ম্যারিজ লাইসেন্স ব্যুরোর ছোট ঘরটা টাউন হলের দোতলায়, বাঁয়ে, পেছনে একেবারে শেষ মাথায়। শূন্য ঘরটায় ঢুকল ছেলেরা। নকল বের করে পড়ল কিশোর, হোয়্যার মেন বাই দেয়ার ট্রাবল অ্যাণ্ড স্ট্রাইফ, গেট আউট ইফ ইউ ক্যান।
নীরব ঘরটায় চোখ বোলাল ওরা। ডানে বিজনেস উইনডোগুলো বন্ধ। বাঁয়ে দেয়ালের সমান্তরালে লম্বা উঁচু একটা রাইটিং কাউন্টার। সামনের দিকে গরাদওয়ালা দুটো জানালার নিচে একটা কাঠের বেঞ্চ। নানারকম নোটিশ, আর গভর্নর এবং মেয়রের ছবি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে দেয়ালে।
এখানেই তাহলে স্ত্রী কেনে লোকে, মুসা বলল। মানে বিয়ের লাইসেন্স জোগাড় করে। কথা হল, গেট আউট ইফ ইউ ক্যান দিয়ে কি বুঝিয়েছে?
আবার উল্টো কথা বলেনি তো? রবিন বলল।
বোঝা যাবে, কিশোর বলল। আগে পরের ধাঁধাটা পড়ে দেখি কিছু বোঝা যায় কিনা। ইন দ্য পশ কুইনস ও নেড, বি ব্রাইট অ্যাণ্ড নেচারাল, অ্যাণ্ড দ্য প্রাইজ ইজ ইওরস। এ-ঘরের কোন জিনিস হয়ত কোন রানী কিংবা বিছানা দেখাবে আমাদের।
কোথায়? নরি বলল।.ওরকম কিছু তো দেখছি না।
না, ধীরে ধীরে বলল কিশোর, পশ কুইনস ও নেড এঘরে থাকবেই এমন কোন কথা নেই। গেট আউট ইফ ইউ ক্যান দিয়ে কি বোঝায়, বোঝার চেষ্টা করে দেখি। গেট আউটের মানে এসকেপ বা পালানো হয়।
তবে কি ফায়ার এসকেপ? কিন্তু ঘরটা দোতলায়। কাছাকাছি কোন ফায়ার এসকেপ নেই। এসকেপ যদি হয় তাহলে তো রাইম হল না, রবিন বলল।
হলে নেই, মানে হলেই হল, বলল মুসা। জানালা? ওটা দিয়েও পালানো যায়। তবে এখানকারগুলো দিয়ে বেরোনো খুব মুশকিল।
তবু জানালার কাছে এসে বাইরে তাকাল ওরা। বাড়ন্ত ঝোপ ছাড়া আর কিছু চোখে পড়ল না।
ক্যান-এর সঙ্গে ছন্দ মিলিয়ে শব্দ বল তো,কিশোর বলল।
ব্যান, ফ্যান, ম্যান, প্যান, র্যান, ট্যান, গড়গড় করে বলে গেল রবিন।
এই, দেয়ালটা ট্যান কালারের, নরি বলল।
তাতে কোন সুবিধে হচ্ছে না ধাঁধা সমাধানের, বলল কিশোর। তবে এখানে। ম্যান আছে, দুজন, গর্ভনর আর মেয়র।
নোটিশে কোন ব্যান-এর ঘোবণা নেই তো? রবিনের প্রশ্ন।
নোটিশগুলো পড়তে ছুটল সবাই। বেশ কিছু নতুন নিয়ম জারি করা হয়েছে, নিষিদ্ধ করা হয়েছে কিছু কিছু ব্যাপার, তবে ওগুলো থেকে ধাঁধার সমাধান হবে না।
অবশেষে কিশোর ঘোষণা করল, আমার মনে হয় না এটা রাইমিং স্ন্যাং।
কারমলের আরেক শয়তানী বুদ্ধি! গো গোঁ করে বলল মুসা।
এখান থেকে বেরোনোর কথাই বলা হয়েছে মনে হয়।
কিভাবে? জিজ্ঞেস করল রবিন। জানালা আটকানো। ফায়ার এসকেপ নেই। দরজা মাত্র একটা, যেটা দিয়ে ঢুকলাম। তাতে স্পেশাল কিছু নেই।
এই দেখ!দরজার কাছের মেঝে দেখিয়ে হঠাৎ চিৎকার করে উঠল কিশোর। মেঝে কেমন ক্ষয়ে গিয়েছে দেখছ লোক যাতায়াতের ফলে?
