খোলা জায়গায়, দুপুরের রোদে বেরিয়ে থমকে দাঁড়াল ওরা। ঠিক ওপাশেই চেম্বার অভ কমার্সের অফিস। ডিসপ্লে উইণ্ডোতে বড় বড় অক্ষরে লেখাঃ
সী আ লিজেণ্ড অভ দ্য সী৷৷
এস, এস, কুইন অভ দ্য সাউথ
ফুললি রিস্টোরড টু
ইটস অরিজিন্যাল গ্লোরি
নাউ ওপেন
স্যুভনির রিফ্রেশমেন্টস
রকি বীচ হারবার হোয়ার্ফ
দ্য কুইন! মানে রানী! টুরিস্টদের জন্যে নতুন আকর্ষণ! মুসা বলল।
তাই? নরি জানতে চাইল।
হ্যাঁ, বলল কিশোর। নিশ্চয় এটা পশ কুইন। আর সমুদ্রগামী জাহাজে বিছানা থাকবেই।
তারমানে এরপর আমাদেরকে যেতে হবে কুইন জাহাজে? মুসা জিজ্ঞেস করল।
বিছানা খোঁজার জন্যে, বলল রবিন।
দাদার জিনিস পেয়ে গেছি! দাদার জিনিস পেয়ে গেছি! হাততালি দিয়ে সুর করে গেয়ে প্রায় নাচতে আরম্ভ করল নরি।
নীরবে দাঁত বের করে হাসল কিশোর। ঘুরে রওনা হল টাউন হলের পার্কিং লটের দিকে, যেখানে ওদের সাইকেলগুলো রেখেছে। থেমে গেল আচমকা যেন হোঁচট খেয়ে।
ঝোপের ভেতর দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে কে যেন। লনে বেরোল। টেরিয়ার ডয়েল!
ধর, ধর ব্যাটাকে! চেঁচিয়ে উঠল মুসা। নিশ্চয় আমাদের কথা শুনে ফেলেছে!
শুঁটকি কোথাকার, শুঁটকি! আজ ভর্তা বানিয়ে খাব! মুসার পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে চেঁচিয়ে বলল রবিন।
বিল্ডিং ঘুরে পার্কিং লটে পৌঁছার আগেই টেরিয়ারকে হারিয়ে ফেলল ওরা। যখন পৌঁছল, দেরি হয়ে গেছে। গাড়ি বের করে ফেলেছে টেরিয়ার। গর্জন করতে করতে ওদের দিকে ছুটে এল গাড়িটা। লাফ দিয়ে সরে গেল ওরা। পেছনে তাকিয়ে বুড়ো আঙুল দেখাল শুঁটকি, দাঁত বেরিয়ে পড়েছে হাসিতে।
জলদি! সাইকেল! ছুটতে শুরু করল আবার কিশোর।
কিন্তু…কিন্তু…, চেঁচিয়ে বলল নরি, সাইকেল নিয়ে গাড়ি ধরতে পারব না! জিনিসগুলো নিয়েই যাবে!
এত সহজ না। আগে আসল বিছানাটা খুঁজে বের করতে হবে তো। চলো চলো, জলদি চলো।
আরি, সাইকেল কোথায়! চোখ কপালে উঠে গেল মুসার। বোকা হয়ে পার্কিং লটের দিকে তাকিয়ে রইল ছেলেরা। নিশ্চয় শুঁটকি সরিয়েছে, রবিন বলল। দাঁড়াও, হাত তুলে দেখাল কিশোর, ওই যে।
পার্কিং লটের একপ্রান্তে হালকা ঝোপের মধ্যে ভরে রাখা হয়েছে সাইকেলগুলো। লুকানো যায়নি ভালমত, বেশির ভাগই বেরিয়ে আছে। দৌড় দিল আবার ওরা। এই সময় নরির জুতোর ফিতে গেল খুলে। সঙ্গে সঙ্গে বাঁধতে বসে গেল সে। ঝোপ থেকে সাইকেল বের করে জলদি করার জন্য তাগাদা দিতে লাগল ওকে তিন গোয়েন্দা।
আরে, এই নরি, জলদি কর না, অস্থির হয়ে উঠেছে মুসা। দেরি করলে…
কথা শেষ হল না তার। সামনে এসে দাঁড়াল দুজন লোক। একজন সেই দৈত্য, আরেকজন তার পিত্তলধারী খুদে সঙ্গী।
