যা, কুটিল হাসিতে নেচে উঠল বুড়োর চোখ। তাই বুঝিয়েছে।
আর এক মুহূর্ত দাঁড়াল না তিন গোয়েন্দা। ঘুরে দৌড় দিল বাস ধরার জন্যে। পেছনে শোনা গেল সানের অট্টহাসি।
আগেই আন্দাজ করা উচিত চিল, কিশোর বলল। এখানে উঠলে পয়সা বেশি দিতে হয়।
এক কাজ করলে কেমন হয়? মুসা বলল। কারমলের মত আমরাও এক স্টপেজ হেঁটেই যাই। পয়সা বাঁচবে, হয়ত কিছু চোখেও পড়তে পারে।
উত্তম প্রস্তাব, রবিন বলল।
সুতরাং এক স্টপেজ হেটে এসে বাসে উঠল ওরা। পথে নতুন কিছু অবশ্য চোখে পড়ল না।
প্রথমবার দশ নাম্বার সাইন যেটাকে ধরেছিল, সেটার কাছে এসে গর্ত দেখল অনেকগুলো, তবে শুঁটকিকে আর দেখা গেল না। বোটানিক্যাল গার্ডেন পেরোল..ডেপুটির অফিস গেল…অনেক পরে পার্ক রোড যেখানে কারমলের বাড়ির রাস্তার সঙ্গে মিশেছে, সেখানে এসে দেখল পরের লাইনটা। লেখা রয়েছেঃ টার্ন লেফট হিয়ার ফর ফেয়ারভিউ শপিং মল। অর্থাৎ বাঁয়ে ঘুরলে ফেয়ারভিউ শপিং মল পাওয়া যাবে।
লাভটা কি হল? হতাশ হয়ে হাত ওন্টাল মুসা। যে গোলকধাঁধা সেই গোলকধাঁধা। বাজারে খোঁজা সম্ভব নাকি? কজায়গায় খুঁজব?
আমি শিওর, এটাই সঠিক সাইন, জোর দিয়ে বলল কিশোর। এখান থেকেই পরের সূত্র খুঁজে বের করতে হবে।
বাস থেকে নেমে শপিং সেন্টারের দিকে হাঁটতে শুরু করল ওরা। বিরাট এলাকা নিয়ে মস্ত সুপারমার্কেট করা হয়েছে। নানারকম দোকান ছাড়াও রয়েছে রেস্টুরেন্ট, স্ন্যাক-বার। সেদিকে চেয়ে দমে গেল তিন গোয়েন্দা।
১৩
পকেট থেকে নকলটা বের করল গোয়েন্দাপ্রধান। আপনমনেই বলল, টেনথ বল অভ টোয়াইন আমাদেরকে নিয়ে এসেছে শপিং সেন্টারে। তারপরে? ইউ অ্যাণ্ড মি; সী আওয়ার হ্যান্ডসাম মাগ অ্যাহেড।
রবিন বলল, ইউ অ্যাণ্ড মি হল আ কাপ অভ টী।
মরেছে, সেন্টারে গিজগিজ করছে লোক, সেদিকে তাকিয়ে বলল মুসা। এক কাপ চা নিয়ে ওখানে কেউ বসে আছে নাকি আমাদের জন্যে।
বসে হয়ত নেই, কিশোর বলল। তবে চা কোথায় পাওয়া যাবে, তা জানি। ওই দেব।
একটা পনিরের দোকান আর একটা কার্পেটের দোকানের মাঝের দোকানটা চায়ের নাম লেখা রয়েছে দ্য স্ট্যাটফোর্ড টী শপ্পে। নামটার মতই অক্ষরও ইংরেজি পুরানো ধাচে লেখা। জানালার ওপাশে দেখা যাচ্ছে কেকের সারি।
ছোট রেস্টুরেন্ট, রবিন বলল।
হ্যাঁ, বলল কিশোর। আর আমরা কারমলের বাড়ি থেকে মাত্র এক ব্লক দূরে রয়েছি। নিশ্চয় এখানে চা খেতে আসত সে।
ভেতরে ঢুকল ছেলেরা। ছোট ছোট একসারি ঘর রয়েছে, নিচু ছাত। একেবারে খাঁটি ইংলিশ টী শপ। স্ট্যান্ডে দাঁড় করানো রয়েছে স্টাফ করা মাছ, দেয়ালে শোভা পাচ্ছে জজানোয়ারের মাথা, রকি বীচের প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি। ছোট ছোট টেবিলগুলোকে ঘিড়ে ভিড় করে বসেছে লোকে, চা কেক খাচ্ছে। এ
ছেলেদের দিকে এগিয়ে এল এক সুন্দরী ওয়েইট্রেস। হেসে জিজ্ঞেস করল কিছু লাগবে কিনা।
কটা কথা জানতে এসেছিলাম, সৌজন্য দেখিয়ে খুব ভদ্রভাবে বলল কিশোর। মিস্টার কারমল কি প্রায়ই আসতেন এখান?
