মানে?
রাস্তায় ধরে পথিককে পিটিয়ে যে জিনিসপত্র কেড়ে নেয় তাকেও বলে মাগ।
নাহ।
মাগ শট বলে-আরেকটা শব্দ আছে, বললেন তিনি। পুলিশের ভোলা ছবি, চোর-ডাকাতের ক্লোজ আপ তাছাড়া আয়না…
মাগ শট? আয়না! চোখ বড় বড় হয়ে গেল গোয়েন্দা সহকারীর। সজোরে চাপড় মারল উরুতে। তাই হবে!
কি হবে? কাগজের ওপাশ থেকে জিজ্ঞেস করলেন মিস্টার আমান। জবাব না পেয়ে কাগজ নামিয়ে দেখলেন, রিসিভার তুলে ততক্ষণে ডায়াল শুরু করে দিয়েছে মুসা।
হেডকোয়ার্টারে কিশোরকে পেল না মুসা। ঘরে রয়েছে গোয়েন্দাপ্রধান। তাকে ওখানে ধরল সে। চেঁচিয়ে বলল, সুখবর আছে! রবিনকে আসতে বল!
রিসিভার নামিয়ে দরজার দিকে দৌড় দিল মুসা।
কয়েক মিনিট পর হেডকোয়ার্টারে ঢুকে দেখল, কিশোর বসে আছে। রবিন এসে পৌঁছায়নি।
এসে যাবে, কিশোর বলল। তা কি সুখবর?
সী আওয়ার হাওসাম মাগ অ্যাহেড-এর জবাব, হেসে নাটকীয় ভঙ্গিতে চেয়ারে হেলান দিল মুসা। জানি এখন।
কী?
মুসা জবাব দেয়ার আগেই টেলিফোন বাজল। রিসিভার তুলে নিল কিশোর। এলসা করেছে। নরি আবার হারিয়েছে, বলল উল্কণ্ঠিত মা। আজ সকালে উঠে বলল, মাগের মানে জানে। আমার মনে হয় চায়ের দোকানটাতে গিয়েছে সে। অনেকক্ষণ হল, এখনও ফিরছে না, ভয় লাগছে আমার। বাড়ির আশেপাশে ঘুরঘুর করছে কিছু আজব লোক। এজটারদের গাড়ি দেখেছি বলেও মনে হল।
আজব মানুষগুলোর একজন কি দৈত্য?
হ্যাঁ। আগেও দেখেছি তাকে। রসকে ফোন করেছিলাম, পাইনি।
এক্ষনি শপিং সেন্টারে যাচ্ছি আমরা, কথা দিল কিশোর। আগের মানে কি, বলেছে কিছু নরি?
না। প্লীজ, তাড়াতাড়ি কর, কিশোর।
করবে, বলে রিসিভারও রাখল কিশোর, রবিনও ঢুকল ট্রেলারে। কি হয়েছে জানানো হল তাকে। গম্ভীর হয়ে বলল কিশোর, নরির যদি কিছু ঘটে যায়, তাহলে কারমলের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়ে যাবে এজটাররা।
কিন্তু মুসা কি যেন জানাবে বললে? রবিন জিজ্ঞেস করল।
সেটার দিকেই তো তাকিয়ে আছি এখন, হেসে বলল মুসা।
কোথায়? চারপাশে খুঁজল রবিন, কিশোরও খুঁজছে।
তোমাদের দুজনের সামনেই!