খপ করে মুসার হাত চেপে ধরল দানবটা। আরেক হাতে কিশোরকে। রবিনকে ধরল খাটো লোকটা। অনেক চেষ্টা করেও তিনজনের একজনও ছুটতে পারল না। একটা গাড়ির দিকে তিন গোয়েন্দাকে টেনে নিয়ে চলল লোকগুলো।
ঝোপের কাছে সাইকেল সরিয়ে আনার কারণটা এতক্ষণে বুঝতে পারল ছেলেরা। ওদেরকে ধরার জন্যে।
১৭
চুপচাপ থাক, তাহলে জখম হবে না, ড্রাইভারের সিট থেকে বলল খাটো লোকটা।
পেছনের সিটে গাদাগাদি করে বসেছে চারজনে, দৈত্যটার একপাশে মুসা, আরেক পাশে রবিন আর কিশোর। পেছনের জানালার পর্দা টেনে দেয়া হয়েছে।
আরেকটা ছেলে কোথায়, মিস্টার হিউগ? দানবটা জিজ্ঞেস করল।
পার্টি তো বলল শুধু এই তিনজনের কথাই, খাটো লোকটা জবাব দিল। এদেরকে চুপ করিয়ে রাখ, বিগ, অন্য কাউকে নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। আরও ছেলে থাকলে থাকুক গে।
ঠিক আছে, বিগ জবাব দিল।
চুপ করে রইল ছেলেরা। গাড়ি চালাচ্ছে হিউগ, খুব সাবধানে, গতি বাড়াচ্ছে, অযথা পুলিশের চোখে পড়ার ইচ্ছে নেই। রকি বীচের অলিতে গলিতে ঘুরছে। গাড়ি। ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আসছে ছেলেরা, ভয় কাটছে। ওদেরকে মারার জন্যে ধরেনি হিউগ আর বিগ, এটা বুঝে গেছে। অবশেষে জিজ্ঞেসই করে ফেলল কিশোর, আমাদের ধরেছেন কেন?
হেসে উঠল হিউগ। এমনি।
না, জানতে চাইছি, কার হুকুমে ধরেছেন?
সেটা কেন বলব? একজন বন্ধুকে সাহায্য করছি, ব্যস।
বিগ বলে উঠল, ঠিক পথেই তো যাচ্ছিলেন, মিস্টার হিউগ, আবার ঘুরছেন…
চুপ, ধমক লাগাল খাটো। আবার নীরবতা। কয়েকটা বুক পেরোল গাড়ি। তারপর রকি বীচের পশ্চিম অংশের একটা বাড়ির ড্রাইভওয়েতে ঢুকল। বেশ বড় একটা বাড়ির পেছনের ছোট একটা কটেজের সামনে এসে থামল। বড় বাড়িটার জন্যে রাস্তা থেকে কটেজ দেখা যায় না।
বেরোও,আদেশ দিল হিউগ।
কটেজের পেছনে ছোট একটা ঘরে এনে ঢোকানো হল ছেলেদের। ঘরে তনটে ছোট খাঁটিয়া। একমাত্র জানালাটায় ভারি পাল্লা লাগানো। দরজা দুটো, একটা ঘরে ঢোকার জন্যে, আরেকটা লাগোয়া বাথরুমের। ঢোকার দরজাটার পাল্লা ধাতব। বাথরুমটা ছোট, জানালা নেই।
ও-কে, হিউগ বলল, এখন…,
বাধা দিয়ে কিশোর বলল, কোন বন্ধুর কথায় ধরেছেন, বললেন তো না। আচ্ছা, যার কথায়ই ধরে থাকেন, তার চেয়ে বেশি টাকে দেবেন আপনাদেরকে মিসেস এলসা কারমল…।
তোমাদেরকে কিছু সময়ের জন্যে সরিয়ে রাখতে বলা হয়েছে, কিশোরের কথায় কান না দিয়ে বলল হিউগ।
কিন্তু একথা বলে কিডন্যাপিঙের দায় এড়াতে পারবেন না, রবিন বলল।
এই ছেলে, গর্জে উঠল দৈত্য, কিডন্যাপার কাদেরকে বলছ?
ভুরু কোঁচকাল হিউগ। আমরা কিডন্যাপার নই।