শ্রাগ করল রবিন। তাতে কি? এটা স্বাভাবিক।
কিন্তু বেঞ্চের কাছের মেঝে দেখ।
সবাই দেখল। ক্ষয়া একটা সরু পথ যেন গিয়ে ঠেকেছে পাশের দেয়ালে।
গোপন দরজা! একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠল রবিন আর মুসা।
দেয়ালের কাছে দৌড়ে এল ছেলেরা। খুঁজতে শুরু করল। কিন্তু দেয়ালের অন্যান্য জায়গার মতই এখানেও মসৃণ, প্লাস্টারের ওপর রঙ করা, সামান্যতম চিড় ধরেনি কোথাও। আশা আবার নিভে গেল ওদের।
শূন্য দেয়াল, কেঁদে ফেলবে যেন রবিন, আর কিছু নেই!
আরও ভালমত দেখে মুসা বলল, মনে হয় দরজা-টরজা ছিল এককালে। রঙ দেখ। আশেপাশের দেয়ালের চেয়ে হালকা। নিশ্চয় গত দুতিন মাসের মধ্যে বন্ধ করা হয়েছে দরজাটা, কিংবা এখানে নতুন করে রঙ লাগানো হয়েছে। এখানে দরজা থাকলে বেরোনো মোটেই কঠিন হত না।
দেয়াল গেঁথে বোজানো হয়েছে? বিড়বিড় করল কিশোর। মুসার দিকে তাকিয়ে চোখ মিটমিট করতে করতে হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল, বাইরের রাস্তাটা কোন রাস্তা? এটা দিয়ে বেরোলে যেটাতে পড়া যাবে?
রাস্তা? অবাক হল রবিন। কেন স্যালসিপুয়েডস স্ট্রীট, তাই তো হবার কথা। কিন্তু…
কথা শেষ হল না তার। ঝড়ের গতিতে খোলা দরজা দিয়ে ছুটে বেরিয়ে গেল। কিশোর।
১৬
সামনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে ঘুরে টাউন হলের একপাশে চলে এল কিশোর। পেছনে ছুটছে তার সহকারীরা। জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে সবাই, চোখ উজ্জ্বল। থমকে দাঁড়াল গোয়েন্দাপ্রধান। দেয়ালে একটা খিলানমত দেখা গেল, দরজা ছিল এককালে বোঝা যায়, ম্যারিজ লাইসেন্স ব্যুরো থেকে বেরোনোর।
কি করব এখন, কিশোর? হাঁপাতে হাঁপাতে জিজ্ঞেস করল মুসা।
দরজার ইট নতুন, আনমনে বুলল কিশোর। তারমানে মুসার কথাই ঠিক,, কয়েক মাস আগে বন্ধ হয়েছে। তারমানে কয়েক মাস আগে এলেও ওই পথে আমরা বেরোতে পারতাম। বোঝা যাচ্ছে, কারমল যখন শেষ দেখেছে এই দরজাটা, তখনও এটা ভোলা ছিল।
কিন্তু,নরি বলল, ধাঁধার সঙ্গে মিলটা কোথায়? স্যালিসপুয়েডস…
কিশোর! বড় বড় হয়ে গেল রবিনের চোখ। স্যালিসপুয়েডস স্প্যানিশ শব্দ, মনে পড়েছে। এর ইংরেজি মানে করলে দাঁড়ায়ঃ গেট আউট ইউ ক্যান!
তারমানে স্যালিসপুয়েডস স্ট্রীটে বেরিয়ে পশ কুইনস ওন্ড নেডের খোঁজ করতে বলছে, কিশোর বলল।
বন্ধ করে দেয়া দরজার আশেপাশে ঘন ঝোপঝাড় জন্মে আছে। বিল্ডিঙের পেছনে গাছও আছে বেশ কিছু। সরু একটা পথ দরজার গোড়া থেকে লন পেবিয়ে গিয়ে উঠেছে স্যালিসপুয়েডস স্ত্রীটে। বন্ধ করে দেয়া দরজাটার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকাল ছেলেরা, কোন গোপন সূত্র লুকিয়ে রেখেছে কিনা বোঝার চেষ্টা করল। কিছু না পেয়ে, সরু পথ ধরে দ্রুত পা চালাল বড় রাস্তার দিকে।