ভ্রূকুটি করল গোয়েন্দাপ্রধান। ঠাট্টার সময় নয় এটা, সেকেণ্ড।
কই, রবিন বলল, শুধু তো দেখছি ডেস্ক, দেয়াল, পুরানো আয়না, শেকসপীয়ারের মূর্তি…
বুঝেছি! নাকমুখ এমনভাবে কুঁচকে ফেলল কিশোর, যেন নিমের তেতো খেয়েছে। কেউ তার ওপর টেক্কা দিক এটা সইতে পারে না সে। আওয়ার হ্যাণ্ডসাম মাগ। কারমলের আরেকটা শয়তানী।
কই? আবার বলল রবিন। দেখছি না তো কিছু।
আয়না, রবিন, কিশোর বলল। আমরা আমাদের চেহারা দেখতে পাচ্ছি। মাগ হল চেহারার স্ল্যাং। চা দোকানের দেয়ালেও একটা বড় আয়না লাগানো আছে। সী আওয়ার হ্যান্ডসাম মাগ অ্যাহেড বলে আয়নার ভেতর দেখতে বলা হয়েছে।
চলো, জলদি, মুসা তাগাদা দিল।
ট্রেলার থেকে বেরিয়ে সাইকেলে চাপল ওরা। রওনা হল কারমলের প্রিয় চায়ের দোকানে। পৌঁছে দেখল ভোলাই আছে, তবে ভিড় কম, অল্প কয়েকজন। খরিদ্দার, দুপুরের আগে বাড়বে না। নরি নেই ওখানে। আগের দিনের ওয়েটসকেও দেখতে পেল ওরা। প্রশ্নের জবাবে বলল, যা, ওই বয়েসের একটা ছেলেকে দেখেছি। ঘন্টাখানেক আগে এসে বসেছিল ছয় নাম্বার টেবিলে, কিছুক্ষণ বসে থেকে চলে গেছে।
আর কাউকে দেখেছেন? কিশোর জিজ্ঞেস করল।
মোটা এক লোক, আর রোগাটে এক মহিলা। ছেলেটা আসার আগে এসেছিল, মিস্টার কারমলের কথা জিজ্ঞেস করল, আমি বললাম ছয় নাম্বার টেবিলে বসতে। ওরাও বসল। তবে ছেলেটার মত সন্তুষ্ট মনে হয়নি ওদেরকে।
থ্যাঙ্ক ইউ, মিস, বলে বন্ধুদের দিকে ঘুরল কিশোর।
কি মনে হয়, এজটাররা নরিকে ধরে নিয়ে গেছে? রবিন বলল।
তার পিছুও নিয়ে থাকতে পারে।
মাগের জবাব নিশ্চয় পেয়ে গেছে নরি, নইলে সন্তুষ্ট মনে হত না, মুসা বলল। তাকে খুঁজে বের করতে হলে এখন তাড়াতাড়ি পরের ধাঁধাটার জবাব জানতে হবে আমাদের।
ছয় নাম্বার টেবিলের পাশে গিয়ে বসল কিশোর। আয়নার ভেতরে তাকাল। তার কাঁধের ওপর দিয়ে উঁকি দিল মুসা আর রবিন।
নিজের চেহারা দেখতে পাচ্ছি, কিশোর বলল। আর, টেবিল, তলোয়ার মাছ, দেয়ালে ঝোলানো পুরানো একটা খাদ্য তালিকা, দুটো ছবি…এই তো।
পরের ধাঁধাটা পড়ে দেখ, কিশোর, পরামর্শ দিল রবিন।
নকলটা বের করে পড়ল কিশোর, ওয়ান ম্যানস ভিকটিম ইজ অ্যানাদারস ডারলিন, ফলো দ্য নোজ টু দ্য প্রেস।
রবিন বলল, বিশেষ কোন চেহারার কথা বোঝায়নি কারমল। সে জানত না কখন কোন মুখটা উঁকি দেবে আয়নার ভেতর।
মুসা বলল, ছবি দুটোও বন্দরের। শিকার কিংবা প্রিয় কিছুই নেই ওগুলোতে। আর নাকও তো আমাদের তিনটে ছাড়া আর কারও দেখছি না।
পুরানো খাদ্য তালিকাটার ব্যাপারে কি মনে হয়? রবিনের প্রশ্ন।
না, জোরে জোরে নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটছে কিশোর। মনে হয় বুঝতে পারছি। শিওর হওয়া দরকার। এস।
ওয়েট্রেসের কাছে গিয়ে পাবলিক টেলিফোন কোথায় জিজ্ঞেস করল কিশোর।
আমাদের এখানে নেই, ওয়েট্রেস বলল। রাস্তার ওপারে পেট্রল পাম্পটায় গিয়ে দেখতে পার।
পেট্রল পাম্পটা বন্ধ। তবে বুদটা দেখা গেল, বাইরে। ডিরেক্টরিতে ড্যাম সানের নাম্বার খুঁজে বের করে তাকে ফোন করল।
আবার তুমি, খসখসে কণ্ঠে বলল বুড়ো।
স্যার, নরম গলায় বলল কিশোর। আপনি বলেছেন, মিস্টার কারমলের সব স্ল্যাঙের মানে আপনি জানেন না। কিন্তু আমি যদি ব্ল্যাঙের শব্দটা কি হবে আপনাকে বলে দিই, কি শব্দ দিয়ে সেটা বোঝানো হয় তা তো বলতে পারবেন?