দিয়ে বাতাস ছাড়তে ছাড়তে বলল রবিন। গাড়ি নিয়ে আসবে।
পারবে না, এতই হাঁপাচ্ছে, ঠিকমত কথা বলতে পারছে না নরি। পকেট থেকে কালো একটা জিনিস বের করে দেখাল। ডিসট্রিবিউটর ক্যাপটা খুলে নিয়ে এসেছি।
থেমে গেল ওরা। রবিন, মুসা আর কিশোর হাসতে শুরু করল পাগলের মত। মনের পর্দায় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে ওরা, গাড়িটা স্টার্ট না নেয়ায় রেগে গিয়ে কি করছে বিগ। পাশ দিয়ে যাবার সময় অবাক চোখে ওদের দিকে তাকাল পথিক, পরোয়াই করল না ওরা।
চমৎকার, নরি, দারুণ দেখিয়েছ তুমি! হাসতে হাসতে বলল কিশোর। অবশেষে হাসি থামল। বলল, আশা করি দেরি হয়ে যায়নি।
হঠাৎ সকলের হাসি বন্ধ হয়ে গেল।
কিশোর বলল, চলো, সাইকেল নিয়ে ওল্ড নেড খুঁজতে যাই।
১৮
টাউন হলের সামনেই রয়েছে সাইকেলগুলো। তাড়াতাড়ি বন্দরে রওনা হল ওরা। বন্দরের এক কোণে ঘাটে বাঁধা রয়েছে বিশাল এক সমুদ্রগামী জাহাজ। কয়েকটা আলো দেখা যাচ্ছে ওটাতে। ছেলেরা পৌঁছে দেখল, সারি দিয়ে লোক নেমে আসছে ওটা থেকে।
শুঁটকি আর এজটারের খেয়াল রেখ, সাবধান করে দিল কিশোর।
লোকের মুখের দিকে তাকাতে তাকাতে ভিড় ঠেলে চওড়া টুরিস্ট গ্যাং্যাঙ্কের সামনে টিকেট বুদের দিকে এগোল ওরা। টেরিয়ার বা এজটারদের চেহারা চোখে পড়ল না।
।টিকেট বুদের কাছে পথ আটকাল অ্যাটেনডেন্ট। সরি, আজকের মত বন্ধ হয়ে গেছে। আর ওঠা যাবে না।
কিন্তু আমাদের এখুনি ওঠা দরকার, চেঁচিয়ে বলল নরি।
কোন উপায় নেই, থোকা, বলে ঘুরে দাঁড়াল অ্যাটেনডেন্ট। দেখতে চাইলে আবার আগামী হপ্তার শেষে।
হতাশ চোখে অ্যাটেনডেন্টের চলে যাওয়া দেখছে ওরা। ঘাটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সে, টুরিস্টদের শেষ দলটা তখন নেমে আসছে জাহাজ থেকে।