মানে?
মানে মারলিন বলে ডারলিন বোঝানো হয়। কিন্তু উল্টোটা বলেছেন মিস্টার কারমল। ডারিন বলেছেন মারলিন বুঝে নেয়ার জন্য। রাইমিং স্ল্যাং যদিও হয় না এটা,তাই না?
ফিকফিক করে হাসল বুড়ো। তুমিও তাহলে বুঝে ফেলেছ। চালাক ছেলে।
আমিও মানে! সতর্ক হয়ে গেল কিশোর। আরও কেউ বুঝেছে নাকি?
হ্যাঁ, কারমলের নাতি। খুব চালাক। দাদার চেয়ে কম ধড়িবাজ না।
বুড়োকে ধন্যবাদ দিয়ে রিসিভার রেখে দিল কিশোর। ফিরে চলল চায়ের দোকানে। সঙ্গে চলল দুই সহকারী।
মারলিন মানে কি, কিশোর? মুসা বলল।
বড় জাতের মাছ, তলোয়ার মাছেরই প্রজাতি।
খাইছে! নাক আছে নাকি ওগুলোর?
আবার চায়ের দোকানে ঢুকল তিন গোয়েন্দা। সোজা এগিয়ে গেল দেয়ালের মাছটার কাছে। কিছুটা অবাক হয়েই ওদের দিকে তাকিয়ে রইল ওয়েইট্রেস।
মাছের নাক একটা ছুবির দিকে, রবিন বলল।
সামনের দেয়ালে ঝোলানো ফ্রেমে বাঁধাই ছবিটার কাছে এসে দাঁড়াল ওরা।
আরি, মুসা বলল, রকি বীচ টাউন হলের ছবি দেখি।
ফলো দ্য নোজ টু দ্য প্লেস, বিড়বিড় করল কিশোর। নাক অনুসরণ করে ওই জায়গা, মানে ওই টাউন হলে যেতে বলছে!
হোয়্যার, বুঝে ফেলল রবিন, মেন বাই দেয়ার ট্রাবল অ্যাণ্ড স্ট্রাইফ। দ্য ম্যারিজ লাইসেন্স ব্যুরো। বিয়ের ব্যাপার-স্যাপার। বাই বলেছে সে-কারণেই।
হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকাল কিশোর। নরি নিশ্চয় ওখানে চলে গেছে। ওর মাকে জানানো দরকার।
আবার পেট্রল পাম্পে এল ফোন করার জন্যে। ডায়াল করছে কিশোর, হঠাৎ কান খাড়া করে ফেলল মুসা। এই শোন শোন! শুনছ?
ডায়াল থামিয়ে কিশোরও কান পাতল। তিনজনেই শুনতে পেল বিচিত্র শব্দ। ধাতব কিছুর ওপর দিয়ে হিঁচড়ে নেয়া হচ্ছে ভারি কিছু।
কী…? বুঝতে পারছে না মুসা।
ওই ঘরের ভেতরে, পেট্রল পাম্পের অফিসটা দেখাল রবিন।
অফিসের বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে আছে তিনজনে। এই সময় শোনা গেল চাপা মৃদু চিত্তার, বাঁচাও! বাঁচাও!
১৫
বন্ধ ঘরের ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করল মুসা। কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।
বাঁচাও, বাঁচাও! শোনা গেল আবার।
অফিসের পেছন থেকে আসছে! বলে উঠল রবিন।
পেছনে তিনটে পার্ক করা কার আর একটা ভ্যান দেখা গেল। আবার শোনা গেল হিচড়ানোর আওয়াজ।
মনে হচ্ছে ভ্যানের ভেতরে, মুসা অনুমান করল।
বাঁচাও! শোনা গেল আবার চাপা চিৎকার। নরি! কিশোর বলল। ভ্যানটা খুলতে হবে!