আসতেন। হপ্তায় অন্তত তিন-চার দিন।
যা, আমারও তাই ধারণা ছিল। নিশ্চয় নির্দিষ্ট একটা মগে চা খেতেন। ওটা দেখতে পারি?
মগ? অবাক হল ওয়েইট্রেস। কোন মগ তো ছিল না। তাছাড়া মগ ব্যবহার করি না আমরা, কাপে চা দিই…
ছিল না? তাহলে…তাহলে…
রবিন বলল, এখানে কখন আসতেন তিনি, কি কি করতেন, কি খেতেন বলতে পারবেন?
নিশ্চয় পারব। বিকেলের দিকেই আসতেন, ঠিক এই সময়। দুতিন কাপ ওললাং আর একটা নরম রোল খেয়ে চলে যেতেন।
ওলোংটা কি জিনিস? মুসা জানতে চাইল।
চীনা চা। ভাল তৈরি হয় আমাদের এখানে, লোকে খায়ও প্রচুর।
মিস্টার কারমল কোন নির্দিষ্ট চেয়ারে বসতেন? রবিন জিজ্ঞেস করল।
হ্যাঁ, এসেই ছয় নাম্বার টেবিলটার খোঁজ করতেন। ওটা খালি না থাকলে অন্য টেবিলে বসতেন।
টেবিলটা দেখতে পারি? কিশোর বলল।
তা পার। খালিই আছে এখন।
ওয়েইট্রেসের পিছু পিছু কোণের একটা টেবিলের কাছে চলে এল ছেলেরা। টেবিলের পাশে দেয়ালে বসানো একটা দানবীয় তলোয়ার মাহ৷ চেয়ারে বসল মুসা। খাইছে! এখানে বসে উল্টোদিকের দেয়াল ছাড়া তো আর কিছুই দেখা যায় না।
রবিন বসল আরেকটা চেয়ারে। শুধু সামনের দেয়াল দেখা যায়, কিশোর। একটা হরিণের মাথা, বড় একটা আয়না আর গোটা দুই ছবি, ব্যস। মগটগ নেই।
কিশোর, প্রায় চিৎকার করে উঠল মুসা। হরিণটার নাক আছে! পরের ধাঁধায় নাকের কথা বলা হয়েছে না?
নকল বের করে পড়ল কিশোর, ওয়ান ম্যানস ভিকটিম ইজ অ্যানাদারস ডারলিন, ফলো দ্য নোজ টু দ্য প্রেস। মানে হল, একজনের শিকার আরেকজনের প্রিয়, নাক অনুসরণ করে জায়গামত যাও। বেশ। হরিণটা অবশ্যই একজনের শিকার। হরিণ ইংরেজি ডিয়ার, প্রিয় ইংরেজিও ডিয়ার, দুটো শব্দের বানান আলাদা হলেও উচ্চারণ এক। প্রিয়, অর্থাৎ ডিয়ারের প্রতিশব্দ ডারলিং। আবার ডারলিংকে অনেকে উচ্চারণ করে ডারলিন।
করে, রবিন বলল। কিন্তু হরিণের নাক তো এই টেবিল ছাড়া আর কোনদিকে নির্দেশ করছে না।
আশা ছাড়তে পারল না কিশোর। ওই ছবিগুলোতে কিছু নেই তো?
এগিয়ে গিয়ে দেয়ালে ঝোলানো ছবিগুলো কাছে থেকে দেখল তিনজনে। একটাতে রয়েছে রকি বীচের একটা হোটেল, যেটা বহু বছর আগেই ভেঙে ফেলা হয়েছে। আরেকটাতে আগের বছরের ফিয়েস্টা ডেপরেডের দৃশ্য।