যেভাবেই বলুন, কিশোর বলল, আপনারা…
হয়েছে, থাম, খেকিয়ে উঠল হিউগ। দেখ, তোমাদের বিরুদ্ধে কোন ক্ষোভ বা রাগ নেই আমাদের। বুঝেছ? শুধু নিজেদের স্বার্থ দেখছি আমরা, ব্যস।
কি স্বার্থ? মুসা জানতে চাইল।
অবশ্যই টাকা, আর কি থাকতে পারে? অনেক টাকা পাই আমরা পার্টির কাছে। দিতে পারে না। অনেক দিন হল। কত আর অপেক্ষা করা যায়।
হেসে উঠল বিগ। বিশাল এক ভালুক যেন মাথা নাড়ল। খেলতে বসে যারা ঠিকমত তাস খেলতে জানে না, তাদের না খেলাই উচিত, তাই না, বস?
চুপ! ধমক দিল হিউগ। বেশি কথা বল তুমি। ঢোক গিলল রবিন। আপনারা আপনারা জুয়াড়ী?
মোটেই না, থোকা, হিউগ বলল। জুয়াড়ী হল তারা, যারা খেলে। আমরা ব্যবসায়ী। লোকে জুয়া খেলতে চায়, আমরা তাদের জায়গা দিই, খেলার সুযোগ করে দিই। আমরা নিজেরা কক্ষনও খেলি না।
মিস্টার হিউগ, কিশোর বলল। আপনার বন্ধু যে-ই হোক, আমি বাজি রেখে বলতে পারি, আমাদেরকে ছেড়ে দিলে তার চেয়ে বেশি টাকা দেবে আপনাকে মিসেস কারমল। সে না দিলে আমার চাচা দেবে…
দেখ, থোকা, প্রথমেই বলেছি আমরা কিডন্যাপার নই। তোমাদেরকে জিম্মি রেখে তোমাদের আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে টাকা চাওয়ার জন্যে ধরে আনিনি। পার্টির কাছে যে টাকা পাই, সেটাই শুধু আদায় করে নিতে চাই, ব্যস। তোমাদের কাছ থেকে একটা কানাকড়িও নেব না, বেশি নেবারও ইচ্ছে নেই। চুপ কর এখন। বড় বেশি কথা বলছ। দৈত্যের দিকে চেয়ে ইশারা করল বিগ!
দরজার দিকে ঘুরল বিগ। কি মনে হতে ফিরে চেয়ে বলল, তোমরা এখানে ভালই থাকবে।
হ্যাঁ, হিউগ বলল, বিছানা আছে, টয়লেট আছে। ওই আলমারিতে খাবার আছে। জগ ভর্তি পানি আছে। একেবারে নিজের বাড়ির মত লাগবে তোমাদের। খাও-দাও, আলাপ কর, বিশ্রাম নাও। শুধু বেরোতে পারবে না।
বেরিয়ে গেল দুজনে। দরজায় তালা লাগানোর শব্দ শুনতে পেল ছেলেরা। তালা লাগিয়ে, দরজার ভারি দণ্ডটা আড়াআড়ি লাগিয়ে দিয়ে চলে গেল ওরা। বন্দি হল তিন গোয়েন্দা।
সামনের দরজা বন্ধ করার আওয়াজ শোনা গেল। তবে গাড়ির ইঞ্জিন চালু হল। বাইরের ঘরে কে যেন নড়াচড়া করছে। ভারি মানুষ বসায় মড়মড় করে উঠল একটা কাঠের চেয়ার। তারপর শোনা গেল ভারি নিঃশ্বাস ফেলার শব্দ, ভালুকের দীর্ঘশ্বাসের মত।
বিগ এখনও রয়েছে, ফিসফিসিয়ে বলল মুসা।
নিচু গলায় কিশোর বলল, বেরোনোর পথ খুঁজে বের করতে হবে আগে। তারপর দৈত্যটাকে ফাঁকি দেয়ার কথা ভাবব।
দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়াল মুসা। জানালা পরীক্ষা করতে লাগল রবিন। কিশোর গিয়ে ঢুকল জানালাবিহীন বাথরুমটায়।
সবার আগে পরাজয় মেনে নিল মুসা।