দরজায় তালা নেই। টেনে খুলতেই দেখা গেল, মেকানিকরা মাটিতে যে ক্যানভাস বিছিয়ে কাজ করে, তার একটা বড় বাণ্ডিল। নড়ে উঠল বাণ্ডিলটা, ভ্যানের ছাত থেকে ঝুলে থাকা ভারি একটা পুলিতে বাড়ি লাগল, ওটা ঘষা লাগল ধাতব দেয়ালে। হিচড়ানোর মত আওয়াজ করছে ওটাই।
ক্যানভাসের বাণ্ডিল নিয়ে টানাটানি শুরু করল ছেলেরা। ভেতর থেকে বেরোল নরি। হাত-পা বাঁধা। বাঁধনমুক্ত হয়ে ধড়মড়িয়ে উঠে কন্সল সে, চেহারা ফ্যাকাসে। তবে সাহস হারায়নি।
কি হয়েছিল, নরি? রবিন জিজ্ঞেস করল।
আমার মনে পড়ে গিয়েছিল, দাদা বলত, কিছু লোকের মাগ কুৎসিত, আর কিছু লোকের সুন্দর। আয়নার কথা আন্দাজ করলাম, গর্বের সঙ্গে বলল নরি। মাছটা দেখলাম, বুঝলাম মারলিনের কথা বলেছে। কারণ, প্রায়ই ওই মাছের গল্প করত সে। দেখলাম, ওটার নাক একটা ছবির দিকে। টাউন হলের ছবি। মিস্টার সানকে ফোন করে জেনে নিলাম আমার অনুমান ঠিক কিনা। আমিও রিসিভার রাখলাম, এই সময় পেছন থেকে হঠাৎ আমার মাথায় একটা ব্যাগ ঢুকিয়ে দিল লোকটা। চেহারা দেখিনি। তারপর হাত-পা বেঁধে গাড়িতে ফেলে রেখে চলে গেল। তোমাদের সাড়া পেয়েই চেঁচাতে শুরু করলাম।
ভাল করেছ,মুসা বলল।
এজারদের আর টেরিকে ঘুরঘুর করতে দেখেছি শপিং সেন্টারে। বোধহয় ফোনে বেশি জোরে কথা বলে ফেলেছিলাম, ওরা পেছন থেকে শুনেছে আমার কথা। এত কষ্ট সব মাঠে মারা গেল আমার,হতাশ দেখাল নরিকে।
ধাঁধার চমৎকার সমাধান করেছ, তুমি, প্রশংসা করল কিশোর। আর খুব সাহস তোমার। ভুল আমরা সবাই করি, বুঝলে। এতে এত দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই। তবে ভবিষ্যতে আরও হুঁশিয়ার হয়ে কাজ করবে।
এখন তো তাহলে তোমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারি? অনুরোধ করল নরি। প্লীজ! তোমাদের সব কথা মেনে চলব। যা করতে বলবে তাই করব। বিপদে ফেলব না।
কিন্তু…
অসুবিধে কি? মুসা বলল। ছেলেটা প্রমাণ করে দিয়েছে, তার সাহস আছে। তাছাড়া বুদ্ধিও কম নয়, একটা ধাঁধার সমাধান তো আমাদের আগেই করে ফেলল।
নেয়া যায়, রবিনও নরির পক্ষ নিল।
বেশ, অবশেষে রাজি হল কিশোর। নিতে পারি, যদি তোমার মা অনুমতি দেন।
নরি ভাল আছে শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল তার মা। কিন্তু কিশোর যখন বলল, ছেলেকে সঙ্গে নেবে কিনা, দ্বিধা করল এলসা।
বুদ্ধিশুদ্ধি বেশ ভালই আছে আপনার ছেলের, কিশোর বলল। তাছাড়া বাড়িতে রেখেও নিশ্চিন্ত থাকতে পারছেন না। যখন তখন আপনাকে ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে বরং বিপদেই পড়ছে।
হ্যাঁ, ঠিকই বলেছ। ঠিক আছে। যাক। তবে ওর ওপর কড়া নজর রাখবে, প্লীজ।
সুখবরটা নরিকে শোনাল কিশোর।
চায়ের দোকানের কাছে পার্ক করে রাখা সাইকেলগুলো নিয়ে রকি বীচে চলল ওরা। রোববারের জনবিরল পথ। কোর্টহাউস আর টাউনহলের কাছে লোকজন বিশেষ নেই, দুচারজনকে এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেল। রোববারে বিক্রি বন্ধ, কিন্তু তবু টুরিস্ট আকর্ষণের জন্যে দোকানপাটগুলো খুলে রাখা হয়েছে।