দরজায় ডাবুল তালা, জানাল সে। ইস্পাতের পান্না, কাজেই তক্তা খুলে যে ফোকর করব তারও উপায় নেই। কব্জাগুলো বাইরের দিকে।
বাথরুম থেকে বেরিয়ে এল কিশোর। ভেন্টিলেটরের ফোকরও নেই।
জানালার পালার কজাও বাইরের দিকে, রবিন বলল। বাইরে থেকে লোহার চ্যাপ্টা ডাণ্ডা লাগানো, খোলা যাবে না।
মেঝে দেখা বাকি এখনও, মুসা বলল। দেখতে বেশিক্ষণ লাগল না।
নাহ্, মাথা নেড়ে বলল সে, পুরো ঘরটা কংক্রিটের একটা বাক্স। দেয়ালে কোন ফোকরই নেই। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল মুসা। কিশোর, বেরোতে পারব না। এসব পরিশ্রম না করে এস শুয়ে থাকি। এবং তা-ই করল সে।
ওরা পেশাদার লোক, কিশোর বলল, ফাঁক রাখবে কেন? মুসার পাশের বিছানাটায় শুতে শুতে রবিন বলল, চমৎকার এই রত্নশিকারের এটাই সমাপ্তি। আমাদেরকে আটকে রাখার আদেশ যে দিয়েছে, সে নিশ্চয় এখন রওনা হয়ে গেছে কুইন অভ দ্য সাউথ-এর উদ্দেশে।
ওয়াকিটকিগুলো আনার কথাও মনে হল না আজ।ক্ষোভে দুঃখে মাথার চুল -ছিড়তে ইচ্ছে করছে কিশোরের।
আনলে কি হত? রবিন বলল। তিনজনকেই তো ধরেছে।
নরির কাছে রাখতে পারতাম একটা।
নরি! লাফিয়ে উঠে বসল মুসা। হয়ত আমাদের ধরা পড়তে দেখেছে। তাহলে নিশ্চয় পুলিশে খবর দেবে।
হয়ত ইতিমধ্যে খুঁজতে আরম্ভ করেছে আমাদেরকে, আশা করল রবিন।
এত আশা কোরো না, সাবধান করল কিশোর। নরি না-ও দেখে থাকতে পারে। ও তখন ফিতে বাঁধায় ব্যস্ত। আর যদি দেখেও, অত দূর থেকে গাড়ির নাম্বার নিশ্চয় দেখতে পায়নি। শুধু বলতে পারবে, নীল গাড়ি দেখেছে। আর নীল গাড়ি রকি বীচে শরটা আছে। হতাশ ভঙ্গিতে ধপ করে খাঁটিয়ায় বসে পড়ল সে।
এমনও হতে পারে, জাহাজে চলে গেছে নরি, রবিন বলল। পরের ধাঁধাটার সমাধান করতে ব্যস্ত। বুদ্ধি আছে ছেলেটার। ওল্ড নেড় বের করেও ফেলতে পারে।
বিপদৈও পড়তে পারে! মনে করিয়ে দিল কিশোর। এজটাররা খুবই বিপজ্জনক ওর জন্যে।
তাহলে নরির আশাও নেই! ধীরে ধীরে আবার শুয়ে পড়ল মুসা। কিশোরও শুয়ে পড়ল। আর কিছু করার নেই। শুধু প্রার্থনা করা ছাড়া-নরি ভাল থাকুক, কিছু একটা করুক ওদের জন্যে।
ঘন্টার পর ঘন্টা পেরোল। জানালার পাল্লার ফাঁক দিয়ে এসে পড়া রোদের রশ্মি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হল। ইতিমধ্যে একবার হিউগের সাড়া পেয়েছে ছেলেরা বিগের সঙ্গে কথা বলে আবার চলে গেছে। খিদে লাগল মুসার। আলমারি থেকে খাবার বের করে খেতে শুরু করল। অন্যদের খিদে নেই, তবু খানিকটা রুটি আর পনির নিয়ে চিবাতে লাগল। গায়ের বল ঠিক রাখতে হবে।
খাওয়ার পর চিত হয়ে শুয়ে নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটতে লাগল কিশোর, একটা ব্যাপার সত্যি অদ্ভুত।